বিস্ফোরণের তীব্রতায় তাদের ভাড়া করা বোটটা এখন উপসাগরের তলায় ডুবে গেছে। ওপরে থাকা বড়ো পাথরটাও এখন আর অতোটা বড়ো নেই। মাঝখান থেকে দুই ভাগ হয়ে গেছে পাথরটা। বিস্ফোরণের তীব্রতায় একটা অংশ পুরোপুরিই গুঁড়িয়ে গেছে, আর অন্য অংশটা ছিটকে গেছে উপকূলের ধারের দিকে।
বোটটটার দিকে নজর ফিরালো স্যাম। যানটার অবস্থা দেখে আঁৎকে গেছে। রেমি ওই ট্রিপওয়্যারটা না দেখলে তাদের কী অবস্থা হতো, অথবা খুঁড়ার ধরণ দেখে তার যদি সন্দেহ না জাগতো-তাহলে কী হতো সেটা নিয়ে ভাবতেও চাচ্ছে না ও।
এমনকি দৃশ্যটা দেখে রেমির চোখ থেকে অশ্রু ঝড়তে শুরু করেছে।
চলো যাই এখন, স্যাম বলে উঠলো।
কোথায়?
ওক আইল্যান্ড পর্যন্ত সাঁতরে যেতে পারবো আমরা। পর্যটকদের প্রাণকেন্দ্রে অবশ্যই ফোন রয়েছে। না থাকলেও অসুবিধা নেই। ওখান থেকে তো বাইরের রাস্তাটা পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া যাবে।
সাঁতরে প্রায় অর্ধেক দূরত্ব পেরিয়েছে ওরা, ঠিক তখনই পানিতে কোনো বড়ো সামুদ্রিক যানের এগিয়ে আসার কম্পন টের পেলো স্যাম। প্রায় হাজার ফুটের মতো দূরে রয়েছে যানটা। দক্ষিণের দিক থেকে এগিয়ে আসছে।
ভয়ে ভয়ে জাহাজটার দিকে তাকালো স্যাম। সে ভাবছে হয়তো এভেরির লোকেরাই আবার ফিরে আসছে। তবে বোটটা আরো কাছে আসতেই বোটের ওপরে জ্বলতে থাকা টিমটিমে ইমার্জেন্সি লাইট ও পানির ওপর ভেসে বেড়ানো স্পটলাইট দেখে বুঝতে পারলো যে সাহায্য এগিয়ে আসছে তাদের জন্য।
দুজনেই চেঁচিয়ে ডাকতে শুরু করলো বোটটার উদ্দেশ্যে। হাত নেড়ে নেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। জাহাজের স্পটলাইটটা তাদের ওপর পড়তে দেখে অবশেষে কিছুটা স্বস্তি পেলো ওরা। যদিও স্পটলাইটের আলোয় এক মুহূর্তের জন্য অন্ধ হয়ে গেলেও, সাহায্য আসছে দেখে অনেকটা শান্তি পাচ্ছে খন।
রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের যান এটা। কাছে এসে দুজনকেই জাহাজে টেনে তুললো জাহাজের কর্তৃপক্ষ। জাহাজে উঠে শরীর মুছতে মুছতে ক্যাপ্টেনের কাছে কী কী ঘটেছে তার সবই খুলে বলল স্যাম। সব শুনে ক্যাপ্টেন মন্তব্য করলেন, তো আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনারা আন্ডারওয়াটার একটা বিস্ফোরণ থেকে সারভাইভ করেছেন?
না। আমি বলছি, বিস্ফোরণ ঘটেছিলো পানির ওপরে। আর আমরা পানির নিচে ডুব দিয়ে সেটা থেকে সারভাইভ করেছি। ঐ পাথরটা- বলতে বলতে পাথরটার দিকে নির্দেশ করলো স্যাম, বা ওটার যতটুক অংশ এখন অবশিষ্ট আছে, ওটাই বিস্ফোরণের ধাক্কার বেশির ভাগটা সামলে নিয়েছে। নাহলে কপালে খারাপিই ছিলো।
কপাল দেখছি খুবই ভালো আপনাদের, ক্যাপ্টেন বললেন।
বলতে গেলে তাইই।
তো কেন মনে করছেন যে তারা আপনাদেরকেই টার্গেট করেছিলো?
রেমির দিকে এক পলক তাকালো স্যাম। রেমি এখন তাদের সামনের টেবিলে একটা মোটা কম্বল গায়ে জড়িয়ে বসে আছে। অনেক লম্বা একটা গল্প।
আমাকে তো ঘণ্টা হিসেবেই বেতন দেওয়া হয়, তাই না? তো বলে ফেলুন।
সংক্ষেপে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ঘটা সবকিছুই ক্যাপ্টেনকে খুলে বলল স্যাম। স্যান ফ্রান্সিসকো ভ্রমণ, ব্রির অন্তর্ধান, তারপর কিডন্যাপারদের মুখে তাদের আলোচনার অংশ শোনাসহ সবই।
বেশ একটা গল্প, মি, ফার্গো, ক্যাপ্টেন বললেন। এই গল্পের সত্যতা পাওয়া যাবে কি?
খুব সহজেই পাবেন। স্যান ফ্রান্সিসকো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এবং নর্থ ক্যারোলিনার কারটিট কাউন্টির কাছে খোঁজ করলেই হবে।
আচ্ছা, ওটা খতিয়ে দেখবো আমরা। তা, আপনাদের এই কর্মী মানে ব্রি মার্শাল, আপনি কি নিশ্চিত মানুষটা বিশ্বাসযোগ্য? আপনার কি মনে হয় না মহিলাই এসব কিছুর সৃষ্টি করেছে?
কী বলতে চাচ্ছেন আপনি? স্যাম জানতে চাইলো।
বলতে চাচ্ছি একমাত্র ঐ মহিলাই কিন্তু ওক আইল্যান্ডের ব্যাপারে আলোচনাটা শুনেছিলো।
কথাটা শুনেই কিছুটা খেঁকিয়ে উঠলো রেমি। আমি তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি।
আর, আমিও, আমার স্ত্রীর বিচার-বিবেচনাকে বিশ্বাস করি, সাথে যোগ করলো স্যাম।
আমি শুধু সম্ভাবনার কথা বলছি। ভিতরের কারোর বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা কিন্তু এটাই প্রথম না। বলে নোটগুলোতে একবার দেখলেন ক্যাপ্টেন, তারপর আবার স্যামের দিকে তাকিয়ে বললেন, মনে হয় এখনের জন্য এই প্রশ্নগুলোই ছিলো আমার।
আমার একটা প্রশ্ন আছে, স্যাম বলল, আপনি আমাদের খুঁজে পেয়েছেনে এই কথাটা পাবলিকলি না জানানোর কি কোনো উপায় আছে?
ঠিক বুঝতে পারিনি প্রশ্নটা।
আপনি যদি আমাদেরকে খুঁজে না পেতেন, তাহলে ক্রাইম সিনের ব্যাপারের কী রিপোর্ট দিতেন?
প্রথম দর্শনের ওপর ভিত্তি করে? বলতাম যে বিস্ফোরণের কারণে একটা বোটে আগুন ধরে গেছে। রিকভারি অপরাশেন। কেউ বেঁচে আছে কিনা তার খোঁজ চলছে।
তো প্রেস কনফারেন্সে গিয়ে আপনি কি এখন এই কথাটা বলতে পারবেন না?
কথাটা শুনে কিছুক্ষণ স্যামের দিকে তাকিয়ে রইলেন ক্যাপ্টেন। আইডিয়াটার খুঁটিনাটি সুবিধা-অসুবিধাগুলো ভেবে দেখছেন। এক মুহূর্ত ভাবার পর মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, অবশ্যই। আপনার বলা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যদি আপনাদের গল্পের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে খুব সম্ভবত এটা করতে পারবো আমরা।
করলে আমাদের জন্য ভালো হয়, রেমির অগ্নিদৃষ্টি উপেক্ষা করেই ক্যাপ্টেনকে কৃতজ্ঞতা জানালো স্যাম।