না। শুধু বাক্সটা। ওটার ভিতরে একটা বই ছিলো। মূল্যবান কিছুই ছিলো না বাক্সটাতে। সেফে তো কয়েকটা পুরোনো মুদ্রাও ছিলো, স্প্যানিশ স্বর্ণমুদ্রা। ওগুলো দেখেন, এখনো আগের জায়গাতেই পড়ে আছে।
কী ধরনের বই ওটা?
শ্রাগ করলো পিকারিং। জলদস্যুদের নিয়ে লেখা পুরোনো একটা বইয়ের পুনর্মুদ্রিত কপি। বইটার খুব একটা বেশি দাম নেই। আমার দোকানে এরকম বই আরো বেশ কয়েকটা কপিই আছে। চাইলে দেখাতেও পারি আপনাকে। বলে এগিয়ে গিয়ে বুকশেলফ থেকে ঐ বইয়েরই একটা কপি বের করে এনে রাখলেন ডেস্কের ওপর।
তাহলে যে বাক্সে রেখেছিলেন, ওই বাক্সটার কি কোনো আলাদা মূল্য ছিলো?
না, তেমন একটা না।
তাহলে ওটাকে এভাবে সেফে রেখে দিয়েছিলেন কেন?
কেউ যদি ওটাকে মূল্যবান ভেবে ওটা আসলে কী সেটা না ভেবেই নিতে চায়, সেই আশায় রেখেছিলাম।
মি. পিকারিং, বলে একবার নিজের নোটবুকের দিকে তাকালো সার্জেন্ট ফথ। তারপর আবার বই বিক্রেতার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার কী মনে হচ্ছে, লোকটা কেন আপনার দোকানকে টার্গেট করেছিলো?
চোখের ওপর থেকে ঘাম মুছছে লোকটা। হাত কাঁপছে তার। ডাকাতির ফলে নিশ্চিতভাবেই ভালো একটা প্রভাব পড়েছে লোকটার ওপর। মনে হয় আমার এখানে একটা পুরোনো বইয়ের অরিজিনাল কপি আছে এই গুজবটা ছড়ানোর কারণেই এটা হয়েছে। কেন বা কে এটা ছড়িয়েছে, তা আমি জানি না। তবে ডাকাত যেটা নিয়ে গেছে সেই কপিটার সাথে টেবিলের কপিটার কোনো পার্থক্যই নেই। সেম টু সেম। পুনর্মুদ্রিত একটা কপি মাত্র। বলে টেবিলে রাখা দ্য হিস্ট্রি অফ পাইরেটস অ্যান্ড প্রাইভেটিয়ারস বইটার দিকে ইশারা করে দেখালেন মি. পিকারিং।
তথ্যটা টুকে নিয়ে নোটবুকটা বুক পকেটে রেখে দিলো সার্জেন্ট ফথ, তারপর ধন্যবাদ জানালো পিকারিংকে। ওদিকে সিএসআই দলও চলে এসেছে। আঙুলের ছাপ এবং ছবি তোলার জন্য। তাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সার্জেন্ট ফথ স্যাম এবং পিকারিংকে তার বিজনেস কার্ড দিয়ে বলল, যদি কোনো কিছু মনে পড়ে আপনাদের বা কোনো সন্দেহ জাগে-তাহলে আমাকে ফোন করতে দ্বিধা করবেন না। বলে বেরিয়ে যাওয়া শুরু করেছিলো, তারপর আবার পিকারিং-এর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার কাউকে কি খবর দিবো? পরিবারের কেউ বা বন্ধুদের, যাতে আপনাকে এসে সাহায্য করতে পারে?
না, কেউ নেই তেমন। আর আমি ঠিকই আছি।
এরপর আর কোনো কথা না বলে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলো সার্জেন্ট ফথ।
লোকটা চলে যাওয়ার পর সিএসআইর লোকদের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো স্যাম। তারপর তাকালো মি. পিকারিং-এর দিকে। লোকটা একা একা থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে তার। আপনি নিশ্চিত যে আমাদের সাহায্য লাগবে না?
না। ধন্যবাদ, মি. ফার্গো। ভাবছি সিএসআইর কাজ হয়ে গেলে ওপরতলায় গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিবো।
রেমি এগিয়ে এসে পিকারিংকে জড়িয়ে ধরে বলল, যা ঘটেছে তার জন্য সমবেদনা জানানোর ভাষা জানা নেই আমার।
পিকারিং একটা গভীর শ্বাস নিয়ে রেমির দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষাও জানা নেই আমার। আপনার সাহসীকতাই আমার জীবন বাঁচিয়েছে।
তাহলে চলে, যাওয়া যাক? পার্সটা রেমির দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল স্যাম। আর বেশি দেরি করতে চাচ্ছে না।
হ্যাঁ, চলো।
দাঁড়ান, মি. পিকারিং পিছন থেকে ডেকে উঠে বললেন, আপনার পার্সেলটা নেননি। এতো কিছুর পরও এটাকে এখানে ফেলে গেলে সময়টাই বৃথা যাবে শুধু।
ধন্যবাদ, বলে পিকারিং-এর হাত থেকে পার্সেলটা তুলে নিলো রেমি। তারপর বাইরে বেরিয়ে সেটা বাড়িয়ে দিলো স্যামের দিকে।
আমাকে দিচ্ছো, তারমানে তো ধরা যায় এটা রান্নার বই না? স্যাম জিজ্ঞেস করলো।
আমি যেটার জন্য এসেছিলাম সেই বইও না। এটা আসলে খালি-হাতে বাসায় ফিরতে-চাই-না টাইপের একটা বই মাত্র। তবে মনে হয় তোমার অফিসের টেবিলের জন্য খারাপ হবে না বইটা।
অসুবিধা নেই। অন্তত বই কেনার ইতিহাসটা তো মনে থাকবে এতে।
রাস্তা পার হয়ে রিটজ-কার্লটন হোটেলের দিকে পা বাড়ালো ওরা। দোকানের ঘটনার থেকে বাজে অবস্থারও মুখোমুখি হয়েছে ওরা আগে। ভবিষ্যতেও যে পড়বে না সেটারও কোনো নিশ্চয়তা নাই। যদিও স্যামের তার স্ত্রীর সামর্থ্যের প্রতি পুরোপুরিই আস্থা রয়েছে, তারপরও সে কখনো তার জন্য দুঃচিন্তা করা থামাতে পারে না।
সবসময়ই সব জায়গাতেই রেমির চিন্তাটাই ওর মাথায় আসে আগে। এসব ভাবতে ভাবতেই কাছে ঘেঁষে রেমির হাতটা চেপে ধরলো ও। রেমিও তার স্পর্শে সাড়া দিয়ে মাথা এলিয়ে দিলো তার কাঁধে। তুমি ঠিক আছো? কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলো স্যাম।
আমি? একদম ঠিক। আর রক্ত কিন্তু আমার মাথা থেকে পড়ছে না।
ছোটোখাটো ক্ষত ওটা। রক্ত পড়াও বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগে।
স্যামের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে রেমি বলল, হোটেলে ফিরে গেলেই বুঝা যাবে তা।
আচ্ছা, বুঝা যাবে। যাই হোক, পিকারিংর সেফে থাকা স্বর্ণমুদ্রাগুলো দেখেছো?
অদ্ভুত, তাই না? ডাকাত স্বর্ণগুলো ফেলে বাক্সে থাকা একটা বই নিয়ে গেলো। এমনকি ওটা খুলেও দেখেনি একবারো।
আর বইটারও তেমন কোনো মূল্য নেই। শুধুই একটা পুনর্মুদ্রণ মাত্র।
নিশ্চিতভাবেই অদ্ভুত ব্যাপারটা, হোটেলের স্টোকস্টন স্ট্রিটের দিকে যেতে যেতে বলল রেমি। মনে হচ্ছে যেন মি, পিকারিং ইচ্ছা করেই চুরি যাওয়া বইটার মূল্য কমিয়ে বলছিলেন। এটারও কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না। আমি নিজেও পুনর্মুদ্রিত বইয়ের জন্য হুমকির মুখে পড়তে ঘৃণা করবো। যাই হোক, এটা বলতে গিয়ে মনে পড়লো, তোমার প্রমিজের কী হলো? বলেছিলে তো আগামী এক সপ্তাহ কেউ খুন করতে আসবে না আমাদের।