‘হ্যালো?’
‘সেলমা! বলো তো আমি কে?’ বলল স্যাম।
‘কালেকশন এজেন্সী?
‘এই সেরেছে! স্যান ডিয়াগোর কী খবর?
‘দুইদিন আগে এখান থেকে যাওয়ার সময় যেরকম অবস্থা দেখে গেছ এখনও তেমনি আছে। তবে জোলটান আরেকটা ১০০ পাউণ্ডের মাংস ভাজা খেয়ে নিয়েছে আর ল্যাজলো এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে আমাকে।’
‘তাহলে তো তুমি খুব ব্যস্ত। আচ্ছা, শোনো, প্রাথমিক ডাইভিঙে আমরা এখানে কিছু একটা খুঁজে পেয়েছি। একটা শিপ লাগবে। শিপে সবকিছু থাকা চাই। সোনার, ডাইভিং গিয়ার, ম্যাগনোমিটার… কাজের সবকিছু চাই। এরকম একটা জাহাজ খুঁজে দিতে পারবে?
‘অবশ্যই পারব। সবকিছু নির্ভর করছে টাকা আর সময়ের ওপর। কখন লাগবে আর কতদিনের জন্য লাগবে?
‘তার কোনো ঠিক নেই। এখন বলো কবে দিতে পারবে তুমি।
আবার সেই অসীম সময়ের শিডিউল।
সময়টা অসীম হলেও বোরিং নয়, সেলমা।
‘তা তো বটেই। আমি দেখছি বিষয়টা। তোমরা হয়তো অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যাণ্ডের বাইরে আছে।’
মাথা নাড়ল স্যাম। “ঠিকই ধরেছ। আচ্ছা, প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে তুমি কোনো সাহায্য করতে পারবে?
‘অবশ্যই। তোমার ই-মেইল আগে দেখি। তারপর যা সম্ভব আমি জানাচ্ছি।
‘সেটাই ভাল হবে। শিপ খোঁজার ব্যাপারে শুভ কামনা রইল।
‘বাজেট?
বরাবরের মতোই। তার মানে বাজেটের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। ফারগো ফাউণ্ডেশনের এত টাকা আছে যে দশ প্রজন্ম ধরেও খরচ করে শেষ করতে পারবে না। এছাড়াও প্রতিদিনই স্যামের বিভিন্ন আবিষ্কারের বুদ্ধিবৃত্তিক পোর্টফোলিও মেধাস্বত্ত্ব থেকে অর্থ এসে যোগ হচ্ছে। তাই নিজেদের অভিযানে খরচের ব্যাপারে ওদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
উপযুক্ত লোক পাওয়ার পর আমি ফোন করব।
“ওকে, সেলমা, থ্যাঙ্কস। আর হ্যাঁ, আমাদের হয়ে প্রাণী দুটোর খেয়াল রেখো’ জোলটান হলো এক বিরাটাকার জার্মান শেপার্ড কুকুরের নাম। ওটাকে রেমি হাঙ্গেরির এক অভিযানের সময় পোষ্য হিসেবে নিয়ে এসেছে।
‘নিজের আঙুল হারানোর জন্য এরচেয়ে উপযুক্ত কাজ আর হতে পারে না।’ খোঁচা মারল সেলমা। জোলটান সেলমাকে পছন্দ করে। ফারগো দম্পতি বাইরে বেরোলেই সেলমার সাথে লেগে থাকে ও। নিজের সন্তানের মতো করে আগলে রাখে। সেলমার নিজের কোনো সন্তান নেই। জোলটানকে প্রশয় দিতে দিতে মাথায় তুলে ফেলে সেলমা।
স্যাম ফোন রেখে ব্যাটারি ইনডিকেটর দেখল। অনেক চার্জ আছে। রেমি কাছে গিয়ে টুপ করে বসল ও।’সেলমাকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছি।’
‘ভাল। লিওনিডকে ছোট করে বলছি না। কিন্তু ছোট নৌকো আর ওয়েট স্যুট এই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। রেমি বলল।
“ঠিকই বলেছ। কিন্তু ওর যুক্তিটাও তো দেখতে হবে। কী পেয়েছে সেটা না জেনে কীভাবে বড় আয়োজন করবে বেচারা? ওর ধারণা ছিল এটা হয়তো কোনো ভূপাতিত প্লেন কিংবা ওইরকম কিছু একটা হবে। এটা ভুলে গেলে চলবে না যুদ্ধের সময় গোয়াডাক্যানেল অনেক ব্যস্ত একটা জায়গা ছিল। অনেক ধ্বংসাবশেষ আছে এর আশেপাশে।
রেমি মাথা নাড়ল। তারমধ্যে কিছু জিনিস এরকমও আছে যেগুলোকে এখনও বিস্ফোরিত হবার ক্ষমতা রাখে।
‘ঠিক তোমার মতো।
স্বামীর পটানো কথায় কোনো পাত্তাই দিল না রেমি। ডাইভ বোটের দিকে তাকাল ও। কী মনে হয় তোমার?
‘পানির ৮০ ফুট নিচে মানুষ নির্মিত ইমারত? বলতে পারছি না। মাথার উপরে হাত তুলে দু’দিকে প্রসারিত করে টানটান করল স্যাম। রেমির দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু খুব শীঘ্রই আমরা জানতে পারব।’
নিজের চুলে হাত বুলিয়ে রেমি স্যামকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু বলতে পারল না। কারণ বিচের নিরিবিলি পরিবেশ এক রক্তহিম করা চিল্কারে চুরমার হয়ে গেছে।
.
০৪.
উঠে দাঁড়িয়ে এগোল স্যাম, ওর পিছু পিছু রেমিও রওনা হলো। পানির কাছে কুঞ্জবন রয়েছে। রক্তহিম করা চিৎকারটা এসেছে ওখান থেকেই। যদিও চিৎকার নেই এখন। চিৎকারের বদলে এখন ব্যথার আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে রেমিকে থামাল স্যাম। ঝোঁপের ভেতর থেকে কোনো এক সরীসৃপের বিরাটাকার লেজ বেরিয়ে রয়েছে।
বুদবুদের আওয়াজ আর পানির থপথপানির আওয়াজ এলো কুঞ্জবনের ভেতর থেকে। লেজটা একদম চুপ করে আছে। ওদের পেছনে লিও’র বুটের আওয়াজ শোনা গেল। কয়েকজন দ্বীপবাসীও এসেছে তার সাথে। তাদের মধ্যে দু’জনের হাতে ম্যাচেটি (ল্যাটিন আমেরিকার দা’) আর একজনের হাতে কুড়াল শোভা পাচ্ছে।
যন্ত্রণাকাতর আর্তনাদ আবার আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে দিল। ঝোঁপ পেরিয়ে সামনে এগোল স্যাম। নোনাজলের বিরাটাকার পুরুষ কুমীর দেখতে পেল ও। ওটার মাথায় কুড়াল দিয়ে আঘাতের তিনটা জখম দেখা যাচ্ছে। মৃত। দ্বীপের এক স্থানীয় বাসিন্দা পড়ে রয়েছে পাশে। তার ডান পা গুরুত্বরভাবে কুমীর কামড়ে দিয়েছে। ভয়াবহ অবস্থা। ওখান থেকে পাঁচ ফুট দূরে আরেকজন দ্বীপবাসী দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার হাতে একটা কুড়াল, রীতিমতো কাঁপছে সে। ভয়, বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেছে তার চোখ দুটো।
আহত ব্যক্তির উরুর কাছ থেকে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কোমর থেকে বেল্ট খুলে নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে হাঁটু গেড়ে বসল স্যাম। লোকটার উরুর উপরে শক্ত করে বেঁধে দিল বেল্টটা। রেমি ওদের কাছে এগিয়ে গেলো।
গুঙিয়ে উঠে জ্ঞান হারাল লোকটি।