জানালা দিয়ে দৃশ্যটা দেখতে দেখতে তারা নিজেরাও বিকল্প উপায় নিয়ে আলোচনা করছে। হয়তো, রেমি বলছে, তিনি চার গুহার সাধারণ অবস্থানটা মনে করতে পারবেন। খুব সম্ভবত প্রফেসর অলড্রিজের সাথে ড্রাইভ করে গেলেই মনে করতে পারবেন। তখন আমরা শুধু অনুসরণ করবে তাদেরকে। তার গাড়ি থেকে বের হওয়ারও প্রয়োজন পড়বে না। শুধু জায়গাটা চিনিয়ে দিলেই হবে। এরপর তিনি চাইলে প্রফেসর অলড্রিজের সাথে করে বাড়িতেও ফিরে যেতে পারেন।
এটাই হয়তো আমাদের একমাত্র অপশন, বলল স্যাম। তখনই অলড্রিজ ভিতরে ডেকে পাঠালেন তাদেরকে।
সুসংবাদ আছে, অলড্রিজ বললেন। পার্সির সাথে ঐ গুহাগুলো নিয়ে। হালকা আলোচনা করেছি আমি।
পার্সি এখন একটা কার্ডবোর্ড টিউব ধরে রেখেছেন। আমার বন্ধু বলেছে যে তোমরা নটিংহ্যামের গুহাগুলো নিয়ে আগ্রহী। আমারও বেশ প্রিয় ওগুলো। সেই ছোটোকাল থেকেই ওগুলোকে ভালো লাগে আমার।
অলড্রিজ পার্সির কাঁধে হালকা একটা টোকা দিয়ে বললেন, তাদেরকে ম্যাপটা দেখাও, পার্সি।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, বলে একটা টেবিলের কাছে গিয়ে কার্ডবোর্ডের টিউবটার মুখ খুলে নিলেন পার্সি। আলতো একটা টোকা দিতেই নটিংহ্যামের একটা বিশাল ম্যাপ বেরিয়ে এলো টিউব থেকে। ম্যাপটা টেবিলের ওপর বিছিয়ে রাখলেন প্রফেসর পার্সি ওয়েন্ড। পুরো ম্যাপটাই লাল মোটা পেন্সিলের দাগে ভরে আছে, বিভিন্ন জায়গা সম্পর্ক টুকিটাকি তথ্যও লেখা আছে। তারপর তারা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেই জায়গাটা ম্যাপে টোকা দিয়ে দেখালেন পার্সি।
ম্যাপটার দিকে তাকালো স্যাম। নটিংহ্যাম ক্যাসল ও চার গুহার ওপরে থাকা লেখাটার দিকে ইশারা করে বলল, এই জায়গাটার সম্পর্কে ভেঙে বলুন আমাদের।
৫১. চার গুহা
৫১.
এটাই চার গুহা, বললেন পার্সি। খুবই বিপজ্জনক জায়গা। অনেক মোড় ও বাক আছে। কয়েকটা চেম্বার আবার অনেক গভীর। ওগুলো দিয়ে পড়ে যাওয়া খুবই সোজা। তবে এগুলো, বলে দর্জির দোকানটা দেখালেন আবার, এগুলোতে যাওয়া খুবই সোজা। জায়গাটাও ভালো। আমার নামা প্রথম গুহা এটা। আগে এটা ওয়াইন সেলার ছিলো।
পার্সির কাঁধে হাত রাখলো রেমি। আমারও খুব প্রিয় ওগুলো। তবে এগুলো, ম্যাপে চার গুহার দিকে নির্দেশ করে দেখিয়ে বলল, এগুলো কোথায় খুঁজে পাব আমরা?
আইভিলতার পিছনে আছে। ওখানের অনেকগুলো গুহাই এখন দালানের পিছনে আড়াল হয়ে গেছে। ওখানে পার্কে একটা প্রাচীন পাথর আছে। আইভিলতাটা ওটার ওপর দিয়েই জন্মেছে। এখানে ক্রস টু চিহ্নটা দেখতে পাচ্ছো?
স্যাম কাছে ঝুঁকতেই দেখলো যে আসলেই প্রবেশমুখটা ক্রস চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। এটার একটা ছবি তুললে কি কোনো সমস্যা হবে?
কোনো সমস্যাই হবে না, পার্সি বললেন।
ফোন বের করে ম্যাপের বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিলো স্যাম। আর এই ফাঁকে রেমি জিজ্ঞেস করলো, আপনি সর্বশেষ কবে গিয়েছিলেন ওখানে?
অনেক বছর আগে। ছাত্রদের নিয়ে ট্যুরে যেতাম প্রায়ই। এখনো ওখানেই আছে ওটা, বলে অলড্রিজের দিকে তাকালেন পার্সি। আমার সাথে তুমিও একবার গিয়েছিলে। মনে আছে?
স্পষ্ট মনে আছে। একসাথে অনেকগুলো গুহাতেই গিয়েছিলাম আমরা।
মাথা ঝাঁকালেন পার্সি। আমি এই গুহাটা পছন্দ করি, কারণ এটা এখানে আছে, আমার খুব কাছে। কিন্তু কেউই জানে না এটার কথা। আর ওটা আইভিলতায় ছেয়ে থাকলেও অনেকেই ওটার সম্পর্কে জানতে চায়। আইভিলতায় হারিয়ে যাওয়ার ভয় থেকেও কেউ পিছপা হয় না। আর এটা, বলে আবার দোকানের পিছন থেকে পাথরের সিঁড়ির দিকে নির্দেশ করলেন তিনি, কিন্তু একদম হাতের নাগালেই আছে। আমার নামা প্রথম গুহা এটা। আগে ওয়াইন সেলার ছিলো।
****
নটিংহ্যাম পার্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো স্যাম ও রেমি। এই জায়গাটা একসময় নটিংহ্যাম ক্যাসলের হরিণের চারণভূমি হিসেবে পরিচিত ছিলো।
তারা যে এলাকাটা খুঁজছে-মানে পার্সি তাদেরকে যে এলাকাটার কথা বলেছে-সেটাতে অনেকগুলো বড়ো বড়ো দালানের ফাঁকে একটা সবুজ চারণভূমি আছে। তবে কপাল খারাপ যে তাদের কাছে কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। গাড়ি চালাতে চালাতে স্যাম দেখলো বর্ণনাটার সাথে অনেক এলাকারই মিল আছে।
.
সেলমা ফোন করে ধাঁধার টুকরোটা মিলিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত অন্ধকারেই পড়েছিলো ওরা। আবার বলতে পারবে? বলে গাড়িটা থামিয়ে ফোনের স্পিকার অন করলো স্যাম। তোমার কথাটা ঠিকঠাক মতো শুনেছি কিনা তা নিশ্চিত হতে চাচ্ছি।
গ্রেস হারবার্ট-মিলারের কাজিন, সেলমা বলল। উত্তরাধিকারে নটিংহ্যামের এস্টেটের মালিকানা পাওয়া লোকটা।
কী যেন ম্যাকগ্রেগর নাম লোকটা? স্যাম বলল।
হেনরি ম্যাকগ্রেগর। আমি বেশ কয়েকবার চেক করে দেখেছি। তার মালিকানা পাওয়া এস্টেটটাও এই এলাকাতেই রয়েছে, বলে ঠিকানাটা জানালো সেলমা। সম্পদটা তিনি বিক্রির জন্য রেখে দিয়েছেন, আর এই মুহূর্তে ওখানে কেউ থাকছেও না। তবে আমরা কল করেছিলাম মি. ম্যাকগ্রেগরকে। আপনারা চাইলে তার এস্টেটের যেকোনো জায়গায় গিয়ে ঘুরে দেখতে পারবেন। ভদ্রলোক এতে কিছু মনে করবেন না।
ফোনের জিপিএসটা চালু করে নিলো রেমি। জায়গার লোকেশনের চিত্রটা আসতেই পার্সির দেওয়া ম্যাপটার সাথে মিলিয়ে দেখলো। ক্রস চিহ্নটা দিয়ে এই স্থানকেই নির্দেশ করা হয়েছে।