ধাঁধা নিয়ে পরেও ভাবা যাবে। তাই স্যাম বলল, ব্রি কে তার কাজিনকে ফোন করাও। জলদি।
.
৫৩.
কয়েক মিনিট পরই সেলমা ফোন করে জানালো যে তাদের প্রত্যাশা মতো সংবাদটা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, তথ্যটা তারা বিশ্বাস করেছে। তো কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবেন আপনারা।
সত্যিই দেখা গেলো তা। জ্যাক দেয়ালে থাকা আইভিলতার প্রলেপটা পরীক্ষা করে দেখছিলো। প্রবেশমুখটা খুঁজে পেয়ে ভিতরে মাথা ঢুকাতে যাবে তখনই পিছিয়ে এলো হঠাৎ করে। তারপর পকেট থেকে সেল ফোনটা বের করে কিছুক্ষণ কথা বলে এগিয়ে গেলো ফিস্কের দিকে।
নাইজেলকে দেখো একবার, রেমি বলল। আমার মনে হয় তারা তাকে তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে।
আলেক্সান্দ্রার পাশে দাঁড়িয়ে আছে নাইজেল। আর আলেক্সান্দ্রা তাকিয়ে আছে পিছনে থাকা ফিস্ক ও জ্যাকের দিকে। ফিস্কের ইশারা পেয়েই আলেক্সান্দ্রার থেকে সরে আইভি লতার দিকে এগিয়ে গেলো নাইজেল, লতিকাগুলো সরিয়ে ভিতরের দিকে ঢুকছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নাইজেলকে আইভিলতার আড়ালে গায়েব হয়ে যেতে দেখলো ওরা।
এরপর ঢুকলো জ্যাক ও ইভান। যদিও গুহাতে ঢোকার ব্যাপারে খুব একটা সায় ছিলো না তাদের। কিন্তু ফিস্ক পিস্তল তাক করে ধরায় না ঢুকেও উপায় নেই তাদের হাতে। তাদেরকে অনুসরণ করলো আলেক্সান্দ্রা। এই মহিলাও গুহায় ঢোকার ব্যাপারে এভোটা ইচ্ছুক ছিলো না। এরপর এগিয়ে গেলো ফিস্ক। তবে আইভিলতা সরিয়ে ভিতরে ঢুকতে গিয়েও কী মনে করে। যেন পিছিয়ে এলো আবার। খুব সম্ভবত নটিংহ্যাম ক্যাসলের ব্যাপারে আসা ফোন কলটা নিয়ে ভাবছে। ঘুরে নতুন লোকদুটোর দিকে কী যেন ছুঁড়ে দিলো এরপর। খুব সম্ভবত গাড়ির চাবি, যেহেতু দুইজনই মার্সিডিজটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এখন। এরপর অন্যদের অনুসরণ করে ফিস্কও ঢুকে গেলো গুহার ভিতরে।
মনে হয় আমাদের পরিকল্পনাটা কাজে লেগেছে, মার্সিডিজটাকে চলে যেতে দেখে বলল স্যাম।
ঠিক যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে লাগেনি।
অন্তত দুইজনকে তো সরানো গেছে। আপাতত এটাই শুরু। সেলমাকে মেসেজ করে জানাও যে নাইজেলকে মুক্ত করার জন্য গুহায় ঢুকছি আমরা।
তারমানে সাহায্য কোথায় পাঠানো লাগবে তা সেলমা জানে?
এটা ব্যাকআপ প্ল্যান।
গাড়ি থেকে নামার আগে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো ওরা। আইভিলতার আড়াল থেকে কেউ বেরিয়ে আসছে না দেখে নিশ্চিত হয়েই গাড়ি থেকে নেমে পার্কের দিকে পা বাড়ালো।
আইভিলতা পেরিয়ে প্রথমে ভিতরে ঢুকলো স্যাম। তাকে অনুসরণ করে প্যাসেজওয়েতে পা রাখলো রেমি। ভিতরে ঢুকেই পিস্তল হাতে বের এনেছে। ওরা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অন্ধকারটা চোখে সয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করছে। ওদিকে তাদের পিছনে তুমুলবর্ষণে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে এখন। বৃষ্টির শব্দের কারণে আপাতত তাদের পায়ের শব্দ কেউ শুনতে পাবে না ভেবে সামনের দিকে পা বাড়লো স্যাম। তার পিছনে পিছনে আসছে রেমি। সুড়ঙ্গ পথটা এতো চাপা যে একজনের পিছনে পিছনে করেই যেতে হবে আরেকজনকে। তাছাড়া সুড়ঙ্গের মেঝেতে বালি থাকায় হেঁটে এগিয়ে যাওয়াটাও খুব সহজ হচ্ছে না।
হেঁটে যেতে যেতে চাপা সুড়ঙ্গটা প্রশস্ত একটা চেম্বারে পরিণত হলো একসময়। পার্সির সাথে আগেও এমনই একটা চেম্বারে গিয়েছিল ওরা। চেম্বারটায় পৌঁছেই হুট করে থেমে গেলো স্যাম। তারপর আবার পিছিয়ে ফিরে এলো। সরু সুড়ঙ্গের ওপাশ থেকে কিছু পায়ের শব্দ ভেসে আসছে, এর কিছুক্ষণ পরই কেউ বলে উঠলো, এই পথে।
সাথে সাথেই থমকে গেলো রেমিও। পায়ের শব্দের প্রতিধ্বনি মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সুড়ঙ্গেই লুকিয়ে রইলো ওরা। শব্দটা মিলিয়ে যেতেই আবার বেরিয়ে এলো চেম্বারে।
হাতে থাকা ফ্ল্যাশলাইটটা জ্বালিয়ে বেলেপাথরের দেয়ালের ওপর আলো ফেললো স্যাম। মেইন চেম্বার থেকে বেরিয়ে যাওয়া রুক্ষ পাথরের বেশ কয়েকটা সুড়ঙ্গ দেখতে পাচ্ছে ও। হঠাৎ সুড়ঙ্গের ওপরে থাকা কিছু একটা দেখতে পেয়ে সেদিকে নির্দেশ করলো রেমি। আলো ফেলতেই বেলেপাথরের ওপরে খোদাই করা সেল্টিক নটের চিহ্নটা দেখতে পেলো ওরা। পার্সি ওদেরকে এমন সেল্টিক নটের কথাই বলেছিলো। এক এক করে গুহা থেকে বেরিয়ে যাওয়া অন্য সুড়ঙ্গগুলোর দিকেও তাকালো রেমি। পাঁচটি সুড়ঙ্গ বেরিয়ে গেছে এখান থেকে। এরমধ্যে চারটার ওপরেই সেল্টিক নট খোদাই করা আছে। তবে পঞ্চম সুড়ঙ্গের ওপরে কোন চিহ্ন নেই, এই সুড়ঙ্গটাই ওপরের পার্কের দিকে চলে গেছে।
স্যামও তাকালো চিহ্নগুলোর দিকে। এই সুড়ঙ্গগুলোই নিশ্চয় লায়লোর বলা চার চেম্বারের দিকে চলে গেছে। এক এক করে প্রতিটি সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখেই আলো ফেললো স্যাম। একমাত্র তৃতীয় সুড়ঙ্গমুখের মেঝেতেই পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। অন্যগুলোর সামনে কোনো ছাপ নেই।
তৃতীয় সুড়ঙ্গমুখটার দিকেই পা বাড়ালো ওরা। এই সুড়ঙ্গটা দুইজন মানুষের পাশাপাশি হেঁটে যাওয়ার মতো যথেষ্ট চওড়া। তবে সামনে আগানোর সাথে সাথে সুড়ঙ্গটাও বাঁকতে শুরু করেছে। এমনকি এই সুড়ঙ্গটার পার্শ দেয়াল থেকেও আরো বেশ কয়েকটা প্যাসেজওয়ে বেরিয়ে গেছে। তবে তারা সুড়ঙ্গের মূল প্যাসেজওয়েটা ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে।
যত এগুচ্ছে ততোই সরু হয়ে ঢালের মতো নিচে নামতে শুরু করেছে মূল প্যাসেজওয়েটা। তারপর হুট করেই ডানে মোড় নিয়ে চলে গেছে বিশ গজ সামনের এক পানির গর্তের দিকে। গর্তে পা পড়তেই পানিতে শব্দের সৃষ্টি হলো। বদ্ধ জায়গায় খুবই জোরালো শোনালো শব্দটাকে। সাথে সাথেই ফ্ল্যাশলাইটটা বন্ধ করে ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়লো স্যাম।