ভালো একটা প্রশ্ন। সময় গড়ালেই হয়তো জানা যাবে।
আগ্রহের ভান ধরে গাইডের কথা শুনছে ওরা। গাইড এখন দ্বীপের ইতিহাসের ইতিবৃত্তান্ত শোনাতে শোনাতে দ্বীপের দক্ষিণ দিকে থাকা একমাত্র ওক গাছটার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দলটাকে। যদি ইতিহাসের বক্তব্যগুলো সঠিক হয়ে থাকে, গাইড বলছে, পিটে সর্বপ্রথম খুঁড়া ছেলেরা মাটির নিচে কয়েকস্তর বিশিষ্ট বিদেশী পাথর এবং প্রতি দশ ফুট দূরে দূরে বেশ কিছু ওক গাছ আবিষ্কার করেছিলো। প্রায় ত্রিশ ফুট পর্যন্ত খুঁড়ার পর হাল ছেড়ে দিয়েছিলো ওরা। তারপর উনিশ শতকের শুরুর দিকে তাদের একজনের পুনরায় মনে পড়ার আগ পর্যন্ত গর্তটা ওভাবেই পড়েছিলো। এর আগ পর্যন্ত কেউ আর স্পর্শও করেনি। এরপর থেকেই শুরু হলো হাজার হাজার মানুষের টাকা খরচ করে এখানে খুঁড়ার কাজ। ঐ দুই ছেলের কেউ ধারণাও করতে পারেনি যে ভবিষ্যতে জায়গাটায় খননের জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থের খরচ করবে মানবজাতি। আর খনন করে কী খুঁজছে সবাই? কী রহস্য লুকিয়ে আছে এখানের মাটির নিচে? টেম্পলারদের গুপ্তধন? নাকি ভুলে যাওয়া কোনো যাজকের সমাধিকক্ষ? নাটকীয়ভাবে বলে থেমে গেলোলোকটার। তারপর ধীরে ধীরে বলল, কেউ জানে না তা। তবে ওক আইল্যান্ডের নতুন মালিকেরা সেটা বের করার জন্য বেশ তৎপর হয়েই নেছে। আর আপনারা কী করবেন সেটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারও আমরা আপনাদের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছি। এখন আপাতত উপভোগ করুন জায়গাটা। আসুন আমার সাথে…।
বলে সবাইকে নিয়ে পিটের ভিতরের দিক বরারব এগিয়ে যাচ্ছে এখন। হাঁটতে হাঁটতে জায়গাটার ব্যাপারে আরো ইতিহাস বলছে গাইড লোকটা। তবে অজানা কোনো ইতিহাস জানা গেলো না গাইডের থেকে। ইন্টারনেট ঘেটে যতটুকু জানা গেছে, গাইডও সেগুলোই বলছে। পিট, চিহ্ন সম্বলিত কিছু পাথর, কেউ বেশি খুঁড়ে ফেললে সুড়ঙ্গের মাধ্যমের গর্তের পানিতে ভরে যাওয়া… সবই আগে থেকে জেনে এসেছে ওরা।
সত্যি বলতে, দুইঘন্টার ভ্রমণটাকে পুরোপুরি সময়ের অপচয় বলে মনে হচ্ছে তাদের। হাঁটতে হাঁটতে এখন বাইরের উপকূলে এসে উপস্থিত হয়েছে পর্যটকের ভিড়টা। এখানেও রহস্যময় চিহ্নসম্বলিত একটা পাথর রয়েছে। মানি পিটের দিকে নির্দেশ করে আছে পাথরের মুখটা। পাথরের উপস্থিতিটা মানি পিটের কিংবদন্তিকে আরো জোরালো একটা মাত্রা দিচ্ছে। ঠিক তখনই স্যাম রেমি বলে উঠলো, শুনেছো?
পানির ওপর থেকে মোটরবোটের জোরালো শব্দ ভেসে আসছে।
ওখান থেকে আসছে, বলে তাদের থেকে পূর্ব দিকে থাকা একটা ছোটো দ্বীপের দিকে নির্দেশ করলো স্যাম। রেমি ওদিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মোটরবোটে করে দুইজন পুরুষ দ্বীপটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ঐ ডাকাতগুলোই কি? জিজ্ঞেস করলো ও। স্যাম ওদিকে বাইনোকুলার দিয়ে তাকিয়ে আছে লোকগুলোর দিকে।
দেখে তো তাই মনে হচ্ছে, বলে বাইনোকুলারটা রেমির দিকে বাড়িয়ে দিলো স্যাম।
বাইনোকুলারের ফোকাসটা ঠিক করে ওদিকে তাকালো রেমি। দেখলো দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলের ধারের পানিতে একটা বোটে ভেসে আছে। বোট থেকে ব্যাকপ্যাক ও কোদাল নিয়ে একজনকে নামতে দেখলো ও। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে কিছু একটা খুঁজছে লোকটা। লোকদুটোকে চিনতে কোনো সমস্যা হলো না তার। আমাদের বই ডাকাত এবং নকল পুলিশদের একজন।
স্পষ্টতই তারা এমন কিছু একটা জানে যেটা আমরা জানি না।
আরো কিছুটা হেঁটে গিয়ে হঠাৎ করেই রেমিকে ভিড় থেকে সরিয়ে আনলো স্যাম। পিটের দিকে না গিয়ে বরং এখন গাছের সারির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে তাকিয়ে আছে অন্য দ্বীপে থাকা লোকদুটোর দিকে।
কিছু একটা খুঁজে পেয়েছে ওরা, বলল ও। বড়ো পাথরটার পিছনে খুঁড়ছে এখন।
এক্সকিউজ মি, হঠাৎই কেউ একজন বলে উঠলো তাদের পিছন থেকে। আপনাদের তো এখানে থাকার কথা না।
তাকিয়ে দেখে ট্যুর গাইডদের একজন দাঁড়িয়ে আছে তাদের থেকে কয়েক ফুট দূরে।
দুঃখিত, স্যাম বলল, আমরা বুঝিনি যে…
অন্যদের সাথে জড়ো হওয়া উচিৎ আপনাদের।
গাইডকে অনুসরণ করে আবারো দলটার সাথে এসে একত্রিত হলো ওরা।
স্যাম গাইডের কাছে জানতে চাইলো, ওখানে একটা দ্বীপ দেখলাম। নাম কী ওটার?
গাইড স্যামের নির্দেশ করা দ্বীপটার দিকে তাকিয়ে বলল, ওটা? ওটা ফ্রগ আইল্যান্ড।
রেমি জানতে চাইলো, ওক আইল্যান্ডের রহস্যের কোনো অংশ ওটা?
এখানের কোন অংশটা রহস্য না?
নির্দিষ্ট কোনো রহস্য আছে ওটাকে ঘিরে?
রেমির দিকে ভালো করে তাকালো লোকটা। তারপর বলল, সত্যি বলতে এমন কিছু গুজব চালু আছে। একটা সময় নাকি ফ্রগ আইল্যান্ডের সাথে এক আইল্যান্ডের কানেকশন ছিলো। পানির নিচের কোনো সুড়ঙ্গের মাধ্যমে। যদিও আমি ভেবে পাই না কোনো ধরনের ফ্লাডিং ঘটানো ছাড়াই কিভাবে সম্ভব এটা। হয়তো কেউ গুপ্তধনের আশা খুঁড়ছিলো, আর তখনই নতুন গুজবটা চালু হয়েছে। বলতে বলতে তটরেখার দিকে নির্দেশ করলো লোকটা। বোট দাঁড়িয়ে থাকা ঐ উপসাগরটা দেখতে পাচ্ছেন? গুজব অনুযায়ী ওখানেই নাকি সুড়ঙ্গটা বানানো হয়েছিলো।
স্যাম ও রেমি তাকালো ওদিকে। দেখলো যে লোকদুটো এখন আবার বোটের কাছে ফিরে গেছে। তাদের ব্যাগ ও কোদালগুলো ছুঁড়ে রাখছে বোটে। আপনার কি এই গুজবটা সত্য বলে মনে হয়? রেমি জানতে চাইলো।
হেসে উঠলো লোকটা। অবশ্যই আশা করি আমি। যদিও মানুষকে টাকা অপচয় করে এখানে খুঁড়াখুঁড়ি করতে দেখে খারাপই লাগে। একই জায়গায় জায়গায় বছরের পর বছর ধরে একই জিনিস খুঁজে যাচ্ছে ওরা। কে জানে হয়তো জিনিসটা এখানে নেইও।