পিস্তল? সার্জেন্ট ফথ বলে উঠলো।
মাথা ঝকালো ম্যানেজার। আমার মনে হয় তাদেরকে আইডি দেখানোর কথা বলা উচিৎ ছিলো আমার, কিন্তু…
মি….?
ব্রায়ান্ট।
মি, ব্রায়ান্ট, সার্জেন্ট ফথ বলল। লোকদুটোর কেউ কি বলেছিলো তারা কী খুঁজছে?
হ্যাঁ। তারা জানতে চাইছিলো ফার্গোরা কি কোনো চাবির ব্যাপারে কিছু বলেছে কিনা। অথবা আমাদের সেফে এই জাতীয় কিছু রেখেছে কিনা। আরো কী কী যেন… আমার এতোটা মনে নেই। তবে তারা একটা চাবির কথা বলেছিলো, এটুকু স্পষ্ট মনে আছে আমার।
চাবি?
হ্যাঁ। আমি ভেবেছিলাম তারা হয়তো মিসেস ফার্গোর গলায় ঝুলানো নেকলেসের ব্যাপারে বলাবলি করছে।
কথাটা শুনেই হীরার নেকলেসটার ওপর হাত চলে গেলো রেমি। স্যামকে জিজ্ঞেস করলো, এটার ব্যাপারে কি কিছু লুকিয়েছো আমার কাছে?
এটা অবশ্যই দামি একটা অলংকার। তবে শুধু একটা অলংকারই মাত্র।
সার্জেন্টের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো রেমি। গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বলল, আমার মনে হয়, আমরা এটা ধরে নিতে পারি যে ঐ লোকগুলো যেটা খুঁজছে সেটা আমাদের কাছে নেই। তো যদি আর কিছু না থেকে থাকে…, তাহলে আমরা আসলে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম। নাহলে…
সার্জেন্ট তাদের স্যুটকেসের দিকে তাকালো একবার। লবিতে থাকা ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ দেখা দরকার আমার। মনে হয় মি. ব্রায়ান্ট আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।
নিজের স্যুটকেসের দিকে হাত বাড়ালো স্যাম। বলল, আপনার কাছে আমাদের সেল নম্বর তো আছেই, যদি দরকার লাগে কল করবেন। সার্জেন্টের জবাবের অপেক্ষা না করেই রেমিকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া শুরু করলো স্যাম। ম্যানেজার তাদের পিছে আসতে চাইছিলো, তবে স্যাম থামিয়ে দিলো লোকটাকে। আমরা নিজেরাই বেরিয়ে যেতে পারবো।
অবশ্যই, বলে পিছিয়ে গেলো ম্যানেজার।
লাগেজগুলো নিয়ে এলিভেটরে ঢুকলো ফার্গো দম্পতি। এলিভেটরের দরজাটা বন্ধ হতেই রেমি বলল, আমাদের বিশ্রামের ছুটিটা আসলে কোনদিন থেকে শুরু হবে?
আমি কি আজকের কথা বলেছিলাম? আসলে আগামীকাল হবে ওটা।
হুমম…
আর সত্যি বলতে, কেউ কিন্তু আমাদেরকে মারা চেষ্টা করছে না।
কিন্তু তাদের সাথে তো পিস্তল ছিলো, স্যামের দিকে তাকিয়ে বলল রেমি। আর আমরা আমাদেরগুলো প্লেনেই রেখে এসেছি।
এটা বলার উপযুক্ত সময় হয়েছে কি যে ঐ বইয়ের দোকানে যাওয়ার আইডিয়াটা তোমারই ছিলো?
মোটামুটি নিশ্চিত যে এই কথাটা বলার মতো উপযুক্ত সময় তুমি কখনোই পাবে না।
.
০৫.
স্যাম সিদ্ধান্ত নিলো রাতে তাদের স্প্যানিশ বের হোটেলে যাওয়া এবং মনটেরি পেনিনসুলার রয়-এ ডিনারটা একদিন পিছিয়ে দিলেও চলবে। তার ফ্লাইট ক্রুদেরকে বলল যেন মনটেরি এয়ারপোর্ট থেকে স্যান ডিয়েগোতে নিয়ে যায় ওদের। রেমি ওদিকে এখনো ব্রির সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে বেশ দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। এটার সাথে সকালের ঘটনাগুলো একত্রিত হয়ে স্যামের সপ্তাহব্যাপি পরিকল্পনাটায় পানি ঢেলে দিয়েছে যেন। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জি ৬৫০ বিমানে করে আকাশে উডডয়ন করলো ওরা। বিমানের ভিতরে বসে বিথোবিয়ানের রিলাক্সিং মিউজিক শুনছে। ওদিকে সেলমা রেমিকে মেসেজ দিয়ে জানিয়েছে যে বইটা আজ সকালেই তাদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছেছে। কন্ডিশনও বেশ ভালোই আছে। কুরিয়ার করার সময় ঝাঁকি খেয়ে ওপরের পরতে একটু চাপ পড়েছে শুধু। এছাড়া ভিতরে কিছুই হয়নি, এবং এটার সাথে কোনো চাবি বা অতিরিক্ত কিছুও যায়নি।
সেলমার মেসেজ পাওয়ার পরও দুঃশ্চিন্তা দূর হলো না রেমির। স্যাম রেমিকে ফোন চেক করে আবার টেবিলে রেখে দিতে দেখেছে। স্ত্রীর চেহারার হতাশাটা ভালোভাবেই চোখে পড়ছে তার। কোনো সন্দেহ নেই যে বন্ধুর জন্য অনেক বেশি দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে মেয়েটা। রেমিকে স্বস্তি দিতে না পারার আক্ষেপ হচ্ছে তার মনে। স্যাম ব্রি মার্শালকে অতোটা ভালো করে চিনে না। তবে মেয়েটার সাথে গত কয়েকসপ্তাহ ধরে কাজ করছে রেমি এবং কাজের মাধ্যমেই তাদের মধ্যে ভালো একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।
****
স্যান ডিয়েগো এয়ারপোর্টে পৌঁছেই সরাসরি লা জোলায় ব্রির অ্যাপার্টমেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা করলো ওরা।
এয়ারপোর্ট থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত একটা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের দোতলায় থাকে ব্রি। ওখানে পৌঁছুতেই দেখলো পার্কিং লটের পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো পাম গাছে। উপকূলীয় বাতাসের গাছের পত্ররাজিগুলো দুলছে যেন।
কমপ্লেক্সে পৌঁছেই সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেল ওরা। ডোরবেল চাপলো রেমি। কয়েকমিনিট অপেক্ষা করে আবারো চাপলো। কোনো সাড়া আসছে না ভিতর থেকে। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দরজায় করাঘাত করতে শুরু করলো স্যাম।
কিছুক্ষণ পর পিছনের দরজা খোলার শব্দ পাওয়া গেলো। এক মহিলা দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে বলল, কেউ নেই ওখানে।
ব্রির সাথে যোগাযোগ করার অন্য কোনো উপায় জানা আছে আপনার? রেমি জানতে চাইলো।
আপনারা…?
আমি রেমি ফার্গো। ও আমার স্বামী, স্যাম। আমরা
ফাউন্ডেশনের। ব্রিকে ওখানে কাজ করতে শুনেছি, বলে তাদের দুজনকে একবার দেখে দরজাটা পুরোপুরি খুলে দিলো মহিলা। আমি শুধু নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলাম যে আপনারা সাধারণ কোনো আগন্তুক কিনা। যাই হোক, ব্রি হুট করেই চলে গেছে।