কখন? রেমি বলল।
কাল রাতে। আমি বাসায় আসছিলাম তখন। দেখি ব্রি সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নেমে আসছে। বলেছিলো তার চাচাকে দেখতে যাচ্ছে।
স্যাম তার ওয়ালেট থেকে একটা কার্ড বের করে দিলো মহিলার হাতে। যদি তার সাথে আপনার যোগাযোগ হয়, তাহলে কি ওকে বলতে পারবেন আমাদেরকে কল করতে? জরুরি দরকার ছিলো।
অবশ্যই। আপনাদেরকে এর বেশি সাহায্য করতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
গাড়িতে ফিরে স্যাম তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, ব্রি মনে হয় খুব সম্ভবত স্যান ফ্রান্সিসকোয় আছে এখন।
আমি নিশ্চিত যে তোমার কথাই ঠিক। মেয়েটার মনের অবস্থা চিন্তা করতেই খুব খারাপ লাগছে আমার।
তার কাছে আমাদের নম্বর আছে। আমাদেরকে কল করতে পারবে। আর এর ফাঁকে চলো বাসায় ফিরে যাই। সেলমাকে সাথে নিয়ে মি. পিকারিংর বইটা একটু ঘেটে দেখা দরকার।
লা জোলা গোল্ডফিশ পয়েন্ট থেকে তাদের সমুদ্র তীরবর্তী বাসার দূরত্ব খুব বেশি না। মাত্র কয়েক মাইলের পথ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের গ্যারেজের সামনে গিয়ে পৌঁছুলো ওরা। গ্যারেজে ঢুকতেই দেখতে পেলো যে তাদের বিশাল জার্মান শেফার্ড কুকুর যোলতান দৌড়ে আসছে তাদের দিকে।
যোলতান কাছে আসতেই উবু হয়ে কুকুরটা কান চুলকে দিলো রেমি। আদর পেয়েই রেমির কোলে লুটিয়ে পড়লো কুকুরটা। আট্টিলা দা হানের সমাধি অনুসন্ধানের সময় হাঙ্গেরিতে কুকুরটাকে খুঁজে পেয়েছিলো রেমি। কুকুরটাকে ভালো লেগে যাওয়ায় ওটাকে বাড়িতেই নিয়ে আসে। তবে সমস্যা একটাই, যযালতান শুধু হাঙ্গেরিয়ান ভাষাতেই সাড়া দিতে পারে। কপাল আলো, তাদের গবেষক সেলমাও হাঙ্গেরির নাগরিক। এখনো তার গলার স্বরে কিছুটা হাঙ্গেরিয়ান টান মিশে আছে। সে ই যোলতানকে হাঙেরিয়ানের পাশাপাশি ইংরেজি শব্দেও সাড়া দেওয়ার ট্রেইনিংটা দিচ্ছে। সেলমার মতে, যোলতানই একমাত্র ইস্টার্ন ইউরোপিয়ান কুকুর যেটা দুটো ভাষাতে সাড়া দিতে পারে।
গুড বয়, রেমি বলল যোলতানকে। চল, তোকে একটা ট্রিট দেই।
ইংরেজি শব্দগুলোর মধ্যে ট্রিট শব্দটাতেই সবার আগে সাড়া দিয়েছিলো যোলতান। এখন রেমির মুখে শব্দটা শুনেই লেজ নাড়তে শুরু করলো প্রাণীটা। রেমি আরো একবার তার কানের পিছনে চুলকে দিয়ে পা বাড়ালো রান্নাঘরের দিকে। যোলতানও লেগে আছে তার সাথে সাথে। গিয়ে বসলো কুকুরের বিস্কুট রাখা ক্যাবিনেটটার সামনে গিয়ে। বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রেমির দিকে।
কয়েক মুহূর্ত পর সেলমাও পা ফেললো রান্নাঘরে। কালো একটা ইয়োগা প্যান্ট এবং সচারচের মতোই বহুরঙা একটা শার্ট পরে রেখেছে ও। এখনের শার্টটা সবুজাভ নীল এবং উজ্জ্বল গোলাপি রঙের। ছোটো করে ছাটা তার বাদামি চুলগুলোকে বরাবরের থেকে একটু বেশি খাড়া দেখাচ্ছে। এমনকি চেইন লাগানো চশমাটাও নেই তার চোখে। এর বদলে মোটা ফ্রেমের একটা সানগ্লাস লাগিয়ে রেখেছে এখন।
মি, অ্যান্ড মিসেস ফার্গো। ওয়েলকাম হোম।
আর স্যাম ভেবেছিলো মেয়েটাকে হয়তো অবশেষে তার প্রথম নাম ধরে ডাকার ব্যাপারে রাজি করাতে পেরেছে। ফর্মালিটিতেই ফিরে গেলে? বলল ও। স্যাম ও রেমি বলে ডাকা কই গেলো?
অনেক চেষ্টা করেছি, মি. ফার্গো। অস্বস্তি লাগে। আমি আপনাদের হয়ে কাজ করি। ফর্মালিটিতে ডাকতেই ভালো লাগে আমার।
তাহলে আমাদেরও তাই ভালো লাগবে, রেমি বলল।
রেমির দিকে তাকালো সেলমা। যোলতানকে দ্বিতীয় আরেকটা বিস্কুট খাওয়াতে দেখে বলল, আপনি তো দেখি কুকুরটাকে মোটা বানানোর তালে আছেন, মিসেস ফাগো।
কই? সে পারফেক্টলি ফিট আছে।
এর কারণ, আপনারা বাড়িতে থাকার সময় আমি ওকে দ্বিগুণ সময় ধরে বাইরে হাঁটাই। আপনারা তো ওকে খাওয়ানোয় কোনো কার্পণ্যই করেন না। তাই কারো একজনের তো বেচারার স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে বলে হলওয়ের কাছে থাকা ক্যাবিনেটটা খুলে শিকল বের করে আনলো সেলমা ষোলন শিকলের শব্দ পেয়েই উত্তেজিত হয়ে দৌড়ে চলে এসেছে সেলমার কাছে। সেলমা উবু হয়ে প্রাণীটার কলারে শিকল লাগাতে লাগাতে বলল, বিচের দিকে যাচ্ছি আমরা। দরকার লাগলে ওখানেই পাবেন।
বইটার ব্যাপারে বলো। রেমি জানতে চাইলো। ওটাতে অদ্ভুত কিছু চোখে পড়েনি?
সাথে সাথেই কিছু পড়েনি। তবে লাযলো বেশ মুগ্ধ হয়েছে, বলল সেলমা। সে আসলে লায়লো কেম্পের কথা বলছে। সেলমাকে গবেষণার কাজে সাহায্য করার জন্য তাকে নিয়োগ করেছে ওরা। সাথে সাথে নিজেও অসুস্থতা থেকে সেরে উঠছে। মেক্সিকোয় কেটজালকোয়াটলের সমাধি অন্বেষণের সময় গুরুতর সাথে আহত হয়েছিলো লাযলো। লোকটাকে সেলমার সাথে মিশে যেতে দেখে বেশ অবাকই হয়েছে ওরা। সেলমার স্বামী ছিলো একজন পাইলট, লোকটা মারা গেছে প্রায় দশ বছরের মতো। তারা অবশ্য এটা নিশ্চিতভাবে জানে না যে লাযলোর ব্যাপারে সেলমার অনুভূতি কী। তবে তাদের সম্পর্কটা এভাবে আপনগতিতে এগিয়ে যেতে দেখে বেশ খুশি ওরা। যদিও সম্পর্কের ব্যাপারটা আন্দাজে ধরে নিয়েছে ওরা।
কুকুরের বিস্কুটের বাক্সটা ক্যাবিনেটে রাখতে রাখতে রেমি সেলমার কাছে জানতে চাইলো, তো, লাযলোর মন্তব্য কী বইটার ব্যাপারে?
বলেছে– সে বইয়ের ব্যাপারে এতো ভালো করে কিছু জানে না। তাই বলতে পারছে না এটার জন্য আসলেই কাউকে খুন করা সম্ভব কিনা। এটা তার ফিল্ডের কিছু নয়। তবে বইয়ের ব্যাপারে আলোচনার জন্য ইয়ান। হপকিন্সের সাথে আপনাদের মিটিংর ব্যবস্থা করেছে ও। লাযলোর মতে এই বিষয়ে আলোচনা করার মতো হপকিন্সই দক্ষ ব্যক্তি। আর এছাড়া অন্য কাউকে এতো স্বল্প সময়ে পাওয়াও সম্ভব না। হয়তো রিটায়ার্ড প্রফেসর হওয়াতেই পাওয়া গেছে তাকে। তবে কপাল খারাপ, তিনি এখন অ্যারিজোনার ফিনিক্সে আছেন।