চমৎকার, রেমি বলল। তাহলে ওখানেই দেখা হচ্ছে।
****
ওল্ড টাউন স্কটসডেলের জলপ্রপাতের ধারেই অবস্থিত রেস্টুরেন্টটা। পরিবেশটা চমৎকার। স্যাম আগে আগে গিয়ে পেটা লোহার গেটটা ধরে রাখলো রেমির জন্য। তারপর কাঁচের দরজাটা। ভাজা রসুন এবং তাজা উদ্ভিদের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে জায়গাটা। তারা ভিতরে ঢুকতেই সিমা নামের এক মহিলা অভ্যর্থনা জানালো ওদের। তাদেরকে টেবিলে বসার জন্য অনুরোধ করে বলল, বুন অ্যাপেতিতো।
জানালার ধারে থাকা দুটো খালি টেবিল দেখতে পেলো ওরা। জানালাটা দিয়ে বাইরের প্রাঙ্গণটা দেখা যায়। বাম পাশের টেবিলটার ওপরে ছোটো একটা প্ল্যাকার্ডে রেখা রয়েছে লেখক ও গুণী ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত আসন। তাই এগিয়ে গিয়ে ডান পাশের টেবিলটায় বসলো রেমি। মেনু দেখে তাজা পনির, বাগানে ফলানো টমেটো, লাল মরিচ এবং পুদিনা পাতায় তৈরি ইসালাতা কাপ্রিজি এবং সাদা ওয়াইন কোজি ই বিয়াঙ্কো অর্ডার করলে রেমি। স্যাম খাওয়ার জন্য বেছে নিলো আরুগুলার ওপরে বিছানো কাছা অহ্য টুনা মাছ, ঝলসানো স্যামনে তৈরি কারপাচ্চিও নামের একটা ডিশ এবং টেবিলের জন্য অর্ডার করলো ধবধবে সাদা ওয়াইন ফালানঘিনা নুদো এরোইকো।
ওয়াইন এসে পৌঁছাতেই রেমি তার গ্লাসটা স্যামের উদ্দেশ্যে উঁচিয়ে ধরে টোস্ট করলো, আশা করছি প্রফেসর হপকিন্স রহস্যময় চাবিটা খুঁজে বের করতে পারবে।
আমিও।
তাদের খাওয়া শেষ শেফ মার্সেলিনো এগিয়ে এলো তাদের দিকে। তাদেরকে স্বাগতম জানালো। লোকটায় গলায় কড়া ইতালিয়ান টান লেগে আছে। আপনারা হয়তো আমার সুন্দরী বধূর সাথে ইতিমধ্যেই পরিচিত হয়েছেন, বলে সিমার দিকে ইশারা করলো শেফ। আশা করছি আপনারা হয়তো লাঞ্চটা উপভোগ করেছেন। তো, খাওয়া শেষে ডেজার্ট নেওয়ার ইচ্ছা। আছে কি?
খাবারটা চমৎকার ছিলো, রেমি জানালো৷ ডেজার্ট…? কথা শেষ না স্যামের দিকে তাকিয়ে আছে শুধু।
আমি সবসময়ই সুন্দরী রমনীর সাথে টিরামিসু শেয়ার করায় রাজি থাকি। (টিরামিসু-ইটালিয়ান ডেজার্ট।)
আচ্ছা, তাহলে, শেফের দিকে ঘুরে বলল রেমি। একটা ডেজার্টের অর্ডার দিচ্ছি আমরা।
এক্ষুণি নিয়ে আসছি, হালকা মাথা নত করে টেবিলের কাছ থেকে সরে গেলো মার্সেলিনো। তার গাঢ় চোখগুলো চকচক করছে যেন। কিছুক্ষণ পরই আবার ফিরে এলো টিরামিস নিয়ে। তাদেরকে উপভোগ করতে বলে আবারো টেবিল ত্যাগ করলো লোকটা।
চামচ দিয়ে ডেজার্টের প্রথম টুকরোটা মুখে তুলে নিলো রেমি। নিখুঁত স্বাদে মুগ্ধ ও। ইতালির পর এটাই দেশটার সবচেয়ে বড়ো সম্পদ।
এটা নিশ্চিতভাবেই গত মাসে রোমের ডোমাস মাগ্লানিমিতে তে খাওয়া টিরামিসুটার মতো অতোটা ভালো নয়, তবে… বলতে বলতে চামচভর্তি করে মুখে তুলে নিলো স্যাম। ওয়াইনের সাথে সাথে তৃপ্তির সাথে গিলে নিচ্ছে খাবারটা। চোখ বন্ধ করে উপভোগ করার পর বাক্যটা শেষ করলো, তবে আমার মনে হয় আমাদের দুটো প্লেট নেওয়া উচিৎ ছিলো।
দ্বিতীয় আরেকটা টুকরো নিতে চাচ্ছিলো রেমি, ঠিক তখনই দেখতে পেলো প্রফেসর হপকিন্স মোড়কাবৃত বইটা নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকছেন। ঢুকে কিছুক্ষণ এদিক-ওদিকে তাকালেন প্রফেসর। তারপর তাদেরকে চোখে পড়তেই হেঁটে আসলেন তাদের দিকে। তোমাদের খাবারের সময় বিরক্ত করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
বসুন, প্লিজ, স্যাম বলল। আমাদের খাওয়া শেষ অনেক আগেই। তবে টিরামিসুকে আসলে ঠিক মানা করতে পারছিলাম না।
মনোয়োম পরিবেশ, তাই না? চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন প্রফেসর।
খুবই চমৎকার, বলে প্রফেসরের হাতে থাকা প্যাকেজটার দিকে তাকালো স্যাম। বলল, কিছু পেয়েছেন ওটাতে?
প্রথমে কিছুই পাইনি। বইটার অবস্থা এখনো চমৎকার। অবশ্যই আমি প্রতিটা পৃষ্ঠা পরীক্ষা করে দেখেছি। তীর্যক আলো, কৃষ্ণ আলোসহ বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর নিচে নিয়ে দেখেছি। কোনো পৃষ্ঠার কোনো কিছুতেই চাবি আছে বলে কিছু মনে হয়নি। এটাই তো খুঁজছিলে তোমরা?
মাথা ঝাঁকালো রেমি ও স্যাম।
আমার এক ফ্রেন্ডের মেটাল ডিটেক্টর ছিলো। তাকে নিয়ে এসে ডিটেক্টরের নিচেও বইটা পরীক্ষা করিয়েছি। আমার ধারণা ছিলো চাবিটা হয়তো বাইন্ডিংয়ের মধ্যে আছে, ডিটেক্টরের নিচে নিলেই পাওয়া যাবে। কিন্তু কিছুই পাইনি। তখনই বুঝতে পারলাম যে চাবিটা আসলে ধাতব কোনো বস্তুই নয়। বইটা আসলে জলদস্যু এবং তাদের ম্যাপ নিয়ে লেখা। তাহলে ম্যাপেই চাবি কেন থাকবে না?
মাথা ঝাঁকালো রেমি। হ্যাঁ, এটার সম্ভাবনা আছে।
তাই আমি আবার প্রতিটা পৃষ্ঠা ঘেটে দেখছি। তোমরা যেমনটা চেয়েছিলে, অন্য কপির সাথে তুলনা করার জন্য ছবিও তুলে নিয়েছি সবগুলোর। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আমার কাছে বর্তমানে অন্য কোনো কপি নেই। ভাবলাম তোমরা হয়তো পরে আমার বানানো ডিজিটাল কপিটা দিয়ে তুলনা করে নিতে পারবে। হয়তো দেখতে পাবে এই এডিশনে এমন কিছু লেখা আছে যেটা অন্য কোনোটায় নেই। বিশেষ করে যে পৃষ্ঠাগুলোতে ম্যাপের ছবি আছে সেগুলো। বইয়ে পরবর্তীতে কিছু যোগ করা হয়েছে কিনা তার জন্য বইয়ের কালিও পরীক্ষা করে দেখেছি… বলে বাক্সটায় একটা চাপড় দিয়ে গভীর শ্বাস নিলেন প্রফেসর। যাই হোক, চাবি অন্বেষণের ব্যাপারে ফিরে যাই আবার। যখন আমি বুঝলাম যে জিনিসটা আমার সামনেই আছে, তখন মনে হলো যে আমি কেন এটা আগে ধরতে পারিনি। বলে প্রথমে রেমি এবং পরে রেমির দিকে তাকালেন তিনি। কিন্তু আর কিছু বললেন না।