ঐ বাড়িটাকে আসলে একটা দুর্গ বলা যায়। তুমি নিরাপদেই থাকবে আমাদের এখানে। সাথে সায় দিলো স্যাম।
মাথা নাড়লো ব্রি। না, আমি কোনোভাবেই আপনাদের বোঝা…
তুমি তা হবেও না, রেমি জানলো। তুমি আর সেলমা একসাথে থাকলে আমরা দ্রুতই এই রহস্যের সমাধান করতে পারবো। বলতে গিয়ে মনে পড়লো, ল্যারেইন বলছিলো বইয়ের ইতিহাসের ব্যাপারে নাকি তুমিই বেশি জানো…?
অল্প কিছুটা। আমি এট জানি যে আঙ্কেল জেরাল্ড বইটা কিনেছিলো আমার বাবার দিকের এক দূরবর্তী আত্মীয়ের এস্টেট সেলের সময়। কিং জনের সময়ের পর থেকেই মার্শাল ফ্যামিলির পুরুষরা তাদের এই স্বগোষিত পাবিরারিক ইতিহাসকে পাহারা দিয়ে আসছিলো। বলতে গিয়ে হালকা হেসে উঠলো ব্রি। অবশ্যই, এটা কোনোভাবেই সম্ভব না, কারণ এই বইটা লেখাই হয়েছিলো সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিকের সময়ে। আর, আপনারাই বলুন, জলদস্যু ও প্রাইভেটিয়ারদের নিয়ে লেখা একটা বই কেউ কি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সংরক্ষণ করে যাবে?
করবে না। তবে যদি মূল্যটা সবার আগ্রহের চাবিটার মতো কিছুর সাথে। সম্পর্কিত হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু আলাদা কথা। তাই না? রেমি বলল।
এমনকি এই বইটার ইতিহাস নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বইয়ের ম্যাপগুলোর জন্য একটা চাবি আছে, আর এই ম্যাপটা হলো জলদস্যু ও প্রাইভেটিয়ারদের নিয়ে-যাদের আগমনই ঘটেছে কিং জনের শাসনকালের আরো কয়েক শতাব্দী পর। তো, বুঝতেই পারছেন আপনারা। আমি জানি না কিভাবে এই বইটা আমাদের কোনো সাহায্যে আসতে পারে।
ব্রির দিকে তাকিয়ে রেমি মুচকি হেসে বলল, তেমন কিছু না হলেও, আগ্রহ জাগানিয়া ইতিহাস বলাই যায়।
আপনারা দুইজনই আমার সাথে অনেক ভালো আচরণ করেছেন। এতো কিছু ঘটার পরও- কথা থামিয়ে দিয়ে হাসার চেষ্টা করলো ব্রি, কিন্তু পারলো না। বরংচ আরো কান্নায় ভেঙে পড়েছে।
স্যামকে সরার ইশারা করে নিজের আসন থেকে উঠে দাঁড়ালো রেমি। তারপর গিয়ে বসলো ব্রির পাশে। মেয়েটাকে ভালো করে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করছে। হয়তো হাত-মুখ দিয়ে একটু ঘুমানো উচিৎ তোমার। একটা ভালো ঘুম দিলেই কিছুটা ভালো বোধ করবে। আর এসব নিয়ে কথা বলার জন্য পরেও অনেক সময় পাওয়া যাবে।
মাথা ঝাঁকালো ব্রি। হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হচ্ছে।
ব্রিকে সাথে নিয়ে বিমানের পিছনের অংশে থাকা স্লিপিং কোয়ার্টারগুলোর দিকে নিয়ে গেলো রেমি। কয়েকমিনিট পরেই ফিরে এলো আবার। বেচারী, স্যামকে বলছে, খুবই খারাপ লাগছে ওর জন্য।
তার কিন্তু দুঃখবোধ করার অধিকার আছে। শুধু ভাবো তোমার আঙ্কেল মারা গেছে, এবং এরপর তোমাকে কিডন্যাপ করেছে কেউ।
ও এখন নিরাপদ আছে। এবং এটাই সবচেয়ে মুখ্য বিষয়। বলে গ্লাসটা উঁচিয়ে ধরে একটা চুমুক দিতে গিয়ে থেমে গেলো রেমি। স্যামের দিকে তাকিয়ে আছে শুধু। তো, এখন কী বলবে? তোমার বলা আরাম ও বিশ্রামের সপ্তাহটা শুরু হচ্ছে কবে থেকে?
আহা, রেমি! ভালো একটা মুহূর্তকে নষ্ট করছো কেন? প্রতিদিন তো আর নিশ্চয় নর্থ ক্যারোলিনার টারমাকে বসে পঁচিশ বছরের পুরোনো স্কচ খাওয়া হয় না।
নষ্ট করার কোনো চেষ্টাই করছি না আমি। বলে ড্রিংকে চুমুক লাগালো রেমি। মুহূর্তটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছে। স্যামের অন্যান্য গুণগুলোর মধ্যে এটাকেও বেশ পছন্দ করে রেমি। সবসময়ই হাসিখুশি মুডে থাকতে পারে মানুষটা। শুধু ভাবছি আমার ক্যালেন্ডারের আরো কয়েকটা দিন এভাবে আটকে রাখা উচিৎ হবে কিনা!
তাহলে, কালদিন পর থেকেই শুরু হবে সপ্তাহটা।
কাল থেকে না? রেমি বলল।
প্রশ্নটার কোনো জবাব না দিয়ে স্যাম প্রসঙ্গ পালটে বলল, ওক আইল্যান্ডে পৌঁছার আগেও কিন্তু আরো অনেক কিছু করা বাকি আছে আমাদের। ধরেই নিচ্ছি ব্রি হয়তো তার কাজিনের মদ্যপ কথাগুলো স্পষ্টভাবেই শুনতে পেয়েছে। তারমানে ওখানে যাওয়ার পর হয়তো দুই তিনজন ক্ষিপ্ত গডফাদারের টার্গেট প্র্যাক্টিসেও পরিণত হতে পারি আমরা।
ট্রিপ ইনস্যুরেন্স করা আছে তো আমাদের?
আমি জানতাম আমি কিছু একটা ভুলে গেছি, আঙুলে চুটকি বাজিয়ে বলে উঠলো স্যাম।
হুম। তা এই চার্লস এভেরি নামের লোকটাকে নিয়ে ধারণা কী তোমার?
কথাটা শুনে স্কচের গ্লাসটা হাতে তুলে নিলো স্যাম। হাতে নিয়ে গ্লাস নাড়তে নাড়তে গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহগুলো নিয়ে ভাবছে। একটা-দুটো ঘটনা না, বরং সবগুলো ফ্যাক্টস নিয়েই বিবেচনা করছে! টাইমিংই তো সবকিছু, তাই না?
আমিও এই একই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিলাম। লোকটা হুট করেই জানতে পারলো যে সে বইটা পাবে না। আর এরপরপরই ঘটলো ডাকাতি ও কিডন্যাপিংর ঘটনাগুলো।
এক ঢোকে গ্লাসটা খালি করে নিলো স্যাম। টেবিলের পাশে থাকা প্যাড এবং কলম হাতে তুলে নিয়ে বলল, এই নামটা আমি সেলমার গবেষণার তালিকায় যুক্ত করলাম। এতে করে শুধু আমরা চার্লস এভেরি সম্পর্কেই না, সাথে সাথে সে কেন এই বইটার ওপর আগ্রহী সেটাও জানতে পারবো।
১১. চার্লস এভেরি
১১.
চার্লস এভেরি তাঁর হতে যাওয়া নতুন সম্পদের তালিকাটা পরীক্ষা করে দেখছেন। রাগে গা জ্বলছে তার। যখন কোনো পুরোনো ও বিরল কোনো গুপ্তধন তিনি নিজের আয়ত্তে আনতে না পারেন, তখন মেজাজ ঠাণ্ডা করেন দেউলিয়া অবস্থার ধারে থাকা কোম্পানিগুলোর খোঁজ নিয়ে। যৎসামান্য বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোম্পানিটা কিনে নিবেন উনি, তারপর একটু একটু করে ধ্বংস করে দিবেন ওটাকে। এবং সাথে সাথে বেশ ভালো অংকের একটা লাভও তুলে আনবেন। অবশ্য এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বেকার কর্মচারীদের হতাহতের ঘটনাও শোনা যায়। কিন্তু সাফল্য পেতে হলে তো কিছু জীবনকে উৎসর্গ করতেই হয়। এটাই ভাবতে পৃষ্ঠাগুলো উলটে উলটে দেখছেন তিনি। ডেস্কের উল্টোপাশে বসে তার মতামতের অপেক্ষা করছে তার প্রধান অর্থনির্বাহী অফিসার।