মিঃ মিভার্টের অন্য সব আপত্তির বিষয়ে আমরা ফিরে আসব। আত্মরক্ষার জন্য পতঙ্গরা প্রায়শই বিভিন্ন বস্তুর সদৃশ বা অনুরূপ হয়, যেমন সবুজ অথবা পচা পাতা, শুকনো শাখাপল্লব, লাইকেন বিন্দু, ফুল, কাটা, পাখির বিষ্ঠা এবং জীবন্ত পতঙ্গ; কিন্তু শেষের বিষয়টিতে আমি পরে আসব। সদৃশতা বা অনুরূপতা প্রায়শই বিস্ময়করভাবে ঘনিষ্ঠ হয় এবং শুধুমাত্র রঙের মধ্যে আবদ্ধ থাকে না, বরং আকারে এবং কোন কিছুকে ধরে থাকার পদ্ধতিতেও প্রসারিত হয়। শুয়াপোকারা এই প্রকার সদৃশতার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ উপস্থিত করে–এরা যে গাছে যায় সেই গাছের মৃত ডালপালার মতো। গতিহীনভাবে অবস্থান করে। পাখিদের বিষ্ঠার মতো এইসব বস্তুর অনুকরণের ঘটনাগুলি বিরল ও ব্যতিক্রমী হয়। এই বিষয়ে মিঃ মিভার্ট মন্তব্য করেন, “ডারউইনের তত্ত্বানুযায়ী যেহেতু অনির্দিষ্ট পরিবর্তনের একটি অবিরাম প্রবণতা রয়েছে এবং যেহেতু ক্ষুদ্র জায়মান পরিবর্তনগুলি সমস্ত দিকেই হবে, সেহেতু এরা নিশ্চয় পরস্পরকে প্রশমিত করতে চেষ্টা করবে এবং প্রথমে এরূপ অস্থায়ী রূপান্তরগুলি সৃষ্টি করতে চেষ্টা করবে যে, যদি না এটি দেখতে অসম্ভব কষ্টকর হয় যে কেমন করে এইরূপ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সূচনাগুলির অনির্দিষ্ট স্পন্দনশীলতা একটি পাতা, বাঁশ অথবা অন্য বস্তুর মতো যথেষ্ট অনুকরণযোগ্য সাদৃশ্য সৃষ্টি করতে পারে, যাতে প্রাকৃতিক নির্বাচন কার্যকরী হয় এবং স্থায়িত্ব দান করতে পারে।”
তাহলেও আগের সব ঘটনায় পতঙ্গরা তাদের প্রাথমিক অবস্থায় নিঃসন্দেহেই প্রায়শই ভ্রমণ করা অঞ্চলগুলিতে সাধারণভাবে দৃষ্ট কোন বস্তুর সঙ্গে কিছুটা প্রাথমিক ও আকস্মিক সাদৃশ্য উপস্থিত করেছিল। এটি কোন মতেই অসম্ভবপর নয়, কারণ চারিদিকে অসংখ্য রকমের বস্তু রয়েছে এবং পতঙ্গদেরও রং ও আকার অতি বিচিত্র। যেহেতু প্রথম আরম্ভের জন্য কোন প্রাথমিক সদৃশতার প্রয়োজন হয়, সেহেতু আমরা বুঝতে পারি কেমন করে বৃহত্তর ও উচ্চতর প্রাণীরা আত্মরক্ষার জন্য বিশেষ বস্তুদের সদৃশ হয় না (যতদূর আমি জানি, একটিমাত্র মাছ ছাড়া), শুধুমাত্র তাদের চতুর্দিকে থাকা বস্তুগুলির উপরিতলের সদৃশ হয় এবং সেটাও প্রধানতঃ রঙের ক্ষেত্রেই হয়। একটি পতঙ্গ একটি মৃত পল্লব অথবা একটি চা-পাতার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কিছু মাত্রায় সদৃশ হয়েছিল এবং এটি বিভিন্ন উপায়ে অল্পভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল, এটি ধরে নিলে বোঝা যায় যে সব পরিবর্তন কোন এরূপ বস্তুর মতো হতে পতঙ্গটিকে সাহায্য করে এবং এভাবে তাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে, সেরকম সমস্ত পরিবর্তন সংরক্ষিত হবে, যখন অন্য পরিবর্তনগুলি অবহেলিত হবে এবং অবশেষে অবলুপ্ত হবে; অথবা এইসব রূপান্তর পতঙ্গদের অনুকরণীয় বস্তুর সঙ্গে কম সদৃশ করলে এরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। প্রকৃতপক্ষে মিঃ মিভার্টের আপত্তিতে জোরালো যুক্তি থাকতে পারত, যদি আমরা প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যতিরেকে, কেবলমাত্র অস্থির পরিবর্তনশীলতার সাহায্যে উপরের সাদৃশ্যগুলি বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করতাম; কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন কিছুই নেই।
‘অকৃতিতে উৎকর্ষতার শেষ ছাপগুলি সম্পর্কে মিঃ মিভার্টের আপত্তিতে কোন জোরালো যুক্তি আমি দেখি না; যেমন মিঃ ওয়ালেস একটি ভ্রমণ-ছড়ির (walking stick) মতো পতঙ্গের (সেরোজাইলাম ল্যাসেরেটাস) উদাহরণ দিয়েছেন, যা লতানে মস অথবা জনগারম্যানিয়ার ওপর জন্মানো একটি ছড়ির’ সদৃশ হয়। এই সাদৃশ্য এত ঘনিষ্ঠ যে জনৈক স্থানীয় ডিয়াক উল্লেখ করেছিলেন যে বৃক্ষপত্রবৎ উপবৃদ্ধি প্রকৃতই মস ছিল। পাখি ও অন্যান্য শত্রুরা পতঙ্গ শিকার করে, যাদের দৃষ্টিশক্তি সম্ভবতঃ আমাদের তুলনায় তীক্ষ্ণতর, এবং অন্যদের দৃষ্টি থেকে অথবা ধরা পড়া থেকে রক্ষা পেতে পতঙ্গ দের সাহায্য করে–এরকম সাদৃশ্যের প্রত্যেকটি ধাপ এদের সংরক্ষণে সাহায্য করতে চেষ্টা করবে; এবং সদৃশতা যত বেশি নিখুঁত হবে, পতঙ্গদের পক্ষে তা তত বেশি মঙ্গলকর হবে। উপরোক্ত সেরোজাইলাসটি যে গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত সেই গোষ্ঠীর প্রজাতিদের মধ্যে পার্থক্যের প্রকৃতি বিবেচনা করলে এই পতঙ্গটির ক্ষেত্রে কোন কিছুই অসম্ভবপর নয়, পতঙ্গটির পৃষ্ঠদেশ অনিমিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হয় এবং কম-বেশি সবুজ রঙের হয়; কারণ প্রত্যেক গোষ্ঠীতে বৈশিষ্ট্যগুলি, যা কতিপয় প্রজাতিতে পৃথক হয়, সবচেয়ে বেশি পরিবর্তনশীল হয়, অন্যথায় গণীয় বৈশিষ্ট্যগুলি, অথবা যা সমস্ত প্রজাতিতে সাধারণ, সবচেয়ে বেশি স্থায়ী হয়।
গ্রীনল্যান্ডের তিমি পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রাণীগুলির মধ্যে একটি, এবং তিমির টাকরার হাড়টি অথবা তিমি হাড়টি এর সবচেয়ে চমৎকার বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি। তিমির টাকরার হাড় ওপরের চোয়ালের প্রত্যেক ধারে এক সারি প্রায় ৩০০ প্লেট অথবা ল্যামিনা দ্বারা তৈরি, যেগুলি মুখের লম্বা অক্ষের সঙ্গে তির্যকভাবে একত্রে ঘনিষ্ঠভাবে। অবস্থিত। প্রধান সারির মধ্যে কয়েকটি উপসারি আছে। সমস্ত প্লেটের প্রান্ত ও ধারগুলিতে শক্ত কাটা থাকে, যারা সমগ্র বিশাল প্যালেটকে আবৃত করে রাখে এবং জল টানতে ও ছাড়তে সাহায্য করে, এবং এরূপে ক্ষুদ্র শিকার ধরে যার ওপর এরা বেঁচে থাকে। গ্রীনল্যান্ড তিমির মধ্যের এবং দীর্ঘতম ল্যামিনাটি দশ, বার, এমনকি পনের ফুট লম্বা হয়, কিন্তু সেটাসিয়ানদের বিভিন্ন প্রজাতিতে দৈর্ঘ্যের ক্রমপরিবর্তন রয়েছে; স্কোর্সবির মতানুযায়ী, মধ্য ল্যামিনাটি একটি প্রজাতিতে চার ফুট, অন্য একটিতে তিন, এবং অন্য আর একটিতে আঠারো ইঞ্চি লম্বা, এবং ব্যালানোপ্টে রা রসট্রেটা-তে মাত্র। নয় ইঞ্চির মতো লম্বা হয়। তিমি হাড়ের প্রকৃতি বিভিন্ন প্রজাতিতে বিভিন্ন রকম হয়।