দেহাঙ্গের অন্য একটি উদাহরণ আমি দিতে পারি, যার উৎপত্তি হয়েছে কেবলমাত্র ব্যবহার ও স্বভাবের জন্য। আমেরিকার কতিপয় বানরের লেজের প্রান্তভাগ চমৎকার ও নিখুঁতভাবে আঁকড়িয়ে ধরতে সক্ষম অঙ্গে রূপান্তরিত হয়েছে এবং এটি তাদের পঞ্চম হাত হিসাবে ব্যবহৃত হয়। জনৈক সমালোচক, যিনি মিঃ মিভার্টের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একমত, এই দেহাঙ্গটির বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, “এটি বিশ্বাস করা অসম্ভব যে, যে কোন বয়সে আঁকড়িয়ে ধরার প্রথম দৃষ্ট জায়মান প্রবণতাটি এর অধিকারী এককদের জীবন রক্ষা করতে পারত, অথবা বংশধর পাওয়া ও পালন করার সম্ভাবনাকে আনুকূল্য প্রদান করতে পারত।” কিন্তু এরূপ বিশ্বাসের কোন প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবতঃ স্বভাবই এ-কাজ সম্পাদনের পক্ষে যথেষ্ট। এবং এর প্রায় নিশ্চিত অর্থ হল যে এর ফলে। তাদের অল্প বা বৃহৎ কিছু উপকার অবশ্যই ঘটবে। ব্রেহম আফ্রিকার একটি বানরশাবক (সার্কোপিথেকাস) দেখেছিলেন, যে তার মাকে নিচের দিকে হাত দিয়ে আঁকড়িয়ে ধরে ছিল এবং একই সময়ে বঁড়শির মতো করে নিজের ছোট লেজটি দিয়ে মায়ের লেজটি আঁকড়িয়ে ধরে ছিল। অধ্যাপক হেল্প কয়েকটি মেঠো ইঁদুরকে (মুস মেসোরিয়াস) আটক করে রেখেছিলেন, যাদের গঠনগতভাবে আঁকড়িয়ে ধরার জন্য লেজ ছিল না; কিন্তু তিনি প্রায়শই লক্ষ্য করতেন যে এরা খাঁচায় রাখা গুল্মের শাখাপ্রশাখাগুলিকে লেজ দিয়ে পাকিয়ে ধরত এবং এভাবে আরোহণ করার চেষ্টা করত। ডঃ গুনথার-এর কাছ থেকে এরূপ একটি ঘটনার বিবরণ শুনেছিলাম, যিনি একটি ইঁদুরকে ঝুলে থাকতে দেখেছিলেন। মেঠো ইঁদুররা যদি আরও বৃক্ষবাসী হয়, তাহলে এদের লেজ সম্ভবতঃ গঠনগতভাবে আঁকড়িয়ে ধরার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে, যেমন একই বর্গের কিছু সদস্যের ক্ষেত্রে হয়। শৈশবাবস্থায় এদের স্বভাবসমূহ বিবেচনা করে কেন সাঁকোপিথেকাসদের এরূপ ছিল না, তা বলা কষ্টকর। তবে এটি সম্ভবপর যে এই বানরদের লম্বা লেজ আঁকড়িয়ে ধরার অঙ্গের তুলনায় লম্বা লাফ দেওয়ার জন্য ভারসাম্যমূলক অঙ্গ হিসেবে আরও উপকারী হতে পারে।
সমগ্র স্তন্যপায়ী শ্রেণীতে স্তন্যগ্রন্থি থাকা একটি সাধারণ ঘটনা এবং এটি এদের বাঁচার জন্য অপরিহার্য; সুতরাং নিশ্চয় এগুলি কোন দূর অতীতে উদ্ভূত হয়েছিল এবং এদের উদ্ভব পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা সঠিকভাবে কিছু জানি না। মিঃ মিভার্ট প্রশ্ন করেছেন, “এটা কি আদৌ সম্ভব যে নিজের মায়ের দুর্ঘটনাজনিত অতি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অন্তস্তক থেকে অতি অল্প পুষ্টিকর রস হঠাৎ চুষে খেয়ে কোন প্রাণীর শাবকেরা ধ্বংসের হাত থেকে কখনও রক্ষা পেয়েছে। এমনকি যদি তা ঘটত, তাহলেও এরূপ একটি পরিবর্তনের চিরস্থায়ীত্বের সম্ভাবনা ছিল কি?” ঘটনাটি এখানে স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়নি। অধিকাংশ বিবর্তনবাদীরা স্বীকার করেন যে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা একটি মারসুপিয়াল আকার থেকে উদ্ভূত হয়েছে, এবং যদি তা-ই হয়, তাহলে স্তনগ্রন্থিগুলি প্রথমে মারসুপিয়াল থলির মধ্যে উদ্ভূত হয়ে থাকবে। মাছের ক্ষেত্রে (হিপোক্যাম্পাস) এরকম প্রকৃতির একটি থলির মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা হয় এবং কিছু সময়ের জন্য বাচ্চা পালিত হয়; আমেরিকার প্রকৃতিবিদ মিঃ লক হুড শাবকের বিকাশ সম্বন্ধে যা দেখেছেন তা থেকে বিশ্বাস করেন যে এটি থলির কিউটেনিয়াস গ্রন্থির রস দ্বারা পুষ্ট হয়। এখন স্তন্যপায়ীদের আদিম পূর্বপুরুষদের সম্বন্ধে, এটি কি অন্ততঃ সম্ভবপর নয় যে শাবকরা এভাবে পুষ্ট হয়ে থাকবে? এবং এই ঘটনাটিতে, এককরা, যারা দুধের প্রকৃতির সমগোত্রীয় হওয়ার জন্য কোন মাত্রায় অথবা পদ্ধতিতে সবচেয়ে পুষ্টিকর রস নিঃসরণ করে, একটি নিকৃষ্টতর রসনিঃসরণকারী এককদের তুলনায় পরিশেষে ভালভাবে পুষ্ট অসংখ্য বংশধর লালনপালন করে থাকবে; এবং এরূপে ত্বকীয় গ্রন্থিগুলি, যেগুলি স্তনগ্রন্থির সমগোত্রীয়, উন্নত হয়ে থাকবে অথবা আরও কার্যকরী হয়ে থাকবে। এটি বিশিষ্টতার ব্যাপক অর্থে নীতিটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে থলিটির কোন একটি স্থানের উপর অবস্থিত গ্রন্থিগুলি অন্য অবশিষ্টাংশদের তুলনায় আরও ভালভাবে বিকশিত হয়ে থাকবে; এরপর এরা একটি স্তন সৃষ্টি করে থাকবে, কিন্তু প্রথমে কোন স্তনবৃন্ত ছাড়াই; যেমন আমরা স্তন্যপায়ী শ্রেণীর নিচের দিকে অর্নিথোরিনকাসে দেখি কোন্ মাধ্যমের দ্বারা একটি জায়গার উপর গ্রন্থিগুলি অন্যদের তুলনায় বিশিষ্টতর হয়েছে, অংশত বৃদ্ধির ক্ষতিপূরণ, ব্যবহারের প্রভাব অথবা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে কিনা, তা আমি সঠিকভাবে বলতে পারছি না।
শিশুরা একই সময়ে নিঃসরিত রস পান করতে সমর্থ না হলে স্তনগ্রন্থিগুলির বিকাশ কোন উপকারে আসবে না এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারবে না। এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে কেমন করে শিশু-স্তন্যপায়ী প্রাণীরা সহজাত স্বভাবনুযায়ী স্তনটি চুষতে শেখে, যখন এটি জানা আছে যে কেমন করে ডিমের অভ্যন্তরে শাবক মুরগীরা তাদের বিশেষভাবে অভিযোজিত চক্ষু দ্বারা মৃদু আঘাত করে ডিমের খোলস ভাঙ্গতে শিখেছে অথবা খোলস ত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টা পর কেমন করে খাবার কুড়াতে শিখেছে। এইসব ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে সম্ভবপর সমাধান হল–যে স্বভাবটি আরও বেশি বয়সে অনুশীলনের দ্বারা প্রথমে অর্জিত হয়েছিল এবং পরে প্রাথমিক বয়সে বংশধরে বংশগতভাবে প্রেরিত হয়েছিল। কিন্তু শাবক ক্যাঙ্গারুরা চুষতে পারে না, এরা কেবল মায়েদের স্তনবৃন্তে আটকিয়ে থাকে, যে মায়েরা নিজেদের অসহায়, অর্ধসৃষ্ট বংশধরদের মুখে দুধ ঢেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এ বিষয়ে মিঃ মিভার্ট উল্লেখ করেছেন, “বিশেষ ব্যবস্থা না থাকলে, শ্বাসনালীতে দুধ প্রবেশের ফলে শাবকরা নিশ্চয় শ্বাসরুদ্ধ হবে। কিন্তু একটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। স্বরযন্ত্রটি এত লম্বা যে এটি নাসিকার প্রবেশদ্বারের পিছনের প্রান্ত পর্যন্ত উঠে আসে এবং এভাবে ফুসফুসে অবাধে বায়ু প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করে দেয়, যখন এই লম্বা স্বরযন্ত্রের প্রত্যেক পাশ দিয়ে দুধ অবাধে প্রবেশ করে এবং এটির পিছনের খাদ্যনালীতে নিরাপদে পৌঁছায়।” এরপর মিঃ মিভার্ট। প্রশ্ন করেন কেমন করে প্রাকৃতিক নির্বাচন বয়স্ক ক্যাঙ্গারুদের (এবং অন্য অধিকাংশ স্তন্যপায়ীদের, এটি ধরে নিয়ে যে এরা একটি মারসুপিয়াল আকার থেকে উদ্ভূত হয়েছে), “এই অন্ততঃ সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ এবং অক্ষত দেহগঠনটিকে অপসারণ করেছিল? উত্তরে বলা যেতে পারে যে বহু প্রাণীর ক্ষেত্রে অত্যাধিক প্রয়োজনীয় কণ্ঠস্বরকে ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করা যায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত স্বরযন্ত্র নাসাপথে প্রবেশ না করে, এবং অধ্যাপক ফ্লাওয়ার আমাকে জানিয়েছেন যে একটি প্রাণীর শক্ত খাদ্য গেলার ব্যাপারে এই দেহগঠনটি বিরাট ভূমিকা পালন করেছে।