বসুন, বলল রেমি। আমি নিয়ে আসছি। পানি চলবে?
ধন্যবাদ, তবে আমার মনে হয় আরো কড়া কিছু দরকার এখন।
বলে রান্নাঘরে দিকে পা বাড়ালো ল্যারেইন। অন্যরাও আসছে তার পিছু পিছু। ডিশওয়াশার র্যাক থেকে গ্লাস তুলে নিয়ে ফ্রিজ থেকে ভদকার বোতল বের করে আনলো ল্যারেইন। গ্লাসে ঢেলে চুমুক দিতে যাবে ঠিক তখনই বি বলে উঠলো। তোমার কি মনে হয় ওটা খাওয়া ঠিক হবে এখন? আমাদের কিন্তু পুলিশের কাছে যেতে হবে।
ঠিকই করছি আমি। তোমার কি কোনো ধারণা আছে ক্যাবিনেটের ভিতর থাকতে কেমন লাগে, বিশেষ করে যখন এটাও অজানা যে কেউ তোমাকে খুঁজতে আসবে কিনা?
জবাবে ব্রি কিছু বলল না। ব্রির অস্বস্তিটা বুঝতে পেরে রেমি তার কাঁধে হাত রেখে বলল, তোমরা দুজন কী অবস্থায় ছিলে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারছি না। এমনকি তোমরা কেউই কারো ব্যাপারে কিছুই জানতে না। নিশ্চয়ই অবস্থাটা খুব খারাপ ছিলো তোমাদের জন্য।
হ্যাঁ, খুবই খারাপ ছিলো, ল্যারেইনের চোখের দিকে তাকিয়ে জবাবটা দিল ব্রি।
ব্রির মন্তব্যে কিছুটা চমকে গেছে ল্যারেইন। গ্লাসটা নামিয়ে বলল, ওহ, ব্রি… আমি দুঃখিত। আমাকে কি ক্ষমা করতে পারবে তুমি?
কিসের জন্য?
তারা তো তোমাকেই কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়েছিলো। নিশ্চিতভাবেই আমার থেকেও বাজে অবস্থায় ছিলে তুমি।
এর জন্য দুঃখিত হবার কিছু নেই। মি. অ্যান্ড মিসেস ফার্গো যে আমাকে খুঁজে বের করতে পেরেছে এতেই খুশি আমি।
হা। ভাগ্য ভালো ছিলো তোমার।
ফোনটা কোথায়? ল্যারেইনকে জিজ্ঞেস করলো রেমি। শেরিফের অফিসে ফোন করা উচিৎ আমাদের। তারা হয়তো আপনি ঠিক আছেন কিনা সেটা জানার অপেক্ষায় আছে।
পুরো বাড়ি জুড়েই বেশ কয়েকটা পোর্টেবল হ্যান্ডসেট আছে। সিঁড়ির কাছের হলওয়েতেও আছে একটা।
কথাটা শুনেই হলওয়ের দিকে পা বাড়ালো স্যাম। কিছুক্ষণ পরই ফোনে কথা বলতে বলতে রান্নাঘরে ফিরে এলো আবার। হ্যাঁ, হ্যাঁ। বুঝতে পেরেছি। আমরা এখানেই থাকবো।
তারপর ফোন কেটে রিসিভারটা কাউন্টারের ওপর রেখে বলল, তারা গোয়েন্দা বিভাগের একজনকে পাঠাবে এখানে।
মাথা ঝাঁকালো ব্রি। তবে রেমি বলল, সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে কী বলল? কাউকে কি ধরতে পেরেছে?
ইনভেস্টিগেটর এখানে এলেই হয়তো ওটার ব্যাপারে জানা যাবে।
ভদকার বোতলটার দিকে একবার তাকালো ল্যারেইন। তারপর আবার স্যামের দিকে ফিরে বলল, এখানে কেন লোক পাঠাচ্ছে ওরা?
ওরা বলতে পুলিশ? আমাদের স্টেটমেন্ট এবং প্রমাণ সংগ্রহের জন্য।
উত্তরটায় ল্যারেইন কিছুটা চমকে গেছে বলে মনে হচ্ছে। কী ধরনের প্রমাণ?
আঙ্গুলের ছাপ-টাপ, খুব সম্ভবত।
ভদকার গ্লাসটা কাউন্টারে নামিয়ে রাখলো ল্যারেইন। কী একটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মতো ঘটনা ঘটছে।
ব্রি এগিয়ে এসে তার বোনের হাতে ধরে বলল, পুলিশ অপরাধীকে খুঁজে বের করবে। কে জানে, হয়তো এতোক্ষণে ধরেও ফেলেছে।
গ্লাসে আরো কিছু ভদকা ঢালার মাধ্যমে নিঃশব্দে জবাব দিলো ল্যারেইন। রেমি অবশ্য এটার জন্য তাকে দোষ দিতে পারছে না। হাজার হোক, সদ্যই বাবাকে হারিয়েছে, আর কিছুক্ষণ আগে নিজেও বন্দী ছিলো ছোটো একটা চাপা জায়গায়। কিচেন টেবিলের সামনে থেকে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে ওটাতে বসে শুধু বলল, মনে হয় আমাদের সবারই একটু বসে রিল্যাক্স করা উচিৎ। বেশি দুঃশ্চিন্তিত বা আতঙ্কিত হওয়াটা কোনো উপকারে আসবে না।
ভালো বলেছেন, বোতলটা হাতে নিয়ে টেবিলের দিকে আসতে আসতে বলল ল্যারেইন। ব্রি, তুমিও একটা গ্লাস নিয়ে এসে জয়েন করো আমার সাথে।
আমি ঠিক আছি।
না, তুমি ঠিক নেই। তারা তোমাকে প্রায় মেরেই ফেলেছিলো। এক ঢোক গিলো তুমিও।
ব্রি অবশ্য তা করলো না। ভদকার পরিবর্তে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো শুধু। তারপর কাজিনের পাশে বসে বলল, আমি জানি না তুমি কিভাবে কড়া জিনিসটা গিলতে পারো।
এটা শক্তি যোগায় শরীরে, বলে গ্লাসে লম্বা চুমুক দিলো ল্যারেইন।
ল্যারেইনকে নিয়ে কিছুটা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছে রেমি। মহিলা যেভাবে ঢোক গিলছে তাতে তার আশঙ্কা হচ্ছে মানুষটা হয়তো পুলিশ এসে পৌঁছানোর পর কিছু বলার মতো অবস্থায় থাকবে না। তাই নিজে থেকেই কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার সিদ্ধান্ত নিলো ও। অল্প কয়েকটা প্রশ্নে হয়তো তেমন কোন ক্ষতি হবে না কারো। আশা করছি প্রশ্নটায় হয়তো কিছু মনে করবেন না, কিন্তু আসলে কী ঘটছে এসব?
ল্যারেইন মাথা নাড়তে নাড়তে আক্ষেপের স্বরে বলল, যদি জানতাম!
আপনার বাবার ম্যাপ বইটার সাথে কি এসবের কোনো সম্পর্ক আছে?
প্রশ্নটা শুনে ব্রির দিকে একবার তাকালো ল্যারেইন। বলল, বাবা যদি আমার বলা ক্রেতার কাছে বইটা বিক্রি করতো, তাহলে হয়তো এসবের কিছুই ঘটতো না এখন।
আপনি উনার জন্য ক্রেতা খুঁজে দিয়েছিলেন? জানতে চাইলো রেমি।
হ্যাঁ, বলল ল্যারেইন। একজনকে পেয়েছিলাম। বইটার জন্য অনেক বড়ো অঙ্কের টাকা দিতে চেয়েছিলো লোকটা। বইটার দামের থেকেও কয়েকগুণ বেশি।
ওদিকে স্যাম শুধু এক জানালা থেকে আরেক জানালায় পায়চারি করছে। বাড়ির সামনের দিকটায় তাকাচ্ছে একটু পরপর। রেমি অবশ্য স্যামের দিকে মনোযোগ না দিয়ে ল্যারেইনকে জিজ্ঞেস করলো, কে?
নামটা মনে নেই আমার।
আমার আছে, বলল ব্রি। লোকটার নাম চার্লস এভেরি।