আমাদের মনে রাখা উচিত যে এই প্রাথমিক বয়সে করোটিটি কোমলাস্থিময় ও নমনীয় হয়, সেজন্য এটি মাংসপেশীর প্রক্রিয়ায় নতিস্বীকার করে। উচ্চতর প্রাণীদের ক্ষেত্রে জানা গেছে যে এমনকি শৈশবাবস্থার পরেও, চামড়া বা মাংসপেশী ব্যাধি অথবা কোন দুর্ঘটনার ফলে স্থায়ীভাবে সংকুচিত হলে, করোটিটি তার প্রভাবে পরিবর্তিত হয়। লম্বা কানওয়ালা খরগোশদের ক্ষেত্রে, যদি একটি কান সামনের ও নিচের দিকে আলগাভাবে ঝোলে, তাহলে তার ওজন করোটির সব হাড়গুলিকে একই পার্শ্বে সামনের দিকে টানে, যার একটি ছবি আমি দেখেছি। মাম বলেন যে পার্চ, স্যালমন এবং অন্য কতিপয় প্রতিসম বা সুষম মাছের নূতন শাবকদের তলদেশে বা পাদদেশে মাঝেমাঝে একদিকে বিশ্রাম নেওয়ার স্বভাব থাকে; এবং তিনি লক্ষ্য করেছেন যে এরা প্রায়শই এদের নিচের চোখটিকে উপরের দিকে দেখার জন্য সঙ্কুচিত করে এবং তার ফলে করোটিটি বেঁকে যায়। তবে, এই মাছগুলি শীঘ্রই লম্বালম্বি অবস্থায় নিজেদের রাখতে সমর্থ হয়, ফলে কোন স্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি হয় না। বিপরীতক্রমে প্লিইরোনেক্টিডিদের ক্ষেত্রে, যতই বয়স বাড়ে, শরীরের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত চেটালো অবস্থার জন্য এরা স্বভাবগতভাবে ততই একদিকে বিশ্রাম নেয়, এবং মাথার আকৃতিতে এবং চোখগুলির অবস্থানে একটি স্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি হয়। উপমাটি বিচার করলে বোঝা যায়–বিচ্যুতির প্রবণতাটি নিঃসন্দেহেই বংশগতির নীতি অনুযায়ী বৃদ্ধি পাবে। অন্য কয়েকজন প্রকৃতিবিদের বিপক্ষে, স্কিওড়টে বিশ্বাস করেন যে গ্লিউরোনেক্টিডিরা এমনকি ভূণেও সম্পূর্ণরূপে সুষম নয়; এবং যদি তাই হয়, তাহলে আমরা বুঝতে পারি কেন শৈশব অবস্থায় কোন কোন প্রজাতি স্বভাবগতভাবে বাঁদিকে পতিত হয় ও বিশ্রাম নেয় এবং অন্য প্রজাতিরা ডান দিকে। উপরের মতবাদটির সমর্থনে মাম আরও বলেন যে বয়স্ক ট্র্যাকিপটেরাসে। আর্টিকাস, যা প্লিউরোনেক্টিডিদের সদস্য নয়, জলের তলদেশে বাঁদিকে ফিরে বিশ্রাম নেয় এবং জলে কোনাকুনিভাবে সাঁতার কাটে; এবং এই মাছটির মাথার দুটি দিক কিছু পরিমাণে অসমান। মাছের বিষয়ে সুবিখ্যাত বিশেষজ্ঞ ডঃ গুনথার, মামের প্রবন্ধের সারাংশ লেখার পর উপসংহারে মন্তব্য করেন যে লেখক প্লিউরানেক্টিডিদের অস্বাভাবিক অবস্থার অতি সরল ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
এভাবে আমরা দেখি যে মাথার একদিক থেকে অন্যদিকে চোখটির ঘোরার প্রথম ধাপগুলি স্বভাবের জন্য হয় বলে মনে করা যেতে পারে, যাকে মিঃ মিভার্ট ক্ষতিকর হবে বলে মনে করেন এবং যা একক এবং প্রজাতির পক্ষে উভয় চোখ দিয়ে উপরের দিকে দেখার চেষ্টা এবং তলদেশে একদিকে বিশ্রামের চেষ্টার জন্য নিঃসন্দেহেই উপকারী। হয়। কয়েক প্রকার চেপ্টা মাছের মুখ নিচের পৃষ্ঠের দিকে বক্র হওয়া, এর ওপর চোয়ালের হাড়গুলি আরও বলবান ও কার্যকরী হওয়া, ডঃ ট্রাকুএয়ারে অনুমান অনুযায়ী, অন্যদিকের তুলনায় ভূমিতে সহজে খাদ্য গ্রহণ করার জন্য মাথার চক্ষুহীন দিক–এইসব বিষয়গুলিকে আমরা ব্যবহারের আনুবংশিক প্রভাবের ফল হিসাবে বিবেচনা করতে। পারি। বিপরীতক্রমে, পার্শ্ব পাখনাগুলি সমেত শরীরের সমগ্র নিম্নার্ধের কম বিকাশের জন্য দায়ী অব্যবহার; যদিও ইয়ারেল মনে করেন যে এইসব পাখনাগুলির হ্রাসপ্রাপ্ত আকার মাছটির পক্ষে সুবিধাজনক হয়, কারণ ‘উপরের বড় পাখনাগুলির তুলনায় এগুলির কাজ করার কম সুযোগ থাকে। বোধহয় প্লেআইস মাছের দুটি চোয়ালের উপরের অর্ধাংশে চার থেকে সাতটি অনুপাতে কম সংখ্যক দাঁত থাকা এবং নিম্নর্ধাংশে পঁচিশ থেকে ত্রিশটি দাঁত থাকা অব্যবহারের ফলেই হয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে। অধিকাংশ মাছ ও অনেক অন্য প্রাণীদের ভেন্ট্রাল বা অঙ্কীয় বা উপরের দিকের পৃষ্ঠের রংহীন অবস্থা দেখে আমরা যুক্তিসঙ্গতভাবে মনে করতে পারি যে চেপ্টা মাছের ঐদিকে। রঙের অনুপস্থিতি, ডান বা বাঁ যেদিকেই হোক না কেন, যা সবচেয়ে নিচের দিকে থাকে, আলোর অভাবের জন্য হয়। কিন্তু এটি অনুমান করা যেতে পারে না যে সোলের উপরের দিকে ছোট ছোট ফুটকির মতো অদ্ভুত চিহ্ন, যা সমুদ্রের বালুময় পৃষ্ঠের মতো, অথবা যেমন সম্প্রতি পাউচেট দেখিয়েছেন, পারিপার্শ্বিক উপরিতল অনুযায়ী কয়েকটি প্রজাতির গাত্রবর্ণ পরিবর্তন করার ক্ষমতা, অথবা টার্বোটের ওপরের পৃষ্ঠে অস্থিময় টিউবারকলদের উপস্থিতি আলোর জন্য হয়। এখানে প্রাকৃতিক নির্বাচন সম্ভবতঃ এদের জীবন-স্বভাবে এইসব মাছের আকারকে এবং অন্য অনেক বৈশিষ্ট্যকে অভিযোজিত করতে ভূমিকা পালন করে। আমি আগেই বলেছি যে আমাদের মনে রাখা উচিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলির বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যবহারের এবং সম্ভবতঃ এগুলির অব্যবহারের আনুবংশিক। প্রভাবসমূহ প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা শক্তিশালী হবে। কারণ সঠিক দিকে সমস্ত স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন এরূপে সংরক্ষিত হবে; এভাবে সেইসব এককরা সংরক্ষিত হবে যারা যে কোন একটি অঙ্গের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও উপকারী ব্যবহারের প্রভাবসমূহকে উচ্চমাত্রায় বংশগতভাবে প্রেরণ করে। প্রত্যেক বিশেষ ক্ষেত্রে, ব্যবহারের প্রভাবসমূহে কতখানি আরোপ করা যায় এবং কতখানি প্রাকৃতিক নির্বাচনে আরোপ করা যায়, তা নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব।