না। খুব সম্ভবত ডকে চলে গেছে গাড়িটা, নয়তো ওয়্যারহাউজগুলোর কোনোটার আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে।
তখনই হঠাৎ স্যামের ফোন বেজে উঠলো। পকেট থেকে ফোনটা বের করে রেমির হাতে তুলে দিলো, যাতে করে ফোন রিসিভের স্পিকারফোনে কথা বলতে পারে ও।
ডেপুটি ওয়াগনার বলছি, অন্য প্রান্ত ভেসে এলো স্বরটা। আপনাকে শুধু জানাতে চাচ্ছি যে আমি বাড়িটা চেক করে দেখেছি। কেউই সাড়া দেয়নি।
স্যাম… ফিসফিসিয়ে বলল রেমি।
শুনেই স্ত্রীর দিকে তাকালো স্যাম, তারপর চোখ পড়লো রাস্তার পিছনের দিকে। চেক করে দেখার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। আমরা বাসার সামনে থাকা ঐ গাড়িটার পিছে অনুসরণ করছিলাম। আমার স্ত্রীর ধারণা গাড়ির লোকগুলোর একজন নাকি দেখতে স্যান ফ্রান্সিসকোতে ডাকাতি করা ঐ লোকটার মতোই।
আপনাদের বন্ধু কি ঐ গাড়িতে ছিলো?
তাকে দেখিনি আমরা।
আপনারা কোথায় এখন?
পানির ধারে। বুফোর্টের দশ-পনেরো মিনিটের মতো দক্ষিণে খুব সম্ভবত
একটা উপকার করুন শুধু। দয়া করে উল্টোপাল্টা কিছু করে বসবেন না। আমি বুফোর্ট থেকে ব্যাকআপ পাঠানোর চেষ্টা করছি ওখানে? বলে ফোন কেটে দিলো ডেপুটি।
ডেপুটির সাথে কথা বলা শেষে রাস্তার পাশে নিয়ে গাড়িটা দাঁড় করালো স্যাম। খুব সম্ভবত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই আমার।
দরজার হাতলের দিকে হাত বাড়ালো রেমি। আমাদের হাতে হয়তো পনেরো মিনিট সময় নেই।
রেমি, বলেই খপ করে তার হাত আঁকড়ে ধরলো স্যাম।
রেমিও হাত থামিয়ে চোখ তুলে তাকালো স্যামের দিকে।
স্যাম তার দিকে ঝুঁকে চুমু খেয়ে বলল, তুমি নিশ্চয় ভেবে বসোনি যে আমি তোমাকে ওখানে একা যেতে দিবো?
অবশ্যই না। মুচকি হেসে দরজাটা খুললো রেমি। এখন চলো, আমাদের বন্ধুকে খুঁজে বের করি।
.
০৮.
বেল্ট থেকে রিভলভারটা বের করে এনে ট্রাঙ্কটা উঁচিয়ে ধরলো স্যাম। আর রেমি সামনের দিকে নজর রেখে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো ধরনের নড়াচড়া চোখে পড়লেই স্যামকে সতর্ক করে দিবে ও। যদিও স্যাম ঐদিকে আশা করছে যেন কোনো অস্ত্রের প্রয়োজন না পড়ে, কিন্তু তার ইন্দ্রিয় আবার অন্য কথা বলছে। রাস্তায় শুধু একটা গাড়িই দেখা গিয়েছিলো। যদি ব্রি ঐ বিচহাউজটাতে না থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই সে এসইউভিটাতে ছিলো। যেহেতু তারা ওকে দেখতে পায়নি, তারমানে মেয়েটার আহত বা মৃত হওয়ারও ভালো সম্ভাবনা আছে।
দুজনই তাদের সেলফোনগুলো সাইলেন্ট করে নিয়েছে। রেমিরটা যদিও তার হাতেই রয়েছে, স্যাম তারটা ভরে রেখেছে পকেটে। ট্রাঙ্ক থেকে নিজের জন্য একটা টায়ার আয়রন তুলে নিয়ে স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসনের রিভলভারটা রেমির হাতে তুলে দিলো স্যাম। রেডি? জিজ্ঞেস করলো ও।
হ্যাঁ, রেডি।
কোনার দিকে একবার নজর ফেলে স্যাম বলল, ওকে ক্লিয়ার।
দমকা বাতাস বইছে চারপাশে। বাতাসের ভিতরেই ঘাটের ওপর দিয়ে হেঁটে প্রথম ওয়্যারহাউজটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। কাঠের তক্তার ওপর তাদের পদশব্দ এবং পানিতে লাফাতে থাকা সিগালের চিৎকার ছাড়া আর কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না।
ঘাটে কোনো নৌকা বা কর্মরত কাউকেই চোখে পড়লো না ওদের। আরেকটু ভালো করে দেখার পরই বুঝতে পারলো যে ওয়্যারহাউজগুলো আসলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। জানালাগুলো ভাঙ্গা, দরজাগুলোও বাইরে থেকে তালা দিয়ে আটকানো। কাউকে কিডন্যাপ করে আটকে রাখার জন্য নিখুঁত জায়গা এটা।
রেমিকে সাথে নিয়ে ওয়্যারহাউজের পাশ ঘেষে এগিয়ে যাচ্ছে স্যাম। হঠাৎই একটা ক্ষীণ শব্দ ভেসে এলো তার কানে। সাথে সাথেই থেমে গেলো। রেমিকেও থেমে যাওয়ার জন্য ইশারা করে ফিসফিসিয়ে বলল, শুনো।
জং ধরা কিছুর আওয়াজ মনে হচ্ছে। কড়কড়ে শব্দ।
মাথা ঝাঁকিয়ে ওয়্যারহাউজের শেষ প্রান্তের দিকে ইশারা করলো স্যাম। হঠাৎই সিগ্যালের চিৎকারের শব্দ তাদের মাথার ওপর থেকে। চিৎকার শুনে এক মুহূর্তের জন্য থতমত খেয়ে গেলো রেমি। তাকিয়ে দেখলো তাদের থেকে কয়েক ফুট দূরেই সিগ্যাল লাফিয়ে পড়েছে পানিতে।
স্যাম ওদিকে সব ঠিকঠাক আছে হাত উঁচিয়ে সংকেত দিলো তাকে।
মাথা ঝাঁকিয়ে আবারো স্যামকে অনুসরণ করতে শুরু করলো রেমি। ওয়্যারহাউজে থাকা কারো নজরে না পড়ার জন্য একটা জানালার পাশে গিয়ে লুকিয়েছে স্যাম। যদিও কপাল খারাপ, ডকটা বেশ লম্বা এবং তারা কেউই জানে না এসইউভির লোকগুলো এতগুলো ওয়্যারহাউজের কোনটায় গিয়ে লুকিয়েছে।
বিল্ডিংয়ের শেষ প্রান্তে পৌঁছেই কোনার দিকে তাকালো স্যাম। দুই বিল্ডিংয়ের মাঝখানে একটা এসইউভি দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িটার উল্টোপাশে থাকা ওয়্যারহাউজের একটা দরজা কিছুটা ফাঁক হয়ে আছে। থেমে গেলো ও। গাড়িটা ওখানে।
ভিতরে কেউ আছে?
দেখে তো মনে হচ্ছে নেই, বলল স্যাম। অবশ্য পরের বিল্ডিংয়ের দরজাটা খোলা। আমি নিশ্চিত তারা এখন ওই বিল্ডিংটাতেই আছে।
মাথা ঝাঁকালো রেমি। তারপর ফিরে তাকালো পিছনের রাস্তার দিকে। ডেপুটির গাড়িটা দেখার আশা করছে। স্যাম অবশ্য তাকে এটা বলল না যে ডেপুটি এখন তাদের থেকে কমপক্ষে হলেও দশ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে। এখন যা করার তাদের নিজেদেরই করতে হবে।
ওয়্যারহাউজটার দিকে আরো কয়েকমুহূর্ত তাকিয়ে রইলো স্যাম। আক্ষেপ করছে, হাতে যদি টায়ার আয়রনের চেয়ে আরো ভালো কিছু থাকতো।