বুঝতে পেরেছি আমরা।
ডেপুটি এরপর ব্রির দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, আপনাদের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আপনারা তিনজন-যদি আপনার কাজিনকে খুঁজে পান, তাহলে চারজন-শেরিফের অফিসে এসে স্টেটমেন্ট দিয়ে যাবেন।
মাথা ঝাঁকিয়ে ব্রি সায় দিতেই তাদের থেকে বিদায় নিয়ে পেট্রোল কারে ফিরে গেলো ডেপুটি লোকটা।
চলো তাহলে, ডেপুটি চলে যেতেই বলল স্যাম। ড্রাইভারের দরজাটা খুলে গাড়িতে ঢুকছে ও।
আমাদের গাড়িটা কী করব? সামনের প্যাসেঞ্জার সিটে উঠে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো রেমি।
ফিরে যাওয়ার সময় ওটা নিয়ে যেতে পারবো, বলল স্যাম।
ব্রিও উঠে বসলো রেমির পিছনের সিটে। স্যামকে বলল, প্লিজ একটু জলদি করুন।
শক্ত হয়ে বসে থাকো, বলে গাড়ি নিয়ে হারলোর দিকে ছুট লাগালো স্যাম। উইন্ডশিল্ডের ওয়াইপারগুলো চালু করে দিয়েছে যাতে বৃষ্টির কারণে সামনের দিকে দেখতে অসুবিধা না হয়। পিছনের ভাঙা জানালাটা দিয়ে শো শোঁ করে বাতাস ঢুকছে গাড়ির ভিতরে। ড্রাইভারের জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানির ছিটা আসছে অনবরত। স্যামের মুখ, কাঁধ সব প্রায় ভিজেই গেছে পানিতে। এমনকি প্যাসেঞ্জার সিটে বসে থাকা রেমির শরীরেও পানির ছিটা লাগছে। ব্রির কী অবস্থা দেখার জন্য পিছনের দিকে তাকালো একবার। তরুণ মেয়েটা পুরোপুরিই হতভম্ব হয়ে আছে এখন? তোমার চাচার ব্যাপারটায় খুবই মর্মাহত আমরা, বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ ছাপিয়ে বলল রেমি।
আমি জানি। কিন্তু আমি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি এটা। কয়েকমুহূর্ত পর ব্রি সামনের দিকে ঝুঁকে রেমির কাঁধে হাত রেখে বলল, আসার জন্য ধন্যবাদ আপনাদের।
বৃষ্টির ছিটা থেকে বাঁচতে ড্রাইভিং সিটের কিছুটা পাশ দিকে সরে গেছে স্যাম। গাড়ি চালাতে চালাতেই ব্রির দিকে তাকিয়ে বলল, আমরা এতেই খুশি যে তুমি ঠিকঠাক আছে।
রেমি জানালো, শুনেছি তুমি নাকি এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছিলে। স্যান ফ্রান্সিসকোই যাচ্ছিলে নিশ্চয়?
হ্যাঁ, যেতে চেয়েছিলাম। তারা আমার গাড়িটা রাস্তা থেকে ফেলে দেওয়ায় আর যেতে পারিনি।
সেলমা কল করেছিলো আমাদের, রেমি বলছে। পুলিশ তোমার গাড়িটা খুঁজে পেয়েছে। তোমার ফোন পাওয়ার আগ পর্যন্ত বেশ দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম আমি।
তারা আমার দিকে বন্দুক ধরে রেখেছিলো। আমি তো কখনোই আপনাদের এরকম বিপদে ফেলতে চাইনি।
ভাঙা জানালা দিয়ে বাতাস ও দমকা বৃষ্টির ছিটা আসায় কথা চালিয়ে যাওয়া বেশ অসম্ভব হয়ে উঠেছে ওদের জন্য। তাই বলল, আগে গিয়ে তোমার বোনকে দেখে আসি, তারপর কথা বলবো আমরা।
ফার্মহাউজে পৌঁছাতে প্রায় দশ মিনিটের মতো লাগলো ওদের। থামানোর সাথে সাথেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে দৌড় লাগালো ব্রি। দরজা খোলার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। জোরে জোরে করাঘাত করছে এখন। কোনো সাড়া নেই তবুও। ল্যারেইন! ল্যারেইন! কাঁদতে শুরু করলো ও।
রেমি ও স্যামও এগিয়ে এলো দরজার কাছে। ব্রিকে কাঁদতে দেখে স্যাম বলল, আমি দেখি অন্যভাবে ঢোকার কোনো পথ আছে কিনা!
বলে পা বাড়ালো বাড়ির পিছনের দিকে। রেমি এবং ব্রিও অনুসরণ করছে তাকে।
বাড়ির পিছন দিকেও একটা দরজা আছে। স্যাম খোলার চেষ্টা করলো দরজাটা। এটাও তালা লাগানো দেখে ব্রি বলল, লাথি দিয়ে খুলতে পারবেন না?
ওটার হয়তো প্রয়োজন পড়বে না, তালাটার দিকে তাকিয়ে বলল স্যাম। ওয়ালেট থেকে ক্রেডিট কার্ডটা বের এনে দরজার ফ্রেমের ফাঁক দিয়ে ঢুকিয়ে হালকা নাড়া দিতেই খুট করে খুলে গেলো তালাটা। তোমার কাজিনের উচিৎ দরজার জন্য ডেডবোল্ট জাতীয় কিছু ব্যবহার করা, দরজাটা খুলতে খুলতে বলল স্যাম।
কোনো জবাব না দিয়ে দৌড়ে রান্নাঘর পেরিয়ে ব্রি ডাকতে শুরু করলো, ল্যারেইন! কোথায় তুমি?
ডাকতে ডাকতে হলওয়ে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে ব্রি। রেমি ও স্যামও দৌড়ে আসছে তার পিছু পিছু।
দৌড়ে আসতে আসতেই মুখের ওপর থেকে ভেজা চুলগুলো সরিয়ে নিচ্ছে রেমি। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে যাবে, ঠিক তখনই শুনতে পেলো তাদের নিচ থেকে কিছু একটার শব্দ ভেসে আসছে। ঝট করে থেমে শব্দটার দিকে লক্ষ্য করে তাকালো ও। সে নিশ্চিত যে তাদের নিচ থেকে থাবার শব্দ আসছে। এখানে দেখো! সিঁড়ির নিচে থাকা স্টোরেজ ক্যাবিনেটের দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুললো ও।
বোনকে বের করার জন্য প্রায় উড়ে এসে ক্যাবিনেটের দরজার সামনে এসে পৌঁছালো ব্রি। ল্যারেইন!
ব্রির মতো ল্যারেইনকেও হাত-মুখ বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছিলো। ব্রি তার মুখ থেকে কাপড়ের টুকরোটা সরিয়ে জানতে চাইলো, তুমি ঠিক আছে?
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলো ল্যারেইন।
হাত-পায়ের বাধন কেটে ল্যারেইনকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলো স্যাম ও রেমি।
এরপর তাকে জড়িয়ে ধরে কাউচে নিয়ে বসানোর পর ব্রি বলল, তোমাকে নিয়ে অনেক দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম আমি।
তুমি এখানে আসলে কিভাবে? ল্যারেইন জানতে চাইলো।
ব্রি ফার্গো দম্পতিকে দেখিয়ে বলল, ফার্গো দম্পতি। আমার বন্ধু। তারাই ঐ বইটা নিয়ে এসেছে এখানে।
ল্যারেইন তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। আ- দূর থেকে বজ্রপাতের শব্দ ভেসে আসায় বাক্যটা বলে শেষ করতে পারলো না। তারপর হঠাৎ করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, কিছু ড্রিঙ্ক করা দরকার আমার। হাত কাঁপছে ওর।