ওয়্যারহাউজের দরজাটা খুলে যেতেই মনে মনে গালি দিয়ে উঠলো স্যাম। গাড়িটার দিকে বন্দুক তাক করে কেউ বেরিয়ে এলো বিল্ডিংটা থেকে।
হেই! চেঁচিয়ে উঠলো স্যাম। সাথে সাথে গর্জে উঠলো তার ৩৫৭ এর রিভলভারটাও। বুলেটটা মুখে গিয়ে আঘাত করার সাথে সাথেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো লোকটা। পড়ার সময় লোকটার হাত থেকেও কিছু একটা ছিটকে পড়েছে। গাড়ির চাবি!
সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে চাবিটা তুলে নিয়ে রেমির দিকে তাকিয়ে বলল, রেমি, চাবি!
বলে গাড়ির ওপর দিয়ে চাবিটা রেমির দিকে ছুঁড়ে দিলো স্যাম।
শূন্য থেকে চাবিটা লুফে নিয়ে ড্রাইভার সিটে চড়ে বসলো রেমি। চাবিটা ইগনিশনে লাগিয়ে ঘুরাতেই ইঞ্জিনটা আবার প্রাণ ফিরে পেলো যেন। দৌড়ে এসে তাড়াতাড়ি প্যাসেঞ্জার সিটে চড়ে বসলো স্যাম। ঠিক তখনই বিল্ডিং থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এলো অন্য দুই কিডন্যাপারও। গাড়িকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে ওরা।
.
গ্যাস প্যাডাল চেপে ধরলো রেমি। সাথে সাথেই বিপজ্জনকভাবে ঘাটের প্রান্তের দিকে দৌড় লাগালো গাড়িটা।
রেমি, কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো স্যাম।
আমি দেখেছি ওটা, বলে স্টিয়ারিং হুইল ঘুরানো শুরু করলো রেমি। আবারো ড্রাইভওয়েতে ফিরে এসেছে গাড়িটা।
পিছনে ফিরে তাকালো স্যাম। দ্বিতীয় লোকটা পিস্তল তাক করে রেখেছে তাদের দিকে। তবে গুলি করতে দেরি করছে। সুযোগটা হাতছাড়া করলো না স্যাম। তারা গুলি করার আগেই ট্রিগারে চাপ দিলো। সাথে সাথেই দেখলো যে তৃতীয় লোকটা তার বাম হাঁটু আঁকড়ে ধরে নুয়ে পড়েছে সামনের দিকে। অর্থাৎ, স্যামের টার্গেট মিস যায়নি।
গুলিবর্ষণ হচ্ছে অন্যপাশ থেকেও। গোলাগুলির শব্দে তাদের কানে প্রায় তালা লেগে যাওয়ার দশা। দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার জন্য এসইউভির গ্যাস প্যাডালে পা চেপে ধরে রেখেছে রেমি। কাম অন, স্পিড আপ!
ওদিকে বুলেটের আঘাতে গাড়ির পিছনের কাঁচটা ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে। বিপদ বুঝতে পেরে স্যাম সতর্ক করলো, মাথা নুইয়ে রাখো। শুধু সতর্ক করেই থেমে যায়নি, সাথে সাথে ভাঙা জানালার ফাঁক দিয়ে গুলিও ছুড়ছে অনবরত।
যতটা সম্ভব মাথা নুইয়ে রেখেই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে রেমি। রাস্তার শেষ মাথায় পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত গতি কমানোর কোনো ইচ্ছা নেই তার। দ্রুত গতিতে মোড়টা পেরিয়ে আবারো উঠে এলো রাস্তায়। একটু আগে এই পথটা দিয়েই এসেছিলো ওরা। অবশ্য বৃষ্টির মধ্যে গতি অব্যাহত রেখে গাড়ি চালানোটা বেশ কঠিন হয়ে গেছে এখন।
বেশ কিছুটা এগুনোর পর ডেপুটির পেট্রোলকারের টিমটিমে হেডলাইটগুলো চোখে পড়লো ওদের। গাড়িটা আরো কাছে পৌঁছাতেই মৃদু সাইরেনের শব্দও শুনতে পেলো ওরা।
ডেপুটিকে দেখে রাস্তার কিনারে নিয়ে গাড়িটা থামালো রেমি। ডেপুটিও তার গাড়িটা এনে দাঁড়ালো তাদের ঠিক পাশেই। সাইরেনের শব্দটা থামিয়ে দিয়েছে এখন।
আমাদের বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছি, প্যাসেঞ্জার দরজাটা খুলতে খুলতে বলল রেমি।
ব্রিকে হাত-পা বাধা অবস্থায় পিছনের সিটে পড়ে থাকতে দেখে এক মুহূর্তের জন্য বাকশূন্য হয়ে গেছে ডেপুটি। কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, কেউ আহত হননি তো?
ব্রির মুখ থেকে কাপড়ের টুকরোটা খুলে এনে রেমি জিজ্ঞেস করলো, কী অবস্থা তোমার?
আ- বলতে গিয়েও থেমে গেলো ব্রি। তারপর লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলল, আমি ঠিকই আছি। আমার কাজিন? ও কোথায়? ও ঠিক আছে তো?
আমি জানি না, স্যাম জানালো।
রেমিকে ব্রির বাঁধন কেটে দেওয়ার জন্য বলে স্যামকে নিয়ে গাড়ির পিছনের দিকে চলে গেলো ডেপুটি। আসলে কী ঘটছে সেটা জানতে চাইলো স্যামের কাছে।
রেমির ফোনে ভোলা ভিডিওটা দেখিয়ে ডেপুটিকে পুরো ব্যাপারটাই সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করে জানালো স্যাম।
কোথায় ঘটেছে এটা? সব শুনে জানতে চাইলো ডেপুটি।
স্যাম উত্তরের দিকে নির্দেশ করে বলল, এই তো প্রায় পাঁচ মাইলের মতো দূরে হবে জায়গাটা। রাস্তার পাশের ডকে কতগুলো পুরাতন ওয়্যারহাউজ আছে। ওগুলোর দ্বিতীয়টার সামনে।
সব শুনে ডেপুটি এসইভির ডান বাম্পারে লেগে থাকা বুলেটের দাগ এবং গুঁড়িয়ে যাওয়া পিছনের জানালাটার দিকে তাকালো একবার। তারপর রেডিওটা বের ডিস্প্যাচারকে বুফোর্টের বাইরে অবস্থিত পরিত্যাক্ত ওয়্যারহাউজের গোলাগুলির ব্যাপারে রিপোর্ট করে নিলো। তিনজন সন্দেহভাজনঃ তিনজন পুরুষ, ফর্সা শরীর, কালো পোশাক।
ডিস্প্যাচারকে তথ্যগুলো জানানো শেষে গাড়ির দিকেই রওনা করছিলো ডেপুটি, ঠিক তখনই ব্রি ডেকে থামালো তাকে। আমার কাজিনের ব্যাপারে বলুন।
কী বলবো তার ব্যাপারে? জবাবে বলল ডেপুটি।
আপনার কি তার সাথে কথা হয়েছে?
ফার্মহাউজে?
মাথা দুলিয়ে সায় দিলো ব্রি।
স্যরি, ম্যাম। ওখানে কারোরই সাড়া পাইনি আমি। দরজাও লক করা ছিলো।
জবাব শুনে রেমির দিকে ফিরে তাকালো ব্রি। চেহারায় উদ্বেগের ছাপ লেগে আছে। আমাদের ওখানে গিয়ে চেক করা দরকার। কে জানে ওর সাথে বাজে কিছু ঘটেছে কিনা?
.
০৯.
রেমির হাত খামচে ধরলো ব্রি। প্লিজ, ল্যারেইন হয়তো কোনো বিপদের মধ্যে আছে।
ওর কথা কিন্তু ঠিক, স্যাম বলল। আমাদের খোঁজ নেওয়া উচিৎ একবার।
স্যার, স্যামকে উদ্দেশ্য করে বলল ডেপুটি ওয়াগনার। আপনার ওপর বিশ্বাস রাখছি আমি। আপনি বুঝে শুনেই কাজ করবেন। বুফোর্ট থেকে ওরা কখন ব্যাকআপ পাঠাবে তা আমি জানি না। আর ঐ তিনজন সশস্ত্র ডাকাতগুলোর ওপর নজর রাখতে আমরা মাত্র একজন ডেপুটিকেই পাঠিয়েছি। ব্যাকআপ ছাড়া ওকে আর এগুতে দিতে পারছি না।