ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে নকল জানালার খোপের দিকে আলো ফেললো রেমি। কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকার পর বলল, যে-ই এই দেয়াল খুঁড়ে থাকুক না কেন, তার শৈল্পিক মন ছিলো।
কথাটার কোনো জবাব দিলো না স্যাম। কাছে এগিয়ে গিয়ে ফ্ল্যাশলাইটের গোড়ালি দিয়ে খোপটায় টোকা দিলো। টোকা দিতেই ফাপা একটা শব্দ শোনা গেলো। এই ফাপা শব্দটা প্রমাণ করে দিচ্ছে যে হয় এই ইটগুলো খুব ভালোভাবে গাঁথা হয়নি, অথবা ভিতরের ফাঁপা অংশকে লুকিয়ে রাখার জন্য এই ইটের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে।
সাথে সাথেই দেয়ালটায় লাথি দিতে শুরু করলো স্যাম। বেশ কয়েকটা লাথি দেওয়ার পর অবশেষে আলগা হয়ে গেলো এক ইট। এরপর অবশ্য খোপের অন্যান্য ইটগুলো টেনে বের করতে খুব বেশি সমস্যা হলো না। কয়েক মিনিটের ভিতরের খোপের একটা অংশের সরিয়ে ফেললো। তারপর ফ্ল্যাশলাইট দিয়ে আলো ফেললো দেয়ালের আড়ালে থাকা অন্ধকার অংশটার দিকে?
কী দেখতে পাচ্ছো? উদ্বেগের সাথে জিজ্ঞেস করলো রেমি।
শ্রাগ করলো স্যাম। বলল, মনে হয় কিং জনের গুপ্তধন খোঁজার পিছনে আমাদের আর সময় নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই।
চেম্বারটা খালি, তাই না? হতাশকণ্ঠে বিড়বিড় করে জিজ্ঞেস করলো নাইজেল।
না, মুখে প্রশস্ত হাসি ফুটিয়ে বলল স্যাম। ওখানেই আছে, হাত বাড়ালেই ওগুলোকে স্পর্শ করতে পারবেন।
.
৫৮.
হামাগুড়ি দিয়ে সরু ফাটলটার ভিতরে ঢোকার সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গতিতে হৃৎস্পন্দন হচ্ছে রেমির! নাইজেল ও স্যাম অনুসরণ করছে তাকে।
প্রথম দেখায় জিনিসগুলোকে ধুলোপড়া পাথরের টুকরোর মতো মনে হলেও, কাছ থেকে আলো ফেলতেই দেখতে পেলো এগুলো আসলে প্রাচীন আমলের ধাতব সিন্দুক। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত একটার ওপর একটা রেখে সাজানো আছে সিন্দুকগুলো। প্রায় ত্রিশটার মতো সিন্দুক আছে এখানে। সবগুলোই ধুলোমাখা।
এগুলোয় তালা লাগানো, নাইজেল বলল। এগুলোকে খুলবো কিভাবে?
কিছু না বলে মেঝে থেকে একটা ইট তুলে নিলো স্যাম। তারপর ইটটা দিয়ে আঘাত করলো জং ধরা সিন্দুকগুলোর একটায়। এক আঘাতেই ভেঙে গেছে প্রাচীণ আমলের তালাটা।
সিন্দুকের ডালাটা উঠিয়ে ভিতরের দৃশ্যটা দেখেই অভিভূত হয়ে গেলো স্যাম। প্রায় শত শত জং ধরা সিলভার কয়েনের ভরে আছে সিন্দুকটা। সবগুলো কয়েনেই রাজা প্রথম হেনরি, রাজা দ্বিতীয় হারল্ড এবং রাজা প্রথম উইলিয়ামের মাথা খোদাই করা আছে। পরের তিনটা সিন্দুকে ভরে আছে স্বর্ণ মুদ্রায়। পরের সিন্দুকগুলোয় এক এক করে মুক্তা, সিলভার প্লেট, স্বর্ণের কটোরা, মূল্যবান মনিমুক্তা খচিত তলোয়ার এবং ওগুলোর খোপ।
ইতিহাস অনুযায়ী কিং জনের রুবি, পান্না, হীরা এবং বড়ো আকৃতির যে কোনো বিরল রত্নের ওপর প্রচুর ঝোঁক ছিলো।
চমৎকার, বলে উবু হয়ে সিন্দুক থেকে একটা জিনিস তুলে আনলো স্যাম। অন্যরা কেউই এই জিনিসটা এখনো খেয়াল করেনি। এটা দেখো। বলে একটা সোনালি তীর বা সোনালি পাতার একটা তীর তুলে রেমির দিকে বাড়িয়ে দিলো স্যাম।
অভিভূত দৃষ্টিতে তীরটার তাকালো রেমি। রবিন হুড?
আমার জানামতে নটিংহ্যামের আর কারোরই সোনালি তীর ছিলো না, বলল নাইজেল। হয়তো কিংবদন্তিগুলো আসলেই সত্য ছিলো।
জ্যাকপট, আরেকটা উন্মুক্ত সিন্দুকের দিকে তাকিয়ে বলল স্যাম। এটাতে দেখি রাজার মুকুট, রাজদণ্ড ও অক্ষিগোলকটা আছে। বলে রুবি ও মুক্তা খচিত সোনালি মুকুটটা উঁচিয়ে ধরলো স্যাম।
এটার সাথে মানানসই পোশাকগুলোও দেখা উচিৎ তোমার, বলে কিং জনের পোশাকে ভর্তি বড়ো সিন্দুকটার দিকে নির্দেশ করলো রেমি।
আমি কি ওগুলোর একটা পরে দেখতে পারি? প্রশস্ত হাসি হেসে জিজ্ঞেস করলো স্যাম।
ঐ চেষ্টাও করো না, বলল রেমি। প্রায় আটশো বছর আগে এই পোশাকগুলো পরিধান করেছিলেন কিং জন। এগুলো এখন ঐতিহাসিক নিদর্শন।
রাজা তো অনেক আগেই মরে গেছে, বাঁকা হাসি হেসে বল স্যাম। আশা করছি একটা পরে দেখলে রাজা কিছু মনে করবে না।
আপনি এখন শতশত মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদকে স্পর্শ করে দেখছেন, নাইজেল বলল। কর্তৃপক্ষ যদি আপনার ইচ্ছার কথা জানতে পারে, তাহলে সারা জীবনের জন্য নটিংহ্যামের জেলখানায় পঁচতে হবে আপনাকে।
মনে হয় না এই ব্যাপারটা পছন্দ করবো আমি, কৌতুকের সুরে হেসে বলল রেমি।
যাই হোক, পরের টুর আসার আগেই জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেলা উচিৎ আমাদের সতর্ক করে বলল নাইজেল।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো স্যাম। হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। আর দশ মিনিটের ভিতরেই আমাদের গাইড এদিকে ফিরে আসবে।
নিজেদের কাছে রাখার জন্য কয়েকটা এঙ্গেলে বেশ কিছু ছবি তুলে নিয়ে ফাঁপা অংশটা থেকে বেরিয়ে এলো রেমি। স্যাম ও নাইজেলও বেরিয়ে এলো তার সাথে। দুজনে আবারো দেয়ালের ইটগুলো জায়গামতো বসিয়ে রাখতে শুরু করেছে।
তাদের ইট বসানো শেষ হয়েছে এই সময়ই চেম্বারে এসে উপস্থিত হলো তাদের টুর গাইড। তাদেরকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো, পেলেন আপনাদের গুপ্তধন?
না, ভুল চেম্বার এটা, বলল স্যাম।
দুৰ্গটাও ভুল, সাথে যোগ করলে রেমি।
শুনে মুচকি হাসলো গাইড। আগেই বলেছিলাম আমি।
কোনো রকমে মুখ স্বাভাবিক রেখে গাইডের সাথে তাল মিলাযলো স্যাম ও রেমি। নাইজেল তাকিয়ে আছে অন্য দিকে।