প্রতিকূলতাটা পছন্দ করতে পারছে না স্যাম। কিন্তু এই মুহূর্তে এছাড়া আরো কোনো উপায়ও নেই।
কাম অন, রেমি। ঘুরো একবার, তাকাও আমার দিকে…
ভাবতে ভাবতে হাতের ছোটো আয়নাটা নাড়াচ্ছে, যাতে আয়নায় প্রতিফলিত আলোটা রেমির মুখে পড়ে। দুর্ভাগ্যই বলতে হয়, সেফের লক খোলার খুট শব্দটা শুনে রেমির নজর এখন ওদিকেই ঘুরে গেছে। টেবিলের ওপর ঝুঁকে একদৃষ্টিতেই ওদিকেই তাকিয়ে আছে ও। সেফের দরজাটা খুলতেই দেখা গেলো মসৃণ কাঠের বড়ো বাক্স রয়েছে ওখানে। দুইটা ওয়াইনের বোতল রাখার মতো বড়ো হবে বাক্সটা।
বন্ধুকধারী সেফের আরো কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, বাক্সে কী আছে?
একটা পুরোনো বই। অ্যান্টিক।
ডেস্কে রাখো ওটা।
পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে রাখায় বাধা দেওয়ার কোনো উপায় নেই পিকারিং এর। বাক্সটা বের করে এনে টেবিলের ওপর রাখতেই বাধ্য হলেন তিনি।
অন্যমনস্কতার সুযোগটা নিতে কোনো দ্বিধাই করলো না স্যাম। আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে চাকুটা বন্দুকধারীর দিকে তাক করে ছুঁড়ে মারলো।
টাইমিংটা বোধহয় এর থেকে ভালো আর হতে পারবে না। কারণ ঠিক মুহূর্তেই রেমিও তার আসন থেকে উঠে পিতলের টেবিলল্যাম্পটা ছুঁড়ে মেরেছে। বন্দুকধারীর হাত লক্ষ্য করে।
বন্দুকধারীর কাঁধে এসে বিঁধেছে স্যামের ছোঁড়া চাকুটা। সেই সাথে ল্যাম্পের আঘাতে পিস্তলটাও ছিটকে পড়ে গেছে হাত থেকে।
পরিস্থিতির সুবিধা কাজে লাগাতে স্টোররুমের দিকে ছুট লাগালো স্যাম। তবে বন্দুকধারীও ঐদিকে থেমে নেই। বিপদ থেকে বাঁচার জন্য বাক্সটা খাবলে নিয়ে পিকারিংকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো রেমির দিকে। তারপর বাক্সটা দিয়ে স্যামের মাথায় আঘাত করে দৌড় লাগালো সদরদরজার দিকে।
স্যাম নিশ্চিত না আঘাত পাওয়ার কারণেই মাথায় টুংটাং শব্দ বাজছে কিনা! নাকি আসলেই দরজার বেলটা শব্দ করছে।
স্যাম…?
সাড়া দিতে কয়েক সেকেন্ড দেরি লাগলো স্যামের। মাথায় আঘাতের প্রভাবটা পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি এখনো। কোনোরকমে বলল, সবাই ঠিক আছ তো?
তুমি ঠিক আছো? পালটা প্রশ্ন করলো রেমি।
হ্যা…. বলে মাথায় হাত দিতেই চটচটে তরলের স্পর্শ পেলো স্যাম। হাত দুটো সামনে আনতেই দেখে রক্তে ভরে আছে আঙুলগুলো। মনে হচ্ছে। আগেরবার একদম সময় মতোই এসেছিলাম আমি।
পিস্তলটা তুলে ডেস্কে রাখলো রেমি। তারপর স্যামকেও টেনে নিয়ে বসালো চেয়ারে। তারপর দুই হাত দিয়ে স্যামের দুই গালে ধরে তাকালো তার চোখের দিকে। স্যাম আসলেই ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত হতে চাচ্ছে। আমার কাছে তোমার গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি। অ্যাম্বুলেন্স ডাকবো?
দরকার নেই।
মাথা ঝাঁকিয়ে স্যামের কাটা ক্ষতটা একবার দেখে নিলো রেমি। তারপর তাকালো বই বিক্রেতার দিকে। টেবিল ধরে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করছে শুধু লোকটা। মি. পিকারিং, লেট মি হেল্প ইউ।
আমি ঠিক আছি, বললেন বৃদ্ধ লোকটা। মি. উইকহ্যাম কোথায়?
মি. উইকহ্যাম? রেমি জিজ্ঞেস করলো।
আমার বিড়াল। উইকহ্যাম…? কিটি, কিটি, কিটি… ডাক শোনার কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমে এসে হাজির হলো সিয়ামিজ বিড়ালটা। তড়িঘড়ি করে বিড়ালটাকে কোলে তুলে নিলেন পিকারিং।
আচ্ছা, তাহলে, রেমি বলল, কেউই নিখোঁজ হয়নি। পুলিশকে জানানোর সময় হয়েছে।
রেমিকে ফোনের রিসিভার তুলে নিতে দেখে পিকারিং বললেন, এটার কি কোনো দরকার আছে?
অবশ্যই দরকার আছে, বলে কিপ্যাডে ৯১১ চাপলো রেমি।
পাঁচ মিনিটের মধেই পুলিশ এসে হাজির হলো দোকানটাতে। সাইরেনের শব্দ আসছে পুলিশের গাড়ি থেকে। যদিও রেমি তাদেরকে জানিয়েছে ডাকাত অনেক আগেই পালিয়ে গেছে।
অফিসারদের একজন স্যামকে পাশে ডেকে নিলো তার স্টেটমেন্ট নেওয়ার জন্য। বেশ কয়েকটা প্রশ্নের পর অস্ত্র পড়ে যাওয়ার সময় ডাকাত লোকটা ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলো তা জানতে চাইলো অফিসার। ডেস্কের পাশে ডাকাতের দাঁড়ানো জায়গাটায় দাঁড়িয়ে অফিসারকে পুরো ব্যাপারটাই বর্ণনা করে বলল স্যাম। রেমির ছুঁড়ে দেওয়া ল্যাম্পের আঘাতে লোকটার নড়নচড়নও বাদ রাখলো না। আর অফিসার দাঁড়িয়ে আছে স্যামের পূর্বে দাঁড়ানো অবস্থানটায়। আশেপাশে দেখছে। আর চাকু ছুঁড়ে মারার সময় আপনি ঠিক কোথায় ছিলেন?
দরজার মুখে।
ওখানে গিয়ে একটু দাঁড়ান, প্লিজ।
তাই করলো স্যাম।
অফিসার তার কাছে এগিয়ে এসে দরজার চৌকাঠে আঙুল বুলিয়ে দেখছে। এইতো পেয়েছি। বুলেটটা এখানেই লেগেছে।
স্যাম তাকিয়ে দেখলো তার মাথা থেকে মাত্র অল্প কয়েক ইঞ্চি দূরে গেঁথে আছে বুলেটটা। ভাগ্য ভালো ছিলো দেখছি। আরেকটু হলেই তো…
মি, ফার্গো। আপনার কাজটা প্রশংসনীয় হলেও আমি বলবো বোকামি করেছেন। ভবিষ্যতে এমন কিছু হলে অবশ্যই পুলিশকে জানাবেন।
যদি এমন কিছু ঘটে, তাহলে অবশ্যই আগে পুলিশকে জানাবো।
সে জানে অন্যান্য অনেকবারের মতো এবারও রেমি নেতৃত্বের ভারটা নিয়ে নিবে। রেমির অনেকগুলো গুণাবলির মধ্যে এটাকেও অনেক ভালোবাসে স্যাম। কথাটা ভেবেই রেমির দিকে তাকালো ও। মেয়েটা অনেক আগেই তার স্টেটমেন্ট দিয়ে ফেলেছে, এখন দোকানের দরজায় দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে।
ঐদিকে মি. পিকারিংকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সাদা পোশাকে থাকারবারি ইউনিটের ডিটেক্টিভ সার্জেন্ট ফথ। মি. পিকারিংকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। বয়স এবং পরিস্থিতির বিবেচেনায় অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। লোকটা এখনো খুলে রাখা সেফটার দিকেই তাকিয়ে আছে। আর কিছু কি নিয়ে গেছে? জিজ্ঞেস করলো সার্জেন্ট ফথ।