অনেকে বলেন, প্রাকৃতিক নির্বাচন যদি এতই শক্তিশালী হয়, তাহলে কোন কোন প্রজাতিতে কেন এই অথবা ঐ দেহগঠনটি অর্জিত হয় না, যা থেকে প্রজাতিটি স্পষ্টতই লাভবান হতে পারত। প্রত্যেক প্রজাতির অতীত ইতিহাস এবং পরিবেশ সম্পর্কে, যা বর্তমানে তাদের সংখ্যা ও বিস্তার নির্ধারণ করে, আমাদের অজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে, এইসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর আশা করা অযৌক্তিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সাধারণ কারণ এবং অল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশেষ কারণ আরোপ করা যেতে পারে। এভাবে একটি প্রজাতিকে জীবনের নূতন স্বভাবসমূহে মানিয়ে নিতে হলে, অনেক সমন্বয়মূলক রূপান্তর প্রায় অপরিহার্যরূপে প্রয়োজনীয় হয়, এবং এটি প্রায়শই ঘটে থাকতে পারে যে অপরিহার্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি সঠিক উপায়ে অথবা সঠিক মাত্রায় পরিবর্তিত হয়নি। অসংখ্য প্রজাতি সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে গিয়ে ধ্বংসকারী উপাদানগুলির দ্বারা নিশ্চয় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকবে, যেগুলির সঙ্গে কয়েকটি দেহগঠনের কোন সম্পর্ক ছিল না, আমরা কল্পনা করি যা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকবে, কারণ প্রজাতির পক্ষে সেটি লাভজনক হয়েছে বলেই মনে হয়। এক্ষেত্রে যেহেতু জীবনসংগ্রাম এই দেহগঠনের ওপর নির্ভর করে নি, তাই এগুলি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকতে পারে না। অসংখ্য ক্ষেত্রে, অদ্ভুত প্রকৃতির জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী পরিবেশ একটি গঠনের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়; এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশসমূহ কদাচিৎ একত্র হতে পারে। যে কোন একটি দেহগঠন, যাকে আমরা ভুলবশতঃ হলেও একটি প্রজাতির পক্ষে উপকারী বলে মনে করি, তা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে সকল পরিবেশে অর্জিত হয়ে থাকবে এই বিশ্বাসটি, যেভাবে আমরা এর কার্যপ্রণালীর উপায় সম্বন্ধে বুঝতে পারি তার বিরোধী। মিঃ মিভার্ট অস্বীকার করেননি যে প্রাকৃতিক নির্বাচন কোন কিছু সম্পাদন করেনি; কিন্তু এর মাধ্যমগুলির দ্বারা আমার ব্যাখ্যাত ঘটনাসমূহ বিচার-বিবেচনা করতে
গিয়ে তিনি একে “স্পষ্টতই অপ্রতুল” হিসেবে মনে করেছেন। তার প্রধানতম যুক্তিগুলি আলোচনা করা হয়েছে, অন্যগুলি পরে আলোচনা করা হবে। অন্যান্য উপাদানগুলির দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত প্রাকৃতিক নির্বাচনের ক্ষমতার অনুকূলে যে-সব যুক্তি রয়েছে, সেগুলির তুলনায় মিঃ মিভার্টের যুক্তিগুলি নিতান্তই দুর্বল। আমি আরও বলতে বাধ্য যে আমার দ্বারা এখানে উল্লিখিত ঘটনা ও যুক্তিসমূহের কয়েকটি একই উদ্দেশ্যে : মেডিকো চিরারজিক্যাল রিভিউ’-তে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সুযোগ্য প্রবন্ধে উত্থাপন করা হয়েছে।
বর্তমানে প্রায় সব প্রকৃতিবিদরাই কোন না কোন প্রকারের বিবর্তনকে স্বীকার করেন। মিঃ মিভার্ট বিশ্বাস করেন যে প্রজাতিগুলি “কোন আভ্যন্তরীণ শক্তি অথবা প্রবণতা দ্বারা পরিবর্তিত হয়, তবে সে বিষয়ে কোন কিছু জানা থাকার দাবি তিনি করেননি। সব বিবর্তনবাদীরাই স্বীকার করবেন যে পরিবর্তনের জন্য প্রজাতিদের একটি ক্ষমতা আছে; কিন্তু আমার মনে হয় সাধারণ পরিবর্তনশীলতার প্রবণতার বাইরে কোন আভ্যন্তরীণ শক্তিকে খুঁজে বেড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই, বিভিন্নতার জন্য মানুষের দ্বারা নির্বাচনের সাহায্যে অসংখ্য সু-অভিযোজিত গৃহপালিত জাতের সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রমবিন্যস্ত ধাপগুলির দ্বারা প্রাকৃতিক জাত অথবা প্রজাতিগুলি সমভাবে সৃষ্টি হবে। চূড়ান্ত ফলটি, সংগঠনের পক্ষে সাধারণভাবে অগ্রগমন হবে, কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রত্যাগমন ঘটবে।
মিঃ মিভার্ট আরও বিশ্বাস করেন এবং কয়েকজন প্রকৃতিবিদ তাঁর সঙ্গে একমত যে নূতন প্রজাতিরা “আকস্মিকভাবে এবং যুগপৎ ঘটা রূপান্তরগুলির ফলেই আবির্ভূত হয়। উদাহরণস্বরূপ, তিনি মনে করেন যে তিন আঙ্গুলযুক্ত বিলুপ্ত হিপারিওন এবং ঘোড়ার মধ্যে পার্থক্য আকস্মিকভাবেই ঘটেছিল। তিনি বিশ্বাস করতে অসুবিধা বোধ করেন যে পাখির ডানা “একটি স্পষ্টচিহ্নিত ও গুরুত্বপূর্ণ ধরনের আকস্মিক রূপান্তরের দ্বারা না হয়ে অন্য কোন উপায়ে উদ্ভূত হয়েছিল এবং বাদুড় ও টেরোড্যাক্টাইলদের ডানা সম্বন্ধেও একই মতবাদ স্পষ্টভাবে পেশ করেন তিনি। এই সিদ্ধান্ত, যা ক্রমমালায় বড়সড় ভাঙ্গন অথবা বিচ্ছিন্নতারই ইঙ্গিত দেয়, তা আমার অসম্ভব বলেই মনে হয়।
যাঁরা ক্রমিক ও মন্থর বিবর্তনে বিশ্বাস করেন, তারা নিশ্চয় স্বীকার করবেন যে বিশেষ পরিবর্তনগুলি অন্য যে কোন পরিবর্তনের মতো আকস্মিক ও বিরাট হয়ে থাকতে পারে, যা আমরা প্রকৃতিতে, এমনকি গৃহপালনেও লক্ষ্য করি। কিন্তু যেহেতু প্রজাতিরা প্রাকৃতিক অবস্থার তুলনায় গৃহপালনাধীনে অথবা চাষযোগ্য অবস্থায় আরও পরিবর্তনশীল হয়, সেহেতু এটি সম্ভবপর নয় যে এরূপ বিরাট ও আকস্মিক পরিবর্তনসমূহ প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রায়শই ঘটেছে, যেটি গৃহপালনাধীন অবস্থায় মাঝেমাঝে উদ্ভূত হয় বলে জানা গেছে। শেষোক্ত পরিবর্তনগুলির কয়েকটিকে পুনরাবৃত্তিমূলক হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে, এবং এভাবে পুনরাবির্ভূত বৈশিষ্ট্যগুলি যে অনেক ক্ষেত্রে প্রথমে ক্রমিক উপায়ে প্রাপ্ত হয়েছিল–এমনটা হওয়া অসম্ভব নয়। আরও বেশি সংখ্যককে অঙ্গবিকৃতিমূলক বলে নিশ্চয় চিহ্নিত করা যেতে পারে, যথা ছয়টি আঙ্গুলযুক্ত মানুষ, শজারু মানুষ (porcupine men), অ্যানকন ভেড়া, নিয়াটা গো-মহিষাদি ইত্যাদি; এবং এরা প্রাকৃতিক প্রজাতির থেকে বৈশিষ্ট্যে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয় বলে এরা আমাদের বিষয়টিতে অল্পই আলোকপাত করে। আকস্মিক পরিবর্তনের এই ঘটনাগুলি ব্যতিরেকে, অবশিষ্টাংশের কয়েকটি, যদি এদের প্রাকৃতিক অবস্থায় পাওয়া যায়, এদের পিতামাতার নমুনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বড়জোর সন্দেহজনক প্রজাতি সৃষ্টি করবে।