.
৪৪.
হনিয়ারায় গর্ডন রোলিন্সের বাড়ি হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর জায়গায়। ওর বাসা থেকে সাগরের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। তাজা বাতাস আসে উন্মুক্ত সাগর থেকে। ম্যানচেস্টার গাড়ি নিয়ে এসে দেখল একটা নীল রঙের ১৯৬৩ ই টাইপ জাগুয়ার দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির পাশে। রোলিন্সের খুব পছন্দের গাড়ি। যদিও অনেক পুরানো। জীবনে বারবার সঠিকভাবে বিনিয়োগ করে রোলিন্স অনেক অর্থ উপার্জন করেছে। এই গাড়ি সেই উপার্জনের একটা ছোট্ট নিদর্শন। নিজের গাড়ি পার্ক করে এগোলে ম্যানচেস্টার।
‘আরে অরউন, চলে এসেছেন! কী অবস্থা?’ ম্যানচেস্টারকে আসতে দেখে বলল রোলিন্স। স্ত্রী সাশ্লাকে নিয়ে বারান্দায় বসেছিল। কিছু একটা বলল স্ত্রীকে। ম্যানচেস্টারের দিকে চেয়ে একটা হাসি দিয়ে ওর স্ত্রী বাড়ির ভেতরে চলে গেল।
‘এই তো, রোলিন্স চলে এলাম। দিনটা দারুণ। কী বলেন?’ জবাব দিল ম্যানচেস্টার।
‘ঠিকই বলেছেন। ওর হাতে একটা রূপোলি চাবি আছে। গাড়িতে একটু সমস্যা হয়েছিল, বুঝলেন? সারিয়েছি কিন্তু এখনও টেস্ট করে দেখিনি। চলুন, দু’জন একটু ঘুরে আসি।’
‘চলুন, যাই।’ হাসতে হাসতে বলল ম্যানচেস্টার। তবে প্রস্তাবটা কি বন্ধু হিসেবে দিচ্ছেন নাকি স্রেফ কাজের স্বার্থে?
‘দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি, কাজের স্বার্থে দিচ্ছি না।’ হেসে ফেলল গর্ডন।
ম্যানচেস্টার পেছনের সিটে বসল, গর্ডন বসল ড্রাইভিং সিটে।
‘আমরা বেশ ভালই কাজ দেখিয়েছি। অনেক কিছু উৎসর্গও করেছি। এবার সামনে কী করব?’ বলল ম্যানচেস্টার।
‘বিদ্রোহীরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিষয়টা আশংকাজনক। এদিকে একটু নজর রাখতে হবে।’
রোলিন্স চাবি ঢুকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতেই মুহূর্তের মধ্যে চোখ ধাঁধানো বিস্ফোরণ হয়ে আগুনের কুণ্ডলী আকাশে উঠে গেল। গাড়ির একটা দরজা ছিটকে গেল কয়েক ফুট উপরে। একটু পর বাতাসে ভর দিয়ে অলসভঙ্গিতে মাটিতে আছড়ে পড়ল। কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে জাগুয়ার থেকে।
কয়েক মিনিট পর দূরে ফায়ার সার্ভিসের সাইরেন শোনা গেল। তারা এসে কাউকে বাঁচাতে পারবে না। কোনমতে ভাঙ্গারিতে পরিণত হওয়া জাগুয়ারের আগুন নেভাবে মাত্র।
***
স্যাম ও রেমি থানায় এসে বসে আছে। পুলিশ চিফ সেবাস্টিয়ান ফ্লেমিঙের বয়স ৮০-এর একটু বেশি। মার মার কাট কাট চেহারা। এই লোকের সাথে কথা বলে ফারগো দম্পতি মোটেও সুবিধা করতে পারছে না।
“তারমানে, গত ৫ বছরে এখান থেকে গত বাচ্চা গায়েব হয়েছে সেসবের কোনো হিসেব আপনাদের কাছে নেই? রেমি জানতে চাইল। কম্পিউটার নেই আপনাদের?’
‘মিসেস ফারগো, এখানে এভাবে কাজ হয় না। আমাদের সিস্টেম আলাদা। পুলিশ চিফ শুকনো কণ্ঠে জবাব দিল।
রেমি’র গা জ্বলে যাচ্ছে এই লোকের কথা বলার ভঙ্গি দেখে। অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমন করল ও। তাই? আপনি একজন পুলিশ চিফ। বাচ্চারা হারিয়ে যাচ্ছে এখান থেকে। অথচ এপর্যন্ত কতজন হারিয়ে গেছে সেটা বলতে পারছেন না?
স্যাম অবশ্য রেমি’র সাথে সংসার করার ফলে বেশ ভাল করেই জানে এটা হচ্ছে রেমি’র রাগ দমন করার সর্বোচ্চ পর্যায়। এরপর রেমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটাবে। আসন্ন বিপর্যয় ঠেকাতে নাক গলাল স্যাম।
‘আসলে অফিসার, আমার স্ত্রী বলতে চাচ্ছে, হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাদের কোনো রেকর্ড আছে কিনা?
‘হ্যাঁ, এতক্ষণে ঠিকঠাক প্রশ্নটা করেছেন। হ্যাঁ, অবশ্যই আছে।
‘আমরা একটু জানতে চাই, বিগত ৫ বছরে কতগুলো বাচ্চা হারানোর রেকর্ড আছে?
‘আমি আপনার প্রশ্নটা বুঝেছি। কিন্তু উত্তরটা দেয়া সম্ভব না।
‘কেন না? কী সমস্যা?’ রেমি’র মুখ লাল হয়ে গেছে।
কারণ এটা পুলিশের ব্যাপার, ম্যাম। আর আপনারা পুলিশ নন।’
‘এত গোপনীয়তা কেন?’ স্যাম প্রশ্ন করল। স্যামও রেগে যাচ্ছে।
‘গোপন জিনিস তাই গোপনীয়।’ সোজাসাপ্টা জবাব দিল ফ্লেমিং।
‘থামুন। আমরা জনতার হয়ে একটা সরাসরি প্রশ্ন করেছি। আর আপনি বলছেন সেটার উত্তর দেবেন না?’ রেমি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল।
‘আমি উত্তর দিতে পারব কিন্তু দেব না। কারণ আমি উত্তরটা দিতে চাচ্ছি না। আপনারা তো অনেক মেজাজ দেখালেন। এবার আমার কথা শুনুন। আপনারা এখানকার পর্যটকমাত্র। এখানকার নাগরিক নন। আর আমার বেতনটা আপনারা দেন না। প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমি উপযু দেব। আর এরকম অসভ্যতার মাধ্যমে প্রশ্ন করলে তো উত্তর দেয়ার প্রশ্নই আসে না। আপনারা ডা. ভ্যানা’র পরিচয় দিয়েছেন তাই খাতির করেছি। তবে আপনাদের কথার সুরটা সংশোধন করলে ভাল হয়। আমি আবার বাজে ব্যবহার ঠিক হজম করতে পারি না।
স্যাম বুঝে গেল এবার রেমি তাণ্ডব শুরু করবে। তাই আবারও নিজেই বলির পাঠা হতে সামনে এগিয়ে এলো। অফিসার ফ্লেমিং…’
‘চিফ ফ্লেমিং বলুন…’
“জি, চিফ ফ্লেমিং, একটু সাহায্য করুন প্লিজ।
‘অবশ্যই করব। কোর্ট থেকে অর্ডার নিয়ে আসুন। তারপর সব জানতে পারবেন। এভাবে তথ্য দেয়া যাবে না। কারণ আপনারা এই দ্বীপের নাগরিক নন। আর কিছু বলবেন?
বাচ্চাগুলোর প্রতি আপনার কোনো দরদ নেই?” ঠাণ্ডাস্বরে রেমি জানতে চাইল।
‘অবশ্যই আছে। কিন্তু দু’জন বিদেশি এসে এখানে গোয়েন্দাগিরি করবে আর আমি তাদেরকে এরকম স্পর্শকাতর তথ্য হাসতে হাসতে দিয়ে দেব সেটা হতে পারে না। দেখুন, আমার অন্যান্য কাজ আছে। থানায় আসার জন্য ধন্যবাদ। আপনারা আপনাদের কাজে চলে যান। আমাকে আমার কাজ করতে দিন।