ফার্মহাউজটা চোখের আড়াল হতেই পুলিশকে ফোন করলো রেমি। পুলিশের লোকেরা তাদেরকে জানালো তারা যেন বাড়িটা থেকে মাইলখানেক দূরে হাইওয়ের ধারে অবস্থিত মার্কেটটায় অপেক্ষা করে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই মার্কেটে পৌঁছে গেলো ওরা। পার্কিং লটে গাড়িটা পার্ক করতেই হঠাৎ বেজে উঠলো রেমি ফোন। বের করে দেখলো, সেলমা অতিদ্রুত যোগাযোগ করার অনুরোধ করে মেসেজ পাঠিয়েছে।
দেরি না করে স্পিকার অন করে ফোন করলো রেমি। তুমি কি আমাদের পাঠানো ডিজিটাল ছবিগুলো থেকে কিছু খুঁজে পেয়েছো? জিজ্ঞেস করলো ও।
এখনো না, মিসেস ফার্গো। তবে এজন্যে ফোন করতে বলিনি আমি। আপনার খোঁজে একজন পুলিশ এসেছিলো একটু আগে। ব্রি মার্শালের গাড়িটা খুঁজে পেয়েছে ওরা। এয়ারপোর্টের কাছে একটা রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিলো গাড়িটা। গাড়িতে কয়েক বাক্স ফান্ড-রেইজার টিকেট আর ফার্গো ফাউন্ডেশনের নামে চেকভর্তি একটা খাম পেয়েছে। অফিসার জানতে চাইছিলো গাড়িটা আমরা টো ইয়ার্ড থেকে ওগুলো তুলে নিয়ে আসবো কিনা।
স্যামের তাকালো রেমি। স্যাম বলল, ধস্তাধস্তির কোনো চিহ্ন ছিলো কি গাড়িতে।
অফিসার পরিষ্কার করে কিছু বলেনি, মি. ফার্গো। তবে আমার মনে হয় ছিলো, লোকটা হয়তো একবার হালকা একটু বলেছিলো।
ধন্যবাদ, সেলমা, স্যাম বলল। আমরা এখানের ডেপুটিকে বলেছি ব্রির খোঁজ নিতে। তাকে এই ব্যাপারটাও জানিয়ে দিবো আমরা।
প্রায় দশ মিনিট পরই কার্টরেট কাউন্টি শেরিফের ডেপুটি এসে পৌঁছালো মার্কেটে। গাড়ি থেকে বেরুতেই উপত্যকার দমকা বাতাস সজোরে চপেটাঘাত করলো যেন লোকটাকে। আরেকটু হলেই মাথার ওপরের হ্যাটটা উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলো প্রায়। ফার্গোদের দেখতে পেয়ে হাত নেড়ে তাদেরকে একটা দোকানের সামনে এসে দাঁড়াতে বলল ডেপুটি। ওখানে তারা মোটামুটি আড়াল হয়ে থাকতে পারবে।
একত্র হতেই ডেপুটিকে পুরো ঘটনাটা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করে বলল রেমি। সব শুনে দ্বিধাগ্রস্ত দৃষ্টি ফুটে উঠলো ডেপুটির মুখে। এটা কি সম্ভব না যে এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে মহিলার গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো? তারপর হয়তো কোনো ক্যাব বা কিছুতে করে বাড়িতে ফিরে গিয়েছে।
হয়তো, বলল রেমি। তবে তার সদ্যমৃত চাচার বিড়ালের কাছে মেসেজ পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারটা কিন্তু কিছুটা অদ্ভুতই।
অনেক মানুষই তাদের পোষাপ্রাণীদের সাথে কথা বলে।
স্যাম বুঝতে পারছে যে প্রমাণের অভাবে ডেপুটি তাদের কথা বিশ্বাস করছে না। এক পা সামনে এগিয়ে অফিসারের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল, এটা কি সম্ভব না যে আমরা ভাবছি আমাদের বন্ধু কোনো বিপদে আছে, এবং এর জন্য তার ওখানে গিয়ে একবার চেক করে দেখা দরকার কিনা? সে ঠিক আছে কিনা সেটা দেখার জন্যও কি একবার যাওয়া যাবে না?
অবশ্যই। তবে এমন না যে আমি আপনাদের বিশ্বাস করিনি, বলল ডেপুটি। যদিও গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছে লোকটা পুরোপুরি বিশ্বাসও করেনি। আমি শুধু যুক্তি মেলাচ্ছি। আমি শুধু এই এরিয়ার একজন ডেপুটি মাত্র, তো আমার হ্যান্ডেল করার মতো কিছু হলে আমি অবশ্যই তা করব। নাহলে, ব্যাকআপ টিমের জন্য বিশ মিনিটের মতো অপেক্ষা করার অপশনও আছে।
অবশ্যই, বলল স্যাম। তারপর ওয়ালেট থেকে তার কার্ড বের করে ডেপুটির হাতে দিয়ে বলল, এখানে আমাদের সেল নাম্বারগুলো আছে। যদি ওখানে গিয়ে কিছু জানতে পারেন, তাহলে অবশ্যই জানাবেন আমাদের।
কার্ডটা হাতে নিয়ে গাড়ির দিকে রওনা করলো ডেপুটি, তারপর গাড়িতে করে ছুট লাগালো ফার্মহাউজের রাস্তার দিকে।
তারাও ডেপুটির গাড়িটা অনুসরণ করতে চাচ্ছিলো, তখনই রেমি দেখলো যে ডেপুটির সম্মুখ রাস্তা থেকে একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে তাদের দিকে। এটা ফার্মহাউজে পার্ক করে রাখা ঐ এসইউভিটাই।
তুমি নিশ্চিত?
একদম।
গাড়ি চালু করলো স্যাম। তুমি দেখেছো ভিতরে কে আছে?
দুইজন পুরুষ। যদিও আমি নিশ্চিত না। তবে প্যাসেঞ্জারের সিটে থাকা লোকটাকে পিকারিংর দোকানে ডাকাতি করতে আসা বন্দুকধারী বলেই মনে হচ্ছে আমার, বলল রেমি। ওদিকে স্যাম ইতিমধ্যেই এসইউভিটা অনুসরণ করতে শুরু করেছে। ব্রির কী হবে?
বিশ মিনিটের ব্যাসার্ধে থাকা একমাত্র ডেপুটি চেক করতে গেছে তাকে। আর লোকটা তোমার বলা বিড়ালের গল্পে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাতে আমার মনে হয় না যে সে সব কাজ ফেলে আমাদের কথায় একটা গাড়িকে অনুসরণ করা শুরু করবে। যদি তাকে রাজিও করাই তারপরও কিন্তু প্রমাণ নেই যে ঐ গাড়িটা অবৈধ কিছু করছিলো।
ভালো বলেছো।
তবে দুই লেনের গ্রাম্য রাস্তায় নজরে না পড়ে কাউকে অনুসরণ করা একদমই অসম্ভব কাজ। স্যাম যদিও চেষ্টা করছে এসইউভি থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে এগুতে। ধারণা করছে এই রুটটা হয়তো বুফোর্টের দিকে চলে গেছে। যদিও এটা চলে গেছে পানির ধারে অবস্থিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার দিকে। অনুসরণ করতে করতে দেখলো এসইউভিটা রাস্তার ডান দিকে মোড় নিয়ে চলে গেছে। স্যামও মোড় ঘুরালো। তবে ওদিক দিয়ে এগুনোর মতো আর কোনো রাস্তা নেই। বরং রাস্তার এক পাশে বড়ো একটা ডকে বেশ কয়েকটা বড়ো বড়ো ওয়্যারহাউজ দাঁড়িয়ে আছে। গতি কমালো স্যাম, তবে গাড়ি থামালো না। ওদিকে এসইউভি গাড়িটা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। গাড়িটার খোঁজে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলো, কিন্তু কোনো চিহ্নও দেখা যাচ্ছে। দেখতে পাচ্ছে কিছু? রেমিকে জিজ্ঞেস করলো।