অগত্যা হোটেলে ফিরল ফারগো দম্পতি।
‘বাচ্চাদের নিয়ে এখানকার কারও মাথাব্যথা নেই। রাগে রেমি গজগজ করছে। যদি আমার বাচ্চা এখানে হারিয়ে যেত আমি থানায় নরক গুলজার শুরু করে দিতাম।
‘তা ঠিক আছে। তুমি তো দেখলে চিফ কীরকম আচরণ করল। আমার মনে হয়, উনি আমাদেরকে পছন্দ করেন না।’
‘গুহাভর্তি বাচ্চাদের কঙ্কাল অথচ গর্দভরা আমাদেরকেই পছন্দ করে না।’
‘শান্ত হও, রেমি। কঙ্কালগুলোর কথা তো শুধু আমরা জানি। পুলিশ জানে। যদি জানতো হয়তো এরকম আচরণ করত না।
‘আচরণ ঠিক করা ওদের কাজ। কারণ তথ্য আমাদের কাছে।
মানছি। কিন্তু এখন কিছু করার নেই।
ট্যাব হাতে নিয়ে জিপিএস দেখছে রেমি।
‘বাদ দাও। আমি একটা পুরানো রাস্তা দেখতে পাচ্ছি। ঝরনা থেকে আধামাইল দূরে গিয়ে শেষ হয়েছে। যদি ওটা ব্যবহার করা যায় তাহলে আমাদের প্রায় ১ ঘণ্টা বেঁচে যাবে।’
ভাল খবর। লিও’র জন্য সুবিধে হবে।’
‘এখুনি নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। ওখানে গিয়ে দেখতে হবে কী অবস্থা।
হঠাৎ স্যামের স্যাটেলাইট ফোন বেজে উঠল। দ্রুত রিসিভ করল ও।
‘হ্যালো।’
‘খবর শুনেছ?’ ওপাশ থেকে সেলমা’র উদ্বিগ্ন কণ্ঠ ভেসে এলো।
কী খবর, সেলমা?’
‘আবারও হামলা। এবার হামলা হয়েছে গর্ভনর জেনারেল আর এক এমপি’র উপর।
‘এমপি’র নাম কী?
‘অরউন ম্যানচেস্টার।
‘স্যাম চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়ল। তারপর খুলল চোখ। একবার রেমি’র দিকে তাকিয়ে বলল, কখন?
‘খবর পেয়েছি কয়েক মিনিট আগে।
কীভাবে হলো?”
‘গাড়ি বিস্ফোরণ। বিদ্রোহীরা হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে। তাদের ভাষ্য, এই এমপি আর গর্ভনর জেনারেল ওদের কথামতোই চলছিল এতদিন। কিন্তু দ্বীপের উন্নতির জন্য এরকম পুতুলমার্কা লোকজন প্রয়োজন নেই। এই যুক্তিতে খুন করা হয়েছে। তারা আরাও বলেছে এসব কিছুর জন্য দায়ী বিদেশিরা।
‘তাহলে ম্যানচেস্টার মারা গেছে, শিওর? রেমি পাশের বিছানায় বসে আছে। তাই গলার আওয়াজ নিচু করে বলল স্যাম। কিন্তু রেমি ঠিকই শুনে ফেলেছে।
কী? ফোনটা আমাকে দাও!’
ঝট করে স্যামের কাছ থেকে ফোনটা নিল রেমি।
কী কী হয়েছে ঠিকঠাক করে বলো, সেলমা। ভয়ঙ্কর শান্তভাবে বলল ও। সব শুনে রেমি চুপচাপ বসে রইল।
রেমি।
‘তুমি ঠিক আছে তো?’ ওপাশ থেকে সেলমা জানতে চাইল।
হ্যা… তিনঘণ্টাও হয়নি ম্যানচেস্টারের সাথে দেখা করে এসেছি। আর এখন…’
‘আমি দুঃখিত।’ সান্তনা দিল সেলমা।
‘ধন্যবাদ। আমি ভাবছি, তার পরিবার ছিল কিনা?
‘খবরে সেরকম কিছু বলেনি।
‘অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। ম্যানচেস্টার ছিল জনতার কণ্ঠ। আর এখন সে-ই নেই। খবরটা ছড়িয়ে পড়লে যে কী তাণ্ডব শুরু হবে…’।
‘তোমরা দু’জন ওখান থেকে সরে এসো। এখুনি!’ বলল সেলমা। এখনও সময় আছে।
এখুনি সম্ভব না। কয়েক মুহূর্ত ভাবল রেমি। আচ্ছা, হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাদের ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছ?’ রেমি গুহা অভিযান শেষ করে এসে বিস্তারিত জানিয়ে ই-মেইল করেছিল সেলমাকে।
না। ইন্টারনেটে ওই ব্যাপারে তেমন কিছু নেই। গোয়াডালক্যানেল আসলে তথ্যপ্রযুক্তির দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। ওখানকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট পর্যন্ত নেই!
‘আমারও সন্দেহ হয়েছিল তুমি কিছু পাবে না।’
‘এসব বাদ দিয়ে নিজেদের কথা ভাব। আবার দাঙ্গা লাগলে…’
‘বুঝেছি। স্যামের সাথে কথা বলব এব্যাপারে।
‘কোনোকিছুর প্রয়োজন হলে কল করো। আর প্লিজ… সাবধানে থেকো।
“ঠিক আছে, সেলমা। অনেক থ্যাঙ্কস।
কথা শেষ করে ফোনটা স্যামের হাতে দিল রেমি? ‘সেলমা আমাদেরকে নিয়ে অনেক চিন্তিত। বলছে এখুনি দ্বীপ ছেড়ে সরে যেতে। দাঙ্গা শুরু হতে পারে।’
‘তাহলে কী করবে? এয়ারপোর্টে গিয়ে প্লেন ধরবে নাকি আপাতত ডারউইনে গিয়ে উঠবে?’ স্যাম জানতে চাইল।
‘ডারউইনে যাওয়া যাক। এক রাত কাটিয়ে আসি। তারপর কালকে ভোরে উঠে অভিযানে বেরোনো যাবে। কী বলো?’
‘আমি রাজি। ল্যাজলো আর লিও-কে রেডি হতে বলছি। ১৫ মিনিটের মধ্যে রওনা হব।
‘এদিকে আমি ডেসকে ফোন করি। অনেকগুলো মেহমান হাজির হবে ওর জাহাজে।’
২০ মিনিট পর ওরা চারজন মিতশুবিসি গাড়িতে চড়ে রওনা হয়ে গেল বন্দরের দিকে। অস্ট্রেলিয়ান নিরাপত্তারক্ষী বাহিনিরা বেশ সতর্কতার সাথে রাস্তায় টহল দিচ্ছে। ইতিমধ্যে সবাই বুঝে গেছে বিদ্রোহীরা খুব উগ্র, কাউকে কোনো ছাড় দিচ্ছে না।
ডারউইন-এ পৌঁছে কাকড়া দিয়ে ডিনার সারতে সারতে রেডিও শুনল সবাই। দ্বীপে কোনো দাঙ্গা শুরু হয়নি। তবে বেশ কয়েকটা বিচ্ছিন্ন লুটপাট আর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
সরকারী কর্মকর্তারা সবাই আতঙ্কিত। সবচেয়ে বড় খবর, অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানীগুলো এখানে আর বিনিয়োগ করতে চাইছে। সবাই বিনিয়োগ বন্ধ করে এখান থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে যেতে চাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ানদের প্রজেক্টগুলোতে কাজ করার জন্য বিল উত্থাপন করেছে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতারা।
ম্যানচেস্টার মারা গেছে ২৪ ঘণ্টাও হয়নি। ইতিমধ্যে তার আশংকাগুলো বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে।
.
৪৫.
ওরা যখন মিতসুবিশিটা নিয়ে পাহাড়ী এলাকায় পৌঁছল তখন সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। সামনে ঘন বন। গাড়ি নিয়ে এগোনোর রাস্তা নেই। জিপিএস হাতে নিয়ে স্যাম দেখতে শুরু করল।
এখান থেকে আধা মাইল এগোলেই আমরা কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছে যাব।’ বলল স্যাম। লিওর দিকে তাকাল। এতটুকু যেতে পারবে তো?