এই যে আপনার ওয়ারেন্ট। বলে বুক পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা একটা কাগজে বের করে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলো লোকটা। তার সঙ্গীও এগিয়ে আসছে।
কাগজটা স্যামের গিয়ে ঠেসে ধরে তাকে ধাক্কা দিয়ে টেবিলের দিকে ঠেলে দিলো। অবশ্য স্যাম অতো সহজে ছেড়ে দেয়নি লোকটাকে। কাঁধ খাবলে ধরে চরকির মতো একটা পাক খেয়ে লোকটাকে দেয়ালে আছড়ে মেরেছে। দরজার মুখে লড়াইয়ের মতো সৃষ্টি হয়ে গেছে এতে করে। হঠাৎ করে লোকটার সঙ্গীও এসে জড়ো হলো হট্টগোলের মধ্যে। পেছন থেকে এসে স্যামকে ঝাঁপটে ধরেছে লোকটা। মুষ্টি পাকিয়ে প্রথম লোকটার চোয়ালে জোরালো ঘুষি হানলো স্যাম, তারপর ঝট করে ঘুরে লাথি মারলো দ্বিতীয় লোকটার গায়ে। উড়ে ম্যানেজারের গায়ের ওপর গিয়ে পড়লো লোকটা, দুজনেই মাটিতে আছড়ে পড়েছে। ওদিকে রেমি অস্ত্রের খোঁজে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। টেবিলের কাছেই থাকা ফুলদানিটা দেখে ওটাই তুলে নিলো হাতে আঘাত করার ভঙ্গিতে ফুলদানিটা ধরে রেখেছে। দ্বিতীয় লোকটা রেমির হাতের অস্ত্রটা দেখতে পেয়েছে। অবস্থা বেগতিক বুঝে স্যাম ও তার সঙ্গীর দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
ওদিকে এখনো প্রথম লোকটার সাথে লড়াই করছে স্যাম। লোকটা পাক খেয়ে ঘুরে আঘাত করতে চাইলো স্যামকে, কিন্তু স্যাম তার বাম হাত দিয়ে আঘাতটা ঠেকিয়ে ডান মুষ্টি দিয়ে সজোরে ঘুষি মারলো লোকটার পেটে। ঘুষি খেয়েই হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়েছে লোকটা। তবে বেশিক্ষণ পড়ে রইলো না। স্যামকে আবারো এগিয়ে আসতে দেখে সেও উঠে দৌড়ে লাগালো তার সঙ্গীর পিছে পিছে। স্যাম তাদেরকে তাড়া করতে শুরু করেছিল, তবে বেশিদূর এগুলো না। এর বদলে রুমে ফিরে এসে দরজার তালা লাগিয়ে তাকালো। রেমির দিকে। রেমি এখনো হাতে দানিটা ধরে রেখেছে। ওটা কি আমার জন্য নাকি তাদের জন্য?
এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি আমি। বলে মেঝেতে পড়ে থাকা ম্যানেজারের দিকে ইশারা করলো রেমি।
স্যাম এগিয়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলো লোকটাকে। আপনি ঠিক আছেন?
অনেক বেশি হতভম্ব হয়ে আছি, গায়ের পোশাকটা ঝেড়ে নিতে নিতে বলল ম্যানেজার। এটা তো দেখি রীতিমতো আক্রমণ ছিলো আপনাদের ওপর। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ফোন করে এটা নিয়ে অভিযোগ জানাবো আমরা।
তারা কিন্তু পুলিশ ছিলো না, বলল স্যাম।
কিন্তু আমি যে ওয়ারেন্টটা দেখলাম।
মেঝে থেকে ওয়ারেন্ট নামের কাগজটা হাতে তুলে নিয়ে স্যাম বলল, নকল। কোনো সাক্ষর নেই এটায়। খুব সম্ভবত ইন্টারনেট থেকে পুরোনো কোনো কেসের ওয়ারেন্ট প্রিন্ট করে নিয়ে এসেছিলো। বলে রেমির দিকে বাড়িয়ে দিলো কাগজগুলো।
চটজলদি কাগজগুলোর ওপর চোখ বুলিয়ে নিলো রেমি। স্যামের কথাই ঠিক। তোমার কি মনে হয় তারা কী খুঁজছিলো?
খুব সম্ভবত মি. পিকারিংর সেফে তারা যেটা খুঁজে পাওয়ার আশা করছিলো, সেটাই।
পুলিশের কাছে কল করে জানা গেলো যে ঐ লোকদুটো পুলিশের কেউ নয়। সত্যি বলতে তাদেরকে ধরার আশায় কয়েকমিনিটের মধ্যেই পুলিশ অফিসার এবং আইন প্রণয়নকারী অফিসারে ভরে গেলো জায়গাটা।
হাসপাতালের মর্গ থেকে সরাসরি হোটেলেই চলে এসেছে সার্জেন্ট ফথ। পিকারিংর অটোন্সির জন্যই ওখানে চলে যেতে হয়েছিলো বলে সকালে ইন্টারভিউয়ের সময় লোকটা থাকতে পারেনি। ফার্গো দম্পতির কাছে এটার জন্য ক্ষমা চেয়ে বলল, আপনাদের কোনো ধারণাও নেই তারা কী খুঁজছিলো?
না, বলল স্যাম। সত্যি বলতে, সার্চের কথা শুনে ভেবেছিলাম আপনিই হয়তো আমাদেরকে আপনার পার্টনারের সাথে আটকে রেখে এখানে তল্লাশি চালাতে এসেছেন।
অবৈধ তল্লাশির কথা বাদ দিলেও, আমরা আসলে কিন্তু নকল ওয়ারেন্ট নিয়ে আসতাম না। খুব সম্ভবত তারা আপনাদের ওপর নজর রাখছিলো। আপনারা হোটেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অপেক্ষাতেই ছিলো হয়তো। এরমানে হলো, তারা ভাবছে মি. পিকারিংর কাছে থাকা জিনিসটা এখন আপনাদের কাছে আছে।
রেমি তার স্যুটকেস থেকে কিছু খোয়া গেছে কিনা তা চেক করতে করতে বলল, জিনিসটা যেটাই হয়ে থাকুক না কেন, খুব একটা বড়ো না সম্ভবত। তারা স্যুটকেসের লাইনিংয়েও খুঁজে দেখেছে। এমনকি ছোটো কম্পার্টমেন্টেও। আমি যে বইটা কিনেছি সেটা ওখানে ফিট হবে না।
বইটা কোথায়?
কুরিয়ার লোকেরা যদি ঠিকঠাক মতো তাদের দায়িত্ব পালন করে থেকে থাকে, তাহলে এটা খুব সম্ভবত আজ বিকালের মধ্যেই আমার বাড়িতে পৌঁছে যাবে বইটা।
ওখানে ওটা রিসিভ কে করবে?
আমাদের গবেষক, সেলমা। আমি তাকে কল করে জানিয়ে দিচ্ছি।
ধন্যবাদ বুঝতে পারার জন্য।
রেমি তার পার্স থেকে ফোনটা বের করে সেলমার অফিসের নম্বরে ফোন করলো। কোনো সাড়া না পেয়ে একটা ভয়েস মেইল রেখে দিলো শুধু।
ফোনটা কান থেকে নামাতেই সার্জেন্ট ফথ বলল, তো সহজ করে বললে-আপনার পুলিশ স্টেশন থেকে হোটেলে ফিরে আসতেই ম্যানেজারের থেকে শুনলেন যে পুলিশ আপনাদের রুমে তল্লাশি করছে?
হ্যাঁ, ঠিক, স্যাম বলল। আমাদের বেরিয়ে যাওয়ার পরেই এসে ঢুকেছে।
ম্যানেজার এখনো আতঙ্কে কাঁপছে কিছুটা। মাথা ঝাঁকিয়ে স্যামের কথায় সায় দিয়ে বলল, ওয়ারেন্ট দেখাতেই আমি ফার্গো দম্পতিকে কল করার চেষ্টা করেছি। তবে তাদের কেউ ফোন ধরেননি। আর আমিই বা কী করবো বলেন? অফিসিয়াল কাগজ আর পিস্তল দেখে তো আমার…