যে নামই হোক, ল্যারেইন তার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে বলছে, আমি শুধু এটাই জানি যে, বাবা হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিলো বইটা বিক্রি করবে না। কেন করবে না সেটাও বলেনি।
আঙ্কেল উদ্বিগ্ন ছিলো, ব্রি বলল। বইয়ের কপির ব্যাপারে অনেকগুলো ফোন এসেছিলো তার কাছে। আর এরপর হঠাৎই এক আগন্তুক এলো বইয়ের ব্যাপারে খোঁজ খবর করতে। খুব সম্ভবত ঘটনাগুলোর টাইমিং-এর কারণেই আঙ্কেল পিছিয়ে গিয়েছিলো।
স্যাম আবার রান্নাঘরে ফিরে এসেছে। জানালা দিয়ে ড্রাইভওয়েতে একবার নজর ফেলে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, টাইমিং?
মাথা ঝাঁকালো ব্রি। বইয়ের প্রথম মুদ্রণের অন্যান্য কপিগুলো থেকে এন্ডপেপার চুরির ব্যাপারটা সম্পর্কে জানতো আঙ্কেল। আমার মনে হয় আঙ্কেল হয়তো ভেবেছিলো একই কারণে তাকেও কেউ টার্গেট করেছে।
যুক্তি আছে তোমার কথায়, স্যাম বলল। কিন্তু আমরা এটার সাথে জড়ালাম কিভাবে?
মিসেস ফার্গোর সাথে কাজ শুরু পরই আমি আঙ্কেলকে আপনাদের ব্যাপারে বলেছিলাম। বলেছিলাম, আপনারা গুপ্তধন শিকার থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ফার্গো ফাউন্ডেশন এবং দাঁতব্য কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তখনই আঙ্কেল বলল যে বইটা কি আপনাদের কারো কাছে দেওয়া যায় কিনা। আপনাদের দিতে পারলে নাকি তার কাঁধ থেকে বোঝা নেমে যাবে।
হুম, এখন বুঝতে পারছি, খুব একটা সন্তুষ্ট শোনাচ্ছে না ল্যারেইনকে। বাবা কোনো সংগ্রাহকের কাছে বিক্রি করেনি, কারণ বাবা আপনাদের কাছে বিক্রি করবে ভেবে ঠিক করে রেখেছিলো।
দোকানে যাওয়ার মুহূর্তটার কথা স্মরণ করে ব্রিকে বলল, দোকানে গিয়ে কিন্তু আমার মনে হয়নি যে উনি আমাদের আশা করছিলেন।
ওটার জন্য দুঃখিত, ব্রি বলল। ঐদিন সকালেই আমি আঙ্কেলকে ফোন করে বলেছিলাম যে আপনারা দোকানে যাবেন। আঙ্কেল তখন অন্য একটা ফোন কলে পাওয়া হুমকি একটু দুঃশ্চিন্তিত ছিলো, তাই আমার কথাটা ভালোভাবে খেয়াল করতে পারেনি। ক্ষমাসুলভ হাসি ফুটে রয়েছে তার মুখে। আমি ভেবেছিলাম বইটা দোকান থেকে বেরিয়ে গেলেই আঙ্কেল আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে।
হুম, ল্যারেইন বলল। আর এখন বাবা মরেই গেছে।
ব্রি তার বোনের কাঁধে হাত রেখে স্বান্তনার সুরে বলল, ডাকাতির কথা শুনে আমি রাতেই তাকে দেখতে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলাম। হঠাৎ চোখ চকচক করে উঠলো ব্রির, পানি পড়ছে তার গাল বেয়ে। আমি খুবই দুঃখিত। আমি যেতে পারিনি। এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথেই আমাকে ধরে ফেলেছিলো ওরা। এরপর শুধু জানি, আমি ল্যারেইনের এখানে আছি। গাল থেকে চোখের অশ্রু মুছে রেমির দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলো ও। তারা বলছিলো, বইটা না পেলে নাকি তারা আমাদেরকে মেরে ফেলবে। আমি ভেবেছিলাম তারা হয়তো সত্যিই তা করে বসবে। নাহলে আমি কখনো…।
ব্রি, বলল রেমি। তুমি ওটাই করেছো তোমার যেটা করা দরকার ছিলো। আমি তোমাকে একমুহূর্তের জন্যও সন্দেহ করিনি।
স্যাম আবারো জানালার দিকে তাকিয়ে দ্রুত গতিতে পায়চারি করতে শুরু করেছে। প্রতিবারই যখন জানালা থেকে সে তাদের দিকে ফিরে আসে, ততবারই ব্রি আর ল্যারেইন উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে চোখ তুলে তাকায় ওরে দিকে। দুইজনের উদ্বেগ দেখে রেমি মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, পানি খাওয়া দরকার আমার। পানি খেয়ে আসছি।
বলে ক্যাবিনেট থেকে একটা গ্লাসে পানি ঢেলে স্যামের দিকে এগিয়ে গেলো রেমি। স্যামের পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, কী করছো তুমি? এভাবে তো তাদেরকে আরো নার্ভাস করে তুলছে।
রেমির দিকে তাকিয়ে স্যাম নিচুস্বরে বলল, আমাদের হাতে মাত্র একটা পিস্তলই আছে। আর আছিও এখন নির্জন এক জায়গায়। এখন আমরা খুবই ইজি টার্গেট। তাই চোখ রাখতে হচ্ছে।
ঠিক তখনই বিজলি চমকালো আকাশে। এতো উজ্জ্বল আলো যে রান্নাঘরও আলোকিত হয়ে গেছে বিজলির কারণে। এরপরই ভেসে এল বজ্রপাতের বিকট এক শব্দ। ব্রি ও ল্যারেইন দুইজনই চমকে গেছে শব্দে। ঠিক তখনই বেজে উঠলো টেবিলের ওপর রাখা হ্যান্ডসেটটাও! চমকে উঠে ওটার দিকে তাকালো ল্যারেইন।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে উঠে গিয়ে ফোনটা ধরলো ও। হ্যালো?… হ্যালো? কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো জবাব আসছে না। আরো কিছুক্ষণ হ্যালো হ্যালো করে ফোনটা কেটে ল্যারেইন বলল, হয়তো কোনো রং নাম্বার ছিলো।
একে-অপরের দিকে তাকালো রেমি ও স্যাম। সত্যি বলতে দুইজন একই কথা ভাবছে এখন। ডাকাতগুলো কল করে নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছে তারা আবার বাড়িতে ফিরে এসেছে কিনা।
পিছনের দরজাটা ঠিকঠাকমতো লাগানো আছে কিনা তা চেক করে দেখছে রেমি। আর স্যাম পিস্তলটা বের করে ল্যারেইনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, বাসায় কি আরো কোনো অস্ত্র আছে?
.
১০.
ফোন আসার পর থেকে প্রতিটা শব্দই ভয় পাইয়ে দিচ্ছে ওদেরকে। জানালায় বৃষ্টির পানির ফোঁটার শব্দ, মেঘের গুড়গুড়, বজ্রপাতের শব্দে প্রতিবারই ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে ব্রি ও ল্যারেইন।
পুলিশেরা আর মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে আছে। তবে তাদের এখানে এসে পৌঁছার আগ পর্যন্ত একেবারেই স্বস্তি পাচ্ছে না স্যাম। অদ্ভুত ফোন কলটা দুই মহিলাকেই ভয় পাইয়ে দিয়েছে। যদিও ফোন আসাটা কাকতালীয় হতে পারে, তারপরও টাইমিংয়ের কারণে কেউই স্বাভাবিক থাকতে পারছে না।