অন্য সবার সাথে বাইরে বেরিয়েই লম্বা শ্বাস নিয়ে নিলো ওরা। এরপর নাইজেলের দিকে তাকিয়ে স্যাম বলল, তো, নাইজেল, স্টোরিটা নিয়ে নিন আপনি।
শুনে হতবাক দৃষ্টিতে স্যামের দিকে তাকালো নাইজেল। কিছুই বুঝতে পারছি না।
জবাবে রেমি নাইজেলের গালে একটা চুমু খেলোর থাকুন। গেট দিয়ে জনগণের ঢল নামার আগেই বেরিয়ে যেতে হবে আমাদের।
.
৫৯.
পরদিন সকালে হোটেল থেকে চেক আউট করে আরেকবার নিউইয়াক ক্যাসলে ঘুরতে গেলো স্যাম ও রেমি। জায়গাটা মানুষে গিজগিজ করছে। সিকিউরিটি কোম্পানির গার্ডদের মানুষের ভীড় নিয়ন্ত্রণ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে যেন। শতাব্দীর সেরা গুপ্তধন আবিষ্কারের দৃশ্যটা দেখতে এসেছে সবাই। কোনো রকমে গেটের যতোটা কাছে সম্ভব গাড়িটা পার্ক করে ফ্রন্ট গেইটের দিকে এগিয়ে গেলো ওরা। এই গেইটটা পাহারা দিচ্ছে নটিংহ্যামশায়ার পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
তাদের দেখে এক গার্ড এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, স্যার, আপনাদের নাম?
লংস্ট্রিট, বলল স্যাম। লর্ড অ্যান্ড লেডি লংস্ট্রিট।
নাম বলার এই স্টাইলটা কিছুটা পুরোনো হয়ে গেছে বলে মনে হয় না তোমার? রেমি বলল।
গার্ড ওদিকে তার নোটবুকটা চেক করে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, স্যরি, স্যার। আপনাদের নামটা তালিকায় নেই। দুঃখিত, আপনাদের ভিতরে ঢুকতে দিতে পারছি না আমি।
আপনি কি মি. রিজওয়েলের সাথে একটু যোগাযোগ করতে পারবেন? রেমি জিজ্ঞেস করলো। তাকে গিয়ে কি আমাদের আসার কথাটা জানাতে পারবেন?
অবশ্যই, মিলেডি। এটা জানাতে পারবো আমি, ভদ্রভাবে বলে গেটের সামনে থেকে গেলো গার্ড লোকটা।
দশ মিনিট পরেই নাইজেলকে গেইটের কাছে আসতে দেখলো ওরা। তার সাথে সাথে পার্সি ওয়েভ এবং প্রফেসর সেড্রিক অলড্রিজও এগিয়ে আসছে তাদের দিকে।
আসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের, গেটের কাছে এসে বলল নাইজেল। সরকারি অধিদপ্তরের লোকেরা প্রায় পাগল বানিয়ে ফেলেছে আমাদের। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ব্রিটিশ মিউজিয়ামসহ অনেক মানুষের সাথে কথা বলতে হচ্ছে আমাদেরকে।
আমি আর রেমি তো বিদেশি। এই ক্ষেত্রে আপনাদের কোনো সাহায্য করতে পারবো না আমরা, স্যাম বলল।
আমি বুঝতে পারছি না আপনারা কেন নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখতে চাইছেন? বলে উঠলেন অলড্রিজ। আপনারা দুজন না থাকলে তো কখনোই এই গুপ্তধন খুঁজে পাওয়া যেতো না। ব্রিটিশ রাজ্যকে এই সহযোগিতা করার জন্য আপনারা সম্মানসূচক নাইটহুড উপাধিও পেতে পারতেন।
স্যার স্যাম ফার্গো, মুখে প্রশস্ত হাসি ফুটিয়ে বলল রেমি। নাহ, এই নামের ব্যক্তির সাথে থাকতে পারবো না আমি।
কথাটা শুনেই কড়া দৃষ্টিতে রেমির দিকে তাকালো স্যাম। তারপর আবার অন্য তিনজনের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, সবাইকে বলে দিন যে আপনারা তিনজন একদল হয়ে সাইফার হুইলের ধাঁধা সমাধান করে এই গুপ্ত ইতিহাসটা পুনরুদ্ধার করেছেন।
হ্যাঁ। সাথে মেজ ক্রাওলির থিউরির কথাটাও উল্লেখ করবেন। পেমব্রুকের আর্ল উইলিয়াম দ্য মার্শালের রাজসম্পদ লুকানোর ধারণাটা কিন্তু প্রথম উনিই দিয়েছেন, সাথে যোগ করলো রেমি।
অবশ্যই, বলল নাইজেল। উইলিয়াম দ্য মার্শালের কারণেই রাজসম্পদগুলো কখনোই নিউইয়াক ক্যাসলের বাইরে যায়নি। তিনিই ঝড়ের মধ্যে জলাশয়ে রাজসম্পদ হারিয়ে যাওয়ার গল্প ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য যে এক সপ্তাহের ভিতরেই ফরাসিদের বিপক্ষে যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন তিনি। সেই সাথে সম্পদের গুপ্ত ইতিহাসটাও হারিয়ে গিয়েছিলো তার সাথে।
ইচ্ছা ছিলো আরো কিছুক্ষণ থাকার, তবে থাকতে পারছি না। কিছুক্ষণের মধ্যেই হিথ্রো বিমান বন্দর থেকে বিমান ধরতে হবে আমাদের।
আর কয়েকটা দিন থাকতে পারবেন না? জিজ্ঞেস করলেন পার্সি।
আলতোভাবে মাথা নাড়লো স্যাম। খুব দুঃখিত আমরা। বাসায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আমাদের, তাই যাওয়া লাগবেই।
তবে এরপর তো অবশ্যই ফিরে আসবেন আবার? অনুনয় করে বলল নাইজেল।
হ্যাঁ, আশা করছি, বলে সবাইকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেলো রেমি। স্যামও ঐদিকে উষ্ণভাবে করমর্দন করে নিলো সবার সাথে।
এরপর বিদায় জানিয়ে আবারো গাড়িতে ফিরে এলো ওরা। স্যাম গাড়ি চালাচ্ছে, আর রেমি এখনো হাত নেড়ে নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে অন্য তিনজনকে।
চোখের আড়াল হওয়ার আগ পর্যন্ত হাত নেড়েই গেলো রেমি। তারপর বলল, আমি নিশ্চিত, আমরা বিদায় নেওয়ার সময় পার্সি আর নাইজেলের চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছিলো।
শুধু তাদের চোখ থেকেই ঝড়েনি, বলল স্যাম।
কিছু না বলে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছলো শুধু রেমি। তারপর বলল, হ্যাঁ, জানি আমি।
****
গণ দুই সপ্তাহের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো একটু স্বস্তি পাচ্ছে স্যাম। রেমির দিকে তাকিয়ে দেখলো রেমিও অনেকটা স্বস্তির মধ্যে আছে। সত্যি বলতে ফোনের পর্দায় কিছু একটা দেখে উচ্চস্বরে হাসছে এখন।
এতো মজার কী দেখলে?
দেখো তুমি, বলে গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার পর তাদের তিনজনের তোলা ছবিটা স্যামকে দেখালো রেমি। বারোটা সিন্দুক খোলার পর এই ছবিটা তোলা হয়েছিল। ছবিতে সিন্দুকে থাকা স্বর্ণ, রত্নপাথর ও কিং জনের রাজকীয় মুকুটসহ আরো অনেক কিছুই দেখা যাচ্ছে। আমি ছবিটা আলেক্সান্দ্রাকে পাঠিয়েছিলাম, আর সে পরে পাঠিয়েছিলো চার্লস এভেরিকে। এভেরি এই ছবিটা খুলে দেখতে যাবে, ঠিক তখনই পুলিশ এসে এরেস্ট করে নিয়ে যায় তাকে।