আস্তে আস্তে আলোটা নিচে নামিয়ে স্যামের পায়ের কাছে এক সেকেন্ডের মতো তাক করে ধরে রেখে বন্ধ করে দিলো রেমি। পায়ের কাছে পড়ে থাকা সিগ সয়্যারটা দেখার জন্য এই এক সেকেন্ডই যথেষ্ট ছিলো স্যামের জন্য। তবে ফিস্ক তা লক্ষ্য করেনি।
এখন তোমার সেল ফোনের লাইটটা বন্ধ করে দাও, আলেক্সান্দ্রার দিকে পিস্তল তাক করে ধরে বলল ফিস্ক। সাথে সাথেই লাইট বন্ধ করে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেললো আলেক্সান্দ্রা।
এখন একমাত্র আলো শুধু স্যাম ও রেমির দিকে করে ধরে রাখা ফিস্কের ফ্ল্যাশলাইটটা থেকেই আসছে। হাত ওপরে তুলে রাখো তোমরা, বলল ও।
ঠিক তখনই হঠাৎ করে ফিস্কের দিকে খেঁকিয়ে উঠলো আলেক্সান্দ্রা। তোমার কি সাইফার হুইলের দিকে কোনো মনোযোগই নেই? ফার্গোরা তো কখনোই তোমার থেকে ওটা নেয়নি।
শুনেই তার দিকে আলো ফেলে ধরলো ফিস্ক। কী বলতে চাচ্ছো তুমি?
আলেক্সান্দ্রা তার পকেট থেকে হুইলটা বের করে বলল, টুর গাইড বলেছে এটাই গুপ্তধনের ম্যাপ। আসো, নিয়ে যাও এটা। বলে ফ্রিসবির মতো করে বামের সবচেয়ে দূরের সুড়ঙ্গটার দিকে জিনিসটা ছুঁড়ে মারলো আলেক্সান্দ্রা।
সাথে সাথেই হুইলটার দিকে মনোযোগ ঘুরে গেলো ফিরে। আলেক্সান্দ্রার ছেঁড়া জায়গাটার দিকে আলো ধরে ইভানকে ইশারা করে বলল, যাও, নিয়ে আসো ওটা।
ফিস্কের নির্দেশ পেয়েই সুড়ঙ্গের দিকে দৌড় লাগালো ইভান।
সাথে সাথেই সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুটো পিস্তল খাবলে নিলো স্যাম। রেমির ফ্ল্যাশলাইটটা থেকে এখনো মৃদু আলো আসছে। ঐ আলোতেই ইভানের দিকে তাক করে দুবার গুলি করলো স্যাম।
ফ্ল্যাশলাইটটা বন্ধ করে ফেললো ফিস্ক। আবারো অন্ধকার হয়ে গেছে গুহাটা। অন্ধকারেই একবার গুলি ছুড়লো ফিস্ক। পিস্তলের মাজল ফ্ল্যাশে তার মুখ জ্বলে উঠতে দেখা গেলো শুধু।
আলোর দিকে তাক করে গুলি ছুঁড়েই গড়িয়ে ভিক্টরের লাশের দিকে সরে গেলো স্যাম। লাশটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে ও।
ঠিক তখনই ডান দিক থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়লো কেউ। গুলির শব্দে গুমগুম করছে গুহাটা। ডান দিকে তাকাতেই মাজল ফ্ল্যাশের জ্যাকের চেহারা দেখতে পেলো স্যাম। গুলি করতে যাবে ঠিক তখনই ওপরের সুড়ঙ্গ থেকে রেমি গুলি ছুড়লো জ্যাকের দিকে। নিশানা ব্যর্থ হয়নি রেমির। জ্যাক এখন লাশে পরিণত হয়ে গেছে।
ফিরতি গুলি ছুড়লো ফিস্ক।
ভিক্টরের লাশের ওপর দিয়ে সেদিকে গুলি ছুড়লো স্যাম! রেমির পিস্তলটা খালি হয়ে গেছে এখন। ওটা ফেলে দিয়ে নিজের স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসনটা বের করে আনলো এবার।
সামনের সুড়ঙ্গ থেকেই ফিস্কের শব্দ ভেসে আসতে শুনতে পাচ্ছে ও। তবে কোনো আলো আসছে না। আলোর নিশ্চয়তা ছাড়া আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে বুলেট নষ্ট করার কোনো ইচ্ছা নেই স্যামের। তার মাথার ভাবনাটা পড়তেই পেরেই হয়তো রেমি তার হাতের ফ্ল্যাশলাইটটা ঠেলে দিলো স্যামের দিকে। ভিক্টরের লাশের থেকে হালকা একটু সরে হাত বাড়িয়ে ফ্ল্যাশলাইটটা নিজের দিকে নিয়ে নিলো স্যাম। লাশটা হয়তো খুব ভালো কোনো ঢাল না, কিন্তু এই লাশ না থাকলে অনেক আগেই বুলেটের আঘাতে মরে যেতে হতো তাকে।
ফ্ল্যাশলাইটটা হাতে নিয়ে লাশের শরীরের নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দিলো স্যাম। আঙুলটা ধরে রেখেছে বাটনের ওপর। সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছে। সাথে সাথে ভিক্টরের লাশের ওপর দিয়ে পিস্তলটা তাক ধরে রেখেছে ফিল্কের শব্দ ভেসে আসা সুড়ঙ্গটার দিকে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার লাইট জ্বালানোর সিদ্ধান্ত নিলো স্যাম। কাজটা ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু তাদের রসদের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। তাই বাটনে চাপ দিয়ে আলোটা জ্বালিয়েই সাথে সাথে নিভিয়ে ফেললো স্যাম।
সাথে সাথেই ইভান গুলি করলো তাকে।
মাজল ফ্ল্যাশের দিকে তাক ফিরতি গুলি ছুড়লো স্যাম। দুবার। তবে এবার আর কোনো ফিরতি গুলি ছুটে এলো না তার দিকে। একটা ধুপ শব্দ ভেসে এলো শুধু। যদিও স্যাম ফিস্ককে খতম করতে চেয়েছিলো, যাই হোক ইভানও কম বিপজ্জনক না। সবশেষ, এখন শুধু একজন বাকি।
কিন্তু ফিস্ক কোথায়?
কিভাবে বের করে আনা যাবে তাকে? ভাবতেই রেমির শূন্য হয়ে যাওয়া সিগ সয়্যারটার কথা মনে পড়ে গেলো স্যামের। হাত বাড়িয়ে পিস্তলটা তুলে নিয়ে রেমিকে ডেকে উচ্চস্বরে বলল, রেমি! আমার বুলেট শেষ হয়ে গেছে। সাহায্য করো আমাকে। তারপর শব্দ সৃষ্টির জন্য পিস্তলটা ছুঁড়ে দিলো মেঝের শক্ত অংশের দিকে।
একটা লম্বা বিরতি নিয়ে রেমি জবাব দিলো, আমারও একই অবস্থা। বাইরে থেকে সাহায্য আনতে যাচ্ছি আমি।
সাথে সাথেই সুড়ঙ্গ ধরে কাউকে দৌড়ে যেতে শোনা গেলো। শব্দটা শুনেই নিচের সুড়ঙ্গের দিকে পিস্তলটা তাক করে ধরলো স্যাম। ফিস্কের বেরিয়ে আসার অপেক্ষা করছে।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে অপেক্ষার পর যখন স্যামের মনে হলো ফিস্ক হয়তো আর বেরিয়ে আসবে না, ঠিক তখনই গুহার ডান দিকে মৃদু একটা আলো জ্বলে উঠতে দেখা গেলো। আলেক্সান্দ্রা তার সেল ফোনটা জ্বালিয়ে একটু একটু করে সুড়ঙ্গের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বেরিয়ে আয়, হারামজাদা, চেঁচিয়ে বলল মহিলা। এখন একমাত্র আমিই আছি। সাহস থাকলে আমার সাথে লড়াই কর এখন।
বলে ধীরে ধীরে ফিস্কের গায়েব হয়ে যাওয়া সুড়ঙ্গটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আলেক্সান্দ্রা। স্যাম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুড়ঙ্গমুখের দিকে। অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চোখ সরিয়ে আনতে যাবে, ঠিক তখনই তাকে চমকে দিয়ে হুট করেই সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এলো ফিস্ক। তারপর পিস্তলটা আলেক্সান্দ্রার দিকে তাক করে ধরে চেঁচিয়ে বলল, তুমি ভেবেছিলে তুমি আমার সাইফার হুইল চুরি করে পালিয়ে যেতে পারবে?