ভালো বলেছেন, বলল রেমি। এরপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে আবারো দলটার সাথে গিয়ে যুক্ত হলো লোকটা। গাইড চলে যেতেই গাছের ফাঁক দিয়ে আবারো দ্বীপটার দিকে তাকালো রেমি। বোটটা চোখের আড়াল হয়ে যেতে শুরু করেছে। দৃশ্যটা দেখে স্যামের দিকে তাকিয়ে বলল, তো, এখন কী?
রাতে আবার আসবো এখানে এবং খুঁজে দেখবো ঐ দ্বীপটাতে তাদের আগ্রহ জাগানোর মতো এমন কী আছে!
.
১৩.
হোটেলে ফিরে রেমির ট্যাবলেটে করে সেলমাকে স্কাইপ করলো স্যাম।
শুভ সকাল, মি, ফার্গো, তার ডেস্ক থেকে বলল সেলমা। আপনি জেনে হয়তো খুশি হবেন, ব্রি নিরাপদেই তার ফ্লাইটে চড়তে পেরেছে। আর কয়েকঘন্টার মধ্যেই এখানে এসে ল্যান্ড করবে।
চমৎকার, বলল স্যাম।
রেমিও সোফায় স্যামের পাশে বসে বলল, তো, এখন পর্যন্ত কী কী থিউরি আবিষ্কার করেছো তুমি?
লাযলো বলছে সাইফার হুইলটা নাকি খুবই সহজ একটা সাবস্টিটিউশন কোড।
ঠিক তখনই পর্দায় সেলমার পিছনে দাঁড়ানো লাযলোর মুখটা দেখতে পেলো ওরা। চমৎকার দেখিয়েছেন আপনারা দুইজন, বলল লাযলো, কণ্ঠে কড়া ব্রিটিশ টান মিশে আছে। মিস মার্শাল আমাকে আপনাদের সময়মতো ছুটে আসার ব্যাপারে জানিয়েছে। নিশ্চয় খুব ভয়ঙ্কর ছিলো ঘটনাটা।
হ্যাঁ, ওরকমই বলা যায়, স্যাম বলল। এখন সাইফারটার ব্যাপারে…?
ওহ হ্যাঁ। গুপ্ত ম্যাপটা অনুযায়ী আমার যেটা মনে হয়, আপনারা যে শিপরেকটা খুঁজছেন সেটা দ্বীপের দক্ষিণ দিকে রয়েছে। বলে কয়েকটা কাগজের ভিতর থেকে এন্ডপেপারের পিছনে লুকিয়ে রাখা ম্যাপের ছবিটা তুলে দেখালো। লেখার কিছু অংশের অর্থ বের করেছি আমি, তবে পুরোটা করতে পারিনি। পুরোটা করতে হলে চাবি মানে সূত্রটা লাগবে আমার। দুঃখের বিষয় প্রফেসর ম্যাপে থাকা সাইফার হুইলের যে ড্রয়িংটা খুঁজে পেয়েছে ওটা শুধুই একটা ছবি মাত্র। যতটুক জেনেছি সত্যিকারের একটা সাইফার হুইলের অস্তিত্বও আছে। ধারণা করা হয় জাহাজডুবিতে হারিয়ে গেছে ওটা।
দীর্ঘশ্বাস ফেললল রেমি। কখনোই সহজ কিছু না, তাই না?
স্যাম জিজ্ঞেস করলো, জাহাজ ডুবার জায়গাটা কি বের করতে পেরেছো?
দ্বীপের ম্যাপ দেখে আমি বের করার চেষ্টা করছি এটা কোথায় পড়ে আছে বা এটা কোথায় ডুবেছিলো। ধরে নিচ্ছি, আমি অর্থটা ঠিকমতোই ধরতে পেরেছি। লেখাটায় একটা শব্দ দুইবার এসেছে, সারপেন্স। ল্যাটিন শব্দ। এটার মানে হতে পারে সাপ, ড্রাগন বা নাগ।
এটার তো কোনো নির্দিষ্ট জায়গা দেখিয়ে দেওয়ার কথা, স্যাম বলল।
অনেকটাই, বলে সেলমার ট্যাবলেটটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো লায়লো। আরো একটা শব্দও এসেছে, যেটাতে মনে হয়েছে এটা হয়তো দ্বীপের দক্ষিণ বা এর আশেপাশের কোনো অংশে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
কথাটা শুনেই একে অপরের দিকে তাকালো স্যাম ও রেমি। এজন্যেই হয়তো তারা ওখানে খুঁড়াখুঁড়ি করছিলো, বলল রেমি।
কারা? লাযলো জানতে চাইলো।
এভেরি লোকেরা। ওক আইল্যান্ডের পাশের দ্বীপে দেখেছিলাম ওদেরকে। তারপর তারা কী কী দেখেছে সেটা লাযলো ও সেলমাকে ভেঙে বলল রেমি।
আহ, তারা দেখছি সাইফারের অর্থ বের করার দিক দিয়ে আমাদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে আছে। আশা করছি তারা এখনও আসল সাইফার হুইলটা খুঁজে পায়নি। আমি নিশ্চিত কোনো অবস্থান জানি না। তবে তারা যদি ওখানে খুঁড়ে থাকে, অন্ততপক্ষে এটুক নিশ্চিত যে আমরা ঠিক পথেই আছি, লাযলো বলল।
তখন পর্দায় আবার সেলমার মুখ ভেসে উঠলো। বলল, আমরা আরো কিছু জানতে পারলে সাথে সাথেই জানিয়ে দিবো আপনাদের।
রেমি বলল, তোমাদের ওপর সেই বিশ্বাস আছে আমার।
আর এই ফাঁকে, সেলমাকে বলছে স্যাম, আমাদের জন্য একটা মোটরবোটের ব্যবস্থা করে দেও। খুব বড়ো কিছু না, আমরা দুইজন নড়াচড়া করতে পারবো এমন আকৃতির হলেই চলবে।
ওকে, ব্যবস্থা করছি, সেলমা জানালো। আরো কোনো সরঞ্জাম?
আমার মনে হয় না আর কিছু লাগবে, স্যাম বলছে। আমাদের কাছে ওয়েটস্যুট এবং ডাইভ গিয়ার আছে। আমার মনে হয় এটাই জানতে চাইছিলে তুমি।
বলে স্যাম কলটা কেটে দিতে যাবে, ঠিক তখনই রেমি বলে উঠলো, ইনস্যুরেন্সের কথা ভুলো না।
কথাটা সেলমার ভ্রু কুঁচকে গেছে কিছুটা। ইকুইপমেন্টগুলো আপনারা যেভাবে ব্যবহার করেন, এরপরও কি এটা আর বলা লাগে? সাথে পুরো পরিকল্পনাটাও জানিয়ে দেন, যাতে করে কোনো বিপদ ঘটলে আপনাদের খুঁজে বের করতে পারি।
সেলমার কথা শুনে অপমানিত হওয়ার ভান করে স্যাম বলল, আমাদের ওপর তোমার এতো কম ভরসা জেনে দুঃখ পেলাম।
আপনাদের ওপর না, মি, ফার্গো। আপনারা যেই ধরনের মানুষের সাথে লেগেছেন তাদের ওপর ভরসা নেই। লোভী লোক সবাই। আর লোভই তাদের মনে শয়তানের সৃষ্টি করেছে।
****
সূর্যোদয়ের দুই ঘন্টা পূর্বে ওয়েটস্যুট পরে সতেরো ফুট দৈর্ঘ্যের বোস্টন ওয়ালারে চড়ে বসলো স্যাম ও রেমি। ম্যাহোন বের উত্তর প্রান্তের গোল্ড রিভার ম্যারিনা থেকে ফ্রগ আইল্যান্ডের দিকে যাত্রা করেছে ওরা। যদিও তাদের যানটা খুব দ্রুতগতির না, তারপরও সূর্যোদয়ের পূর্বেই গন্তব্যে পৌঁছে অন্যান্য বোটদের সাথে মিশে যেতে পারবে।
যদিও ওক আইল্যান্ডের গাইড বলেছিলো যে দুটো দ্বীপের মধ্যে একটা আন্ডারওয়াটার প্যাসেজ আছে, তবে স্যাম বা রেমি কেউই এটা বিশ্বাস করতে পারেনি। সপ্তদশ বা অষ্টাদশ শতাব্দীর কারো ওরকম দক্ষতা ছিলো বলে মনে হয় না ওদের।