মাথা নেড়ে সায় দিল রেমি। ঠিকই আছে। আপনি আপনার কাজে গুরুত্ব দিচ্ছেন সেটাই স্বাভাবিক। আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি এপর্যন্ত কতগুলো বাচ্চা হারিয়েছে।
ভ্যানা চোখ সরু করল। আপনারা কী কোনো খারাপ কিছুর আশংকা করছেন?
না, না। এখানকার স্থানীয় কিছু ইস্যুর খোঁজ-খবর নিচ্ছি আরকী। ক্লিনিকে যেহেতু অনুদান দেব তাই একটু এখানকার ইস্যু সম্পর্কে জানাশোনা থাকা দরকার।’ বলল স্যাম।
‘আমি এব্যাপারে তেমন সাহায্য করতে পারছি না। আপনি বরং পুলিশের সাথে যোগাযোগ করুন। আমার চেয়ে তারা এ-বিষয়ে বেশি জানে।’
“ঠিক। কিন্তু ওখানে আমাদের পরিচিত কেউ নেই। তাছাড়া দাঙ্গা-হাঙ্গামা আর বিদ্রোহীদের নিয়ে পুলিশ বেশ চাপে আছে…’ রেমি বলল।
উঠে দাঁড়াল ভ্যানা। পুলিশ চিফের নাম ফ্লেমিং। তার সাথে আমার একটু পরিচয় আছে। আপনারা চাইলে একটা মিটিঙের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তবে একটা কথা, লোকটা একটু বেশিই জাতীয়তাবাদী।
স্যাম ও রেমিও উঠে দাঁড়িয়ে হাত মেলাল ভ্যানা’র সাথে। ওটা সম্ভব হলে উপকার হবে।
‘আমি ফোন করে দেখব। তবে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।’
পার্কিংলটে গিয়ে গাড়ি চড়ল ফারগো দম্পতি। স্যামের হাতটা রেমি ধরল। খুব একটা লাভ হলো না, তাই না?
হুম। এখন পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেতেই হবে। নইলে চলবে না।
‘দেখা যাক। তবে তার আগে লাঞ্চটা সেরে নিলে ভাল হবে।
“ঠিক আছে। চলো।’
রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করার পর মুখ খুলল রেমি। আচ্ছা, ম্যানচেস্টার হয়তো এব্যাপারে কিছু জানতে পারে। উনি তো সবসময় আমাদের সাথে কথা বলতে আগ্রহী।
‘চলো তার অফিসে যাই। দেখি, সে লাঞ্চ কিংবা অফিসের কাজে ব্যস্ত কিনা।
ভাগ্য ভাল বলতে হবে। রাজনীতিবিদ ম্যানচেস্টার সাহেব কোনো কাজে ব্যস্ত ছিল না। হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়কে ফিরে পেলে মানুষ যেরকম সমাদর করে সেরকম সমাদর করল ফারগো দম্পতিকে।
‘আপনারা এসে তো আমাকে বেশ চমকে দিয়েছেন। ভালই হলো। তা আপনাদের আর্কিওলজি’র কী খবর?’ বলল ম্যানচেস্টার।
‘গতি ধীর। তবে কাজ এগোচ্ছে। রেমি জবাব দিল। আমরা নতুন একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাদের নিয়ে।
‘আমি কি কখনও এই ব্যাপারে কিছু বলেছি? কই মনে পড়ছে না তো?
“হয়তো বলেননি। কিন্তু এই ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?’ স্যাম জানতে চাইল।
‘বিশেষ কিছু বলার নেই। যে সমাজেই যান না কেন… সেখানে এরকম বাচ্চা হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা পাবেন। দ্বীপের জন্য এটা কোনো বড় সমস্যা নয়। খুব সাবধানে জবাব দিল ম্যানচেস্টার।
‘আপনি এই বিষয়ে ঠিক কতদূর জানেন?
হঠাৎ? কিছু মনে করবেন না, আপনারা কেন জানতে চাইছেন, জানতে পারি?
‘এমনি। আমরা ডা. ভ্যানারি ক্লিনিকে অনুদান দিতে যাচ্ছি। তাই দ্বীপের বিভিন্ন ইস্য সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছি আরকী। বাচ্চাদের হারিয়ে যাওয়াটা অবশ্যই একটা ইস্যু। রেমি বলল।
‘আপনাদের কথা মেনে নিলাম। কিন্তু বিদ্রোহীজনিত সমস্যাই এখন সবচেয়ে বড় ইস্যু। তাছাড়া বেকারত্ব, চিকিৎসা ইত্যাদি বড় বড় সমস্যা তো আছেই…’
‘অস্বীকার করছি না। আমরা আসলে এই বাচ্চা হারানোর ব্যাপারে একটু তথ্য চাচ্ছিলাম। কে দিতে পারবে, বলতে পারেন?
‘সত্যি বলতে এটাকে আমি কোনো সমস্যা হিসেবে ধরি না। তারপরও যখন বলছেন… কোথায় আর পাঠাব আপনাদের? পুলিশের কাছে যেতে পারেন।
আমরা ইতিমধ্যে মনস্থির করেছি যাব। কিন্তু কার আছে যাব? বলতে পারেন?’ রেমি আর তাকে ভ্যানার কথা বলল না।
ম্যানচেস্টারকে দেখে মনে হলো সে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। দেখছি কী করা যায়। আসলে আমি জানি, হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাদের কেসগুলো কে দেখাশোনা করে। মাথার চুলে ভালুকের মতো বিশাল থাবা চালাল সে। তবে ভ্যানা’র ক্লিনিকে অনুদান দেবেন শুনে খুবই খুশি হয়েছি। দ্বীপের বাসিন্দাদের অনেক উপকার হবে।
‘জি, স্যাম বুঝতে পারল ম্যানচেস্টার প্রসঙ্গ বদলে ফেলেছে।
‘বিদ্রোহীদের ব্যাপারে নতুন কিছু শোনা গেছে? জনগণ কী বলে?
‘সবাই বিদ্রোহীদের বিপক্ষে। অন্তত আমার সহকর্মীরা তো সেটাই বলছে। তবে এরমাঝেও কিছু লোক বিশ্বাস করে দ্বীপ থেকে বিদেশিদের তাড়ানো জরুরী। আশা করছি, সামনে আর খারাপ কিছু ঘটবে না।’
‘আচ্ছা, আপনি কি আপনার কোনো সহকর্মীর সাথে আমাদের আর্কিওলজি’র প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলেছিলেন?
‘না, এখনও বলা সম্ভব হয়নি। বিদ্রোহীদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম সবাই। সুযোগ হয়নি। ভুলে গিয়েছিলাম।’
কথা শেষ করে বেরিয়ে এলো স্যাম ও রেমি। ম্যানচেস্টার তাকিয়ে রইল ওদের দিকে। অস্বস্তিবোধ করছে। এক রিসিপশনিস্ট এলো ওর রুমে। বলল, ‘স্যার, গর্ডন রোলিন্সের সাথে কিন্তু আজ ৫ টায় আপনার একটা মিটিং আছে।’
‘ও, হ্যাঁ, ঠিক বলেছ। মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। সাধারণত ম্যানচেস্টার রোলিন্সের সাথে যত মিটিং করে সব লুকিয়েই করে। কিন্তু সামনে নতুন দিন আসছে। জনতা যদি হঠাৎ করে ওদের দুজনের খাতির সম্পর্কে জানতে পারে তাহলে সন্দেহ করবে। তারচে’ এখন থেকে একটু একটু করে খাতির প্রকাশ করা ভাল। তখন সবাই ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে নেবে। আর ওরা যা পরিকল্পনা করেছিল এখন পর্যন্ত সব বেশ ঠিকঠাকভাবেই এগিয়েছে।