এভাবে আমরা দেখি যে সাধারণ রাজহংসের মতো তৈরি এবং কেবলমাত্র ঘাস খাওয়ার জন্য অভিযোজিত একটি চঞ্চু সম্বলিত হাঁস গোত্রের একটি সদস্য অথবা এমনকি কম উন্নত ল্যামেলা সমেত চঞ্চু সম্বলিত একটি সদস্য অল্প পরিবর্তনগুলির দ্বারা ইজিপ্সীয় রাজহাঁসের মতো একটি প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকতে পারে, সেখান থেকে সাধারণ পাতিহাঁসের মতো কোন প্রজাতিতে, অবশেষে সোভেলার-এর মতো একটি প্রজাতিতে যার চঞ্চটি শুধুমাত্র কাদাজল ছিটানোর জন্যই অভিযোজিত হয়ে থাকবে; কারণ এই পাখিটি শক্ত খাদ্য অধিকার করতে ও ছিঁড়তে বঁড়শির মত অগ্রভাগ ছাড়া এর চঞ্চটির কোন অংশকে কদাচিৎ ব্যবহার করতে পারত। আমি আরও বলতে পারি, একটি রাজহাঁসের চঞ্চটির কোন অংশকে কদাচিৎ ব্যবহার করতে পারত। আমি আরও বলতে পারি, একটি রাজহাঁরে চথুটিও অল্প পরিবর্তন দ্বারা একটিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকতে পারত, যার চঞ্চুতে মার্গানসের (একই গোত্রের একটি সদস্য) চঞ্চুর মতো স্পষ্ট এবং বাঁকা দাঁত থাকে, যা জীবন্ত মাছ ধরতে ব্যাপকভাবে ভিন্ন উদ্দেশ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়।
তিমির বিষয়ে ফিরে আসা যাক। হাইপারুডন বাইডেন-এর কার্যক্ষম প্রকৃত দাঁত নেই, কিন্তু লেসপেডের মতানুসারে এর তালুটি অমসৃণ এবং ছোট, অসমান, শক্ত হর্ন যুক্ত। অতএব মনে করা অসম্ভব নয় যে কতিপয় আদি সিটেসিয়ান আকারের কয়েকটির তালুতে একইরূপ হর্ন ছিল, তা সুবিন্যস্তরূপে স্থাপিত ছিল এবং রাজহাঁসের চঞ্চুর নবগুলির মতো তাদের খাদ্য সংগ্রহ করতে ও ছিঁড়তে সাহায্য করেছিল। যদি এরূপ হয়, তাহলে অস্বীকার করা যায় না যে বৈশিষ্ট্যসূচক লক্ষণগুলি পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ল্যামেলায় রূপান্তরিত হয়ে থাকতে পারে এবং ইজিপ্সীয় রাজহংসের মত বিকশিত হয়ে থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে এরা বিভিন্ন বস্তুকে ধরা ও জল ছিটানো উভয় কাজেই ব্যবহৃত হয়ে থাকবে। এরপর এগুলি গৃহপালিত হাঁসের ল্যামেলার মত ল্যামেলাতে এবং এইভাবে ক্রমান্বয়ে আরও রূপান্তরিত হয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না এটি সোভেলার-এর ল্যামেলার মতো হয়ে উঠেছে, যাতে করে এটি শুধুমাত্র জল ছিটানোর যন্ত্র হিসেবেই ব্যবহৃত হতে পারবে। এই অবস্থা থেকে যেখানে ল্যামেলাগুলি ব্যালেনপটেরা রসট্রাটার টাকরার হাড়ের প্লেটগুলির দৈর্ঘ্যের দুই-তৃতীয়াংশ হবে, এখনও পর্যন্ত সেটাসিয়ানদের ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারা ক্রমবিন্যাসগত ধাপগুলি গ্রীনল্যান্ড তিমির টাকরার হাড়ের বিশাল প্লেটগুলির দিকে অগ্রসর হয়। অথবা সন্দেহ করার কারণ নেই যে এই বিন্যাসের প্রতিটি ধাপ কোন কোন আদিম সেটাসিয়ানদের ক্ষেত্রে, যাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি কার্যপ্রণালী বিকাশের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মন্থরভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তেমনই কার্য-উপযোগী হয়ে থাকতে পারত, যেমন হাঁস গোত্রের বিভিন্ন বর্তমান সদস্যদের চঞ্চুতে ক্রমবিন্যাসগুলি হয়েছে। স্মরণ রাখা উচিত যে হাঁসের প্রতিটি প্রজাতিকে কঠোর অস্তিত্বের সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয় এবং এদের দেহকাঠামোর প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন এদের জীবন-পরিবেশের সঙ্গে সুন্দরভাবে অভিযোজিত হয়ে থাকবে।
প্রিউরোনেক্টিডি অথবা চেপ্টা মাছরা তাদের অপ্রতিসম দেহের জন্য সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এরা একদিকে শুয়ে ঘুমোয়-অধিক সংখ্যক প্রজাতি বাঁদিকে, কিন্তু কতিপয় ডানদিকে; মাঝেমাঝে বিপরীত ঘটনাও ঘটে। নিচের অথবা বিশ্রামপৃষ্ঠটি প্রথম দর্শনে একটি সাধারণ মাছের ভেনট্রাল পৃষ্ঠের মতো মনে হয় : এটির রং সাদা, উপরের পৃষ্ঠের তুলনায় অনেক বিষয়ে কম বিকশিত, পার্শ্ব পাখনাগুলি প্রায়শই ছোট আকারের। কিন্তু চোখগুলি অতি অদ্ভুত প্রকৃতির হয়, কারণ এরা উভয়েই মাথার উপর দিকে অবস্থিত। তবে ছোটবেলায় এরা পরস্পর মুখোমুখী থাকে, তখন দেহটি প্রতিসম হয় এবং উভয় পৃষ্ঠ সমানভাবে রঞ্জিত হয়। নিচের দিকের প্রকৃত চোখটি শীঘ্রই উপরের দিকে মাথার চতুর্দিকে ধীরে ধীরে চলতে আরম্ভ করে; কিন্তু করোটির মধ্য দিয়ে যেতে পারে না, যা আগে মনে করা হত। এটি সুস্পষ্ট যে নিচের চোখটি যদি এভাবে না ঘোরে, তাহলে মাছটি তার স্বভাবমতো একদিকে শুয়ে থাকলে এটি ব্যবহার করতে পারত না। নিচের চোখটির বালুময় তলদেশে ঘষে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। নিজেদের জীবন স্বভাবের জন্য চেটাল ও অপ্রতিসম গঠনের দ্বারা প্লিউরোনেক্টিডি মাছেরা যে সুন্দরভাবে অভিযোজিত হয়েছে, তা কতিপয় প্রজাতির, যথা সোল, ফ্লাউন্ডার প্রভৃতির সহজলভ্য হওয়া থেকে স্পষ্ট। শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং ভূমি থেকে খাদ্য খাওয়ার জন্যই সম্ভবতঃ প্রধান সুবিধাগুলি অর্জিত হয়েছিল। তবে, স্কিওডসে মন্তব্য করেছেন, গোত্রটির বিভিন্ন সদস্যরা ‘হিপোগ্লোসাস পিনগুইস থেকে, যা ডিম পরিত্যাগ করার পর আকারটিকে কোন গুরুত্বপূর্ণ মাত্রায় পরিবর্তন করে না, সোল পর্যন্ত, যা সম্পূর্ণরূপে একদিকে নিক্ষিপ্ত হয়, ক্রমিক উত্তরণ প্রদর্শনকারী আকারদের একটি দীর্ঘ সারি’ উপস্থিত করে।
মিঃ মিভার্ট এই বিষয়টি ধরেছেন এবং বলেছেন যে চোখের অবস্থানের একটি আকস্মিক স্বতঃস্ফূর্ত রূপান্তর কদাচিৎ কল্পনাসাধ্য। এ বিষয়ে আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তারপর তিনি আরও বলেছেন : ‘চলাচল যদি পর্যায়ক্রমিক হয়, তাহলে কেমন করে মাথার অন্যদিকে ঘোরার ক্ষণিক সময়ে একটি চোখের এরূপ চলাচল এককটির পক্ষে উপকারী হয়, তা বাস্তবিকই স্পষ্ট নয়। এমনকি মনে হয় যে এরূপ একটি সদ্যজাত রূপান্তর বরং নিশ্চয় ক্ষতিকর হয়ে থাকবে। তিনি নিশ্চয়ই মাম (Malm) কর্তৃক ১৮৬৭ সালে প্রকাশিত বিস্ময়কর পর্যবেক্ষণগুলিতে এই আপত্তির একটি উত্তর পেয়ে থাকবেন। অতি শৈশবে এবং যখন প্রতিসম অবস্থায় থাকে, তখন মাথার বিপরীতদিকে অবস্থিত চোখগুলি সমেত প্রিউরোনেক্টিডিরা তাদের শরীরের অত্যধিক গভীরতার জন্য, পার্শ্ব পাখনাগুলির ছোট আকারের জন্য এবং পটকা না থাকার জন্য দীর্ঘসময় লম্বালম্বি অবস্থানে থাকতে পারে না। অতএব পরিশ্রান্ত হওয়ার পর তলদেশের একদিকে পতিত হয়। মাম-এর পর্যবেক্ষণানুসারে, এরূপ বিশ্রামের সময় এরা উপরের দিকে দেখার জন্য নিচের চোখটিকে উপরদিকে ঘোরায় এবং এত সবলভাবে তা করে যে চোখটি অক্ষের উপরের অংশটিকে শক্তভাবে চাপ দেয়। সাধারণভাবে দেখা যায় যে এর ফলশ্রুতিতে চোখগুলির মধ্যেকার কপালটি, প্রস্থে অস্থায়ীভাবে সঙ্কুচিত হয়। মাম একবার দেখেছিলেন একটি শিশু মাছ সত্তর ডিগ্রি কৌণিক দূরত্বের মাধ্যমে নিচের চোখটিকে ওঠায় ও নামায়।