‘আমি হলাম কৈ মাছের প্রাণ। পারব না মানে!
‘শুনে খুশি হলাম। গ্রেগ, এখানে আপনার কাজ হচ্ছে গাড়িটাকে পাহারা দেয়া।
ডারউইন থেকে গ্রেগ-কে আনা হয়েছে। যাতে আগেরবারের মতো এবার কেউ গাড়ির কোনো ক্ষতি না করতে পারে। স্যামের কথা শুনে গ্রেগ মাথা নেড়ে সায় দিল। গ্রেগ খুব একটা কথা বলে না। তবে কাজ বোঝে। একটা ম্যাচেটি, আর ১২ গজ রেঞ্জের ফ্লেয়ার গান আছে ওর সাথে। আশা করা যায়, গ্রেগ-এর তত্ত্বাবধানে ওদের গাড়িটা অক্ষত থাকবে।
গ্রেগ-কে রেখে পা বাড়াল অভিযাত্রী দল।
‘আমাদেরকে তাহলে ঝরনার পেছনে যেতে হবে? তাই না? কিছুদূর এগোনোর পর রেমি প্রশ্ন করল।
‘নোটবুক তো তা-ই বলছে।’ জবাব দিল ল্যাজলো।
কিন্তু কথা হচ্ছে, ঝরনার পেছনে তো খুব বেশি জায়গা থাকে না। কত পেছনে যেতে হবে তাহলে? নাকি ঝরনার পাশ দিয়ে যেতে বলেছে? হয়তো পাশ দিয়ে এগোলো কোনো গুহামুখ পাওয়া যাবে?’ স্যাম বলল।
‘পাওয়া যাবে কিন্তু প্রচুর খুঁজতে হবে।’ বলল রেমি। লিও, তোমার পায়ের কী অবস্থা এখন?
‘খুবই ভাল। একদম তাগড়া ঘোড়ার মতো। এখন আমার মাথায় একটাই চিন্তা গুপ্তধনটা কখন উদ্ধার করব। লিও’র বলার ভঙ্গির দিকে রেমি তাকিয়ে রইল। বিষয়টা খেয়াল করল লিও। হেসে ফেলল দু’জন।
‘তাগড়া ঘোড়া না বলে আহত ঘোড়া বললে বোধহয় বেশি মানানসই হয়।’ মুচকি হেসে বলল স্যাম।
মন্দ বলেননি। ল্যাজলো সায় দিল।
‘আচ্ছা, এখন কাজের কথায় আসি। গতকাল রাতে আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। যদি এমন হয় জাপানিরা গুহার ভেতরে গুপ্তধন রাখার পর গুহামুখ বন্ধ করে দিয়ে গেছে? বিষয়টা কিন্তু একেবারে অসম্ভব নয়। গুপ্তধন লুকিয়ে রাখার জন্য এটাই সবচেয়ে ভাল উপায় বলে আমর মনে হয়। তাছাড়া পরে এসে একটা গ্রেনেড কিংবা মর্টার মেরে গুহামুখ পরিষ্কার করে ফেলাটা হয়তো খুব বেশি কঠিন কিছু না।
‘চমৎকার বলেছেন। কিন্তু কোনো না কোনো চিহ্ন তো থাকবে…’ বলল ল্যাজলো।
‘হুম, হতে পারে। আমার এসব বলার উদ্দেশ্য হলো, কোনো অস্বাভাবিক বিষয় সেটা যত ছোটই হোক না কেন সেটা যেন আমরা অবহেলা না করি। রেমি বলল।
‘অর্থাৎ- যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন!’ বলল ল্যাজলো, হাসতে হাসতে।
‘আন্দাজে উড়াইলে ছাই, পরে দেখিবে কিছুই নাই, দিনশেষে হইয়া যাইবে বিশাল মদন!’ লিও সুযোগ পেয়ে ল্যাজলোকে ফোড়ন কাটতে ছাড়ল না।
***
কথা বলতে বলতে আগেরবার এসে ঘুরে যাওয়া দুটো গুহা পার হলো ওরা। আরও সামনে এগোনোর পর লিও একটা জায়গা দেখিয়ে বলল, “দেখেছ ওটা?”
বেশ কয়েকটা বড় বড় পাথর পড়ে আছে। পাহাড়ের ঢালের পাশেই পড়ে থাকায় বোঝা যাচ্ছে পাহাড়ধ্বসের ফলে ওখানে অবস্থান করছে ওগুলো।
স্যাম মাথা নাড়ল। চলল, এটা দিয়েই ছাই উড়ানো শুরু করি।
হাত লাগাল স্যাম ও ল্যাজলো। ম্যাচেটি আর হাতের সাহায্যে ১০ মিনিটের মধ্যে মোটামুটি পরিষ্কার করে ফেলল।
‘সেরেছে! ভেতরে তো বাড়তি জায়গা আছে দেখছি। স্ত্রীর দিকে তাকাল ও। তুমি আসলেই একটা চিজ!
এবার সবাই মিলে হাত লাগাল। ভেতরে ঢোকার জন্য পথ তৈরি করতে হবে। কয়েক মিনিট লাগল ওদের কাজটা করতে।
‘এটা একটা গুহা, কোনো সন্দেহ নেই। বিড়বিড় করে বলল ল্যাজলো।
‘ল্যাজলো সাহেব, আগে যাওয়ার সম্মানটুকু গ্রহণ করবেন নাকি?’ রেমি জানতে চাইল।
‘আসলে হয়েছে কী, আপনার মতো আমার মাথাতেও একটা আইডিয়া এসেছে। যদি এমন হয় এখানে বুট্রিাপ রাখা আছে?
যদি থাকেও আমার মনে হয় না সেটা এতদিন পরেও সেটা কাজ করবে।’ স্যাম বলল।
‘তাহলে ঠিক আছে। ফলে মি! জোর করে সাহস দেখাল ল্যাজলো।
আগের দুটো গুহার চেয়ে এটা বড়। গুহার গা বেয়ে পা চোয়াচ্ছে।
যাক, ভেতরটা বেশ ঠাণ্ডা। এগোতে এগোতে বলল স্যাম।
“কিন্তু কোনো ‘বাক্স তো দেখতে পাচ্ছি না।’ রেমি বলল।
‘ভাল কথাটাও বল। দেখ, কোনো কঙ্কালও নেই।’
একটু পর ওরা সবাই একটা চেম্বারে এসে উপস্থিত হলো। চেম্বারটা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে।’
‘এখানেও কোনো গুপ্তধন নেই দেখছি।’ মুখ হাঁড়ি করে বলল লিও।
সবুরে মেওয়া ফলে। স্যাম চারিদিকে চোখ বোলাতে বোলাতে বলল।
‘ওদিকটায় দেখুন…’ ডান দিকে নির্দেশ করল ল্যাজলো। ওদিকে আরেকটা ছোট্ট মুখ দেখা যাচ্ছে। ওটা দিয়ে যাওয়া যাবে মনে হচ্ছে।’
কিন্তু এভাবে কত ভেতরে যাওয়ার পর গুপ্তধন পাওয়া যাবে? কেউ জানো তোমরা? লিও হতাশ।
‘তাগড়া ঘোড়া এত তাড়াতাড়ি হাঁপিয়ে উঠল নাকি?’ খোঁচা মারল স্যাম।
‘শব্দটা “আহত ঘোড়া” হবে, মশাই। ল্যাজলোও স্যামের সাথে যোগ দিল।
ল্যাজলো সবার সামনে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার পেছনে রেমি ও স্যাম। সবার পেছনে আছে লিও। ওরা যে পথ ধরে এগোচ্ছে এটা বেশ চওড়া। এটার ঠিক পাশেই একটা সরু পথের মতো আছে। অন্ধকার।
হঠাৎ লিও’র লাইট আছড়ে পড়ল। চিৎকার করে উঠল লিও। বেচারা অন্যদিকে টর্চ ধরে এগোতে গিয়ে অন্ধকার পথের ভেতরে পড়ে গেছে বুঝতে পারেনি।
চিৎকার শুনে ঘুরে দাঁড়াল স্যাম। “লিও।
হাঁটু গেড়ে বসে নিচে দেখার চেষ্টা করল।
‘নিচে কিছু দেখতে পাচ্ছেন?’ ল্যাজলো নিচ দিকে লাইট ধরে জিজ্ঞেস করল।
‘না। বোধহয় নিচের পথটা কোনদিকে মোড় নিয়ে ঘুরে গেছে। তাই দেখা যাচ্ছে না। হাতের টর্চটা ডান হাতে নিল স্যাম। রেমি রশিটা দাও। আমি ওটা আমার শরীরে বেঁধে নিচে নামব। দেখি, লিও কোথায় আছে…’