পার্কিং লট থেকে গাড়িটা বের করে রাস্তায় নিয়ে এলো স্যাম। ব্যস্ত রাস্তার ওপর দিয়ে ড্রাইভ করে যাচ্ছে। ব্রির সাথে রেমির কথা শেষ হওয়ার পর মন্ত ব্য করলো, খুব ভেঙে পড়েছে ও।
স্বাভাবিক, রেমি বলল। প্রথমে হল ডাকাতি, তারপর হার্ট অ্যাটাক। মি. পিকারিংর মেয়ের কী অবস্থা তা ভাবতেও পারছি না এখন। দেখতে আসার মতো অবস্থাটাও নেই। যাক, অন্ততপক্ষে ব্রি তো আছে এখন ওর সাথে।
বইটার ব্যাপারে…?
ওটা নিয়ে আমিও ভাবছি। আমার মনে হয় পিকারিংর মেয়েকে বইটা অন্তত দেখানো উচিৎ আমাদের। তারপর নাহয় সিদ্ধান্তটা ও ই নিবে। আত্মীয়স্বজনের মধ্যে তো তার সিদ্ধান্তের মূল্যটাই অগ্রাধিকার পাবে। অন্ত তপক্ষে এতে করে তো আমরা বুঝাতে পারবো বইটা কেন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া উচিৎ আমাদের।
সিগন্যালে লাল বাতি জ্বলে থাকায় গাড়ি থামালো স্যাম। স্ত্রীর দিকে একবার তাকিয়ে আবারো চোখ ফিরিয়ে আনলো রাস্তার ওপর। আমার মনে হয় নর্থ ক্যারোলিনা ভ্রমণের জন্য আমাদের ফ্লাইটের পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে।
****
ব্যক্তিগত জেট বিমান থাকার সুবিধা এটাই যে যখন খুশি তখন পরিকল্পনা বদল করা যায়। সেলমা ওদের জন্য ওখানে হোটেল ও রেন্টাল কারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। রাতে ভালো একটা ঘুম এবং সকালে হালকা নাস্তা খেয়ে গাড়িতে করে ব্রির মেসেজ পাঠানো ঠিকানাটায় রওনা করলো ওরা। রেমি অবশ্যই সেলমার মাধ্যমে অবস্থানটা আসলেই সঠিক কিনা সেটা খতিয়ে দেখেছে। এটা জেনে স্বস্তি পেয়েছে যে ওখানে বসবাসকারী ল্যারেইন পিকারিং-স্মিথ সত্যিই জেরাল্ড পিকারিংর মেয়ে।
ল্যারেইন হারলো নামের একটা পল্লী এলাকায় থাকে। টোবাকো ফার্মে ঘেরা পূর্বের পথ ধরে মাইলের পর মাইল এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। গন্তব্যে যখন পৌঁছালো তখন তাদের মাথার ওপরের আকাশে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। সামনে এগিয়ে গিয়ে গাড়িটা পার্ক করে পুরো এরিয়াটার ওপর চোখ বুলাযলো স্যাম। সাদা ক্ল্যাপবোর্ডের ফার্মহাউজ এটা। নুড়ি পাথরের তৈরি ড্রাইভওয়েতে একটা কালো এসইউভি দাঁড়িয়ে আছে। ওদিকে ওপরের জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে কেউ একজন দেখছে তাদের। পর্দার হালকা নাড়াচাড়াটা স্যামের নজরেও পড়েছে।
রেমি তার কোলের ওপরে থাকা বইটার গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, চলো, জিনিসটা পৌঁছে দিয়ে আসি তাহলে।
তুমি নিশ্চিত এটা তুমি দিয়ে দিতে চাও?
হ্যাঁ। এটাকে প্রমাণ হিসেবে তুলে দেওয়া বা আদালতের কেস বানিয়ে দেওয়ার চেয়ে পিকারিংর মেয়ের হাতে তুলে দেওয়া ভালো। হয়তো বইটা কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ সেটা জানাতে পারবে ও।
গাড়ি থেকে নেমে সদর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে দরজায় নক করলো স্যাম। রেমিও দাঁড়িয়ে আছে তার সাথে। কয়েক মুহূর্ত দরজা খুলে তাদের সামনে উপস্থিত হলো ব্রি। তার চোখগুলো হালকা লাল এবং ফুলে আছে। কোনো সন্দেহ নেই যে সে এতোক্ষণ কাঁদছিলো। মি. অ্যান্ড মিসেস ফার্গো… মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলার চেষ্টা করছে ব্রি। বইটা এনেছেন?
বাদামি কাগজে মোড়ানো পার্সেলটা ব্রির হাতে তুলে দিলো রেমি। তোমার কাজিনের কী অবস্থা?
ও… ওর অবস্থা আসলে অতোটা ভালো না। বলে বইটা বুকে জড়িয়ে ধরলো বি। আপনাদেরকে ভিতরে আসতে বলতাম, কিন্তু…
ব্যাপার না, রেমি বলল। আমরা আশা করছিলাম, বইটা কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা তুমি জেনে থাকলে যদি আমাদেরকে জানাতে। কেন কেউ একজন এই বইটা খুঁজছে?
আমি জানি না আসলে, হালকা শ্রাগ করে বলল ব্রি। তবে বইটা এত পথ বেয়ে এখানে নিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ আপনাদের।
তুমি নিশ্চিত তুমি ঠিক আছো?
মাথা ঝাঁকালো ব্রি।
কেউই আর কোনো কথা বলছে না। নীরবতায় পরিবেশটা কেমন যেন অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। পুরোপুরি অস্বস্তিকর হয়ে উঠার আগেই রেমি এক পা পিছিয়ে গিয়ে মুচকি হেসে বলল, কোনো কিছুর দরকার লাগলে নির্দ্বিধায় জানিও আমাদেরকে।
সত্যি বলতে একটা কথা জানার ছিলো আসলে। মি, উইকহ্যামের কী অবস্থা? ডাকাতিতে তার তো কোনো ক্ষতি হয়নি?
না।
কিছু বলার আগে একবার বইটার দিকে তাকালো ব্রি। তারপর রেমির দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল, তাকে বলবেন আমি তাকে মিস করছি এবং সুযোগ পেলেই তাকে চিঠি লিখব। জানাবেন তো?
অবশ্যই, স্যামের বাহুতে হাত প্যাচিয়ে নিতে নিতে বলল রেমি। আমাদেরও যাওয়া দরকার। লম্বা ফ্লাইট।
স্যামও আলতোভাবে মাথা নেড়ে বলল, বাই।
গুডবাই, বলে দরজাটা লাগিয়ে দিলো ব্রি।
ওদিকে স্যামকে নিয়ে গাড়িতে ফিরেই রেমি বলল, ও বিপদের মধ্যে আছে। শুনানি সে কী বলেছে? আমাকে বলেছে মি. উইকহ্যামকে মেসেজ দিতে। পিকারিংর বিড়ালকে। সংকেত এটা। আমাদের ওখানে গিয়ে তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা উচিৎ এখন।
আইডিয়াটা ভালো না, রেমি।
কিন্তু তোমার সাথে তো এখন পিস্তলটা আছে।
আর শত্ৰু কয়জন? আমরা এটাও জানি না যে ওখানে কে আছে এখন। তোমারটাও যদি সাথে থাকতো, তাহলে একটা ঝুঁকি নিতে পারতাম।
ভ্রূ কুঁচকে স্যামের দিকে তাকালো রেমি। তারপর সেলফোনটা বের করে বলল, তাহলে পুলিশকে ফোন করে আমাদের দল ভারি করা উচিৎ।
হ্যাঁ, তবে এই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই ফোন করো না, স্যাম বলল। ব্রি যদি কারো জিম্মি হয়ে থাকে, তারমানে হলো ঐ লোকটা আমাদের ওপরও নজর রাখছে। বলে আর দেরি না করে ফার্মহাউজের সামনে থেকে গাড়িটা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলো স্যাম।