তার দিকে চোখ রাঙাতে রাঙাতে তলোয়ারটা হাতবদল করে নিলো রবার্ট। তোমার রাজার ক্যাম্পে পুরো একটা আর্মি পালার মতো স্বর্ণ আছে। তোমার অযোগ্য রাজার কৃতকর্মের কারণে যেসব সম্পদ হারিয়েছে সেসব ফিরিয়ে নিতে এসেছি আমি।
রাজা তার ইচ্ছেমতোই কাজ করবে, ধাতুর সাথে ধাতুর সংঘর্ষের শব্দ হলো-সেটা তোমার পছন্দ হোক বা না হোক।
আমার পরিবার সব হারিয়েছে তোমার রাজার জন্য, উইলিয়ামের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলল রবার্ট। আঘাত করার জন্য সুবিধাজনক অবস্থান খুঁজছে। আমাদের স্বর্ণ দিয়ে রাজা তার অর্থ-ভান্ডার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড়ো করেছে। আমাদের রক্ত দিয়ে। আমার সৎভাইকে জেলে পাঠিয়েছে ঐ রাজা। বলে বেশ কয়েকবার তলোয়ার দিয়ে কোপ দিলো রবার্ট। সম্পদগুলো আমাদের, এগুলো যেখানে যাবে, আমরাও সেখানেই থাকবো।
হাত জ্বলতে শুরু করেছে উইলিয়ামের। খুব দ্রুতই তাঁর শরীর ক্লান্ত হয়ে গেছে। তরুণ এবং শক্তিশালী রবার্ট খুবই ভয়ঙ্কর এক শত্রু। একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে তাঁরা, ফোঁসফোঁস করে ক্ষুব্ধ নিঃশ্বাস ছাড়ছে। হিউবার্ট আর অন্য বিদ্রোহী নাইটের ওপর থেকেও মনোযোগ সরে গেছে। উইলিয়ামের। অন্ধকার থেকে তাদের লড়াইয়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন শুধু। তুমি হেরে যাবে, উইলিয়াম বললেন।
নাহ। তোমার রাজা ইতিমধ্যেই মৃত্যুশয্যায় আছে।
ভয়ে গা শিউরে উঠলো উইলিয়ামের। ভয়টাকে কাজে লাগিয়ে শেষবারের মতো সর্বশক্তিতে উঁচিয়ে ধরলেন তলোয়ারটা। আঘাতটা প্রতিহত করে ফেলেছে রবার্ট উইলিয়াম এমনটাই আশা করেছিলেন। তলোয়ারটা আস্তে আস্তে ওপরের দিকে হুট করে সর্বশক্তিতে ঠেলে দিলেন চেইনমেইলের আড়ালে থাকা রবার্টের হাতের ভিতর। সাথে সাথে দুই হাত ঠেলা দিয়ে রবার্টকেও মাটিতে ফেলে দিয়েছেন।
রবার্টের ওপর গিয়ে দাঁড়ালেন উইলিয়াম। একই সাথে ভয় এবং ঘৃণা দুটোই মিশে আছে তার অভিব্যক্তিতে। রবার্টের তলোয়ার ব্যবহার করা হাতটা অকেজো করে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। তারপর নিজের অস্ত্রটা ঠেকালেন রবার্টের কণ্ঠনালীতে। এখন কী বলবে তুমি?
লড়াই কিন্তু আমরাই জিতেছি।
কিভাবে? তোমার আসন্ন মরণ দিয়ে? মুহূর্তটা উইলিয়ামের জন্য বিজয়ের সমতুল্য। বিশ্বাসঘাতককে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলার পথ থেকে মাত্র এক কদম দূরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।
কিন্তু তখনই হাঁপাতে হাঁপাতে উইলিয়ামের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো রবার্ট। তোমার কি মনে হয় রাজাকে তার সম্পদ নিরাপদে সরিয়ে ফেলতে বলার বুদ্ধিটা কার? কিংবা তোমাদেরকে অতর্কিত আক্রমণের পরিকল্পনাটা? পুরোটাই একমাত্র বৈধ রাজা প্রিন্স লুইসের চাল। লন্ডনে আসন গেড়ে এখন তিনি তোমার নকল রাজার লোভের সুবিধা ভোগ করবেন… সম্পদগুলো হবে আমাদের। বলে গভীর একটা শ্বাস নিয়ে নিলো। প্রতিটা জায়গাতেই আমাদের গুপ্তচর রয়েছে। তোমার রাজার সম্পদের পুরোটাই ছিনিয়ে নিব আমরা, শেষ বিন্দু পর্যন্ত সব। আর সেগুলো দিয়ে লুইসের ক্যাম্পেইনের অর্থায়ন করা হবে। ইংল্যান্ড হবে তার। এই সপ্তাহ পেরুনোর আগেই তুমি এবং তোমার মতো লোকেরা কিং লুইসের সামনে মাথা নত করে তার আনুগণ্য মেনে নিতে বাধ্য হবে।
হয়তো আমার লাশ মেনে নিবে, আমি না।
বলে রবার্টের তলোয়ারটা ঢুকিয়ে দিলেন উইলিয়াম। জোরে একটা মোচড়া দিতেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিতে বাধ্য হলো রবার্ট। লাশটা ওভাবেই ফেলে রেখে ফিট হিউবার্টের দিকে তাকালেন। আহত হয়েছে?
বুকের পাঁজর ভেঙেছে, মনে হয়।
কিছু শুনেছো?
হ্যাঁ।
কোনোরকমে শুধু একটা ঘোড়াই যোগাড় করতে পারলো ওরা। উইলিয়ামের ঘোড়াটা। যেহেতু হিউবার্ট আহত হয়ে আছে, তাই দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলো যে, উইলিয়ামই ঘোড়ায় চড়ে রাজাকে সুর্ক করতে যাবেন।
ঘোড়ায় করে বিশপ লিনের ক্যাম্পে যেতেই অনেকগুলো মুখ দেখতে পেলেন উইলিয়াম। তাদের মধ্যে জন ডি লেসি দাঁড়িয়ে আছে রাজার তাঁবুর সামনে। কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছে না ভিতরে। এমনকি উইলিয়ামকেও না। রাজা অসুস্থ। আমাশয় হয়েছে। কারো সাথে দেখা করার ইচ্ছা নেই উনার।
আমার সাথে ঠিকই দেখা করবে। সরে দাঁড়াও নয়তো প্রাণ খোয়াও।
কী
জন ডি লেসিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ধাক্কা দিয়ে তাঁবুতে ঢুকে গেলেন উইলিয়াম। ভিতরের বিকট গন্ধে নাক কুঁচকে গেছে তার। রাজার চিকিৎসক এবং দুই স্টুয়ার্ড রয়েছে শুধু তাঁবুতে। রাজার শয্যার সাথে রাখা মোমবাতির আলোগুলো তাদের নড়নে টিমটিম করছে। মোমের অনুজ্জ্বল আলোয় রাজার নিস্তেজ দেহটা দেখতে পেলেন উইলিয়াম। খুব বেশি নিস্তেজ। রাজা মরে গেছে ভেবে কিছুটা ভয় পেয়ে গেছেন উইলিয়াম। তবে কাছে এগুতেই দেখলেন যে রাজার বুক খুব ধীরে ধীরে উঠা-নামা করছে। তারমানে শ্বাস-প্রশ্বাস এখনো সচল আছে রাজারমহামান্য রাজা। বলে রাজার বিছানার পাশে হাটু গেড়ে বসলেন উইলিয়াম। মাথা নত করে বললেন, আমি ব্যর্থ হয়েছি।
রাজার চোখের পাপড়িটা আলতো করে নড়ে উঠলো। জলপট্টির কাপড়টা উনার ভ্রূগুলোকে ঢেকে রেখেছে। কিভাবে?
কথাগুলো আপনাকে একান্তে বলতে চাই, মহামান্য।
কিং জন প্রথমে কিছু বললেন না, শুধু উইলিয়ামের দিকে তাকিয়ে রইলেন একদৃষ্টিতে। তারপর হালকা কব্জির ইশারায় বললেন, বের হয়ে যাও। সবাই।