রবার্ট ডি ব্রুজ উইলিয়ামের কাছে এসে বলল, আমার লোকদের তো এতক্ষণে এখানে এসে পড়ার কথা।
হয়তো ঠাণ্ডার কারণে আসতে দেরি হচ্ছে, বলে হঠাৎই হাত উঁচিয়ে সবাইকে চুপ করার নির্দেশ দিলেন উইলিয়াম। একটা ক্ষীণ শব্দ কানে আসছে তাঁর, শুনো…।
আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।
আবারো শোনা গেলো শব্দটা। বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দের সাথে অন্য একটা শব্দও মিশে আছে।
পাশ থেকে ধাতব খসখসে শব্দ শুনতে পেলেন উইলিয়াম। রবার্ট খোপ তার তলোয়ারটা বের করে এনেছে। সাথে সাথেই বেশ কয়েকজন ঘোড়সওয়ারি হুঙ্কার তুলে বেশ কয়েকজন ঘোড়সওয়ারি বেরিয়ে এলো জঙ্গল থেকে। তারাও তলোয়ার বের করে রেখেছে। অপ্রত্যাশিত আক্রমণে কিছুটা চমকে গেছে উইলিয়ামের ঘোড়া। পিছিয়ে যেতে চাচ্ছে শুধু। উইলিয়ামে কোনোরকমে ঘোড়ার পিঠে স্থিরভাবে বসে থাকার চেষ্টা করছেন। ঠিক তখনই বাতাস কাটার শব্দ শুনতে পেলেন তিনি, তাকিয়ে দেখলেন রবার্টের তলোয়ারটা এগিয়ে আসছে তার দিকে।
সাথে সাথে শিল্ডটা উঁচিয়ে ধরলেন উইলিয়াম। কিন্তু বেশি দেরি হয়ে গেছে। রবার্টের ব্লেড ধারালো প্রান্তটা ঠিকই তার বুকে এসে আঘাত করেছে। শক্ত চেইনমেইলটা আঘাতটা প্রতিহত করার পরও, ঠিকই ব্যথা পেয়েছেন তিনি।
রবার্ট কি ভুল করে তাকে শত্রু ভেবে বসেছে নাকি?
অসম্ভব, ভাবতে ভাবতে তিনিও তলোয়ার বের করে আনলেন। হালকা একটা পাক খেয়ে আক্রমণ করলেন তার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা ঘোড়সওয়ারিকে। উইলিয়ামের সবচেয়ে তরুণ নাইট আর্থার ডি ক্লেয়ারের পায়ের কাছে উড়ে গিয়ে পড়লো লাশটা।
ক্রোধে গা জ্বলছে উইলিয়ামের। রবার্টের দিকে ঘুরে বললেন, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? রাজার নিজ হাতে বাছাই করে নেওয়া মানুষটার আক্রমণের শিকার হয়ে রীতিময়ে হতভম্ব হয়ে গেছেন তিনি।
ভালোভাবে বললে, বলে আবারো তলোয়ার ঘুরালো রবার্ট। তবে এবারের আক্রমণটা কোনো চমক ছিলো না, তাই উইলিয়াম খুব সহজেই প্রতিহত করে ফেলেলেন আঘাতটা। দুটো তলোয়ার একত্রিত হওয়ার ধারব শব্দ শোনা গেলো শুধু। অবশেষে আমার মাথায় সুবুদ্ধির উদয় হয়েছে।
আমাকে আক্রমণ করে তুমি রাজার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কেন?
তোমার রাজা, আমার নয়। আমি এখন ফ্রান্সের লুইসের অনুগণ।
বেঈমানিটা একদমই মেনে নিতে পারছেন না উইলিয়াম। তুমি আমার বন্ধু ছিলে।
ঘোড়ার পেটে লাথি মেরে সামনের দিকে ঝুঁকে গেলো রবার্ট। তলোয়ার বাগিয়ে রেখেছে উইলিয়ামের দিকে। আঘাত হানতে যাবে ঠিক ঐ মুহূর্তেই আবার পিছিয়ে নিলো তলোয়ারটা।
এই নকল আক্রমণটারই আশা করছিলেন উইলিয়াম। রবার্টকে এগুতে দেখেই শিল্ড উঁচিয়ে ধরলেন। শিল্ডের আঘাতে ঘোড়া থেকে উলটে মাটিতে পড়ে গেছে রবার্ট! সওয়ারি পড়ে যেতেই ঘোড়াও দৌড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের পিছনে থাকা হিউ ফিটফ হিউবার্টও ঘোড়াচ্যুত হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই বিদ্রোহি নাইটদের একজনকে মেরে ফেলেছে হিউবার্ট। তারপর ঘোড়ায় করে পালিয়ে যেতে থাকা অন্য নাইটকে ধরে ফেলেছে। লড়াইটা এখন দুই বনাম দুই পরিণত হয়েছে। আর এখন উইলিয়ামই একমাত্র ঘোড়সওয়ারি। দৃশ্যপটটা ভালোই লাগছে তার, ঘোড়া নিয়ে রবার্টের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বললেন, আমি তোমাকে তলোয়ার চালানো শিখিয়েছি। তোমার দুর্বলতা জানি আমি।
এবং, আমিও তোমারটা জানি। মেঘ সরে যেতেই চাঁদের আলোয় রবার্টের হাতে থাকা অস্ত্রটা ভালো ভাবে দেখতে পেলেন উইলিয়াম। এক প্রান্ত বিশিষ্ট একটা তলোয়ার, তবে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে ওটাকে একইসাথে কুঠার এবং তলোয়ার দুটো হিসেবেই ব্যবহার করা যাবে। হালকা বাকানো প্রান্তটা আলাদা একটা ভয়ঙ্কর মাত্রা দিয়েছে অস্ত্রটাকে। উইলিয়াম দেখতে পেলেন তলোয়ারটার শেষ প্রান্তে শক্ত করে একটা চেইনমেইল পেঁচিয়ে রাখা আছে।
রবার্টের অস্ত্রটা বেশ ভারী ওজনের। সেই তুলনায় উইলিয়ামের দ্বি-ধার বিশিষ্ট লম্বা তলোয়ারটা অনেকটাই হালকা ওজনের। অস্ত্রের দিক থেকে রবার্টের সুবিধাই বেশি। তবে ঘোড়া থেকে পড়ে যাওয়ায় লড়াইয়ে খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে যাবে ও। ভাবনাটা মাথায় আসতেই উইলিয়াম দেখলেন রবার্ট তেড়ে আসছে তার দিকে। অস্ত্রটাকে কুঠারের মতো ধরে রেখেছে। লক্ষ্য ঘোড়ার পা-গুলোর দিকে।
হুমকিটা বুঝতে পেরেই পিছিয়ে গেলেন উইলিয়াম। রবার্টদের পরিকল্পনা হলো-তাদের ঘোড়াগুলো ধ্বংস করে দেওয়া, যাতে করে লড়াইয়ে বেঁচে গেলেও উইলিয়ামদের কেউ যেন রাজাকে সুর্ক করার জন্য সঠিক সময়ে ফিরে যেতে না পারে।
ঘোড়া থেকে নেমে গেলে লড়াইয়ের সুবিধাটা হারাবেন উইলিয়াম, কিন্তু এছাড়া কোনো উপায়ও নেই। যতদ্রুত সম্ভব শত্রুকে খতম করে রাজার কাছে ফিরে যেতে হলে ঘোড়াটাকে লাগবেই। তাই ঝট করে ঘোড়া থেকে নেমে গেলেন উইলিয়াম। ঘোড়ার পেটে হালকা চাপড় দিয়ে প্রাণীটাকে দূরে লুকিয়ে যেতে বললেন। ওদিকে হিউবার্ট অবশিষ্ট বিদ্রোহি নাইটের সাথে তলোয়ারযুদ্ধে মেতে আছে।
রবার্টের দিকে তাকালেন উইলিয়াম। একে-অপরের দিকে চোখ রাঙিয়ে বৃত্তাকার পথে ঘুরপাক খাচ্ছেন। সাথে সাথে রবার্টের ধাতব বর্মটার দিকেও তাকিয়ে আছেন উইলিয়াম। বর্মটার খুঁত বের করার চেষ্টা করছেন। কেন? প্রথম আঘাতের সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলেন উইলিয়াম। তাঁর উত্তর জানা দরকার। তাকে বাঁচতে হবে।