তিমির টাকরার হাড়টি (baleen) সম্পর্কে মিঃ মিভার্ট মন্তব্য করেন যে যদি এটি “উপকারী হিসেবে এত বিরাট আকার ও বিকাশ একদা প্রাপ্ত হয়ে থাকে, তাহলে কার্যকারিতার সীমার মধ্যে এর সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি কেবলমাত্র প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারাই ত্বরান্বিত হবে। কিন্তু এরূপ উপকারী বিকাশের আরম্ভ কিভাবে হয়?” উত্তরে প্রশ্ন করা। যেতে পারে-টাকরার হাড় সমেত তিমিদের আদিম পূর্বপুরুষরা কেন একটি হাঁসের ল্যামেলেটেড ঠোঁটের মতো মুখের অধিকারী হয় না? তিমির মতো হাঁসরা কাদা ও জল তুলে ছিটিয়ে জীবনধারণ করে, এবং গোত্রটিকে কোন কোন সময় ক্রিবলেটর্স অথবা সিফটার (ছাঁকনি) বলা হয়। আশা করি এটি বললে আমাকে ভুল বোঝা হবে না যে তিমিদের পূর্বপুরুষরা একটি হাঁসের চঞ্চুর মতো পাতলা পাত সমেত মুখের প্রকৃতই অধিকারী ছিল। আমি শুধু দেখাতে চাই যে এটি অবিশ্বাস্য নয়, এবং গ্রীনল্যান্ডে তিমির টাকরার হাড়ের অসংখ্য প্লেটগুলি সূক্ষ্ম ক্রমিক ধাপ দ্বারা এভাবে ল্যামেলাগুলি থেকে বিকশিত হয়ে থাকবে, যার প্রত্যেকটিই তার অধিকারীর পক্ষে উপকারী।
একটি সোভেলার হাঁসের (স্প্যাটুলা ক্লিপিয়েটা) চক্ষুটি একটি তিমির মুখের তুলনায় আরও সুন্দর ও জটিল গঠনের। ওপরের চোয়াল প্রত্যেক ধারে একখানি চিরুনির মতো ১৮৮টি পাতলা, নমনীয় ল্যামেলা দ্বারা তৈরি, যা তীক্ষ্মতার জন্য তির্যকভাবে ঢালু এবং মুখের লম্বা অক্ষের সঙ্গে তির্যকভাবে অবস্থিত। এগুলি তালু থেকে উদ্ভূত এবং চোয়ালের পার্শ্বে নমনীয় ঝিল্লি দ্বারা যুক্ত থাকে। মাঝখানেরগুলি দীর্ঘতম, দৈর্ঘ্যে প্রায় এক ইঞ্চির এক-তৃতীয়াংশ এবং এরা কিনারার নিচে ১৪ ইঞ্চি বাইরে থাকে। এদের পাদদেশে তির্যক ও আড়াআড়িভাবে যুক্ত ল্যামেলার একটি অতিরিক্ত ছোট সারি থাকে। এইসব কতিপয় বিষয়ে এরা একটি তিমির টাকরার হাড়ের প্লেটগুলির সদৃশ হয়। কিন্তু চঞ্চুর প্রান্তদেশের দিকে এরা অতিশয় ভিন্ন হয়, কারণ এরা সোজাভাবে নিচের দিকের পরিবর্তে ভিতরের দিকে প্রসারিত। সোভেলার-এর সমগ্র মাথাটি, যদিও তুলনামূলকভাবে কম ভারী, মাঝারি ধরনের বৃহৎ ব্যালানপটেরা রসট্রেটার মাথার দৈর্ঘ্যের এক-অষ্টাদশাংশ হয়, এই প্রজাতির টাকরার হাড়টি মাত্র নয় ইঞ্চি লম্বা হয়; অর্থাৎ যদি সোভেলার-এর মাথা ব্যালানপটেরার মাথার সমান করতে হয়, তাহলে ল্যামেলাগুলি ছয় ইঞ্চি লম্বা হবে, অর্থাৎ তিমির এই প্রজাতির টাকরার হাড়ের দৈর্ঘ্যের দুই-তৃতীয়াংশ। সোভেলার হাঁসের নিচের চোয়ালের হাড় ওপরের মত সমদৈর্ঘ্যের ল্যামেলা দ্বারা তৈরি, কিন্তু সূক্ষ্মতর; এবং এইভাবে সজ্জিত হওয়ার জন্য এটি একটি তিমির নীচের চোয়াল থেকে স্পষ্টভাবে ভিন্ন, এবং তিমির ব্যালিন থাকে না। অন্যদিকে, এই সমস্ত নীচের ল্যামেলার প্রান্তগুলি সূক্ষ্ম কাটার ন্যায় বস্তু দিয়ে তৈরি, অতএব এরা এইরকম অদ্ভুতভাবে টাকরার হাড়ের প্লেটগুলির সদৃশ হয়। পেট্রেল-দের গোত্রের একটি সদস্য প্রিয়ন গণটিতে উপরের চোয়ালটি ল্যামেলা দ্বারা যুক্ত, যা অতিশয় বিকশিত এবং কিনারার নিচে প্রসারিত; এইরূপে এই পাখির চথুটি এ বিষয়ে একটি তিমির মুখের সদৃশ হয়।
অতিশয় উন্নত গঠনের সোভেলারের (বেলচার মতো অঙ্গধারী হাঁস) চঞ্চু থেকে (মিঃ স্যালভিনের প্রেরিত তথ্য এবং নমুনাগুলি থেকে আমি জেনেছি) অবিরাম জল কাদা ছিটানোর উপযুক্ততার বিষয়ে মার্গানেট্টা আর্মাটা চক্ষুটির মাধ্যমে এবং কোন কোন বিষয়ে আই স্পনসার চথুটির মাধ্যমে সাধারণ হাঁসের চঞ্চুর দিকে আমরা অগ্রসর হতে পারি। পরের প্রজাতিটির ল্যামেলাগুলি সোভেলারদের ল্যামেলাগুলির তুলনায় স্থূলতর হয় এবং চোয়ালের হাড়ের পার্শ্বগুলিতে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে, এরা প্রত্যেক ধারে সংখ্যায় মাত্র ৫০টি এবং মোটেই কিনারার নিচে নির্গত হয় না। এদের মাথাগুলি– বর্গাকার এবং ধারটি স্বচ্ছ শক্ত কলা দ্বারা এমনভাবে তৈরি যাতে এরা খাদ্য পেষাই করতে পারে। নিচের চোয়ালটির হাড়ের ধারগুলি অসংখ্য সূক্ষ্ম শিরা বা আল দ্বারা আড়াআড়িভাবে কর্তিত, যারা অতি অল্প নির্গত হয়। যদিও একটি সিফটার (ছাঁকনি) হিসেবে সোভেলার (বেলচাধারী)-এর চথুটির তুলনায় এদের চঞ্চু নিকৃষ্টতর, তথাপি প্রত্যেকেই জানেন যে, এই পাখিটি এই উদ্দেশ্যে একে অনবরত ব্যবহার করে। মিঃ স্যালভিন-এর কাছ থেকে আমি শুনেছি এমন আরও কয়েকটি প্রজাতি আছে যাদের ল্যামেলাগুলি সাধারণ হাঁসের তুলনায় কম উন্নত; কিন্তু জল-কাদা ছিটানোর জন্য এরা এদের চঞ্চুগুলি ব্যবহার করে কি না, আমি জানি না।
একই গোত্রের অন্য গোষ্ঠীর দিকে লক্ষ্য করা যাক। ইজিপ্সীয় রাজহংসীর চঞ্চটি (চেনালোপেক্স) সাধারণ হাঁসের চঞ্চুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠাভাবে সদৃশ; কিন্তু ল্যামেলাগুলি সংখ্যায় অল্প অথবা পরস্পরের থেকে এত স্পষ্টভাবে পৃথক নয়, অথবা ভিতরের দিকে এভাবে নির্গত নয়; তা সত্ত্বেও মিঃ ই, বার্টলেট আমাকে জানিয়েছেন যে এই রাজহংসীটি ‘কোণ দিয়ে জল বের করার জন্য একটি হাঁসের মতো নিজের ঠোঁট ব্যবহার করে। এর প্রধান খাদ্য হচ্ছে ঘাস, যা এরা সাধারণ হাঁসের মতো খায়। এই পরের পাখিটির উপরের চোয়ালের ল্যামেলাগুলি (হাড় ইত্যাদির পাতলা স্তর বা আবরণ) সাধারণ হাঁসের তুলনায় বেশি মোটা, প্রায় যুক্ত, প্রত্যেক ধারে সংখ্যায় ২৭টি, এবং উপরের দিকে দাঁতের মতো নবে (ফুলে ওঠা অংশ) শেষ হয়। তালুটি গোলাকার শক্ত নব দ্বারা আচ্ছাদিত। নিচের চোয়ালের ধার করাতের ন্যায় খাজ-কাটা, যা হাঁসের চোয়ালের ধারের তুলনায় আরও বেশি স্পষ্ট, মোটা ও তীক্ষ্ণ। সাধারণ রাজহংসীরা জলকাদা ছিটাতে পারে না, কিন্তু শাকপাতা কাটতে-ছিঁড়তে এরা এদের চঞ্চটি ব্যবহার করে। এই কাজের জন্য এটি এত সুন্দরভাবে অভিযোজিত যে এটি প্রায় অন্য যেকোন প্রাণীর তুলনায় সুন্দরভাবে ঘাস কাটতে পারে। মিঃ বাৰ্টলেট-এর কাছ থেকে আমি শুনেছি যে রাজহংসদের অন্য কয়েকটি প্রজাতি আছে, সাধারণ রাজহংসের তুলনায় যাদের ল্যামেলাগুলি কম উন্নত।