‘স্যাম… আস্তে করে বলল রেমি।
‘আবার কী? শোনননি কী বললাম? বেচারা এমনিতেই আহত। এখন হয়তো আরও বেশি আহত হয়েছে।
‘স্যাম…’ রেমি আবার বলল।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা তুলল স্যাম। তাকিয়ে দেখে বেশ লম্বা এক স্থানীয় বাসিন্দা, একটা পিস্তলের ব্যারেল তাক করে রয়েছে। একদম ওর দিকে।
৪৬. অস্ত্রধারী লোকটা
৪৬.
অস্ত্রধারী লোকটার পেছনে আরও তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেকের হাতে ম্যাচেটি।
‘ভাবছিলাম আরও তাড়াতাড়ি আইবি তরা। কিন্তু বহুত টাইম লইছস! নিজের হাতে থাকা অস্ত্রের উপর একটা চাপড় মারল অস্ত্রধারী। গুহার ভেতরে শব্দটা প্রতিধ্বনিত হয়ে অনেক বিকট শোনাল। ল্যাজলো একটু নড়াচড়া করছে দেখে সেদিকে অস্ত্র তাক করল সে। ওই হালারা, কেউ নড়বি না কইলাম!”
‘আমরা এখানে আপনাদের কোনো ক্ষতি করতে আসিনি। আমাদের এক বন্ধু পা ফসকে নিচে পড়ে গেছে। ওকে উদ্ধার করতে হবে। খুব আঘাত পেয়েছে বোধহয়।
‘ভালা হইছে। আমার একটা গুলি বাইচ্যা গেল। এহন তরা কেউ যদি বেহুদা নড়ছস তো মরছস! ওই সার্চ কর তো। দেখ কিছু মালপাতি পাছ কিনা!’
ওদের সবাইকে সার্চ করে ব্যাকপ্যাক সহ যা যা পাওয়া গেল নিয়ে নিল স্থানীয় গুণ্ডাবাহিনি। কিছুটা সামনে হালকা আলোর আভাস দেখা যাচ্ছে। বেশ বড় জায়গায় আছে বোধহয়। সেদিকে নিয়ে চলল ওদেরকে।
‘আপনারা কারা? অস্ত্রধারীর পাশ দিয়ে এগোনোর সময় স্যাম প্রশ্ন করল।
‘তর বাপ! শালারা খাইয়া দাইয়া কাম পাও না আমাগো কাজে নাক গলাও! বহুত দিন ধইরা দেখতাছি তগো লটরপটর। তগো শরীলে খুব ত্যাল না? আইজ তগো ত্যাল বাইর করমু।’
‘কী নিয়ে কথা বলছেন বুঝতে পারছি না। এটা কোন জায়গা?
‘চুপ কইরা থাক! স্যামের পাশে এক চ্যালা ছির সে হুকুম করল।
ওদের সবার হাত ধরে পিঠে মুড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিজেদের ভারসাম্য রক্ষা করতে বেগ পেতে হলো অভিযাত্রী দলকে।
স্যাম খেয়াল করে দেখল রেমি বেশ আতঙ্কিত। ওর বুক দ্রুত উঠছে নামছে।
‘চিন্তা করো না। স্ত্রীকে সান্তনা দেয়ার জন্য বলল স্যাম।
কইছি না চুপ কইরা থাকতে?’ বলতে বলতে চ্যালাটা স্যামের হাঁটুতে লাথি মেরে ভূপাতিত করে ফেলল। চুপ কইরা থাকতে কইলে এক্কেরে চুপ কইরা থাকবি। ওঠ!’ স্যামের বুকে টানা কয়েকটা লাথি মারতে মারতে বলল চ্যালা। একদম বাগে পেয়েছে।
স্যাম অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়াল। পা ফেলতে পারছে না।
‘মাদারি! তাড়তাড়ি আগা। নইলে এক কোপ দিয়া কল্লা নামায়া দিমু!’
ওদের সবাইকে যে জায়গায়টায় আনা হয়েছে সেখানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আছে। লাইট জ্বলছে অল্প ওয়াটের। আরেকজন অস্ত্রধারী লোক দাঁড়িয়ে আছে, দেখছে ওদেরকে।
‘এইহানে বয়া পড় সবাই। কয়েকটা বিছানা পাতা আছে। সেগুলোর পাশে থাকা ফাঁকা জায়গাটার দিকে নির্দেশ করে বলল লোকটা।
বসার পর স্যাম মাথায় হাত দিলে দেখল রক্ত চোয়াচ্ছে। লাথি খাওয়ার সময় ওর মাথায় আঘাত লেগেছিল। রেমি বিষয়টা খেয়াল করে পকেট থেকে একটা টিস্যু বের করে স্যামের মাথায় ধরল।
‘আমরা যে এখানে এসেছি এটা কিন্তু অনেক মানুষ জানে। যদি সময়মতো আমরা না ফিরি তাহলে ওরা এখানে খুঁজতে চলে আসবে। শান্ত স্বরে বলল রেমি।
‘মিছা কথা!’ মুখে বললেও অস্ত্রধারীর চোখে সন্দেহ।
‘আপনারা কেন…’
‘চোপ! আমি পশ্ন জিগামু তুই উত্তর দিবি। আজাইরা কোনো কথা কৰি না।’
উনি যা বলে তাই করো।’ স্ত্রীকে সতর্ক করল স্যাম।
‘তরা এইহানে ক্যান আইছস?
‘দ্বীপে কেন এসেছি? নাকি এই গুহায় কেন এসেছি? কোনটার জবাব দেব?’ রেমি পাল্টা প্রশ্ন করল।
‘আমারে বোকাচোদা মনেহয়?
মাথা নাড়ল রেমি। না। আমি আসলে প্রশ্নটা বুঝতে পারিনি।
‘তরা কী খুঁজতাছস?
স্যাম খাকরি দিয়ে গলা পরিষ্কার করল। আমরা এখানকার গুহাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছি। কোনটার সাথে কোনটা সংযোগ আছে। এগুলোর কোনো ম্যাপ এখনও তৈরি করা হয়নি।’
মিছা কথা!
না, সত্যি বলছি। তাছাড়া আমরা এই গুহায় ঢুকে কী করব? এরকম জায়গায় অভিযান চালানোর আমাদের শখ।
বহুত বড় ভুল কইরা লাইছোস!
‘আপনারা এমন করছেন কেন? আপনারা কী সেই বিদ্রোহী?’ প্রশ্ন করল ল্যাজলো।
হো হো করে হেসে উঠল লোকটা। হাসিটা কৃত্রিম বলে মনে হলো না। ‘বিদ্রহী? হ, আমরা বিদ্রহী! আমি বিদ্রুহী!
‘আমরা কিন্তু আপনাদের কোনো ক্ষতি করতে চাইনি।’ রেমি বলল।
‘আইয়া তো পড়ছস? এহন আর কুনো কথা নাই।’ রেমির উপর ভাল করে নজর বোলাল লোকটা।
‘আমাদের কিছু হয়ে গেলে আপনাদেরই ক্ষতি হবে। আমরা এখানে আছি এটা অনেক লোক জানে। বলল স্যাম।
‘তরা কই আছস?’ হাসতে হাসতে লোকটা প্রশ্ন করল।
‘জায়গার নাম জানি না। তবে দ্রাঘিমাংশ আর অক্ষাংশ জানিয়ে দিয়েছি এই গুহায় ঢোকার আগে। আমরা যদি আর না ফিরি এই গুহায় তল্লাশি হবে। এবার রেমি বলল। আমরা অনেক পরিচিত অভিযাত্রী। আমাদেরকে অনেকেই চেনে।
তাইলে তো টাকা-পয়সাও দিব হ্যারা নাকি?
‘মুক্তিপণ চাচ্ছেন? ঠিক আছে। ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে।’ আশ্বস্ত করল স্যাম।
সঙ্গীদের সাথে একবার দৃষ্টি বিনিময় করল অস্ত্রধারী। তরা কার লোক?
কার লোক মানে?’ রেমি একটু অবাক হয়েছে। আমরা কারও লোক নই। এরকম জায়গাগুলো ঘুরে দেখে আমাদের কাজ। আমরা আর্কিওলজিস্ট।
‘অত ইংলিশ বুইঝা কাম নাই। তগোরে কেড়া পাঠাইছে তাড়তাড়ি ক… ট্যাকা দিব কেডা?’