সংখ্যাগুলোতে বেশ সন্তুষ্ট এভেরি। ফাইলটা বন্ধ করে বললেন, অন্য কেউ কি এগুলোর ওপর আগ্রহ দেখিয়েছে?
না, স্যার। এখনো না।
কোম্পানির সূচনালগ্ন থেকে মার্টিন এডওয়ার্ডস তার প্রধান অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছে। অর্থায়নের ব্যাপারে মার্টিনের ওপর অগাথ বিশ্বাস রয়েছে তার। তোমার কোনো রিকমেন্ডেশন?
সবকিছু বিবেচনা করলে- কলিন ফিস্ককে রুমের দিকে আসতে দেখে কথাটা শেষ না করেই থেমে গেলো মার্টিন।
বাধা দেওয়ার জন্য দুঃখিত, মুখে বললেও তার গলার স্বরে দুঃখের ছিটেফোঁটাও নেই, তবে আমার কাছে এমন একটা খবর আছে, যেটা প্রকাশ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারছে না।
ফিস্কের দিকে তাকালেন এভেরি। লোকটার হাবভাব দেখে খবরটা ভালো না খারাপ তা বুঝার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ফিস্কের মুখে কোনো অভিব্যক্তিই নেই। তাই মার্টিনের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললেন, সংখ্যাগুলোই তো তাদের হয়ে কথা বলছে। অবশ্য যদি আমার চোখের আড়ালে কিছু থেকে থাকে, তাহলে আলাদা কথা।
না, স্যার। আমার মত হলো, আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিৎ।
তাই করো। আর এখন যদি পারো, আমাদেরকে একটু একা ছেড়ে দাও। ব্যবসাবিষয়ক কিছু কথা আছে আমাদের।
দেরি না করে কাগজপত্রগুলো গুছিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়িই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো মার্টিন।
মার্টিন পুরোপুরি চোখের আড়াল হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করচলেন এভেরি। তারপর ফিস্কের দিকে ফিরে বললেন, কাজটা কি সম্পন্ন হয়েছে?
আমরা বই আর চাবিটা পেয়ে গেছি। রাস্তায় আছে এখন, স্বল্প সময়ের ভিতরেই আপনার হাতে চলে আসবে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন এভেরি। ফলাফলে বেশ সন্তুষ্ট তিনি। আর ফার্গোরা? তারা কি গল্পটা বিশ্বাস করেছে?
সত্যি বলতে, ঠিক ওভাবে করেনি। তারা আমার লোকদের অনুসরণ করে ওয়্যারহাউজ পর্যন্ত চলে এসেছিলো।
আমাকে জানাও যে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পালিয়ে গেছে ওরা। আমার দুজন লোকও তাই করেছে। তবে তারা এখন কোনো বড়ো সমস্যার কারণ হবে না।
চেয়ারের হাতলে খাবলে ধরলেন এভেরি। রাগে কোনো কিছু ভেঙে চুরমার করতে ইচ্ছা করছে তার। ফার্গোরা ইতিমধ্যেই তার যথেষ্ট পরিমাণ সময় ও টাকা নষ্ট করেছে। আমি এই গুপ্তধন শিকারীদের ব্যবস্থা হওয়া দেখতে চাই।
এই মুহূর্তে তারা আমাদের জন্য গোলাপের কাটা ছাড়া আর কিছুই না।
কাটাগুলোর বিষাক্ত হয়ে উঠার ক্ষমতা আছে। যদি পরবর্তীতে আমার কোনো অপারেশনে তাদের ছায়া দেখা যায়, তাহলে সরাসরি মেরে ফেলবে।
বস, ইতিমধ্যেই আমার পরিকল্পনাটা কাজ করতে শুরু করেছে।
কী রকমের প্ল্যান?
দুই মহিলাকে জড়িয়ে। পিকারিংর মেয়ে এবং ভাতিজি। এতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের জন্য ওরা বেশ উপকারী দিকই ছিলো। যদি সবকিছু প্রত্যাশামতো এগিয়ে যায়, তাহলে হয়তো এক-দুই দিনের ভিতরেই ভালো কোনো সংবাদ শোনার সম্ভাবনা আছে আমাদের।
.
১২.
জেটের কেবিনে একে-অপরের সামনাসামনি অবস্থানে আছে স্যাম ও রেমি। দুইজনই তাদের সঙ্গ উপভোগ করছে। ওক আইল্যান্ডের ইতিহাস এবং বিখ্যাত মানি পিটের ব্যাপারে জানা তথ্যগুলো স্মরণ করে দেখছে রেমি। আর স্যাম ওদিকে চার্লস এভেরির ব্যাপারে সেলমার পাঠানো রিপোর্টটা পড়ে দেখছে।
বেশ কিছুটা পড়ার পর স্যাম রেমির দিকে তাকিয়ে বলল, আমার কেন যেন লোকটাকে পরিচিত লাগছিলো। এখন মনে পড়েছে, নামটা ফোর্বসে পড়েছিলাম। কর্পোরেশন রেইডিংর মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কামিয়েছে লোকটা। আর যখন রেইডিংর কোনো কাজ না থাকে, তখন উপকূলীয় অ্যান্টিক সংগ্রহ করে। এই ব্যাপারে লোকটা নিজেকে বেশ দক্ষও ভাবে বটে।
তাহলে আমরা কেন আগে লোকটার ব্যাপারে কিছু শুনিনি।
কারণ আগে কখনো আমাদের পথ ক্রস করেনি। আর লোকটা এখন পর্যন্ত যে সংখ্যক মানুষের ব্যবসা অকেজো করে দিয়েছে, তাতে আশা করছি লোকটার সাথে যেন আমাদের কখনোই কোনো দ্বন্দ্ব না হয়।
স্যামের কথা শুনে হেসে উঠলো রেমি। ঠিক তখনই ব্রিও এসে উপস্থিত হলো কেবিনে। ঘুমানোর কারণে বেশ তরতাজা দেখাচ্ছে এখন তাকে। কিছুটা ভালো লাগছে এখন? রেমি জিজ্ঞেস করলো।
অনেকটাই।
সাইডবোর্ডে থাকা ডিনার দেখিয়ে স্যাম বলল, খেয়ে নাও তাহলে। সেলমা ওদিকে আগামীকাল বিকালের দিকে তোমার বাসায় ফিরে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে রেখেছে।
ধন্যবাদ। তারপর টেবিলের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা কাগজগুলোর দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বলল, ওক আইল্যান্ড? আপনারা নিশ্চিত যে ল্যারেইন এই জায়গার কথাই বলেছিলো?
এখন পর্যন্ত পাওয়া সমস্ত তথ্য বিবেচনা করার পর এটাকেই একমাত্র যৌক্তিক উপসংহার বলা যায়। আর বইয়ের এন্ডপেপারে যে ম্যাপটা ছিলো সেটার সাথেও ওক আইল্যান্ডের বেশ মিল আছে। আইল্যান্ডের ব্যাপারে কিছু জানো তুমি?
অল্প কিছুটা। সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে দুই কিশোর ওখানে খুঁড়ে কিছু পাথর এবং ওক গাছের গুঁড়ি খুঁজে পেয়েছিলো। এরপর থেকেই অবাস্তব গুপ্তধনের আশায় শিকারিদের খোঁড়াখুঁড়ি চলছে ওখানে।
হ্যাঁ, সতেরোশো পঁচানব্বই সালের কথা ওটা, বলল রেমি। সত্যি বলতে, পাইরেটস অ্যাণ্ড প্রাইভেটিয়ার্সও তখনই এসেছিলো বাজারে।
কাকতালীয় ঘটনা? ব্রি জিজ্ঞেস করলো।
রিপোর্টের কাগজটা থেকে চোখে তুলে তাদের দিকে তাকালো স্যাম। আমার মত জানতে চাও? হ্যাঁ, কাকতালীয় ব্যাপারই। সত্যি বলতে, আমার কখনো মনে হয়নি যে ওক আইল্যান্ডে কোনো গুপ্তসম্পদ আছে। আর বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের গবেষণার প্রতিবেদনও আমার ধারণার স্বপক্ষেই কথা বলছে।