প্রফেসরের হুট করে থেমে যাওয়ায় মনে মনে ছটফট করতে শুরু করেছে রেমি। কোনোরকমে স্বাভাবিক স্বরে বলল, আসলে কোন ব্যাপারটা আপনি আগে ধরতে পারেননি?
অন্যান্য কপিগুলোতে কেন এন্ডপেপারগুলো নেই। আমি জানি তারা কিসের খোঁজ করছে।
.
০৭.
প্রফেসর হপকিন্স একটা ম্যানিলা খাম খুলে বললেন, এটা লুকানো ছিলো এন্ডপেপারের পিছনে।
আমি কি দেখতে পারি? হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো স্যাম।
অবশ্যই।
হাতে নিয়ে কাগজটা মেলিয়ে ধরলো স্যাম, যাতে রেমি ও সে একসাথেই দেখতে পারে। একটা হলুদ পার্চমেন্ট রয়েছে খামের ভিতরে। পার্চমেন্টট বইয়ের মলাটের সমানই বড়ো, কালো কালি দিয়ে কিছু একটা আঁকা রয়েছে কাগজটায়। চিত্রটা একটা দ্বীপের মানচিত্র। এর পাশেই রয়েছে চিহ্ন সম্বলিত একটা বৃত্ত, এবং ওপরে আছে একটা বর্গাকার চিহ্ন, কিছু একটা লেখা আছে। চিহ্নটার নিচে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই স্যাম বুঝতে পারলো যে ওটা একটা পূর্ণাঙ্গ বর্ণ। সাইফার হুইল? প্রফেসরের কাছে জানতে চাইলো।
ওটারই একটা চিত্র, প্রফেসর জানালেন। এটার পিছনেই ছুটছে ডাকাতেরা। যদি আগে চুরি এবং এন্ডপেপার ধ্বংসের খবরগুলো প্রকাশ না হলে-এটা কারো নজরেই আসতো না। সত্যি বলতে, আমি তোমাদেরকে জিজ্ঞেসই করতে যাচ্ছিলাম যে ছুটে যাওয়া এন্ডপেপারটা আবার আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিবো কিনা। ঠিক তখনই জিনিসটা চোখে পড়লো।
সামনে ঝুঁকে বইটাকে আরো কাছ থেকে দেখে রেমি বলল, আমি ভাবছি মি. পিকারিং বইটা আমাকে দেওয়ার সময় এর ভিতরে থাকা কাগজটা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন কিনা!
ভালো একটা প্রশ্ন, ভাবলো স্যাম। তবে সে এখনই ওটা নিয়ে কিছু ভাবতে চাচ্ছে না। আপনাকে কী বলে ধন্যবাদ জানাবো বুঝতে পারছি না, প্রফেসর হপকিন্সের দিকে তাকিয়ে বলল শুধু।
যেহেতু তোমরা আমাকে সাধারণের থেকে দ্বিগুণ ফি দিয়েছে, তাই ধরা যায় ওটাতেই ধন্যবাদ বলা হয়ে গেছে। নিশ্চিতভাবেই চমৎকার একটা রহস্য পেয়ে গেছে তোমরা।
হঠাৎই রেমির ফোনে আলো জ্বলে উঠলো। একবার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ফোনটা উলটে রাখলো শুধু। মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমাদের কাজটা করে দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রফেসর মুচকি হেসে বললেন, আর আমারও পরবর্তী অ্যাপোয়েন্টমেন্টের সময় হয়ে গেছে প্রায়। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে তাদের সাথে হাত মেলানো শেষে আবার বললেন, তাহলে লাঞ্চ উপভোগ করতে থাকো। উঠলাম আজ।
প্রফেসর চলে যেতেই রেমি তার ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো। ব্রি মেসেজ দিয়েছে।
কী লিখেছে? স্যাম জিজ্ঞেস করলো।
যত দ্রুত সম্ভব তাকে কল করতে।
বিলের চেক দিতে বলে তাড়াতাড়ি করে ডেজার্টটা শেষ করে নিলো দুজন। বিল আসতেই মোটা অঙ্কের টিপসহ বিল পরিশোধ করে তাড়াতাড়ি করে দৌড় লাগালো ভাড়া করা গাড়িটার দিকে।
গাড়িতে উঠে রেমি ফোন দিলো ব্রিকে। লাউডস্পিকার অন করে কথা বলছে ও। ব্রি? ঠিক আছে তুমি? তোমাকে না পেয়ে বেশ দুঃশ্চিন্তায় আছি আমরা।
আমি ঠিক আছি। এখন। আ-আমি নর্থ ক্যারোলিনায় আছি।
নর্থ ক্যারোলিনা?
কাজিনের কাছে এসেছি। তার বাবার ব্যাপারে খবরটা জানাতে।
আমরা খুবই খুবই দুঃখিত, ব্রি।
আমি জানি। এখন শুনুন। আমি শুধু ভাবছি-আমার আঙ্কেল কি আপনাকে ঐ বইটা দিয়েছিলো? যখন আপনি ওখানে গিয়েছিলেন? পাইরেটস অ্যান্ড প্রাইভেটিয়ার্স?
স্যামের তাকালো রেমি। বলতে কিছুটা দ্বিধা লাগছে ওর। কোনোরকমে বলল, আমি তার থেকে একটা কপি কিনেছি। কেন?
আমার কাজিন… মানে মেয়েটা খুবই ভেঙে পড়েছে। আসলে আঙ্কেল নাকি বইটা তাকে দেওয়ার প্রমিজ করেছিলো। আর আমিও আশা করছি বইটা হয়তো তার হাতে তুলে দিতে পারবো। বাবাকে মনে রাখার স্মৃতিস্মারক বলতে পারো।
তোমার চাচার সাথে যা হয়েছে, তাই আমরা ভাবছিলাম বইটা পুলিশের হাতে তুলে দিবো।
না! প্লিজ…
ব্রি? তুমি নিশ্চিত যে তুমি ঠিক আছো?
আ… হ্যাঁ। শুধু ভেবে দেখুন ঘটনাটা আমাদের জন্য কতটা ভয়ানক। আর বইটা আমার কাজিনের জন্য অনেক বড়ো কিছু এখন। আপনি যদি এটা পুলিশের হাতে তুলে দেন, তাহলে এটার জন্য আদালতেও যেতে হতে পারে। সে এখন এতো ভ্রমণের জন্য আসলে প্রস্তুত না। আর… কথা শেষের আগেই কান্না ভেঙে পড়লো ব্রি। কয়েকসেকেন্ড কাঁদার পর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল, স্যরি। ঘটনাটা খুবই ভয়ানক আমাদের জন্য।
তোমাকে সাহায্য করার জন্য কী করতে পারি আমরা? রেমি জিজ্ঞেস করলো।
আমি আশা করছি বইটা মেইল করে পাঠিয়ে দিতে বললে ক্ষুব্ধ হবেন না আপনারা। বাবার স্মৃতিস্মারক হিসেবে বইটা রাখতে চাচ্ছে ও।
অবশ্যই। ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো কিছু বলোনি তুমি। বুঝেছি ব্যাপারটা। তবে মেইল না, স্যাম আর আমি নিজ হাতেই নিয়ে আসবো বইটা।
না। আপনাদের এটা করতে বলতে পারি না আমি। এটা অনেক বেশি হয়ে যায়।
আমরাই জোর করছি, স্যামের দিকে তাকিয়ে বলল রেমি। স্যামও ওদিকে সাড়া দিয়েছে রেমির প্রস্তাবে। এই বইটা আসলে অনেক মুল্যবান। পোস্ট অফিসে করে পাঠানোর ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না আমরা। তোমার ঠিকানাটা মেসেজ করে দাও। কালকের ভিতরেই পৌঁছে যাবো আমরা।
অবশ্যই, পাঠাচ্ছি। ধন্যবাদ…
কথা শেষের আগেই আবারো ফুপাতে শুরু করলো ব্রি। রেমি তাকে আশ্বস্ত করে বলল, কালই আসছি আমরা। আর তোমার বোনকে আমাদের সমবেদনা জানিও।