সাথে সাথেই ভিক্টরের লাশের আড়াল থেকে বেরিয়ে গুলি করলো স্যাম।
গুলি খেয়েই ঝট করে পিছিয়ে গেলো ফিস্ক। চমকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্যামের দিকে। তু…তুমি? তোমার না বুলেট শেষ? বলতে বলতে পাশের ঝুঁকে পড়লো ফিস্ক। পিস্তলটাও তার হাত থেকে খসে পড়ে গেছে।
মিথ্যা বলেছিলাম আমি।
.
৫৬.
আশা করছি ঐ গুহাগুলোতে পাঠিয়ে আপনাদেরকে খুব একটা অসুবিধায় ফেলে দেইনি, স্যাম ও রেমি ফোন করার পর জিজ্ঞেস করলো লাযলো। আমরা হয়তো আপনাদের অহেতুক পরিশ্রম করিয়েছি।
কোনো সমস্যাই হয়নি, গুহায় পায়চারি করতে থাকা পুলিশদের দিকে তাকিয়ে বলল স্যাম। পুলিশদের বেশির ভাগই এসেছে আগ্নেয়াস্ত্র দল থেকে। ব্রিটেনে একমাত্র এই অফিসারদেরই পিস্তল নিয়ে চলাফেরা করার অনুমতি আছে। কেন?
আমাদের আসলে হালকা ভুল হয়েছিলো। ম্যাপে নিশ্চিতভাবেই চতুর্থ চেম্বারের কথা লেখা আছে, গুহার না। সত্যি বলতে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে নটিংহ্যাম পার্কে গুপ্তধন থাকার কোনো সম্ভাবনাই নেই। আমি জানি না নাইজেল কেন ওখানে পাঠিয়েছিলো আপনাদের। কোনোভাবেই মিলছে না এটা।
কথাটা শুনেই একে-অন্যের দিকে তাকালো স্যাম ও রেমি। তারপর কল। কেটে দিয়ে নাইজেলের দিকে ফিরে তাকিয়ে রেমি জিজ্ঞেস করলো, আপনি আমাদের এখানে আনলেন কেন?
প্রশ্নটা শুনেই আলেক্সান্দ্রার দিকে তাকালো নাইজেল। আলেক্সান্দ্রা এখন ইনভেস্টিগেটরদের একজনের কাছে তার স্টেটমেন্ট দিচ্ছে। নিজেকে বাঁচানোর জন্যই এই কাজটা করতে হয়েছে আমাকে। ইউনিভার্সিটির ক্লাসের সময় কয়েক বছর আগে আমি চার গুহায় এসেছিলাম একবার। বলে শ্রাগ করে দুর্বলভাবে হাসলো নাইজেল। ভেবেছিলাম আপনাদের এখানে তাদেরকে বিশ্বাস করাতে পারবো যে গুপ্তধনটা এখানেই আছে। এছাড়া তাদের হাত থেকে আমার বাঁচার আর কোনো উপায় ছিলো না।
উপায়টা কাজে লেগেছে দেখছি, বলল স্যাম। সত্যিই কাজে লেগেছে উপায়টা। ফিস্ক এখন কাস্টডিতে আছে, ইভান আর জ্যাক মৃত। তাছাড়া আলেক্সান্দ্রারও তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কপালটা শুধু হালকা কেটে গেছে মাত্র।
তাদের দিকে তাকিয়ে ক্লান্তভাবে হাসলো রেমি। যাই হোক, ভালো একটা মিশন ছিলো। কিং জন ও তাঁর গুপ্তধনের রহস্যটা প্রায় সমাধানই করে ফেলেছিলাম।
হ্যাঁ, মিশনটা ভালো ছিলো। তবে আমাদের শিডিউল কিন্তু এখন আবার ফাঁকা হয়ে গেছে। তো, প্রতিশ্রুত ঐ ছুটি কাটানোর জন্য কোথায় যেতে চাও তুমি?
আমি তো ভেবেছিলাম তুমি সব কিছুই প্ল্যান করে রেখেছো?
হ্যাঁ, কিছুটা করে রেখেছিলাম। তো, কোথা থেকে যাত্রা করেছিলাম আমরা?
কারমেল থেকে।
ঠিক তখনই সুড়ঙ্গমুখ দিয়ে ইনভেস্টিগেটরদের একজনকে ভিতরের দিকে উঁকি দিতে দেখলো ওরা। সহজে আসা-যাওয়া করার জন্য সুড়ঙ্গমুখের আইভিলতাগুলো একটা দড়ি বেঁধে রাখা হয়েছে। ইনভেস্টিগেটর ভিতরে ঢুকে অন্য দুই অফিসারের সাথে কী নিয়ে যেন কথা বলছে।
স্যামের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে অফিসারদের সাথে ইনভেস্টিগেটরকে আলাপ করতে দেখছে রেমি। যাই হোক, ভালোই গুলাগুলি করেছো তুমি।
তুমিও।
তখনই অফিসারদের একজন নোটবুক বের করতে করতে তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলল, আপনাদের পিস্তলগুলোর ব্যাপারে একটু বলবেন?
ভিজিটর পারমিশন নেওয়া আছে ওগুলোর, বলল স্যাম। গ্রেট ব্রিটেনে হ্যান্ডগান নিয়ে চলাফেরা করা নিষিদ্ধ। কারো সাথে হ্যান্ডগান দেখলে সাথে সাথেই কর্তৃপক্ষ জব্দ করে ফেলে ওগুলোকে। কিন্তু স্যাম তার স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন পিস্তলটাকে অনেক বেশি পছন্দ করে। তাই মিথ্যাই বলল, অনুমতিপত্রটা লন্ডনে আছে।
ধন্যবাদ, স্যার। আমরা খতিয়ে দেখবো ওটা, বলে আবারো ইনভেস্টিগেটর লোকটার কাছে ফিরে গেলো অফিসার।
লোকটা চলে যেতেই স্যাম রেমিকে ফিসফিস করে বলল, এখান থেকে বেরুনোর পর রুবকে একবার কল করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তো আমাকে। লন্ডনে তাদের পিস্তলের কোনো অনুমতিপত্রই নেই। এখন সেখানে এই অনুমতিপত্র হাজির করতে হলে একমাত্র জাদুমন্ত্রের দ্বারাই করতে হবে। আর সেই জাদুমন্ত্র কেউ করতে পারলে সেটা একমাত্র রুব হেওয়ার্ডই করতে পারবে।
ঠিক তখনই স্টেটমেন্ট দেওয়া শেষ করে স্যামের পাশে এসে বসলো আলেক্সান্দ্রা।
মহিলা তার পাশে বসতেই স্যাম কৌতূহলী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি তো ফিস্কের দলে ছিলেন। হুট করে তার বিরুদ্ধে গেলেন কেন?
প্রশ্নটা শুনেই বিদ্রুপের হাসি হাসলো আলেক্সান্দ্রা। তারপর তার কপালে লাগানো ছোটো ব্যান্ডেজটা দেখিয়ে বলল, আমি কখনোই কাউকে আহত করতে চাইনি। কখনোই না। আমি শুধু গুপ্তধনগুলো খুঁজে বের করে চার্লসকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। আর এরপর… বলে রেমির দিকে তাকালো মহিলা। আমি জানতাম যে ফিস্ক একবার তার জিনিসটা পেয়ে গেলে অন্যদের মতো আমাকেও মেরে ফেলে যাবে। বলতে বলতে গলার স্বর ভারি হয়ে উঠছে। মহিলার। আবারো কপালে লাগানো ব্যান্ডেজটার ওপর হাত বুলাতে বুলাতে বলল, আপনাদের সাথেও একই কাজ করতো ও। সে জন্যেই আমার মনে হলো রুখে দাঁড়ানো উচিৎ। আমি শুধু আমার দুটো সন্তানকে দেখাতে চাইছিলাম যে আমি অবশেষে সঠিক কিছু করেছি। বলে ক্রুদ্ধশ্বাস ছাড়লো আলেক্সান্দ্রা। যাই হোক, এখন আর এসবের কোনো মূল্য নেই। চার্লস হয়তো তার গুপ্তধন খুঁজে পায়নি, কিন্তু সে ঠিকই আমাদেরকে মারতে চাওয়ার চেষ্টা করার পরও পার পেয়ে যাবে। সবসময়ই তো পার পেয়ে যায়।