কোন কোন যৌগিক প্রাণী অথবা জুফাইটদের (যেভাবে এদের নামকরণ করা হয়েছে), যেমন পলিজোয়াদের শরীরে এ্যাভিকুলারিয়া নামে একটি অদ্ভুত অঙ্গ থাকে। এগুলি বিভিন্ন প্রজাতিতে গঠনে অতিশয় ভিন্ন হয়। অতি নিখুঁত অবস্থায় এরা একটি ক্ষুদ্রকায় শকুনির মাথা ও চঞ্চুর সদৃশ হয়, যেগুলি গলার ওপর স্থাপিত এবং বিচলনে সমর্থ, একইভাবে নিচের চোয়াল বা ম্যান্ডিবলকেও বিচলনে সমর্থ। আমার দেখা একটি প্রজাতির একই শাখার ওপর এ্যাভিকুলারিয়াগুলি সামনের এবং পিছনের দিকে প্রায়শই যুগপৎ আন্দোলিত হয়, তখন নিচের চোয়াল পাঁচ সেকেন্ড ধরে প্রায় ৯০ কোণে বিস্তৃতভাবে খোলা থাকে এবং এগুলির আন্দোলন সমগ্র পলিজোয়াকে কঁপায়। একটি উঁচ দিয়ে চোয়ালগুলি স্পর্শ করা হলে এরা সেটিকে এত শক্ত করে ধরে যে শাখাঁটি আন্দোলিত হতে থাকে।
মূলতঃ প্রাণীজগতের ব্যাপকভাবে পৃথক বিভাগগুলিতে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিকশিত অঙ্গগুলির অসুবিধার প্রসঙ্গেই মিঃ মিভার্ট প্রমাণস্বরূপ এই ঘটনাটি উপস্থিত করেছেন, অঙ্গগুলি হচ্ছে পলিজোয়ার এ্যাভিকুলারিয়া এবং একিনোডার্মাটার পেডিসেলারিয়া, যেগুলিকে তিনি মূলতঃ একইরূপ” বলে বিবেচনা করেছেন। কিন্তু গঠনটি প্রসঙ্গে আমি ট্রাইড্যাক্টাইল পেডিকুলারিয়া ও এ্যাভিকুলারিয়ার মধ্যে সাদৃশ্য দেখি না। বরং পরেরটি ক্রাস্টেসিয়ানদের দাঁড়া অথবা সাঁড়াশির সঙ্গে গভীরভাবে সদৃশ হয়; এবং এই সদৃশতাকেও মিঃ মিভার্ট একইরকম যথাযথভাবে একটি বিশেষ অসুবিধা। হিসাবে প্রমাণস্বরূপ উপস্থিত করতে পারেন; অথবা এমনকি একটি পাখির মাথা ও চঞ্চুর সঙ্গে এদের সদৃশতাকেও। মিঃ বাস্ক, ডঃ স্মিট এবং ডঃ নিটসের মতো প্রকৃতিবিদরা, যাঁরা এই গোষ্ঠীগুলিকে যত্ন সহকারে পর্যবেক্ষণ করেছেন, বিশ্বাস করেন যে এ্যাভিকুলারিয়াগুলি জুফাইট গঠনকারী জুঅয়েড এবং এদের কোষগুলির প্রতিরূপ; কোষটির বিচলনশীল ঠোঁট অথবা ঢাকনাটি এ্যাভিকুলারিয়ামটির নিচের এবং বিচলনশীল ম্যান্ডিবলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে, মিঃ বাস্ক একটি জুঅয়েড এবং একটি এ্যাভিকুলারিয়াসের মধ্যে বর্তমানে অবস্থিত কোন ক্রমবিন্যাসগত ধাপ আছে কিনা। জানেন না। অতএব কল্পনা করা অসম্ভব যে কার্যোপযোগী কোন্ ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলির দ্বারা একটিকে অন্যটিতে রূপান্তরিত করা যেতে পারত : কিন্তু এর দ্বারা কোন মতেই এটি বোঝায় না যে এরূপ ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলি বিদ্যমান থাকেনি।
যেহেতু কাস্টোসিয়ানদের (খোলকী প্রাণীদের) সাঁড়াশিগুলি পলিজোয়ার এ্যাভিকুলারিয়ার সঙ্গে কিছু মাত্রায় সদৃশ হয় এবং দুটিই সাঁড়াশির মতো কাজ করে, তাই এটি দেখানো সময়োপযোগী হতে পারে যে প্রথমটির ক্ষেত্রে কার্যোপযোগী ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলির দীর্ঘ সারি এখনও বর্তমান। প্রথম এবং সরলতম ধাপটিতে, প্রত্যঙ্গের শীর্ষ দেহখণ্ডটি হয় প্রশস্ত সর্বশেষ দেহখণ্ডটির বর্গাকার শীর্ষের দিকে অথবা সমগ্র পার্শ্বের উল্টোদিকে বন্ধ হয় এবং এরূপে একটি বস্তুকে আঁকড়িয়ে ধরতে সমর্থ। হয়; কিন্তু প্রত্যঙ্গটি তখনও চলনের একটি অঙ্গ হিসাবে কার্যোপযোগী থাকে। এর পর আমরা দেখি যে প্রশস্ত সর্বশেষ দেহখণ্ডটির একটি কোণ (corner) অল্প স্পষ্ট, কোন কোন সময় অনিয়মিত দাঁতগুলি দ্বারা সজ্জিত এবং এগুলির সামনে শীর্ষ দেহখণ্ডটি বন্ধ। হয়। এর আকার এবং শীর্ষ দেহখণ্ডটির আকারের সঙ্গে এই প্রক্ষেপণটির আয়তন বৃদ্ধির দ্বারা অল্প রূপান্তরিত ও উন্নত সাঁড়াশিগুলি বেশি বেশি নিখুঁত হয়, যতক্ষণ না আমরা অবশেষে গলদা চিংড়িমাছের দাঁড়ার মতো একটি যন্ত্র পাই; এবং এইসব ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলি বাস্তবে খুঁজে বের করা যেতে পারে।
এ্যাভিকুলারিয়া ছাড়া, পলিজোয়াতে অদ্ভুত একটি অঙ্গ থাকে, যাকে বলা হয় ভাইব্রেকিউলা। এটি সাধারণতঃ লম্বা লোম দ্বারা তৈরি, যেগুলি গতিশীল এবং সহজেই উত্তেজিত হয়। আমার পরীক্ষিত একটি প্রজাতির ভাইব্রেকিউলাটি অল্প বাঁকা ছিল এবং বাইরের ধারটি ছিল ক্রকচ; এবং একই পলিজোয়া সম্প্রদায়ে এদের প্রতিটি প্রায়শই যুগপৎ বিচলনশীল হয়; এরূপে লম্বা দাঁড়ের মতো কাজ করে, এরা আমার অণুবীক্ষণ যন্ত্রের অবজেক্ট-গ্লাসের ওপর দিয়ে দ্রুতগতিতে পালিয়ে গিয়েছিল। একটি শাখা এর মুখের ওপর রাখার পর ভাইব্রেকিউলাটি জট পাকিয়ে গিয়েছিল এবং মুক্ত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। মনে করা হয় যে এরা আত্মরক্ষার জন্য কাজ করে, এবং মিঃ বাস্ক বলেছেন, “যখন এদের টেন্টাকলগুলি বাইরে থাকে তখন কোষগুলির সূক্ষ্ম অধিবাসীদের, যা ক্ষতিকর হতে পারত সেগুলোকে অপসারণ করে পলিজোয়া সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠের ওপর দিয়ে যত্নসহকারে এবং ধীরগতিতে গমন করার” জন্য টেন্টাকলগুলি ব্যবহৃত হয়। ভাইব্রেকিউলার মতোই এ্যাভিকুলারিয়াটিও সম্ভবতঃ আত্মরক্ষার প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু এরা ক্ষুদ্র জীবন্ত প্রাণীদের ধরে ও বধ করে-মনে করা হয় যে এরা জলের প্রবাহের দ্বারা জুঅয়েডদের টেন্টাকলের নাগালের মধ্যে এসে পড়ে। কোন কোন প্রজাতিতে এ্যাভিকুলারিয়া এবং ভাইব্রেকিউলা উভয়ই থাকে, কোন কোন প্রজাতিতে এ্যাভিকুলারিয়া এবং অল্প কয়েকটিতে কেবলমাত্র ভাইব্রেকিউলা থাকে।