‘পানি পার হতে হবে। কিন্তু স্রোতের গতি অনেক বেশি।
‘গতি বেশি হলেও চওড়ায় কিন্তু এটা খুব একটা বেশি নয়।’ রেমি বলল।
‘আমি শেষ সাঁতার কেটেছি সেই ছোটবেলায়। আমার খবর আছে। বলল ল্যাজলো।
‘কোনো খবর হবে না। বুদ্ধি এসেছে মাথায়। পানির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর স্যাম বলল। রেমি… রশিটা দাও।
কী করবে? এখানকার পানি কতটা গভীর জানো?
‘এসব জায়গা খুব একটা গম্ভীর হয় না। চিন্তার কিছু নেই। স্যাম আশ্বস্ত করল। তুমি আর ল্যাজলো রশির এমাথা ধরে রাখবে। রশির আরেক মাথা আমি আমার কোমরে বেঁধে নিচ্ছি। স্রোত যাতে আমাকে টেনে নিয়ে না যেতে পারে তারজন্য এই ব্যবস্থা।
সাবধান।
স্যাম পানিতে নেমে বুঝল পানি ভয়াবহ রকমের ঠাণ্ডা। ঠাণ্ডা পানি যেন ওর পায়ে কামড় বসাচ্ছে। পা পিছলে যেতে চাইছে। হাজার হাজার বছর ধরে পানি গড়িয়ে মসৃণ হয়ে গেছে তলাটা। স্যামের কোমর পর্যন্ত পানি। কিন্তু এতেই ওর এগোনো কঠিন হয়ে গেছে। একটু পর হঠাৎ স্রোত ওকে টান দিয়ে ভারসাম্যহীন করে ফেলল। রশি নিয়ে লড়তে শুরু করল রেমি আর ল্যাজলো। স্যামের নাকে-মুখে পানি ঢুকছে। তিনজনের মিলিত শক্তিও এই স্রোতের কাছে সেভাবে পাত্তা পাচ্ছে না।
অবশেষে পায়ের জোরে, আর রেমি ও ল্যাজলোর সহায়তায় অনেক সংগ্রাম করে ওপাশে পৌঁছুল স্যাম।
এপার থেকে টর্চ লাইট ধরল রেমি। স্যাম পানি থেকে উঠে খেয়াল করল ওর এক পা কোনো সাড়া দিচ্ছে না। কোনো এক পাথরের সাথে বাড়ি খেয়ে অসাড় হয়ে গেছে। হাতের আঙুলগুলো জমে গেছে ঠাণ্ডায়। চিত হয়ে শুয়ে হাত আর পা ঘষল স্যাম। ওগুলোর সাড়া ফিরিয়ে আনতে হবে।
এরপর স্যাম দেখল ও সম্ভাব্য স্থান থেকে প্রায় ১০ ফুট সরে এসেছে। অর্থাৎ, স্রোত ১০ ফুট টেনে এনেছে ওকে। পকেট থেকে একটা ছোট টর্চ লাইট বের করল স্যাম। কপাল ভাল এত ধস্তাধস্তির পরেও জিনিসটা নষ্ট হয়নি।
এবার রেমি ও ল্যাজলো’র পালা।
রেমি স্যামের চেয়েও কম ভুগে পার পেয়ে গেলেও ল্যাজলো’র সত্যি সত্যি খবর হয়ে গেল। নাকানিচুবানি খেয়ে কঠিন অবস্থা।
অবশেষে কঠিন স্রোত পার হলো ওরা তিনজন। ল্যাজলো কাশছে।
হঠাৎ ওপারের প্যাসেজ থেকে বুটের আওয়াজ ভেসে এলো। ওরা ফিরে আসছে।
টর্চ বন্ধ করল স্যাম। সরে গেল পারের উন্মুক্ত স্থান থেকে। গুহার গায়ের পাশে আড়াল নিল। ওরা জানতে চায় গুণ্ডাগুলো এই স্রোত পেরিয়ে ওদের পিছু নেয় কিনা।
শব্দ শুনে বুঝল ৪-৫ জন হাজির হয়েছে। উত্তেজিতভঙ্গিতে কথা বলছে। দলনেতা। হয়তো স্রোত পার হয়ে আসার পরিকল্পনা করছে। টর্চ জ্বেলে ওদের ভেজা পায়ের ছাপ দেখতে পেল গুণ্ডারা।
রেমি বিষয়টা টের পেল। ওরা টের পেয়েছে আমরা এপাশে এসেছি।’
‘কিন্তু আমরা যেভাবে এসেছি ওরা যদি সেভাবে না আসে তাহলে কিন্তু কাজ হবে না।’ বলল স্যাম।
‘আমার মনে হয় না এদের মাথায় এত বুদ্ধি আছে। ল্যাজলো মন্তব্য করল।
‘আপনার কথাই যেন সত্যি হয়।’
দলনেতা এক চালাকে পানিতে নামার আদেশ দিল। কিছুটা আমতা আমতা করলেও নির্দেশ পালন করল চ্যালা। বুট খুলে নামল পানিতে। কিছুটা এগোনোর পর আচমকা স্রোতের ধাক্কা খেয়ে ভারসাম্য হারিয়ে তলিয়ে গেল সে। স্রোত টেনে নিয়ে গেল তাকে। বেশ কিছুক্ষণ পার হওয়ার পরও তার আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। চ্যালা পানিতে পটল তুলেছে।
‘আমার মনে হয় না, আর কেউ খুব শীঘ্রই এই স্রোতে নামার সাহস করবে। স্যাম বলল। তবে আগে বা পরে ওরা এই স্রোত পার হওয়ার একটা উপায় বের করে ফেলবেই।
একটু পর গুণ্ডাদের আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না।
‘ওরা বোধহয় সব চলে গেছে। রেমি বলল।
‘প্রস্তুত হতে গেছে বোধহয়। ল্যাজলো বলল।
‘চলো সবাই, আমরা এগোই। ওদের সাথে দূরত্ব বাড়ানো দরকার। বলল স্যাম।
“কিন্তু ওরা আমাদেরকে ধরার জন্য এত উঠে-পড়ে লেগেছে কেন বুঝলাম না। ল্যাজলো বলল।
‘আমরা হয়তো ওদের গোপন আস্তানা জেনে ফেলেছি তাই বাঁচিয়ে রাখতে চাচ্ছে না। তাছাড়া কতগুলো বাচ্চাকে খুন করেছে সেটাও তত মাথা রাখতে হবে।’ বলল স্যাম।
‘আমার চিন্তা হচ্ছে লিও-কে নিয়ে। বেচারা কোথায় আছে কে জানে? পুলিশকে নিয়ে উদ্ধার করতে হবে ওকে।’ রেমি বলল।
‘প্রার্থনা করি, বেচারা যেন গুরুত্বরভাবে আহত না হয়ে থাকে।
সামনে এগোতে শুরু করল সবাই। ওরা এখন যে অংশ পার হচ্ছে এটার ছাদের উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। বিশাল গুহা। কিছুদূর এগোনোর পর স্যামের টর্চ লাইটের আলো কমতে শুরু করল।
‘দেখি তোমাদের লাইটগুলো বের করো। দেখো, জ্বলে কিনা। রেমি ও ল্যাজলোকে বলল স্যাম।
না, জ্বলছে না। স্যামের মতো ওদের ভাগ্য অত ভাল নয়।
‘এহ হে! লাইট নেই। এবার তো পথ হারিয়ে ফেলব।’ ল্যাজলো বলল।
স্যাম ওর নিভু নিভু টর্চ লাইট দিয়ে দেখল পাশে একটা প্যাসেজ আছে। ‘চলো সবাই, আমরা এই প্যাসেজ ধরে এগোই। হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
সামনে এগোতে এগোতে একটা জলাধারের সামনে গিয়ে পৌঁছুল ওরা। প্রদি পদক্ষেপে টর্চের আলো কমে আসছে। জলাধারের কাছে যেতে যেতে টর্চ নিভেই গেল।
এবার সব অন্ধকার। জলাধারের কাছে গিয়ে অন্ধকার হাতড়ে রেমি হাত দিল পানিতে। পানি বেশ ঠাণ্ডা।
‘এবার?’ রেমি প্রশ্ন করল।
‘পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক না করা পর্যন্ত আমরা এখানে বিশ্রাম করব।’ বলল স্যাম।