এটি কল্পনা করা সহজ নয় যে একটি ব্রিসল্স অথবা ভাইব্রেকিউলাম এবং একটি পাখির মাথার মতো একটি এ্যাডিকিউল্যারিয়াম-এর তুলনায় দুটি বস্তু আকৃতিতে আরও ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয়; তথাপি এরা প্রায় নিশ্চিতরূপে সমরূপ এবং একই সাধারণ উৎস, যেমন এদের কোষ সমেত, একটি জুঅয়েড থেকে বিকশিত হয়েছে। সুতরাং আমরা বুঝতে পারি কেমন করে এইসব অঙ্গগুলি, যেমন মিঃ বাস্ক আমাকে জানিয়েছেন, কয়েকটি ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে ক্রমে ক্রমে রূপান্তরিত হয়। এরূপে লেপ্রালিয়ার কয়েকটি প্রজাতির এ্যভিকুলারিয়ার গতিশীল ম্যান্ডিবলটি (চোয়াল) একটি ব্রিস-এর মতো এত প্রসারিত হয় যে ওপরের স্থির চঞ্চটির উপস্থিতি এর এ্যাভিকুলারিয়ার মতো প্রকৃতি নির্ধারণ করতেই শুধু সাহায্য করে। ভাইব্রেকিউলিয়ামটি এ্যাভিকুলারিয়া ধাপটির মধ্য দিয়ে অতিক্রম না করে কোষগুলির ঠোঁট থেকে প্রত্যক্ষভাবে উদ্ভূত হয়ে থাকতে পারে; কিন্তু এটি বোধহয় আরও সম্ভবপর যে এরা এই ধাপটি অতিক্রম করেছে, কারণ রূপান্তর প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপগুলির রূপান্তরকালীন সময়ে জুঅয়েড-এর অন্তর্গত কোষটির অন্য অংশগুলি কদাচিৎ তৎক্ষণাৎ তিরোহিত হয়ে থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ভাইব্রেকিউলাটির নিম্নভাগে খাঁজ-কাটা আলম্ব থাকে, যা সম্ভবতঃ স্থির চঞ্চুকে সূচিত করে; যদিও এই আলম্বটি কোন কোন প্রজাতিতে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ভাইব্রেকিউলার উদ্ভবের এই মতবাদ, যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়, অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক; কারণ যদি মনে করা হয় যে এ্যভিকুলারিয়া সম্বলিত সমস্ত প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছিল, উচ্চ কল্পনাশক্তিসম্পন্ন কেউ কখনও চিন্তা করবে না যে একটি পাখির মাথা অথবা একটি বাঁকাচোরা বাক্স বা ফণার সদৃশ একটি অঙ্গের অংশ হিসেবে প্রথমে অবস্থিত ছিল। এটি লক্ষ্য করা অতিশয় চিত্তাকর্ষক যে ব্যাপকভাবে ভিন্ন দুটি অঙ্গ এরূপে একটি সাধারণ উৎস থেকে উদ্ভূত হয়েছে; এবং কোষটির চলন্ত ঠোঁটটি জুঅয়েডের প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয় বলে, বিশ্বাস করা কষ্টকর নয় যে সমস্ত ক্রমবিন্যাসগত ধাপ, যেগুলির সাহায্যে ঠোঁটটি প্রথমে একটি এ্যাভিকুলারিয়ামের নিচের ম্যান্ডিবলে (চোয়ালে) এবং তারপর একটি দীর্ঘায়িত ব্রিস-এ রূপান্তরিত হয়েছিল, এভাবে বিভিন্ন রূপে ও বিভিন্ন অবস্থায় সুরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল।
উদ্ভিদজগতে মিঃ মিভার্ট কেবলমাত্র দুটি ঘটনার কথা প্রমাণস্বরূপ উত্থাপন করেছেন–অর্কিডের ফুলগুলির গঠন এবং আরোহী গাছগুলির চলন। প্রথমটি সম্পর্কে তিনি বলেন, “এদের উৎপত্তির ব্যাখ্যাটি সম্ভবতঃ পুরোপুরি অসন্তোষজনক–গঠনগুলির জায়মান, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রারম্ভগুলির ব্যাখ্যা করতে একেবারেই অপ্রতুল, যেগুলি তখনই উপকারে আসে যখন এরা কিছু পরিমাণে বিকশিত হয়। এই বিষয়টি নিয়ে আমি অন্যত্র বিশদভাবে আলোচনা করেছি বলে এখানে অর্কিড ফুলের সবচেয়ে অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যগুলির শুধুমাত্র একটির বিষয়ে বিস্তৃতভাবে বলব, যেমন এদের পলিনিয়া। অতিশয় বিকশিত একটি পলিনিয়াম (পরাগসমষ্টি) পরাগরেণুপুঞ্জের দ্বারা তৈরি, যা একটি স্থিতিস্থাপক দণ্ড অথবা কডিকল-এ আটকিয়ে থাকে এবং সেটি একটি আঠালো বস্তুপুঞ্জে আটকিয়ে থাকে। এভাবে পতঙ্গদের দ্বারা পলিনিয়াটি এক ফুল থেকে অন্য। ফুলের গর্ভমুণ্ডে বাহিত হয়। কোন কোন অর্কিডে পরাগরেণুপুঞ্জের কোন কডিকল থাকে না এবং রেণুগুলি সূক্ষ্ম সূতার দ্বারা বাঁধা থাকে; কিন্তু যেহেতু এগুলি অর্কিড়ে থাকে, তাই এর আলোচনা এখানে দরকার নেই; তথাপি আমি উল্লেখ করতে পারি যে অর্কিডেসি শ্রেণীর নিম্নভাগে, সিপ্রিপেডিয়ামে, আমরা দেখতে পাই সূত্রগুলি প্রথমে সম্ভবত কিভাবে বিকশিত হয়েছিল। অন্য অর্কিডগুলিতে সূত্রগুলি পরাগরেণুপুঞ্জের একটি প্রান্তে জড়িয়ে থাকে এবং এটি কডিকলের প্রথম অথবা জায়মান চিহ্ন তৈরি করে। এভাবেই কর্ডিকলের উৎপত্তি হয়েছে। এগুলি যখন বেশ দীর্ঘ এবং যথেষ্ট বিকশিত হয়, তখনও বন্ধ্যা পরাগরেণুপুঞ্জে এদের সাক্ষ্য পাওয়া যায়, যা মধ্য এবং শক্ত। অংশগুলিতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় কখনও কখনও আবিষ্কার করা যেতে পারে।
দ্বিতীয় প্রধান বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ কডিকলের প্রান্তে সংযুক্ত অল্প পরিমাণ আঠালো বস্তুটি সম্পর্কে ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলির একটি দীর্ঘ সারির বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে, যার প্রত্যেকটিই উদ্ভিদটির পক্ষে সাধারণভাবে উপকারী হয়। অন্য বর্গের অন্তর্গত অধিকাংশ ফুলে গর্ভমুণ্ড অল্প আঠালো বস্তু নিঃসরণ করে। এখন কোন কোন অর্কিডে এইপ্রকার আঠালো পদার্থ নিঃসৃত হয়, কিন্তু তিনটির মধ্যে শুধুমাত্র একটি গর্ভমুণ্ড অধিক মাত্রায় আঠালো পদার্থ নিঃসরণ করে; এবং সম্ভবতঃ অধিক নিঃসরণের ফলে এই গর্ভমুণ্ডটি বন্ধ্যা হয়। একটি পতঙ্গ এই প্রকারের একটি ফুল পরিদর্শন করার সময় কিছু আঠালো পদার্থ ঘষে তুলে নেয় এবং এভাবে একই সময়ে কিছু পরাগরেণু অন্যত্র নিয়ে যায়। এইসরল অবস্থা থেকে–যা অংসখ্য সাধারণ ফুলের থেকে অল্পই ভিন্ন হয়–শুরু করে অসংখ্য ক্রমবিন্যাসগত ধাপ থাকে, থাকে সেইসব প্রজাতি যাদের পরাগপুঞ্জগুলি খুব ছোট, মুক্ত কডিকলে শেষ হয়, আবার অন্য কিছু প্রজাতিতে বন্ধ্যা কডিকলটি অধিক রূপান্তরিত হলেও আঠালো পদার্থটিতে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থাকে। এই পরের ঘটনাগুলিতে আমরা অতিশয় বিকশিত এবং নিখুঁত অবস্থায় একটি পলিনিয়াম দেখি। যিনি নিজে অর্কিড ফুলগুলিকে ভালভাবে পরীক্ষা করবেন, তিনি ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলির উপরোক্ত সুরির অবস্থান অস্বীকার করবেন না। সারিগুলি এরকম-একটি সাধারণ ফুলের অল্প পৃথক গর্ভমুণ্ড সমেত, সূত্রগুলি দ্বারা একত্রে বাঁধা পরাগরেণুর একটি পুঞ্জ থেকে, পতঙ্গ দ্বারা বাহিত হওয়ার জন্য সুন্দরভাবে অভিযোজিত একটি অতি জটিল পলিনিয়াম পর্যন্ত; অথবা তিনি অস্বীকার করবেন না যে কয়েকটি প্রজাতিতে সমস্ত ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলি বিভিন্ন পতঙ্গদের দ্বারা এদের নিষিক্তকরণের জন্য প্রত্যেক ফুলের সাধারণ গঠন সাপেক্ষে সুন্দরভাবে অভিযোজিত হয়েছে। এই ক্ষেত্রটিতে এবং অন্যান্য প্রত্যেক ক্ষেত্রে অনুসন্ধানটি পিছনের দিকে করা যেতে পারে এবং জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে একটি সাধারণ ফুলের গর্ভমুণ্ডটি কিভাবে আঠালো হয়। কিন্তু যেহেতু আমরা জীবদের কোন গোষ্ঠীর পূর্ণ ইতিহাস জানি না, তাই প্রশ্ন করা যেমন অনর্থক, তেমনি এইসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করাও বৃথা।