এসইউভিটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই মনে পড়লো, তারা তো সামনের সিটে বসা দুজনকেই দেখেছিলো মাত্র। পিছনের সিটের ব্যাপারে তো কিছুই জানে না।
রেমিকে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলে উবু হয়ে গাড়িটার দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করলো স্যাম। গাড়িটার কাছে পৌঁছে উঁকি দিতেই কালো কাঁচের আড়ালে একটা পরিচিত মুখ দেখতে পেলো।
ব্রি পড়ে আছে গাড়ির ফ্লোরবোর্ডে। তার হাতগুলো পিছমোড়া করে বাধা। মুখে একটা কাপড়ের টুকরো ঢুকানো, পাগুলোও বেধে রাখা।
ব্রির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জানালায় আলতো টোকা দিলো স্যাম। শব্দ। শুনেই তার দিকে চোখ তুলে তাকালো ব্রি। স্যাম তার ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ থাকার ইশারা করে জানালো যে ওরা তাকে এখানে ফেলে রেখে যাবে না।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলো ব্রি। গাড়ির দরজাটা খোলার চেষ্টা করলো স্যাম। অবশ্যই, দরজাটা লক করা। ব্রির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আশেপাশে একবার তাকালো। তারপর আবার রেমির কাছে ফিরে গিয়ে বলল, ব্রি আছে গাড়িতে।
ঠিক আছে ও?
বেঁধে ফেলে রেখেছে, তবে সুস্থই আছে, স্যাম জানালো। ওয়্যারহাউজটা একবার চেক করে দেখা দরকার। আমাদের বিরুদ্ধে কারা আছে সেটা জেনে লড়াইয়ে নামা উচিৎ।
একমত হয়ে ওয়্যারহাউজের খোলা দরজাটার দিকে এগিয়ে গেলো ওরা।
শোনার জন্য দেয়ালে কান পাতলো স্যাম, তবে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। তোমার পার্সে নিশ্চয় এখন ঐ আয়নাটা নেই?
কিসের জন্য লাগবে ওটা?
কিভার থেকে না সরে ভিতরে কী আছে তা দেখার জন্য।
রেমি তার ফোনটা উঁচিয়ে ধরে বলল, ক্যামেরা লেন্সে কাজ চলবে?
অবশ্যই চলবে। তোমার মতোই চমৎকার, বুদ্ধিদীপ্ত একটা আইডিয়া দিয়েছে।
তোষামোদ করে কিন্তু…
সব জায়গায় সুবিধা করা যায় না?
সেলফোন পাওয়া যায় না, ফিসফিসিয়ে বলে ক্যামেরা অপশনটা চালু করে ফোনটা স্যামের দিকে বাড়িয়ে দিলো রেমি।
টায়ার আয়রনটা মাটিতে রেখে দরজার দিকে ঝুঁকে ক্যামেরাটা বাড়িয়ে ধরলো স্যাম। মিনিটখানেক ধরে ভিডিও করার পর সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর পিছিয়ে গিয়ে প্লে করলো ভিডিওটা।
দেখো, ভিডিওয়ের দিকে ইশারা করে বলল স্যাম। একটা বেঞ্চের ওপর তিনজন লোক ঝুঁকে বসে কিছু একটার দিকে তাকিয়ে আছে। খুব সম্ভবত রেমির ফিরিয়ে দেওয়া বইটাই দেখছে। স্ক্রিনটা বেশ ছোটো হলেও দৃশ্যটা পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে। তিনজনের মধ্যে দুইজনের হাতে থাকা পিস্তলও দেখতে পাচ্ছে ওরা।
হোটেল রুমে আসা নকল পুলিশ দুইজন, রেমি বলল।
এবং সাথে বইয়ের দোকানের ডাকাতও আছে।
কী করবে এখন ওরা? অপেক্ষা করবে নাকি আক্রমণ করবে? ঝুঁকিটার ব্যাপারে একবার ভেবে নিলো স্যাম। একটা পিস্তল এবং টায়ার আয়রনের বিপক্ষে তিনজন সশস্ত্র শত্রু। ঝকিটা অনেক বেশিই। তবে জুটি হিসেবে স্যাম এবং রেমিও বেশ ভয়ঙ্কর। ঘিলুহীন কিডন্যাপারদের ঘায়েল করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না তাদের। টায়ার আয়রনটা মাটি থেকে তুলে, রেমিকে নিয়ে দরজার মুখ থেকে গাড়ির অন্য পাশে সরে গেলো স্যাম। তারপর ফিসফিসিয়ে বলল, আমাদের প্রথম কাজ হলো ব্রিকে ঐ গাড়ি থেকে বের করে আনা।
সে ভেবেছিলো গাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে দরজাটা খুলবে। তবে ঠিক তখনই তার চোখ পড়লো ঝিকমিক করতে থাকা লাল অ্যালার্ম বাতিটার ওপর।
কোনো প্ল্যান বি? রেমি জিজ্ঞেস করলো।
আসলে স্যামের প্রথম প্ল্যানটা দিয়ে কিন্তু এখনো কাজ সাড়া যাবে। যানটা দেখে অনেকটা পুরোনো মডেলের গাড়ির মতো মনে হচ্ছে। স্যাম আশা করছে এটায় হয়তো আধুনিক মোশন অ্যালার্ম সিস্টেমটা এখনো যুক্ত করা হয়নি। ছোটো চাকুটা বের করে এনে রেমির হাতে দিয়ে বলল, কাঁচ ভাঙার সময় আমাকে কভার দিবে তুমি। যদি অ্যালার্ম না বাজে, তাহলে আমি এসইউভির পিছনে সরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আর যদি বেজে উঠে, তাহলে আমাদের দিকে তেড়ে আসবে গুণ্ডাগুলো। তখন হয়তো বির বাধন কাটার জন্য কয়েক সেকেন্ডের মতো সময় পাবে। ঐ সময়ের ভিতরেই চেষ্টা করবে তাকে নিয়ে দূরে সরে যেতে। তখন আমি গুলি করে তাদের গতি কমানোর চেষ্টা করবো।
স্যামের কথাগুলো মেনে নিয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো রেমি। পিস্ত লটা তাক করে রেখেছে ওয়্যারহাউজের দরজার দিকে।
স্যাম ওদিকে টায়ার আয়রনটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাইভারের জানালাটার সামনে। গাড়ির সেফটি গ্লাসগুলো ভাঙার মতো করেই ডিজাইন করে থাকে। যদিও তারপরও কাঁচটা যথেষ্টই শক্ত। এর মানে হলো ভাঙার জন্য স্যামকে এখন শুধু সঠিক জায়গাটাতেই আঘাত করতে হবে। একটার বেশি আঘাতের সুযোগ নেই। নাহলে অ্যালার্ম বেজে উঠার সম্ভাবনাই বেশি। হালকা একটা পিছিয়ে গিয়ে লোহার মাথাটা দিয়ে ডান দিকের নিচের কোনায় আঘাত করলো স্যাম। কাঁচ ফেটে হীরার টুকরোর মতো গুড়ো গুড়ো হয়ে পড়তে শুরু করেছে। ড্রাইভারের সিটের ওপর।
তবে অ্যালার্ম বেজে উঠেনি। তার মানে অবস্থা এখন পর্যন্ত তাদের অনুকুলেই আছে। টায়ার আয়রনটা ফেলে পিস্তলটা নিয়ে এসইউভির পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা রেমির দিকে দৌড়ে গেলো স্যাম। দরজার দিকে পিস্তলটা তাক করে দাঁড়ানোর পর রেমিকে ইশারা করলো তার কাজ করার জন্য।
গাড়ির কাছে পৌঁছে লকটা খুলে নিলো রেমি। পিছনের দরজাটা খুলতে যাবে ঠিক তখনই তীক্ষ্ণ চিৎকার করে উঠলো গাড়িটা। অ্যালার্ম সিস্টেম তার কাজ করতে শুরু করেছে। এরমানে এখনই গুণ্ডাগুলো তেড়ে আসবে তাদের দিকে। চোখের কোণ দিয়ে রেমির দিকে তাকালো স্যাম। রেমি এখন উবু হয়ে ব্রির বাঁধন কাটার চেষ্টা করছে।