খুব সম্ভবত এটার ব্যাপারে এবার কিছু একটা করতে পারবো আমরা, স্যাম বলল।
কিভাবে?
চার্লস এভেরির ব্যাপারে আর্চারের পাঠানোর সিকিউরিটি রিপোর্টের কথাটা ভেবে স্যাম বলল, এই মুহূর্তে আমার পুরো একটা টিম চার্লস এভেরির কীর্তিকলাপের প্রমাণ একত্র করছে। তো, ওটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করবেন না।
আচ্ছা। তবে একটা উপকার করতে পারবেন? গুপ্তধন যদি খুঁজে পান, তাহলে কি কষ্ট করে সেটার একটা ছবি পাঠাতে পারবেন আমাকে? চার্লসকে সেই ছবিটা দেখানোর ইচ্ছা আছে আমার।
এটা মনে হয় না সম্ভব হবে, স্যাম বলল। আমাদের একমাত্র আশা ছিলো ঐ ম্যাপটা। আর ঐ ম্যাপের পুরো অর্থও বের করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু কিছুই পাইনি। পাওয়া যাবে বলেও মনে হয় না।
এরপর আর কিছু বলতে পারলো না ওরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই অফিসাররা এসে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গেলো তাদেরকে। সেখানে আরো একবার স্টেটমেন্ট দিয়ে ছাড়া পেতে পেতে প্রায় কয়েক ঘন্টার মতো লেগে গেলো ওদের। সারাদিনের পরিশ্রমে এতোই ক্লান্ত হয়ে আছে যে হোটেলে ফিরেই সরাসরি বিছানা ঢলে পড়লো ওরা। এমনকি ডিনার করার মতো এনার্জিও নেই তাদের শরীরে।
****
করে ফেলেছি ওটা!
ট্যাবলেটে স্কাইপ কলে লাযলোর কণ্ঠে থাকা উত্তেজনার তীব্রতা শুনে ঘুম পুরোপুরি উড়ে গেছে স্যামের।
কী করে ফেলেছো? রেমি জিজ্ঞেস করলো।
সাইকারের অর্থ, বলল লাযলো। পাথুরে দুর্গে। পালের গোদার ডেরা থেকে অনেক দূরে। চতুর্থ চেম্বারঃ ওপরে মৃত্যু, নিচে মৃত্যু, সাথে আমার শেষ আহার।
শুনে একে অন্যের দিকে তাকালো স্যাম ও রেমি। তারপর ট্যাবেলেটের পর্দায় লায়লোর উল্লসিত চেহারার দিকে তাকিয়ে স্যাম বলল, চমৎকার। কিন্তু এটা দিয়ে কী বুঝানো হয়েছে?
গুপ্তধনের অবস্থান, বলল লাযলো। তবে প্রথম অংশটা বাদে।
প্রথম অংশ?
আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে এখানে রবিন হুডের ডেরার কথা বলা হয়নি।
এটা গতকাল জানাতে পারলে আমাদের অনেক উপকার হতো, স্যাম বলল।
তো, বলল রেমি, রবিন হুডের সাথে সম্পৃক্ততা বাদ দিলে, ধাঁধা কোন জায়গাকে নির্দেশ করছে?
যদিও ধাঁধার সঠিক অর্থটা খুবই অস্পষ্ট, সেলমা দিচ্ছে জবাবটা, আমাদের ধারণা এটা নিউইয়াক ক্যাসলকে বুঝাচ্ছে।
নিউইয়াক ক্যাসল? বলল রেমি। ওখানে কেন?
এখানের মৃত্য, চেম্বার, শেষ আহার শব্দগুলো কিং জন কোথায় মৃত্যুবরণ করেছিলো সেটাকেই নির্দেশ করছে।
স্যরি, রেমি, রেমির দিকে তাকিয়ে বলল স্যাম। মনে হচ্ছে আমাদের ছুটিটা আরো কয়েকদিন পর থেকে শুরু করতে হবে।
.
৫৭.
পরদিন সকালে নিউইয়াক ক্যাসলের দিকে যাত্রা করলো স্যাম, রেমি ও নাইজেল। আকাশের অবস্থা খুব একটা ভালো না, বৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্যাসলের কাছে পৌঁছে ট্রেন্ট নদীর পাশে থাকা লটে গাড়ি পার্ক করলো ওরা। গাড়ি থেকে নেমে ব্রিজের ওপর দিয়ে এককালের ভয়ংকর দুর্গের দিকে হেঁটে যাচ্ছে এখন। এই পাশ থেকে দেখে দুৰ্গটা এখনো অক্ষত বলে মনে হচ্ছে, তবে অপর পাশে পৌঁছেই দেখলো নদীর তীরে গড়ে উঠা এই বিশাল দুর্গের আর অল্প কিছুটা অংশই অক্ষত আছে মাত্র। গেইটহাউজ, উত্তর-পশ্চিম কোনায় থাকা একটা বিশাল ছয়কোণা টাওয়ার আর দক্ষিণপূর্ব প্রান্তে থাকা নিচু টাওয়ারটা ছাড়া আর বাকি সবকিছুই ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে গেছে। কথিত আছে কিং জন দক্ষিণপূর্ব প্রান্তের টাওয়ারটাতেই মৃত্যুবরণ করেছিল।
তেমন কিছু তো আর বাকি নেই দেখছি, পার্কের মতো মাঠটার দিকে তাকিয়ে বলল স্যাম। একসময় এখানেই ক্যাসল কিপ দাঁড়িয়েছিলো।
ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া জোরালো বাতাসে চুল উড়ছে রেমি। এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে নিতে নিতে রেমি দক্ষিণপূর্বের নিচু টাওয়ারটার দিকে ইশারা বলল, আমার মনে হচ্ছে গুপ্তধনটা ওখানেই আছে। কিং জন মারা গিয়েছিলেন ওখানে। আর ধাঁধাতেও পরিষ্কারভাবে মৃত্যুর কথা লেখা আছে।
এটা খুব বেশি স্বাভাবিক হয়ে যায় না? জিজ্ঞেস করলো স্যাম।
কেন? চোখের সামনেই লুকিয়ে রাখা। সাইফার হুইলটাও তো এভাবেই লুকানো ছিল।
কিছু না বলে কয়েকটা লিফলেট তুলে নিলো স্যাম। এখানে ওরা ঘুরতে আসা অন্যান্য টুরিস্টদের ছদ্মবেশে এসেছে। কাউকে বুঝতে দিতে চাচ্ছে না যে তারা দুর্গের নিষিদ্ধ অংশে গুপ্তধন খুঁজতে এসেছে। তাই লিফলেট তুলে নেওয়ার ভান করে স্যাম বলল, কিং জনের মৃত্যুর পর থেকে বেশ কয়েকবার এই দুৰ্গটা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তো একদম চোখের সামনে যে লুকাবে না তা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তাহলে লুকিয়েছে কোথায়?
সেটা জানার জন্যই তো এখানে এসেছি আমরা, তাই না? রেমি জিজ্ঞেস করলো।
ফোন বের করে সেলমার পাঠানো ধাঁধাময় সাইফার মেসেজটা ওপেন করলো স্যাম।
চতুর্থ চেম্বার : ওপরে চ মৃত্যু, সাথে শেষ আহার।
রেমি পর্দায় টোকা দিয়ে বলল, চেম্বারের আরেকটা অর্থ কিন্তু রুম বা কক্ষ। তারমানে এটার অর্থ রাজা যে জায়গায় মারা গিয়েছিলো সেটাও হতে পারে।
শেষ খাবার শব্দটা দিয়ে ডাইনিং হলকেও বুঝানো হয়ে থাকতে পারে।
কিন্তু ডাইনিং হল তো আর এখন নেই।
টুর শুরু হচ্ছে, দক্ষিণ টাওয়ারের সামনে জমায়েত হওয়া ছোটো জটলাটার দিকে নির্দেশ করে বলল নাইজেল।
অন্যদের অনুসরণ করে টাওয়ারে প্রবেশ করলো ওরা। পাথরের সিঁড়ি দিয়ে ওপরের দিকে উঠছে। আর চলতে চলতে গাইড লোকটা বলে যাচ্ছে, ১৬৪৬ সালে সামরিক যুদ্ধের পর পার্লামেন্ট দুৰ্গটাকে ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়। নিউইয়াক শহরে সেই প্লেগ ছড়িয়ে না পড়লে হয়তো বর্তমানে এই দুর্গের ধ্বংসস্তূপও অবশিষ্ট থাকতো না।