তুমি নিশ্চয় ভেবে বসোনি যে আমি আজকের কথা বলেছি? কাল থেকে সপ্তাহ শুরু হবে।
আচ্ছা, আচ্ছা। ভেঙে বলায় খুশি হলাম।
লবিতে পৌঁছে স্টাফ ডেস্কে থামলো ওরা। রেমি ওখানের কর্মরত মহিলাকে বই এবং সকালে এক অ্যান্টিক শপ থেকে কিনা বড়া সিরামিক রোস্টারটা তাদের বাসায় পাঠিয়ে দিতে পারবে কিনা সেটার কথা জিজ্ঞেস করছে। সিরামিক রোস্টারটা কিনেছে তাদের গবেষক সেলমা ওয়ান্ডার্শকে উপহার দেওয়ার জন্য। সেলমা অনেকদিন ধরেই তার রান্নাঘরের জন্য একটা রোস্টার খুঁজছিলো।
ইনস্যুরেন্স করা লাগবে? মহিলা জিজ্ঞেস করলো। নাকি স্পেশাল প্যাকের নির্দেশ দিবো?
না, এতো ঝামেলায় যেতে হবে না, রেমি বলল। শুধু একটা বইই তো এটা।
রোস্টারের অ্যাড্রেসটাতেই?
হ্যাঁ, একই ঠিকানা।
আচ্ছা, মিসে ফার্গো, চিন্তা করবেন না। আমি পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
ধন্যবাদ।
স্যুইটের সামনে পৌঁছে কী-কার্ড দিয়ে দরজাটা খুলে নিলো স্যাম। রেমিকে ভিতরে ঢুকতে বলার আগে নিজে একবার দেখে নিচ্ছে সব ঠিকঠাক আছে কিনা। সন্তুষ্ট হয়ে দরজাটা খুলে ধরে রেমিকে বলল, সব ঠিক আছে, আসতে পারো ভিতরে।
রেমি রুমে ঢুকতেই দেখলো সোফার সামনের টেবিলে প্লেটে ফালি করে কাটা সবুজ আপেলের টুকরো, পনির ও আইস বাকেটের ভিতর বিলেকার্ট স্যামন ব্রুট রোজ শ্যাম্পেইনের একটা বোতল রাখা আছে। তাদের আসতে দেরি হওয়ার কারণে রুম সার্ভিসের কেউ একজন আইস বাকেটটা বদলে দিয়ে গেছে। ব্যাপারটা দেখে কিছুটা খুশি হলো স্যাম। বদলে না দিলে শ্যাম্পেইনের নিখুঁত স্বাদটা পাওয়া যেতো না, রেমিকে দিতে চাওয়া তার গিফটটাও ভেস্তে যেতো। শ্যাম্পেইনের বোতলের পাশে কাঁচের দুটো স্বচ্ছ গ্লাসও রয়েছে। রেমি বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুমটার দিকে। এরই ফাঁকে স্যাম নীল বর্ণের ছোটো একটি টিফানি বক্স গছিয়ে দিলো রেমির হাতে।
তুমি এতো কিছু করলে, আর আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি।
আমাকে একটা বই দিয়েছো তো তুমি।
হু, তাও আবার পুনর্মুদ্রিত একটা কপি।
স্যাম শ্যাম্পেইনের ছিপিটা খুলতে খুলতে বলল, আমি জানি পরে কোনো একসময় ওটা পুষিয়ে দিবে তুমি।
হয়তো, বলে বাক্সের ফিতেটায় টান দিলো রেমি। ওপরের ঢাকনাটা উঠাতেই হীরকখচিত চাবি আকৃতির আকর্ষণীয় গড়নের একটা নেকলেস বেরিয়ে এলো বাক্সটা থেকে। তোমার অন্তরের চাবি?
ওটার জন্য কোনো চাবিই লাগে না। এমনিতেই খোলা থাকে তোমার জন্য।
আশা করছি এটা হয়তো আমার নতুন সদরদরজার চাবি না? বলে মাথা গলিয়ে নেকলেসটা গলায় ঝুলিয়ে দিলো রেমি। যদি হয়, তাহলে ভাবো প্রতিবার তালা বদলানোর সময় চাবি বানাতে কেমন খরচ যাবে।
নতুন করে যেই পরিমাণ নিরাপত্তার সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে এবার, সেই সবের তুলনায় এই হীরার চাবির খরচ খুব একটা বেশিও না। তাদের বাড়িটাকে প্রকাণ্ড এক দুর্গে পরিণত করতে গিয়ে বলতে গেলে বিশাল অর্থই ব্যয় করতে হয়েছে তাদেরকে। অবশ্য শখে করেনি কাজটা। ভয়ঙ্কর এক আক্রমণের শিকার হয়ে আগের বাড়িটা পুরোপুরিই গুঁড়িয়ে গিয়েছিলো প্রায়। তাই নতুন করে সাজানো ছাড়া গতি ছিলো না।
যাই হোক, ওসব নিয়ে না ভেবে এখন মন শান্ত করা দরকার, ভেবে রেমির হাতে শ্যাম্পেইনের গ্লাস বাড়িয়ে দিলো স্যাম। তারপর নিজেরটা উঁচিয়ে টোস্ট করে বলল, নতুন প্রমিজ। কাল থেকে বিশ্রাম এবং আরাম ছাড়া আর কিছুই করা হবে না। এবং এই এক সপ্তাহ কেউ আমাদের মারতে আসবে না। আর, হা… আমার মনোযোগের পুরোটাই থাকবে শুধু তোমার জন্য।
তোমার প্রমিজের শেষ অংশটার বিশেষ নজর থাকবে আমার, ফার্গো।
কোনটা? কেউ মারতে আসবে না? নাকি আমার পূর্ণ মনোযাগ?
দুটোর দিকেই, বলল রেমি।
*****
সকালে বেশ আগেভাগেই ঘুম থেকে উঠে পড়েছে স্যাম। রেমি এখনো ঘুমাচ্ছে। নিঃশব্দে বিছানা থেকে নেমে রুম সার্ভিসকে নাস্তা পাঠিয়ে দিতে বলল স্যাম। নাস্তা আসতে আসতে রেমিও বিছানা থেকে উঠে পড়েছে। ক্রিম সিল্ক একটা রোব পরে আছে ও। শাওয়ার নেওয়ায় তার লালচে বাদামি চুলগুলো এখনো ভিজে আছে। স্যামকে একটা চুমু খেয়ে টেবিলে বসলো এরপর।
রেমি আসার আগ পর্যন্ত পত্রিকা পড়ছিলো স্যাম। সে টেবিলে বসতেই তার দিকে কফির মগটা বাড়িয়ে দিলো। তারপর আবার পত্রিকায় চোখ বুলাতে বুলাতে বলল, ঘুম হয়েছে ঠিকমতো?
হ্যাঁ, ভালোভাবেই ঘুমিয়েছি, বলতে বলতে মুখে এক চামচ গ্রিক ইয়োগার্ট পুরে নিলো রেমি। তো, আজ কোথায় যাচ্ছি আমরা?
এটা বলে চমক নষ্ট করে দিবো? এখনই বলছি না। ক্রনিক্যালর আর্টিকেলগুলো দেখতে দেখতে জবাব দিলো স্যাম। ঠিক তখনই তার নজর পড়লো ডাকাতির শিকার হওয়া ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে শিরোনামের একটি আর্টিকেলের ওপর। এটা তো সব কিছুরই অর্থ পালটে দিচ্ছে…
কী?
পত্রিকা নিচে নামিয়ে রেমির দিকে তাকালো স্যাম। বইবিক্রেতা জেরাল্ড পিকারিং। মারা গেছে লোকটা।
.
০৩.
চেয়ারে বসে কফি খেতে খেতে স্যান ফ্রান্সিসকো ক্রনিক্যালর পাতা উলটে দেখছে চার্লস এভেরি। লোকটার বয়স পঞ্চাশের কোঠার প্রায় শেষ দিকে। কপালের দিকের কালচে চুলগুলো হালকা হালকা ধূসর বর্ণ ধারণ করতে শুরু করেছে। অবশ্য তার মতে নাকি বয়সের তুলনায় সে যথেষ্ট ফিট আছে। এমনকি গতরাতে ব্যক্তিগত জেটে করে ইস্ট কোস্ট থেকে স্যান ফ্রান্সিসকো আসার পরও ক্লান্তিবোধ করছে না। সকালে দুই কাপ কফি খেয়ে জেট লেগের ক্লান্তি একেবারেই দূর হয়ে গেছে বলা যায়।