‘আমরা একটা ফাউণ্ডেশন চালাই। আমাদেরকে কেউ পাঠায়নি। ফাউণ্ডেশন থেকে টাকার ব্যবস্থা করা যাবে।’
সবটিরে দড়ি দিয়া বাইন্ধা রাখ!’ হাতে থাকা সস্তা প্লাস্টিকের ঘড়িতে সময় দেখে বলল অস্ত্রধারী।
‘খুব বড় ভুল করছেন। আমাদের যে বন্ধুটা হারিয়ে গেছে সে-ও অনেক বিখ্যাত লোক। ওকে বাঁচাতে হবে।’ বলল রেমি।
কেউ কোনো কথা কানে নিল না। রশি দিয়ে ওর হাত পিছমোড়া করে বাধা হলো। পায়ের গোড়ালিও বাধা হলো যাতে কেউ নড়তে না পারে। বাধা শেষ হলে চ্যালাদের সাথে স্থানীয় ভাষায় আলোচনা করল লোকটা। তারপর ওদেরকে যেখানে পাওয়া গিয়েছিল এগোলো সেদিকে। হঠাৎ কীভাবে থেমে রেমি’র কাছ ফিরে এলো অস্ত্রধারী লোকটা। রেমি’র চুল ধরে ওর মুখটা উঁচু করল। দাঁত বের করে বলল। “আহ, চরম মাল!
বাঁধন থাকা সত্ত্বেও প্রতিবাদ করার চেষ্টা করল স্যাম। ওর গায়ে হাত দিলে মেরে ফেলব!”
রেমিকে ছেড়ে সাথে সাথে স্যামে’র কাছে গেল লোকটা। ম্যাচেটি তুলে কোপ দেয়ার ভঙ্গি করতেই চিৎকার করে উঠল রেমি। না!’
‘আইচ্ছা! এত দরদ। ভালাই। দাঁড়া…’ স্যামকে বাদ দিয়ে আবার রেমি’র কাছে গেল অস্ত্রধারী।
রেমি’র চুল ধরে টান দিয়ে নিজের মুখের কাছে নিয়ে এলো সে। তর লগে খেইল্যা মজা লাগব মনে হইতাছে। পরে আইতাছি…’
নিজেদের একজন লোককে পাহারার কাজে রেখে সে দলবল চলে গেল।
সবাই চুপ। একটু পর পাহারাদার জগ থেকে কফি বের করে খেতে শুরু করল। একপাশে একটা ফ্রিজ আছে। ওটার গুঞ্জন ছাড়া এখন আর কোনো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না।
‘তুমি ঠিক আছো? একদম ফিসফিস করে বলল স্যাম।
‘হা। তুমি?
‘অ্যাসপিরিন খাওয়া দরকার।
কী হচ্ছে এসব?
‘জানি না। কিন্তু খুব খারাপ হচ্ছে। বাধন খোলা দরকার।
কতটা টাইট করে বাধা?’
‘খুব টাইট।’ বলল স্যাম। তবে এখানকার দেয়ালে আমি একটা জায়গা দেখেছি। ওর সাথে ঘষলে রশিটা কাটা যাবে। তুমি আমার সামনে আড়াল তৈরি করো। তাহলে আমি কাজটা করতে পারব।’
ল্যাজলোর দিকে ঝুঁকল স্যাম। শুনেছেন? রেমিকে কী বললাম?
কীভাবে শুনব? এত আস্তে বললে শোনা যায়? আমি আপনার বামদিক আড়াল করছি। ওরা কেউ ফিরে আসলেও যাতে সহসা দেখতে না পায়। এখন যা করার করুন। ল্যাজলো জবাব দিল।
‘আমি আগে নিজের পায়ের বাঁধনটা খুলব। তারপর ওই ব্যাটাকে সাইজ করছি। তারপর যতদ্রুত সম্ভব আমি তোমাদেরকে মুক্ত করব। ওরা যেকোনো মুহূর্তে ফিরে আসতে পারে।
‘সাইজটা কীভাবে করবে শুনি?’ রেমি প্রশ্ন করল।
‘দেখো, কীভাবে করি।’
কাজে লেগে পড়ল স্যাম।
‘এই যে, মিস্টার! শুনছেন? আমাকে একটু বাথরুমে যেতে হবে।’ স্যাম বলল।
চ্যালা কোনো পাত্তাই দিল না। জাস্ট হাসল।
“প্লিজ!
এবারও কোনো পাত্তা নেই। তাই ভিন্ন পথ অবলম্বন করল স্যাম।
কীরে কথা কানে যায় না? আমাদের লোক যখন আসবে তখন তোকে পিটিয়ে ফাঁসিতে ঝোলাবে, দেখিস!’
‘চোপ! অবশেষে সাড়া পাওয়া গেল।
‘শালা, মদন আলী! গাধা কোথাকার!”
‘তরা গরু। এইজন্য তগোরে বাইন্ধা রাখা হইছে।’
কথা কম বল, অশিক্ষিত, গেঁয়ো ভূত কোথাকার! তোকে হাজারবার বিক্রি করার মতো সামর্থ্য আছে আমার। মুখ সামলে কথা বলবি। পায়খানার কীট!”
‘চুপ কর! চুপ করতে কইছি!’
লোকটার দিকে থুথু মারল স্যাম। শালা, মূর্খ, ভুলভাল ইংলিশ উচ্চারণ করে ধমক দিস? বর্বরের জাত সব! যা আগে ইংলিশ শিখে আয় তারপর কথা বলতে আসিস!’
এবার পাহাদারের ধৈর্যচ্যুতি হলো। এগিয়ে এলো স্যামের দিকে এবং ভুল করল।
আচমকা জোড়া পায়ের লাথি দিয়ে তাকে ভূপাতিত করল স্যাম। সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি নিজের শরীরটা গড়িয়ে দিল পাহাদারের উপর। কনুই দিয়ে পাজরের হাড়ে কষে গুতো দিল। দুই কব্জি দিয়ে আঘাত করল মুখে। কয়েকটা দশাসই আঘাত খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল লোকটা।
ল্যাজলো আর রেমি’র বাঁধন খুলে দিল ও।
এবার বের হব কোনদিক দিয়ে ফিসফিস করে বলল রেমি।
“যেদিক দিয়ে এসেছি ওদিক দিয়ে যাওয়া যাবে না। ওদের সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ স্যাম জবাব দিল। ওদিকে একটা প্যাসেজ দেখা যাচ্ছে। ওটা ছাড়া আর কোনো পথ দেখছি না।’
পাহারাদারের কাছে একটা ম্যাচেটি ছিল। একটু খুঁজে এক কয়েল রশিও পাওয়া গেল, সাথে একটা টর্চ লাইট।
‘এগুলো কাজে দেবে। চলো, যাওয়া যাক।
‘এই মহাশয়ের কোনো গতি করে গেলে ভাল হতো না?’ ল্যাজলো মনে করিয়ে দিল।
‘ঠিক বলেছেন।’ স্যাম আরেক কয়েল রশি এনে পাহারাদারকে আচ্ছা করে বাঁধলো। ব্যাটা কারও সাহায্য ছাড়া কোনোভাবেই এই বাধন খুলতে পারবে না।
‘চলো সবাই। তবে আওয়াজ কোরো না। সামনে কেউ থাকলেও থাকতে পারে।’ বলল স্যাম।
যদি কেউ থাকে আর তার কাছে যদি পিস্তল থাকে তাহলে কিন্তু এই ম্যাচেটি আর রশি দিয়ে কোনো কাজ হবে না। রেমি সতর্ক করে দিল।
পিস্তলটা যদি দক্ষ কারো হাতে থাকে তাহলে তোমার কথার সাথে আমি একমত। নইলে নয়।
চুপচাপ এগোল ওরা। অনেকখানি এগোনোর পর গুহার গুমোট বাতাসটা একটু হালকা অনুভূত হলো।
‘এদিকটা বেশ ফ্রেশ। আর্দ্রতা আছে।’ বলল স্যাম।
‘সামনে যদি পথ বন্ধ থাকে?’ ল্যাজলো প্রশ্ন করল।
‘খুব খারাপ হবে সেটা। চলুন, দেখি কী আছে?
এগোতে এগোতে একটা হিস হিস শব্দ শুনতে পেল ওরা। কয়েক মিনিট এগোনোর পর একটা জলধারার সামনে এসে পৌঁছুল সবাই। বেশ দ্রুতগতিতে বয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। পানির ওপাশে গুহার বাকি অংশ।