কিসের শব্দ ওটা? বলে উঠলো জ্যাক। মনে হচ্ছে মেইন চেম্বার থেকে কেউ এগিয়ে আসছে এদিকে।
ভিক্টর আর রোজেন আসছে, ফিস্ক বলল। আশা করছি ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে এসেছে ওরা। তোমরা গাধারা তো সেল ফোন ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসোনি।
ভিক্টর আর রোজেন ফিরে আসছে মানে তাদের প্ল্যানটা কাজে লাগেনি!. আর এটা পুরোপুরি নিশ্চিত করে দিলো ইভানের পরের কথাটা। ল্যারেইনের ফোন কলটার ব্যাপারে কী করবেন? ঐ ক্যাসলটাতে কেউ যাচ্ছে না কেন?
কারণ সাইফারে চার গুহার কথা বলা আছে।
মানে চার চেম্বারের কথা বলছো তুমি? তাকে শুধরে দিয়ে বলল আলেক্সান্দ্রা। ওটা তো যে কোনো জায়গায়ই হতে পারে।
আপনি গুপধনটা চান তো? বিরক্ত শোনালো ফিস্ককে। তারপর ইভান ও জ্যাককে নির্দেশ করে বলল, তাড়াতাড়ি ঐ টুর গাইডকে খুঁজে বের করো। সে বলেছিলো গুপ্তধন এখানেই পাবো। যদি না পাই, তাহলে হাড়গোড় ভেঙে গুঁড়িয়ে মারবো ওটাকে।
তারপর আবারো সুড়ঙ্গের গভীরে মিলিয়ে গেলো তাদের পদশব্দ।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে স্যাম আর রেমি আবারো অনুসরণ করতে যাচ্ছিলো তাদেরকে, ঠিক তখনই পিছনের মেইন চেম্বার থেকে ভারি বুটের এগিয়ে আসার শব্দ ভেসে আসতে শুনলো ওরা।
ভিক্টর আর রোজেন ফিরে এসেছে।
ফাঁদে পড়ে গেছে স্যাম ও রেমি।
.
৫৪.
রেমিকে টান দিয়ে নিয়ে আবারো ওপরের চেম্বারে ফিরে যাওয়ার সুড়ঙ্গ ধরে পা বাড়ালো স্যাম। যাওয়ার সময় অন্ধকার সুড়ঙ্গের দেয়ালে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে সুড়ঙ্গের পার্শ্ব দেয়ালে থাকা প্যাসেজওয়েটা খুঁজে পেয়েই ঢুকে পড়লো ওটাতে। ভিতরে ঢুকে প্যাসেজওয়ের মুখে দাঁড়ালো স্যাম। আর রেমি দাঁড়ালো তার পিছনে।
কিছুক্ষণ পরই পাথুরে দেয়াল ও মেঝের ওপর ফ্ল্যাশলাইটের উজ্জ্বল আলো উঠলো। আলো জ্বলে উঠতেই বালিতে পড়ে থাকা তাদের পায়ের ছাপগুলো চোখে পড়লো স্যামের। ছাপটা দেখলে যে কেউই তাদের অবস্থান ধরে ফেলতে পারবে।
আলো নিভে যেতেই রেমিকে নিয়ে আবারো সুড়ঙ্গমুখের দিকে দৌড় লাগালো স্যাম। বাইরে মাত্র একজনই দাঁড়িয়ে আছে। তাই যাওয়ার সময় বন্দুকের ট্রিগারে আঙুল ঠেকিয়ে এগুচ্ছে স্যাম।
সুড়ঙ্গমুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে যাবে ঠিক তখনই একটা মৃদু শব্দ শুনে থেমে গেল স্যাম। ভিক্টর বা রোজেনদের যে ই হোক, সে এখন সুড়ঙ্গ মুখের। ঠিক বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। বাতাস নড়ার শব্দ শুনেই স্যাম বুঝতে পারলো, লোকটা এখন তার দিকে বন্দুক তাক করে রেখেছে। কিছুক্ষণ পরই লোকটা তার হাতের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে ডেকে উঠলো, ভিক-
দৌড়ে গিয়ে লোকটার কলার ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে গুহার দেয়ালে ছুঁড়ে মারলো স্যাম! মাথায় আঘাত পেতেই রোজেনের হাত থেকে ফ্ল্যাশলাইটটা ছিটকে দূরে পড়ে গেছে। আঘাতের প্রভাবটা কাটিয়ে উঠার আগেই আবারো হাতের পিস্তলটা দিয়ে রোজেনের মুখে ঘুষি মারলো স্যাম। সাথে সাথেই টলে নিচে পড়ে গেলো রোজেন। তবে মুহূর্তের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিয়ে বাম হাত দিয়ে স্যামের শার্ট খাবলে ধরলো রোজেন। ডান হাতের বন্দুকটা স্যামের দিকে তাক করে ট্রিগার চাপা চেষ্টা করছে। স্যাম তার হাতের পিস্তলটা ফেলে দিয়ে দুই হাত দিয়ে খাবলে ধরলো রোজেনের বন্দুক ধরা হাতটা। রোজেনকে ট্রিগার চাপা থেকে বাধা দিতে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে হাতটা মোচড়াতে শুরু করেছে স্যাম। কিছুক্ষণ এভাবেই লড়াইয়ের পর হাড় ভাঙ্গার শব্দ দিয়ে শেষ হলো লড়াইটা। হাত ভেঙ্গে যেতেই পিস্তলটা পড়ে গেছে রোজেনের হাত থেকে। সাথে সাথেই পিস্তলটা খাবলে নিয়ে আবারো রোজেনের মাথায় আঘাত করলো স্যাম। এরপর হাত দিয়ে রোজেনের ঘাড় ধরে চোকহোল্ডে আটকে ফেললো তাকে। আর বাধা দিতে পারলো না রোজেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই শরীর ঝুলে পড়লো ওর।
একটা শেষ, আর পাঁচটা বাকি…
এগিয়ে এসে পিস্তুলদুটো মেঝে থেকে তুলে নিলো রেমি। তারপর স্যামকে পিস্তলটা ফিরিয়ে দিতে দিতে ফিসফিসিয়ে বলল, সে যদি ভিক্টরকে ডেকে থাকে, তাহলে ভিক্টর কোথায়?
ভালো প্রশ্ন। রোজেনের ডাক শুনেও ভিক্টরের এখানে না আসার একটা কারণই থাকতে পারে বলে ভাবছে স্যাম। কেউ একজনকে তো মূল গুহাটা পাহারা দিতে হবে। ভিক্টর পাহারা দিচ্ছে ওটা।
মূল গুহার দিকে নির্দেশ করে ইশারা করলো স্যাম রেমিও সায় দিলো তাতে। সাথে সাথেই ওদিকে পা বাড়ালো ওরা। গুহা থেকে বেরুনোর আগে ফ্ল্যাশলাইটটা বন্ধ করে নিলো স্যাম। সুড়ঙ্গের ঠিক বাইরে থেকে একটা আলোর প্রতিফলন আসছে। রেমিকে ওখানেই অপেক্ষা করতে বলে সুড়ঙ্গমুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো স্যাম।
বাইরে ভিক্টর শুধু গুহাই পাহারা দিচ্ছে না, নাইজেলকেও পাহারা দিচ্ছে। স্যাম বাইরে বেরিয়ে আসতেই এক হাতে ফ্ল্যাশলাইটটা তার দিকে তাক করে ধরলো ভিক্টর। আর অন্য হাতে থাকা পিস্তলটা ঠেকিয়ে রেখেছে নাইজেলের মাথায়।
আমার ভাইকে ফাঁকি দিয়ে আসলে কিভাবে?
ওহ, সে তোমার ভাই ছিলো? স্যামও তার বন্দুকটা ভিক্টরের দিকে তাক করে ধরে গুহার পরিধি ধরে এগিয়ে যাওয়া শুরু করলো সামনের দিকে। ভিক্টরও তার দিকে ফ্ল্যাশলাইটের আলো তাক করে রেখে ঘুরছে।
রোজেনের কী করেছো?
কোনো জবাব দিলো না স্যাম। সে শুধু তার মতো করে গুহার ঘেড় ধরে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে। ফ্ল্যাশলাইটটা রেমির অবস্থান থেকে সরার আগ পর্যন্ত থামার কোনো ইচ্ছা নেই তার।