হয়তো ও ইতিমধ্যেই জেনে গেছে। এজন্যেই হয়তো ফোন ধরছে না।
বলে কাঁচের দরজাটা টেনে ধরলো স্যাম। দরজা দিয়ে ঢুকে বামের লবির দিকে পা বাড়ালো ফার্গো দম্পতি। লবিতে থাকা সিকিউরিটি গার্ডরা তাকিয়ে আছে তাদেরকে।
গার্ডদেরকে পেরিয়ে আসার পর কাঁচের জানালার অন্যপাশে থাকা অফিসারের কাছে গিয়ে স্যাম বলল, মি, অ্যান্ড মিসেস ফার্গো। সার্জেন্ট ফথের সাথে দেখা করতে এসেছি।
স্যার কি আপনাদের আগমনের ব্যাপারে জানেন?
হ্যাঁ। সার্জেন্ট নিজেই ডেকেছেন আমাদের। গতকালের ডাকাতির ব্যাপারে কথা বলার জন্য।
ফোন তুলে নিয়ে রিসিভিং প্রান্তে থাকা মানুষটাকে স্যামের কথাগুলোই জানালো জানালার ওপাশে থাকা মহিলা অফিসার। তারপর স্যামের দিকে ফিরে বলল, সার্জেন্ট ফথ এখন উপস্থিত নেই। তবে তার পার্টনার সার্জেন্ট ট্রেভিনো আছেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।
মিনিট দুয়েক পর কালো চুলের এক লোক বেরিয়ে এলো এলিভেটরের ভেতর দিকে। তাদের দিকে এগিয়ে এসে পরিচয় দিয়ে বলল, আমার পার্টনারের অনুপস্থিতির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। একটা কাজে বেরিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। ইন্টারভিউ রুমে নিয়ে যেতে যেতে তাদেরকে জানালো ট্রেভিনো। আর এমনিতেও, আপনাদেরকে এখন পর্যন্ত ডেকে আনার জন্যও যথেষ্ট দুঃখিত আমরা। তবে জেরাল্ড পিকারিংর মৃত্যুর কারণে কেসটা এখন হোমিসাইড কেসে পরিণত হয়েছে।
চেয়ারে বসতে বসতে স্যাম বলল, পত্রিকার খবর পড়ে আমরা যতটা জেনেছি হার্ট অ্যাটাকের কারণে লোকটার মৃত্যু হয়েছে।
হ্যাঁ, এবং এটা ভালোভাবে সাজানোও যেতে পারে কিন্তু। অবশ্যই, অটোন্সি রিপোর্ট আসার আগ পর্যন্ত কিছুই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে মৃত্যুর সময়টাই আসলে সন্দেহের উদ্রেক করছে। সবগুলো দৃষ্টিকোন থেকেই ভেবে দেখেছি আমার। যাই হোক, ডাকাতিটা বেশ হিংস্র ছিলো মি. পিকারিংর জন্য। অপরাধীকে দ্রুত সময়ের ভিতর ধরার চেষ্টা করছি। বলে নোটবুকটা খুললো ট্রেভিনো। কয়েক পাতা উলটে দেখার পর আবার বলল, আমার পার্টনারকে বলেছিলেন গতকাল একটা নির্দিষ্ট বই কেনার জন্য চায়নাটাউনে গিয়েছিলেন আপনারা। আমাকে জানাবেন কেন ঐ নির্দিষ্ট দোকানটাতেই গিয়েছিলেন?
আমাদের এক বন্ধু সুপারিশ করেছিলো, রেমি বলছে। আমার স্বামীকে উপহার দেওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট বই খুঁজছিলাম আমি। দোকানটার ব্যাপারে আমি জেনেছি মি. পিকারিংর ভাতিজি ব্রি মার্শালের কাছ থেকে।
মহিলার সাথে আপনার পরিচয়ের সূত্রতা?
ব্রি আমাদের ফার্গো ফাউন্ডেশনে সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে।
পারিবারিক ব্যবসা?
পারিবারিক দাঁতব্য প্রতিষ্ঠান, বলল রেমি। ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস অ্যাজেন্সী ডারপা ছেড়ে নিজস্ব ব্যবসা শুরুর পরই রেমির সাথে পরিচয় হয় স্যামের। এরপর বিয়ে। রেমির উৎসাহেই স্যাম আর্গন লেজার স্ক্যানার আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। এটা একটা ডিভাইস যেটা কিনা অনেক দূর থেকেও খাদ মেশানো ধাতু শনাক্ত করতে পারে। খুব দ্রুতই মার্কেট দখল করে নিয়েছিলো ডিভাইসটা। এর চার বছর পর ফার্গো গ্রুপটা হায়েস্ট বিডারের কাছে বিক্রি করে দেয় ওরা। ওটার প্রাপ্য অর্থ তাদের সারাজীবন চলে যাওয়ার থেকেও অনেক বেশি ছিলো। সেখান থেকেই সূচনা হয় ফার্গো ফাউন্ডেশনের।
লা জোলা লাইব্রেরিতে আমাদের সর্বশেষ দাঁতব্য শাখা খোলার ব্যাপারে ব্রি আমাদের প্রচুর সাহায্য করেছে। তখনই সে আমাকে তার চাচার ব্যাপারে বলেছিলো, লোকটা নাকি আঠারশো শতাব্দীর শুরুর দিকের জলদস্যু ও উপকূলবর্তী মানচিত্র সমেত একটা বই তুলে দেওয়ার জন্য ভালো কোনো সংগ্রাহক খুঁজছেন।
ট্রেভিনো নোটবুকের ওপর থেকে চোখ তুলে বলল, আর এই বইটাই তো সেফ থেকে চুরি গেছে?
আমি আসলে সেফ থেকে বইটা বের করতে দেখিনি ঠিক। শুধু বাক্সটাই দেখেছি। তবে ব্রি যেভাবে বলেছিলো, তাতে আমি নিশ্চিত যে সে প্রথম মুদ্রণের কপির ব্যাপারেই নির্দেশ করছিলো।
কারণ…?
সে বারবারই বলছিলো তার চাচা বইটার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝবে এমন কোনো সংগ্রাহকের হাতে তুলে দিতে পারলেই খুশি হবেন।
নোটবুকে লেখা থেমে গেছে সার্জেন্ট ট্রেভিনোর। ফার্গো দম্পতির দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, আমার শুনেছি আপনারা পেশাদার গুপ্তধন শিকারি?
হ্যাঁ, বলল স্যাম। ওখান থেকে যা পাই সেসব ফার্গো ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দাঁতব্য কাজে ব্যবহার করা হয়।
আগেই বলে নিচ্ছি বিরল বইয়ের ব্যাপারে আমার জ্ঞান খুবই কম। তবে যেহেতু বইটা জলদস্যু ও ম্যাপ নিয়ে ছিলো, তাহলে কি এটা সম্ভব যে কেউ জলদস্যুদের হারিয়ে যাওয়া গুপ্তধনের সন্ধানে এই বইটা চুরি করেছে?
হেসে উঠলো রেমি। আমার মনে হয় না এমন কিছু আদৌ সম্ভব কিনা। যদি মি. পিকারিংর ভাতিজি প্রথম এডিশনের কপি বিক্রির কথা না বলতে এবং একই সময়ে আমরাও এখানে ঘুরতে না আসতাম, তাহলে আমার মনে হয় না আমিও আর ওটা নিয়ে খুব একটা ভাবতাম।
আচ্ছা, ধরে নিলাম চুরি যাওয়া বইটা প্রথম এডিশনেরই। ওটার দাম কেমন হতে পারে?
বইয়ের কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে…. স্যামের জন্য বইটা কিনতে আসার আগে মূল্য নিয়ে কিছুটা ঘাটাঘাটি করে এসেছে রেমি। এসব কপির দাম কয়েকশো থেকে শুরু করে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে সাধারণত। এমনটাই দেখে ছিলাম। অবশ্য এই বইটা খুব একটা মূল্যবানও না, একটা সময় যথেষ্টই জনপ্রিয় ছিল, এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া প্রথম এডিশনের কয়েকটা কপিও এখনো অবশিষ্ট আছে। আমরা শুধু বইয়ের প্রতি ভালোবাসার কারণে কিনতে চেয়েছিলাম, বলে স্যামের হাতে হাত রাখলো রেমি।