হল পেরিয়ে রুমগুলোর একটাতে ঢুকতেই হঠাৎ শো করে বাতাস বয়ে গেলো যেন দুর্গের ধ্বংসস্তূপের ভিতর দিয়ে। বাতাস কেটে যাওয়ার শব্দটা অনেকটা মানুষের গোঙানোর শব্দের মতো করে শোনাচ্ছে। শব্দটা শুনেই ভীড়ের ভিতর থেকে কেউ বলে উঠলো, ভূত! সাথে সাথেই হাসির রোল ছড়িয়ে পড়লো সমবেত জনতার ভিতরে।
সত্যি বলতে, গাইড বলছে তাদেরকে, দুৰ্গটাকে ভুতুড়েও বলা হয়ে থাকে। কথিত আছে কয়েক শতাব্দী আগে খুন হওয়া মানুষগুলোর আত্মা নাকি এখনো ঘুরছে এই দুর্গে। বিশেষ করে এই রুমটায়। এখানে মৃত্যুবরণ করেছিলেন কিং জুন। অনেক ইতিহাসবীদরা বলে থাকেন, শত্রুরা তাকে বিষাক্রান্ত করে মেরেছিলো। আর অনেক নিচে থাকা ডানজনটাতে শত শত গরীব বেচারাদের অত্যাচার করা হতো, অত্যাচারের পর ফেলে রাখা হতো খাদ্য-পানির অভাবে ভুগে মারা যাওয়ার জন্য। এমনকি মারা যাওয়ার পরও লাশ বের করে আনা হতো না, ফেলে রাখা হতো ইঁদুরের খাবারের জন্য। আর একসময় হাড়ের স্তূপে পরিণত হওয়া ছাড়া তাদের পুরো অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেতো।
তখনই রেমি ও নাইজেলকে টান দিয়ে দলটা থেকে পিছিয়ে গেলো স্যাম। নাইজেল হলে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে, আর ওদিকে স্যাম ও রেমি কিং জনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা রুমটা পরীক্ষা করে দেখছে। গুপ্ত দরজা, ফাপা মেঝে বা গুপ্ত প্যাসেজওয়ের খোঁজ করছে ওরা। কিন্তু বিশ মিনিট ধরে খোঁজাখুঁজির পর আশা পাওয়ার মতো কিছুই খুঁজে পাওয়া গেলো না।
কিং জন মনে হয় তাঁর গুপ্তধনের রহস্যটা সাথে নিয়েই মরেছে, বলল স্যাম।
এখনো কিন্তু দুর্গের অনেকগুলো চেম্বার চেক করা বাকি আছে আমাদের, আশা দিয়ে বলল রেমি।
তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে আবারো দলটার সাথে গিয়ে যুক্ত হলো ওরা। গাইড লোকটা ইতিমধ্যেই দুর্গের রন্ধনশালা মানে রান্নাঘর নিয়ে আরেকটি গল্প বলে ফেলেছে। রন্ধনশালা থেকে পরে তারা এগিয়ে গেলো দুর্গের বৃত্তাকার সিঁড়ির দিকে। এরপর এক এক করে দুর্গের ড্রেনেজ সিস্টেম ও রুট সেলারটাও ঘুরে দেখলো ওরা। শেষে গিয়ে থামলো মেঝেতে থাকা একটা গর্তের সামনে। গর্তের মুখে একটা মইও রয়েছে। এই মইটাই নেমে গেছে কুখ্যাত ডানজনে। এই ডানজনেই রাজনৈতিক বন্দীদের আটকে ভয়ানক অত্যাচার করা হতো।
আপনাদের মধ্যে কারো সাহস থাকলে মই ধরে নিচে নেমে দেখতে পারেন। ওখানে নামলেই দেয়ালে খোদাই করা গ্রাফিতিগুলো দেখতে পাবেন। ডানজানে বন্দী করা টেমপ্লর নাইটরা ঐ গ্রাফিতিগুলো এঁকে গিয়েছিলো।
অবশ্যই মই ধরে নিচে নেমে গেলো তারা তিনজন। নামার সময় চারপাশ থেকে আসা ভুতুড়ে গোঙানোর শব্দ শুনতে পেলো তারা। যদিও তিনজন জানে যে এটা রেকর্ড করা শব্দ। অন্য সেলগুলোর একটা থেকে আসছে শব্দটা।
নিচে নেমে দেয়ালের গ্রাফিতিগুলো পরীক্ষা করে দেখছে রেমি! আর স্যাম ও নাইজেল পরীক্ষা করে দেখছে পাথুরে দেয়ালগুলো। গুপ্ত দরজা, গুপ্ত সুড়ঙ্গের আশায় দেয়াল ঠেলেঠুলে দেখছে। কিন্তু কিছুই পেলো না।
এখানে কি কিং জনের গুপ্তধন লুকানোর ব্যাপারে কোনো গুজব আছে? ডানজন থেকে ওপরে উঠে আসার পর গাইডকে জিজ্ঞেস করলো স্যাম।
প্রশ্নটা শুনে ভ্রু-কুঁচকে গেলো গাইডের। এখানে? এখানে গুপ্তধন লুকানোর গুজব থাকলে তো জলাশয়ে সম্পদ হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাসটা পুরোপুরি বদলে যাবে। তাই না? না এখানে কোনো গুপ্তধনের গুজব নেই। এখন চাইলে টুরের পরবর্তী অংশের জন্য অনুসরণ করতে পারেন আমাকে।
একটা প্রশ্ন, রেমি বলল? প্রশ্নটা আসলে কয়েক শতাব্দী আগের একটা পুরোনো ধাঁধার ব্যাপারে। কিং জনের সাথে হয়তো কোনো সম্পর্ক আছে এটার।
প্রশ্নটা শোনার আশায় কৌতূহলী দৃষ্টিতে রেমির দিকে তাকালো গাইড।
চতুর্থ চেম্বার : ওপরে মৃত্যু। নিচে মৃত্যু। শেষ খাবারের সাথে। এটা যদি নিউইয়াক ক্যাসলের কোনো অবস্থানকে নির্দেশ করে থাকে, তাহলে কোনটাকে করছে বলে মনে হয় আপনার?
এটা তো সহজ প্রশ্ন, বাঁকা হাসি হেসে বলল গাইড। এটা রুট সেলারকে নির্দেশ করছে। নিচের ডানজনের দিক থেকে গুণলে এটা চতুর্থ স্তরে আছে। আর এর ওপরের টাওয়ারেই কিং জুন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলো।
আর এই স্তরটা কোথায়?
রুট সেলার? এখানে আসার পথে তো ওটা হয়েই এসেছি আমরা, বলে রুট সেলারের দিকে নির্দেশ করলো লোকটা। যেহেতু মি, রিজওয়েল আপনাদের সাথে আছেন, তাই আপনারা চাইলে সেলারটা আরেকবার ঘুরে দেখতে পারেন।
গাইডকে ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুত পায়ে রুট সেলারে এসে উপস্থিত হলো ওরা। তবে সেলারটা দেখে হতাশই হতে হলো তাদের। অন্যান্য চেম্বারগুলোর মতো এটাতে গুপ্ত কিছু আছে বলেও মনে হচ্ছে না। আটশো বছর ধরে ধুলো, মাটি, আর্দ্রতা জমার পরেও পাথুরে দেয়ালটাকে এখনো পুরোপুরি নিরেটই দেখাচ্ছে।
হতাশ হয়ে ফিরে যেতে যাবে, ঠিক তখনই দেয়ালে একটা ধনু আকৃতির একটা খোপ দেখতে পেলো স্যাম। খোপের আকৃতিটা অনেকটা জানালার মতো নকশা করা, তবে খোপটা তৈরি করা হয়েছে শক্ত ইটের গাঁথুনি দিয়ে। সেলারের বাকি নিরস ও রুক্ষ চেহারার সাথে এই নকশার মতো খোপটা কোনোভাবেই খাপ খাচ্ছে না। বারোশো শতাব্দীতে নিশ্চয় রসুইঘরে কোনো নকশা করতো না কেউ।
রেমি, ঐ খোপের মতো অংশটা দেখো। অদ্ভুত না?