আমাদেরও আছে। আমি পাইরেটস অ্যান্ড প্রাইভেটিয়ারস বইটা আমাদের সংগ্রহশালায় যুক্ত করতে চাচ্ছিলাম। আমার বন্ধু নামটাই ভুল বলেছিলো, কোনো সন্দেহ নেই তাতে।
কে আপনাকে এখানে আসার কথা বলেছিলো?
ব্রি মার্শাল।
ওহ, তাহলে বলতে যাবে ঠিক তখনই দরজার বেলটা টুংটাং শব্দ করে উঠলো। শব্দটা শুনে বলতে গেলে পিকারিং কিছুটা চমকেই গেছেন। দুজনই একই সাথে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো দরজার দিকে, আশা করছিলো স্যাম ফিরে এসেছে হয়তো। কিন্তু না। স্যামের থেকে খানিকটা খাটো, চওড়া কাঁধের এক লোক এসেছে। দোকানের জানালার আলোর উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকায় চেহারাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।
লোকটার ওপর একবার চোখ বুলিয়ে আবার রেমির দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনলেন দোকানি। মুচকি হেসে বললেন, দিন, বইটার ওপর থেকে ধুলো মুছে আপনাকে প্যাক করে দিই। রেমি বাধা দিয়ে বলতে যাবে যে, পুনর্মুদ্রিত বই নেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই তার-কিন্তু এর আগেই তার হাতে বইটা ছো মেরে নিয়ে নিলেন পিকারিং। এখনই ফিরে আসছি।
ব্রি নিশ্চিতভাবেই তার চাচার দোকানে থাকা বইটার ব্যাপারে ভুল করেছে। যাই হোক, ব্যাপার না। এই কপিটাতেও ভালো অ্যান্টিক ছাপ আছে। স্যামের অফিসে দেখতেও ভালো লাগবে। স্যাম তো নিশ্চিতভাবেই উপহারের আবেগটা বুঝতে পারবে। ওটা নিয়ে আর না ভেবে শেলফের অন্যান্য বইগুলোর দিকে তাকালো রেমি। গালিয়াজির অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি বইয়ের দিকে চোখ পড়েছে ওর। বইটা দেখে প্রথম এডিশনের বলেই মনে হচ্ছে, কিন্তু সে বুঝতে পারছে না এতো বিরল একটা বইকে কেন এইভাবে ফ্রন্ট কাউন্টারে ফেলে রাখা হয়েছে!
আপনি কি এখানে কাজ করেন? নতুন আগুন্তুকলোকটা জিজ্ঞেস করলো।
কথাটা শুনে ঘুরে তাকালো রেমি। জানালার আলোর সামনে থেকে সরে আসায় লোকটাকে ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছে এখন। লোকটার চুলগুলো কালো, চোখ বাদামি, মুখ হালকা বর্গাকৃতির। দুঃখিত। না, আমি এখানের কেউ নই। দোকানি পিছনের দিকে গেছে। আমার জন্য একটা গিফট র্যাপ করছে।
মাথা ঝাঁকিয়ে আবার চলে গেলো লোকটা। ওদিকে পিছনের রুম থেকে মি. পিকারিংও বেরিয়ে এসেছেন। কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন এরপর? আর আগন্তুক লোকটা তার কালো চামড়ার কোটের পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে কাউন্টারের ঠিক পাশেই। লোকটার উপস্থিতিতে কিছুটা বিরক্ত হচ্ছে রেমি। যদিও লোকটা এখনো তাদের দিকে খুঁতখুঁতে নজরে তাকিয়ে থাকা ছাড়া বিরক্ত লাগার মতো তেমন কিছু করেনি। তবে লোকটা একবারো পকেট থেকে হাত বের করছে না। এই ব্যাপারটাই অস্বস্তি লাগছে রেমির কাছে। কারো হাত নজরের আড়ালে থাকাটা রেমি ঠিক পছন্দ করতে পারে না।
কাউন্টারের ওপর বাদামি কাগজে মোড়ানোর পারসেলটা রাখলেন মি. পিকারিং। রেমি তাকিয়ে দেখলো লোকটার কুঁচকে যাওয়া আঙুলগুলো কিছুটা কাঁপছে। ভয়ে কাঁপছে নাকি বয়সের জন্য কাঁপছে? নিজেকেই জিজ্ঞেস করলো।
তবে মুখে বলল, ধন্যবাদ। এটার জন্য কত দিতে হবে আমাকে।
উনপঞ্চাশ ডলার পঁচানব্বই সেন্ট। সাথে ট্যাক্স। আর গিফট র্যাপিং-এর জন্য কিছু দেওয়া লাগবে না। ওটা ফ্রি।
যদিও র্যাপিংটা রেমির খুব একটা ভালো লাগেনি। তবে এটা না বলে বলল, যাই হোক, খুব একটা বেশি না। আমি ভেবেছিলাম আরো বেশি লাগবে হয়তো।
চীনে ছাপা হয়েছে তো, তাই একটু কমই দামটা, হেসে বললেন পিকারিং। যদিও তার হাসিটা দুর্বল দেখাচ্ছে।
বিল পরিশোধ করে বইটা নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো রেমি। বেরিয়ে পড়তে যাবে তখনই জানালার উচ্চাসনে থাকা সিয়ামিজ বিড়ালটাকে চোখে পড়লো ওর। লেজ নাড়ছে প্রাণীটা। বিড়ালটার কাছে গিয়ে আলতোভাবে হাত বুলাতে শুরু করলো রেমি, সেই সাথে একফাঁকে আগন্তুক লোকটার দিকেও তাকালো। লোকটা এখনো আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে, তবে হাতটা এখন আর পকেটে নেই।
বরং হাতে একটা পিস্তল দেখা যাচ্ছে এখন। অস্ত্রটা তাদের দিকে তাক করে লোকটা বলে উঠলো, লেডি, সময় থাকতে থাকতে চলে যাওয়া উচিৎ ছিলো আপনার। যাই হোক, এখন হাত দুটো শূন্যে তুলে ধরুন।
.
০২.
মাত্রই হোটেল ম্যানেজারের সাথে ফোনে কথা বলে শেষ করেছে স্যাম। রেমির জন্য তাদের সুইটে আইস শ্যাম্পেইন এবং গিফট ঠিকঠাক মতো পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে লোকটা। তাই এখন শুধু রেমির অপেক্ষা করছে। হাতের ঘড়িটা চেক করতে করতে বইয়ের দোকানটার দিকে তাকালো একবার। ভাবছে রেমি এতো দেরি করছে কেন! আন্দাজ করছে রেমি হয়তো এখন বই বিক্রেতার সাথে কোনো বিষয় গভীর আলোচনায় মত্ত হয়ে গেছে, কিংবা হয়তো সে বের হয়ে আসার একটু পর পরই ঢাকা ক্রেতার সাথে কথা বলছে। এই রহস্যময় বইটা খুঁজে পাওয়া নিয়ে গণ কয়েকটা দিন বেশ উত্তেজনায় ছিলো রেমি। সে পুরোপুরি নিশ্চিত যে এই বইটাকে স্যাম তার সংগ্রহে রাখতে চাইবে। তবে আসল কথা হলো, একটা বই খুঁজে ওটার টাকার দিতে তো এতোটা সময় লাগার কথা না।
জলদি কেনাকাটা শেষ করার জন্য রেমিকে তাড়া দেওয়া দরকার। নয়তো তারা হোটেল রুমের ফিরতে ফিরতে রুমের তাপমাত্রায় শ্যাম্পেইনটা নষ্ট হয়ে যাবে। দোকানের কাছে গিয়ে জানালা দিয়ে তাকালো স্যাম। কাউকেই দেখা যাচ্ছে না ভিতরে। এমনকি, বইয়ের ওপর বসে থাকা বিড়ালটাকেও না। শুধু দেখতে পেলো কাউন্টারে একটা ব্যাপ করা পার্সেলের ওপর রেমির পার্সটা পড়ে আছে।